উৎপাদন সংক্রান্ত ফ্যাক্টসীট | ই-কৃষক | Page 2

Category Archives: উৎপাদন সংক্রান্ত ফ্যাক্টসীট

ছাদে বাগান প্রযুক্তি

images23
ছাদে বাগান কাকে বলে
সাধারণত: পাকা বাড়ির খালি ছাদে অথবা বেলকনীতে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে ফুল, ফল, শাক-সবজির বাগান গড়ে তোলাকে ছাদে বাগান বলা হয়। ছাদে বাগান সৃজনের সময় খেয়াল রাখতে হবে বাগান সৃজনের জন্য ছাদের কোন প্রকার ক্ষতি যেন না হয়। এজন্য রোপনকৃত গাছের টব গুলো ছাদের বীম বা কলামে নিকটবর্তী স্থান বরাবর স্থাপন করতে হবে। ড্রাম অথবা টব স্থাপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এগুলো সরাসরি ছাদের উপরে বসানো না হয়। এতে ছাদ ড্যাম্প বা সেঁতসেঁতে হয়ে যেতে পারে। তাই রিং-এর উপর বা ইটের উপর এগুলো স্থাপন করলে নিচে দিয়ে আলো বাতাস চলাচল করবে এবং ছাদও ড্যাম্প হতে রক্ষা পাবে। নেট ফিনিসিং এর মাধ্যমেও ছাদকে ড্যাম্প প্রতিরোধ করা যায়।
ছাদে চাষ উপযোগী গাছ
ক) আম- বারি আম-৩ (আম্রপালি), বাউ আম-২ (সিন্দুরী);
খ) পেয়ারা- বারি পেয়ারা-২, ইপসা পেয়ারা-১;
গ) কুল- বাউ কুল-১, ইপসা কুল-১ (আপেল কুল) , থাই কুল-২;
ঘ) লেবু- বারি লেবু -২ ও ৩, বাউ কাগজি লেবু-১;
ঙ) আমড়া- বারি আমড়া-১, বাউ আমড়া-১;
চ) করমচা- থাই করমচা;
ছ) ডালিম- (দেশী উন্নত);
জ) কমলা ও মাল্টা – বারি কমলা-১, বারি মাল্টা – ১;
ঝ) জামরুল- বাউ জামরুল-১ (নাসপাতি জামরুল), বাউ জামরুল-২ (আপেল জামরুল) ইত্যাদি।
ঞ) সবজি- লাল শাক, পালং শাক, মুলা শাক, ডাটা শাক, কলমী শাক, পুইঁশাক, লেটুস, বেগুন, টমেটো, মরিচ ইত্যাদি।
ছাদে গাছ লাগানোর পদ্ধতি
ক) হাফ ড্রাম এর তলদেশে অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের জন্য ১ ইঞ্চি ব্যাসের ৫ / ৬ টি ছিদ্র রাখতে হবে।
খ) ছিদ্র গুলোর উপর মাটির টবের ভাঙ্গা টুকরো বসিয়ে দিতে হবে।
গ) ড্রামের তলদেশে ১ ইঞ্চি পরিমাণ ইটের খোয়া বিছিয়ে তার উপর বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
ঘ) সমপরিমাণ দোঁআশ মাটি ও পঁচা গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ড্রামটির দুই তৃতীয়াংশ ভরার পর হাফ ড্রাম অনুযায়ী ড্রাম প্রতি মিশ্র সার আনুমানিক ৫০-১০০ গ্রাম প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এবং সম্পুর্ণ ড্রামটি মাটি দিযে ভর্তি করে নিতে হবে।
ঙ) ১৫ দিন পর ড্রামের ঠিক মাঝে মাটির বল পরিমাণ গর্ত করে কাংখিত গাছটি রোপন করতে হবে। এ সময় চারা গাছটির অতিরিক্ত শিকড়/ মরা শিকড় সমূহ কেটে ফেলতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে মাটির বলটি যেন  ভেঙ্গে না যায়।
চ) রোপিত গাছটিতে খুটি দিয়ে বেধে দিতে হবে।
ছ) রোপনের পর  গাছের গোড়া ভালভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।
জ) সময়ে সময়ে প্রয়োজন মত গাছে পানি সেচ ও উপরি সার প্রয়োগ, বালাই দমন ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঝ) রোপনের সময় হাফ ড্রাম প্রতি ২/৩ টি সিলভা মিক্সড ট্যাবলেট সার গাছের গোড়া হতে ৬ ইঞ্চি দুর দিয়ে মাটির ৪ ইঞ্চি গভীরে প্রয়োগ করতে হবে।
ঞ) গাছের বাড়-বাড়তি অনুযায়ী ২ বারে টব প্রতি ৫০/১০০ গ্রাম মিশ্র সার প্রয়োগ করে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
ট) গাছের রোগাক্রান্ত ও মরা ডালগুলো ছাটাই করতে হবে এবং কর্তিত স্থানে বোর্দ পেষ্ট লাগাতে হবে।
বালাই দমন
বালাই দমনে পরিবেশ বান্ধব আইপিএম বা আইসিএম পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করে জৈব রাসায়নিক বালাই নাশক যেমন- নিমবিসিডিন, বাইকাও ব্যাবহার করা যেতে পারে।
মিলি বাগঃ পেয়ারা, কুল, লেবু, আম, করমচা, জলপাই, বেগুন প্রভৃতি গাছে এ পোকার আক্রমন দেখা যায়।
লক্ষনঃ পাতার নিচে সাদা তুলার মত দেখা যায়। পোকা উড়তে পারেনা। টিপ দিলে হলুদ পানির মত বের হয়ে আসে। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায়, পাতা ও ফল ঝরে পড়ে, ফলের আকার বিকৃত হয়ে যায় অনেক সময় পাতায় শুটি মোল্ড রোগের আক্রমন হয়।
দমনঃ হাত বাছাইয়ের মাধ্যমে পোকা দমন করতে হবে। প্রয়োজনে জৈব বালাই নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
সাদা মাছিঃ পেয়ারা, লেবু, জলপাই, বেগুন প্রভৃতি গাছে এ পোকার আক্রমন দেখা যায়।
লক্ষনঃ পাতার নিচে সাদা তুলার মত মাছি পোকা দেখা যায়। পোকা উড়তে পারে। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায়, পাতা ঝরে পড়ে, পরবর্তী মৌসুমে ফলের উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পায়। পাতায় শুটি মোল্ড রোগের আক্রমন হয়।
দমনঃ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হুইল পাউডার মিশিয়ে পাতার নিচে সেপ্র করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
শুটি মোল্ডঃ ছত্রাক দ্বারা সংগঠিত হয়। পাতার ওপর কাল কাল পাউডার দেখা দেয়।  গাছের ফলন ব্যহত হয়। আক্রমর ব্যাপক হলে পাতা ও ফল ঝরে যায়।
দমনঃ টিল্ট-২৫০ ইসি, প্রতি লিটার পানিতে ০.৫০ মিঃলিঃ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
সুত্রঃ www.krishibangla.com

মুগ সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা

আমাদের দেশের কৃষক ভাইদের মাঝে ফসল সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত যথোপযুক্ত জ্ঞান ও প্রয়োজনীয় উপকরণাদির অভাব থাকায় প্রতি বছর মোট উৎপাদিতফসলের ১০ শতাংশ ফসল বিনষ্ট  হয়। তাই একজন সচেতন কৃষি-ব্যবসায়ী এবং চাষির ফসল সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা স¤পর্কে সম্যক ধারণা রাখা খুবই জরুরী।

মুগকাটার উপযুক্ত সময়

  • মুগের ফল বা পড বাদামী/কালো রং ধারণ করলে বুঝতে হবে দানা পরিপক্ক (পাকা) হয়েছে।
  • জাত ভেদে পাকার পর ২-৩ বার মুগের ফল বা পড সংগ্রহকরতেহবে।
  •  অধিকাংশজাতে সব পড একই সাথে না পাকার কারণে ২-৩ বার সংগ্রহ করতে হয়।
  •  পাকা ফল বা পড সাধারণতঃ সকালে বা বিকালে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সংগ্রহ করা ভাল। শেষবার ফল বা পড গাছসহ কাচি দ্বারা কেটে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।

মাড়াই

  • সংগ্রহকৃত ফসল (ফল বা পড) তাড়াতাড়ি মাড়াই করার স্থানে নিতে হবে যাতে দানা ঝরে না যায়।
  • ফল বা পডগুলো/গাছগুলো ১-২ দিন ছড়িয়ে দিয়ে রোদে শুকোতে হবে।
  • হাতের তালুতে ফসলের ফল/পড নিয়ে ঘষা দিলে মচমচ শব্দ হলেই বুঝতে হবে যে মাড়াই এর সময় হয়েছে।
  •  ভালভাবে শুকানোর পর কাঠ বা বাঁশের লাঠি দ্বারা পিটিয়ে বা গরু কিংবা ট্রাক্টর/পাওয়ার টিলার/মেশিন দিয়ে মাড়াই করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাড়াইয়ের সময় দানা ভেঙ্গে ডাল বের না হয়।
  •  মাড়াইকৃত মুগবীজ ঝেরে বা বাতাসে উড়িয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

মুগবীজ শুকানো, ঝাড়াই ও বাছাই

  •  মাড়াইকৃত বীজ সংরক্ষণের আগে কয়েকদিন ভালভাবে রোদে শুকাতে হবে।
  •  সংরক্ষণের পূর্বে কুলারসাহায্যে দানাবাতাসেউড়িয়েপরিষ্কার করতেহবে।
  •  প্রয়োজনে চালুনী দিয়ে চেলে পুষ্ট দানা বাছাই করতেহবে।
  •  ধাতব পাত্র ছাড়া অন্য যে কোন পাত্রে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে রোদে শুকানোর পর বীজ ঠান্ডা করতে হবে।
  •  বীজ দাঁতে চিবিয়ে নিশ্চিত হোন যে, বীজগুলো ভালোমত শুকানো হয়েছে।
  •  সংরক্ষণের সময় বীজের আর্দ্রতা শতকরা ৮-৯ ভাগ থাকা উত্তম।

মুগবীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি

  •  পরিষ্কার বীজ ৩/৪টি রোদ দিয়ে শুকিয়ে গুদাম জাত করতে হবে।
  •  আর্দ্র ও পোকামাকড় মুক্ত পাত্রে শুকানো বীজ ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে।
  •  মাটির পাত্র যেমন মটকি/কলসি হলে বীজ সংরক্ষণের পূর্বে আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে নিতে হবে যাতে পাত্রের ভিতর বায়ু প্রবেশ করতে না পারে।
  • বীজসংরক্ষণের পর পাত্রের মুখ ভালভাবে বন্ধ করে দিতে হবে যাতে বায়ু প্রবেশ করতে না পারে।
  • বীজের পরিমান পাত্রের ধারন ক্ষমতার চেয়ে কম হলে বীজ এর উপর একটি মোটা পলিথিন বিছিয়ে উপরের ফাঁকা জায়গা শুকনো বালি, তুষ বা ছাই দিয়ে পাত্রটি ভর্তি করুন। পাত্রে বীজ রেখে পাত্রের মুখ ভালভাবে বন্ধ করতে হবে।
  • বীজ সংরক্ষণে পলিথিন ব্যাগ/ধাতব টিন বা ড্রাম ব্যবহার করা উত্তম।
  • যে পাত্রেই বীজ রাখা হোক না কেন তা মেঝে থেকে উপরে (চকি /মাচায়) রাখতে হবে।
  • সংরক্ষিত বীজ মাঝে মাঝে (বিশেষ করে বর্ষাকালে)রৌদ্রে শুকিয়ে স্ব স্ব পাত্রে পুনরায় রেখে দিতে হবে।

মুগ-এর বিপণন ও পরিবহন

মুগ দানা প্লাস্টিক/চটের বস্তায় ভরে গরুর গাড়ী, ভ্যান, নসিমন বা ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়ে থাকে। দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে বৃহত্তর বরিশালে কৃষকগণ মুগের বস্তা বা ঝুড়ি মাথায় করে অথবা নৌকায় করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে যায়। তবে পরিবহণের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন দানা কোন ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। দুরে পরিবহণের সময় বস্তা গুলি ত্রিপল দিয়ে ঢেঁকে নেওয়া ভাল যাতে বৃষ্টি কিংবা কুয়াশায় মুগদানার ক্ষতি না হয়।

Source: USAID Agricultutral Value Chains project

পেপেঁ চাষ পদ্ধতি

পেপেঁ

papaya2d
চারা তৈরি: বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। পলিথিন ব্যাগে চার তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
চারা রোপণ: দেড় থেকে দুই মাস বয়সের চারা রোপণ করা হয়। ২ মিটার দূরে দূরে চারিদিকে ২ ফুট পরিমান গর্ত তৈরি করে রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মিশাতে হবে। পানি নিকাশের জন্য দুই সারির মাঝখানে  ৫০ সে.মি নালা রাখা দরকার। বানিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষের জন্য বর্গাকার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। প্রতি গর্তে  ৩ টি করে চার রোপণ করতে হয়। ফুল আসলে ১ টি স্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলা দরকার। পরাগায়ণের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখা দরকার।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গাছে ১৫ কেজি জৈব সার, ৫৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ৫৫০ গ্রাম টিএসপি সার, ৫৫০ গ্রাম এমওপি সার, ২৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২৫ গ্রাম বোরাক্স সার এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার একত্রে ভালভাবে প্রয়োগ করতে হয়।  ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া সব সার গর্ত তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর পর গাছে নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস পর পর প্রয়োগ করতে হয়। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করা হয়।
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা:  ফুল হতে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে। গাছ যাতে ঝড়ে না ভেঙ্গে যায় তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা রোপণ এবং সার প্রয়োগের পর প্রয়োজনমতো পানি দিতে হবে। খরা মৌসুমে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে।
রোগ ব্যবস্থাপনা:
রোগের নাম: পেঁপের ড্যাম্পিং অফ রোগ দমন।
  • ভূমিকা: মাটিতে যে ছত্রাক থাকে তার দ্বারা এ রোগ হতে পারে। এ রোগটি সাধারণত: চারা অবস্থায় অথবা বীজ গজানোর সময় হয়ে থাকে। বীজের অংকুর গজানোর সময় এ রোগের জীবাণু অতি সহজেই বীজ অথবা অংকুরকে আক্রমণ করে।
  • ক্ষতির নমুনা: এ অবস্থায় বীজ পচে যায় এবং চারা মাটির উপর বের হয়ে আসতে পারেনা। এভাবে অংকুর গজানোর আগেই পচন হতে পারে। চারা গজানোর পরেও জীবাণুর আক্রমণ ঘটে। এ পর্যায়ে চারার গোড়া বা শিকড় পচে গিয়ে আক্রান্ত চারা মাটিতে পড়ে যায় এবং মারা যায়। চারার বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগের প্রকোপ কমে যায়।
  • অনুকূল পরিবেশ: বর্সা মৌসুমে ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ খুব বেশি।
  • বিস্তার: বৃষ্টির পানিতে অথবা সেচের পানিতে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়।

ব্যবস্থাপনা: গাছের গোড়ার পানি নিকাশের ভাল ব্যবস্থা রাখা দরকার। রোগাক্রান্ত চারা গাছ মাটি থেকে উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রমন বেশি হলে রিডোমিল এমজেড-৭২ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর গাছের গোড়ার চারিদিকের মাটিতে প্রয়োগ করা দরকার। জিংকের ঘাটতির জন্য মোজাইক লক্ষণ দেখা দিলে গাছের গোড়ায় গাছপ্রতি ৫-১০ গ্রাম জিংক প্রয়োগ করলে এবং ০.২% জিংক গাছের পাতায় স্প্রে করলে এ সমস্যা কমে যায়।

ফসল তোলা: সবজি হিসেবে কচি ফল সংগ্রহ করা হয়। পাকানোর জন্য ফলের ত্বক হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে সংগ্রহ করতে হয়।

সুত্রঃ কৃষি তথ্য সার্ভিস (এ আই এস)
Mungbean

মুগ ডাল

মুগ(Mungbean)

মুগ ডালে প্রচুর পরিমানে খাদ্য শক্তি ও প্রোটিন আছে। ডাল হিসেবে প্রধানত খাওয়া হয়। বেলে দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটি, মাঝারি উঁচু এবং সুনিষ্কাশিত জমি মুগ আবাদের জন্য উপযোগী।

জাত পরিচিতি:
বারি মুগ-২ (কানি-): বারি মুগের কানি- জাত দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ এবং রবি মৌসুমের শেষ দিকেও চাষ করা যায়। রান্নার সময়কাল ১৫-১৮ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২০-২৪%। জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ০.৯-১.১ টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক রোগ সহনশীল।

বারি মুগ-৩ (প্রগতি): বীজ মসৃণ ও রং বাদামি সবুজ। রান্না হওয়ার সময়কাল ১৪-১৭ মিনিট। দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ এবং রবি মৌসুমে বিলম্বে আবাদ করা যায়। আমিষের পরিমাণ ১৯-২১%। জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.০-১.১ টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

বারি মুগ-৪ (রুপসা): বীজ মসৃণ ও রং সবুজ। এ জাত দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ এবং রবি মৌসুমে বিলম্বে বপন করা যায়। জাতটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। ডাল রান্নার সময়কাল ১৫-২০ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২১-২৪%। জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.২-১.৪ টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

বারি মুগ-৫ (তাইওয়ানী): গাছের পাতা, ফল ও বীজ আকারে বেশ বড়। বীজের রং গাঢ় সবুজ। হাজার বীজের ওজন ৪০-৪২ গ্রাম। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো যে ফল এক সাথে পাকে। ডাল রান্নার সময়কাল ১৭-২০ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২০-২২%। জাতটির জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.২-১.৫টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

বারি মুগ-৬ (রুপসা): একই সময়ে প্রায় সব শুটি পরিপক্ক হয়। পাতা ও বীজের রং গাঢ় সবুজ এবং পাতা চওড়া। ফুল আসার পরে দৈহিক বৃদ্ধি কম। দানার আকার বড়। প্রতি ১০০ বীজের ওজন ৫.১-৫.২ গ্রাম। গম কাটার পর এপ্রিলের ১ম সপ্তাহ পর্যন- বপন করা যায়। এ ছাড়া খরিফ-২ ও রবি মৌসুমের শেষেও বপন করা যায়। হলুদ মোজাইক ভাইরাস এবং পাতার দাগ রোগ সহনশীল। জীবনকাল ৫৫-৫৮ দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন ১৫০০ কেজি।

বীজ বপন: ছিটিয়ে এবং সারি উভয় পদ্ধতিতেই বপন করা যায়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি রাখতে হবে।

বারি মুগ-২, বারি মুগ-৩ ও বারি মুগ-৪ এর জন্য হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ কেজি। বারি মুগ-৫ এর জন্য ৪০-৪৫ কেজি বীজের প্রয়োজন। ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ সামান্য বেশি দিতে হবে।

এলাকাভেদে মুগের বপন সময়ের তারতম্য দেখা যায়। খরিফ-১ মৌসুমে ফাল্গুন মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন- (ফেব্রুয়ারির শেষ ভাগ হতে মার্চের মধ্য ভাগ)। খরিফ-২ মৌসুমে শ্রাবণ-ভাদ্র মাস (আগস্টের প্রথম হতে সেপ্টেম্বরের শেষ ভাগ)। রবি মৌসুমে বরিশাল এলাকার জন্য বপনের উত্তম সময় পৌষ-মাঘ মাস (জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্য ভাগ)।

সার ব্যবস্থাপনা: অনুর্বর জমিতে হেক্টরপ্রতি নিম্নরূপ সার ব্যবহার করতে হবে।

সারের নাম সারের পরিমাণ কেজি/হেক্টর
ইউরিয়া ৪০-৫০
টিএসপি ৮০-৮৫
এমওপি ৩০-৩৫
অণুজীব সার ৪-৫

শেষ চাষের সময় সমুদয় সার প্রয়োগ করতে হবে। অপ্রচলিত এলাকায় আবাদের জন্য সুনির্দিষ্ট অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। সাধারণতঃ সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় না।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করা প্রয়োজন। অতিবৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে না পারে সেজন্য অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়া খরিফ-১ মৌসুমে বৃষ্টি না হলে সঠিক সময়ে বপনের জন্য বপনের আগে বা পরে একটি সেচ প্রয়োজন। সেচ দিলে চারা গজানোর পর মালচিং করে দিতে হবে।

রোগ ব্যবস্থাপনা
রোগের নাম: মুগের পাতার দাগ রোগ

ক্ষতির নমুনা: পাতায় ছোট ছোট লালচে বাদামি বর্ণের গোলাকৃতি হতে ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে। আক্রান- পাতার উপর ছিদ্র হয়ে যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায়। পরিত্যক্ত ফসলের অংশ, বায়ু ও বৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।
অনুকুল পরিবেশ: বেশি আর্দ্রতা (৮০%) এবং উচ্চ তাপে (২৮ ডিগ্রী সে.) এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
ব্যবস্থাপনা: বাভিস্টিন (০.২%) নামক ছত্রাকনাশক ১২-১৫ দিন পরপর ২-৩ বার সেপ্র করতে হবে। রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার (বারি মুগ-২, ৩, ৪ এবং ৫) করতে হবে।

রোগের নাম: মুগের পাউডারি মিলডিউ

ক্ষতির নমুনা: এ রোগে পাতায় পাউডারের মত আবরণ পড়ে। সাধারণত: শুষ্ক মৌসুমে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। বীজ, পরিত্যক্ত গাছের অংশ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।

ব্যবস্থাপনা: বিকল্প পোষক ও গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলতে হবে। টিল্ট-২৫০ বা থিওভিট (০.২%) ১০-১২ দিন পরপর ২-৩ বার সেপ্র করতে হবে।

রোগের নাম: মুগের হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ

ক্ষতির নমুনা: মোজাইক ভাইরাস দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত পাতার উপর হলদে সবুজ দাগ পড়ে। সাধারণত: কচি পাতা প্রথমে আক্রান্ত হয়। আক্রান- বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি নামক পোকা এ রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে।
অনুকুল পরিবেশ: বিকল্প পোষক ও সাদা মাছির আধিক্য এ রোগ দ্রুত বিস্তারে সহায়ক।

ব্যবস্থাপনা: রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। সাদা মাছি দমনের জন্য অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়ে ফেলতে হবে।

গুদামজাত ডালের পোকা ব্যবস্থাপনা

ভূমিকা: পূর্ণবয়স্ক পোকা ও কীড়া উভয়ই গুদামজাত ডালের ক্ষতি করে থাকে।

ক্ষতির নমুনা: এ পোকা ডালের খোসা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শাঁস খেতে থাকে। ফলে দানা হাল্কা হয়ে যায়। এর ফলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।

ব্যবস্থাপনা: গুদামজাত করার আগে দানা ভালভাবে পরিষ্কার করতে হয়। ডালের দানা শুকিয়ে পানির পরিমান ১২% এর নিচে আনতে হবে। বীজের জন্য টন প্রতি ৩০০ গ্রাম ম্যালাথিয়ন বা সেভিন ১০% গুড়া মিশিয়ে পোকার আক্রমণ প্রতিরোদ করা যায়। ফসটক্সিন ট্যাবলেট ২টি বড়ি প্রতি ১০০ কেজি গুদামজাত ডালে ব্যবহার করতে হয়। এ বড়ি আবদ্ধ পরিবেশে ব্রবহার করতে হয়।

ফসল তোলা
মধ্য-কার্তিক থেকে শেষ ভাগ (অক্টোবর শেষ থেকে নভেম্বর প্রথম)। বরিশাল পটুয়াখালী অঞ্চলে মার্চ এর শেষ পর্যন্ত।

Source: AIS.GOV.BD