কৃষি | ই-কৃষক

Category Archives: কৃষি

মাশরুম চাষ : ঘরে বসে আয়

mushroom-farming-in-nepal

যেকোনো সমান জায়গায় কম আলোয় মাশরুম চাষ করা যায়। বীজ বোনার পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই ফলন। আট থেকে দশ হাজার বীজ থেকে দৈনিক ১৫-১৮ কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম কাঁচা মাশরুম ২০-২৬ টাকা, শুকনা ১৭০-১৮৫ টাকা এবং গুঁড়া ১৭০-১৮৫ টাকা বিক্রি করা যায়। তাই বাড়তি আয়ের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিতে পারেন মাশরুম চাষ।এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন আছে। সুস্বাদু এই খাবারের স্বাদ অনেকটা মাংসের মতো। মাশরুম দাঁত ও হাড়ের গঠনে বিশেষ উপযোগী। রক্তহীনতা, বেরিবেরি ও হূদরোগ প্রতিরোধে এবং বহুমূত্র রোগে বিশেষ কার্যকরী। প্রায় তিন লাখ ছত্রাকের মধ্য থেকে মাত্র ১০ প্রজাতির ছত্রাক খাওয়ার উপযোগী।

Pearl_Oyster_Kit_1_2000x

বাজার সম্ভাবনা

আমাদের দেশের বড় বড় শহরগুলোর বিভিন্ন হোটেল ও চাইনিজ হোটেলগুলোতে মাশরুমের চাহিদা আছে। তাই আপাত দৃষ্টিতে মাশরুমের বাজার মূলত শহরে গড়ে উঠেছে। এছাড়া বিদেশে এর চাহিদা রয়েছে। মাশরুম শুকিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এজন্য যেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিদেশে সবজি ও কাঁচামাল পাঠায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাশরুম বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।

প্রয়োজনীয় মূলধন

মাশরুম চাষ করার জন্য ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। যদি ব্যক্তিগত পূঁজি না থাকে তাহলে মূলধন সংগ্রহের জন্য নিকট আত্মীয়স্বজন, ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

আয়-ব্যয় ও লাভের হিসাব

অয়েস্টার মাশরুমের পাপড়ি বেশি ছড়ানোর আগেই তুলে গোড়া থেকে সামান্য কেটে ফেলতে হবে। পলি প্রোপাইলিনের প্যাকেটে কয়েকটা ছিদ্র করে এর মধ্যে মাশরুমগুলো ভার মুখ বন্ধ করে এই প্যাকেট বাজারজাত করতে হবে। প্রতিটি বীজ বা স্পন থেকে প্রায় ২০০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যায়। সুতরাং ২০০টি বীজ বা স্পন থেকে প্রায় ৪০ কেজি মাশরুম পাওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মাশরুমের দাম প্রায় ১২০ টাকা।

৪০ কেজির দাম ৪৮০০ টাকা।
কাঁচামাল ও অন্যান্য খরচ প্রায় ২৫০০ টাকা।
সুতরাং ৪০ কেজি মাশরুম বিক্রয় করে লাভ প্রায় ২৩০০ টাকা

প্রয়োজনীয় উপকরণ, পরিমাণ, মূল্য ও প্রাপ্তিস্থান

স্থায়ী উপকরণ

উপকরণ পরিমাণ আনুমানিক মূল্য (টাকা প্রাপ্তিস্থান
গামলা ১টা ৬০-৮০ থালা-বাটির দোকান
ছোট চা-চামচ ১টা ১০-১৫ থালা-বাটির দোকান
ব্লেড ১টা ২-৫ মুদি দোকান
ছুরি ১টা ২০-৩০ থালা-বাটির দোকান
পলিপ্রোপাইল ব্যাগ ১০টা ২০-৩০ মুদি দোকান
মোট খরচ=১১২১৬০ টাকা

কাঁচামাল

উপকরণ পরিমাণ আনুমানিক মূল্য (টাকা প্রাপ্তিস্থান
মাশরুম বীজ বা স্পন ২০০ টা বা ১০০ কেজি ২০০০ ঢাকা জেলার সাভার
যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ ৫০০
মোট খরচ=২৫০০ টাকা

মাশরুমের উপকারিতা

মাশরুমে প্রচুর প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন আছে। তাই খাদ্য হিসেবে এটা খুবই পুষ্টিকর। এর উপকারিতাসমূহ হল-

  • রক্তে চিনির সমতা রক্ষা করে ফলে ডায়াবেটিক রোগী এবং যারা স্থুল বা স্বাস্থ্যবান তাদের জন্য উপযুক্ত খাবার।
  • মাশরুম দেহের ক্ষয়পূরণ, হাড় গঠন ও দাঁত মজবুত করে।
  • রক্তহীনতা, বেরিবোধ, হৃদরোগ, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

খাবারের উপযোগী মাশরুম

আমাদের দেশে সাধারণত খাবারের উপযোগী তিন জাতের মাশরুম চাষ হয় –

  • স্ট্র মাশরুম : ধানের খড়, শিমুল তুলা, ছোলার বেসন ও চাউলের কুড়া ইত্যাদি উপকরণ ব্যবহার করে স্ট্র মাশরুম চাষ করা হয়। আমাদের দেশে সাধারণত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এর চাষ করা যায়।
  • ইয়ার মাশরুম: সাধারণত বর্ষাকালে প্রাকৃতিকভাবে আম গাছে ইয়ার মাশরুম পাওয়া যায়। ইয়ার মাশরুম দেখতে কালচে রঙের। ইয়ার মাশরুম সারাবছর চাষ করা গেলেও সাধারণত বর্ষাকালে এর ফলন ভালো হয়।
  • অয়েস্টার মাশরুম: আমাদের দেশে এই জাতের মাশরুম চাষ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। সারাবছরই এই মাশরুম চাষ করা যায় তবে শীত ও বর্ষাকালে এর ফলন ভালো হয়। অয়েস্টার মাশরুম খুব সহজে চাষ করা যায় এবং এর জন্য খুব অল্প জায়গার প্রয়োজন হয়।

মাশরুম উৎপাদন কৌশল

চাষের উপযোগী স্থান

মাশরুম খোলা জায়গায় চাষ করা যায় না। তাই এর জন্য আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না। মাশরুম চাষ করার জন্য ছায়াযুক্ত জায়গায় ছন বা বাঁশের চালা দিয়ে ঘর তৈরি করতে হয়। মাটির দেওয়াল দিয়েও ঘর তৈরি করা যায়। আবার বাঁশের বেড়াও দেওয়া যায়। ঘরের ভেতর যাতে আলো ঢুকতে না পারে সেজন্য বাঁশের বেড়ায় মাটি লেপে দিতে হয়।

অয়েস্টার মাশরুম চাষ পদ্ধতি

অয়েস্টার মাশরুম বীজ বা স্পন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ জোগাড় করে মাশরুম চাষ শুরু করা যাবে। ধাপে ধাপে মাশরুম চাষ করতে হয়।

১ম পদ্ধতি

  • মাশরুম চাষ কেন্দ্র থেকে মাশরুমের বীজ বা স্পন প্যাকেট সংগ্রহ করতে হবে। বীজ বা স্পনের দুই পাশে কিছুটা গোল করে কেটে চেঁছে নিতে হবে।
  • মাশরুমের প্যাকেট পানিতে ৩০ মিনিটের জন্য ডুবিয়ে রাখতে হবে। ৩০ মিনিট পরে পানি থেকে মাশরুমের প্যাকেট উঠিয়ে নিতে হবে।
  • অতিরিক্ত পানি ঝরানোর জন্য মাশরুমের প্যাকেট ৫ থেকে ১০ মিনিট উপুড় করে রাখতে হবে। পানি ঝরে গেলে ঘরের নির্ধারিত জায়গায় রেখে দিতে হবে। প্রতিদিন এর উপর তিন থেকে চারবার করে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
  • সাধারণত ৩ থেকে ৪ দিন পর কাটা জায়গা থেকে অঙ্কুর গজায়। অঙ্কুর গজানোর পর মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
  • খাওয়ার উপযোগী মাশরুম উৎপন্ন হতে ৫ বা ৬ দিন সময় লাগে। খাবার উপযোগী মাশরুম উৎপন্ন হলে তা গোড়া থেকে তুলে নিতে হবে।
  • বীজের যে জায়গা কাটা হয়েছিল তা ব্লেড দিয়ে একটু চেঁছে দিতে হবে। এই বীজ থেকে আবার মাশরুম গজাবে।
  • একটা আধা কেজি ওজনের বীজ বা স্পন প্যাকেট থেকে ৩-৪ বার মাশরুম পাওয়া যায়। এতে মোট ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যাবে।

২য় পদ্ধতি

  • মাশরুম চাষ কেন্দ্র থেকে বীজ বা স্পন সংগ্রহ করতে হবে। এক কেজি ওজনের একটি বীজের পলিথিন খুলে ভিতরের কম্পোস্ট গুঁড়ো করে নিতে হবে।
  • দুই কেজি পরিমাণ ধানের পরিষ্কার ও শুকনো খড় সংগ্রহ করতে হবে। খড়গুলোকে এক ইঞ্চি মাপে কেটে টুকরা করতে হবে।
  • পরিমাণ মতো পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। খড়গুলো জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফুটন্ত পানিতে খড়ের টুকরোগুলো এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
  • খড়গুলো পানি থেকে তুলে চিপে পানি শূন্য করে একটি পাত্রে রাখতে হবে।
  • পাঁচটি পলিব্যাগ নিয়ে পলিব্যাগের ভেতরে প্রথমে কিছু খড় বিছিয়ে নিতে হবে। খড়ের উপর মাশরুম বীজের গুঁড়ো দিতে হবে। এভাবে একটি পলিব্যাগে চার স্তরে খড় আর মাশরুম বীজের গুঁড়ো বিছিয়ে দিতে হবে। শেষ স্তরে আবার খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
  • খড় বিছানো শেষ হলে খুব শক্ত করে পলিব্যাগ বাঁধতে হবে। এভাবে প্রতিটি পলিব্যাগ বাঁধতে হবে।
  • পলিব্যাগের চার দিকে ১০-১২টি ছিদ্র করতে হবে। এরপর ব্যাগগুলোকে বীজে পরিণত হওয়ার জন্য ১৫-১৮ দিন রেখে দিতে হবে।
  • ১৫-১৮ দিন পরে পলিব্যাগগুলো খুলে বীজের দলাগুলো বের করে নিতে হবে।
  • প্রতিটি বীজের দলা শিকায় করে ঝুলিয়ে রাখতে হবে এবং প্রতিদিন ৪-৫ বার করে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
  • ৩-৪ দিন পর চারদিক দিয়ে মাশরুমের অঙ্কুর গজাতে শুরু করবে। ৪-৬ দিন পর খাওয়ার উপযোগী মাশরুম গোড়া থেকে তুলে নিতে হবে।
  • এভাবে মাশরুম চাষে লাভ বেশি হবে। কারণ প্রতিটি পলিব্যাগ থেকে প্রায় আধা কেজি মাশরুম পাওয়া যাবে। সুতরাং পাঁচটি ব্যাগ থেকে প্রায় আড়াই কেজি মাশরুম উৎপন্ন হবে।

সাবধানতা

  • বীজ বা স্পনে কোনভাবেই সূর্যের আলো পড়তে দেওয়া যাবে না। সবসময় ঘরটি ঠান্ডা রাখতে হবে। খুব বেশি গরম পড়লে ঘরের চারদিকে বস্তা ঝুলিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
  • মাশরুম ঘর ও ঘরের বাইরের চারদিক সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অপরিচ্ছন্ন জায়গায় মাশরুম ফ্লাই নামের পোকা মাশরুমের ক্ষতি করে।
  • কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না।

Source: www.ajkerkrishi.com

ছাঁদ কৃষি এবং কৃষি কাজে কোকো পিটের ব্যবহার

COCO-PEAT

কোকো পিট একটি জৈব উপাদান যা নারিকেলের আঁশ এর থেকে বাছাই করা এক প্রকার গুঁড়ো উপাদান। এই জৈব উপাদান সম্পূর্ন স্বয়ংক্রিয় আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে ইলেকট্রিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এই কোকো পিটের ব্লক তৈরি করা হয়, যা আধুনিক কৃষি খামারীরা তাদের কৃষিজ খামারে ব্যবহার করে থাকেন।

কোকো পিট এর ব্যবহারঃ

কোকো পিট উন্নত বিশ্বে বীজ তলা তৈরি, হাইড্রপোনিক্স চাষাবাদ, বাড়ীর ছাদে বাগান করার পাশাপাশি অনেক দেশে মাটির বিকল্প মাটিতে তৈরিতে অন্যান্য জৈব উপাদানের সাথে সাথে এই কোকো পিট জৈব উপাদান মিশ্রণ করে থাকে। বাসা বাড়ীর ছাঁদে বাগান করার জন্য মাটি অনেক ওজন ধারণ করে থাকে এবং আমাদের দেশের শহরে বাগান করার জন্য  ভালো মানের মাটি সংগ্রহ করা একটি দূর্লভ কাজের মধ্যেই পরে। তাই আমাদের দেশেও খুব ধীর গতিতে হলেও এখন কোকো পিটের ব্যবহার শুরু হয়েছে।

বাসা বাড়ীর ছাঁদে বাগান করার জন্য এই কোকো পিটের ব্যবহার উন্নত বিশ্বে তেমন বেশী প্রচার করতে হয় না কিন্তু আমাদের দেশে এই কোকো পিটের ব্যবহারে এখনো মানুষের সচেতনা তেমন তৈরি হয়নি বিধায় মানুষ এখনো ছাঁদ বাগান করার জন্য এই কোকো পিট ব্যবহার শুরু করতে পারে নাই।

  • ছাঁদ বাগান করার জন্য এটি একটি খুবই ওজন কম এবং বেশী পরিমাণ জলীয় অংশ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ১০০% জৈব উপাদান।
  • কোকো পিটে প্রাকৃতিকভাবে অপকারী ব্যাকটেরিয়া এবং ফাঙ্গাস প্রতিরোধী উপাদান বিদ্যমান থাকে।
  • কোকো পিট হালকা এবং ঝুরঝুরে হবার কারনে এর ভিতরে খুব সহজে মাটিতে উদ্ভিদের জন্য খাদ্য তৈরিতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে।
  • কোকো পিটে প্রাকৃতিক মিনারেল থাকে যা উদ্ভিদের খাদ্য তৈরি এবং উপকারী অণুজীব সক্রিয় করার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • কোকো পিটের পি এইচ এর মাত্রা থাকে ৪.২ থেকে ৬.২ এবং এর ভেতরে ক্ষারত্ব সহনশীল পর্যায় থাকে বলে উন্নত বিশ্বে এই কোকো পিটের ব্যবহার সব চাইতে বেশী।
  • কর্পোরেট ফার্ম গুলো বীজ জার্মিনেশন থেকে শুরু করে মাটি ছাড়া চাষাবাদ করার জন্য এই কোকো পিট বহুল আলোচিত।
  • ওজনে হালকা হওয়াতে পরিবহণে সহজ তাই এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পরিবহণ এবং ছাঁদে বগান করার জন্য এই কোকো পিট অধিক ব্যবহার হয়।

বানিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে এখনো সেইভাবে কোকো পিট ব্যবহার শুরু হইনি তবে প্রাপ্তী এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা অনেক বেশী প্রয়োজন তবেই এর ব্যবহার দিন কে দিন বাড়বে। বাংলাদেশে খুব বেশী কোম্পানি এই কোকো পিট আমদানী করে না আর যারা করছে তারাও খুব বেশী মার্কেট না থাকার কারনে খুব বেশী পরিমাণ আমদানী করতে সাহস পায় না। আমাদের দেশে এর যপোযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত হলেই আমাদের দেশে এর ব্যপক সম্ভাবনা রয়েছে এবং দাম ও তখন অনেক কমে যাবে।

বর্তমানে নার্সারী গুলো ৫০ কেজি থেকে শুরু করে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকে যা সম্পূর্ন পি এইচ নিয়ন্ত্রন করা থাকে না এবং এর ভেতরে অনেক জলীয় অংশ থাকে বিধায় পরিমানে বেশী ক্রয় করেও শুঁকানোর পরে তা পরিমানে কমে যায় বিধায় ক্রেতা সাধারণত খুশী হতে পাড়ে না। আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস এই প্রচারণায় যে এর ব্যবহার শুরু হলেই এর বাণিজ্যিক আরো প্রসার ঘটবে এবং দাম ও কমে যাবে।

Source: http://www.ajkerkrishi.com/কৃষি-তথ্য/কৃষি-কাজে-কোকো-পিটের-ব্যব/

জলপাই

জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ

বন্যার পানি দাঁড়ায় না এমন উঁচু বা মাঝারী উঁচু জমি নির্বাচন করে আগাছা পরিষ্কারপূর্বক ভালভাবে চাষ দিতে হবে।

রোপণের সময়ঃ

মে-অক্টোবর মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে পানি সেরে সুব্যবস্থা থাকলে সারা বছরই চারা রোপণ করা যেতে পারে।

গর্ত তৈরিঃ

কলম রোপণের অন্তত ১৫-২০ দিন পূর্বে সোয়া ২৩ ফুট ×  সোয়া ২৩ ফুট দূরত্বে সোয়া তিন ফুট ×  সোয়া ৩ ফুট×  সোয়া ৩ ফুট আকারের গর্ত করে উন্মুক্ত অবস্থায় রাখতে হবে। কলম রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে গর্ত প্রতি ১৫-২০ কেজি পচা গোবর, ৩০০-৪০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০-৩০০ গ্রাম পটাশ, ২০০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০ গ্রাম দস্তা সার গর্তের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত বন্ধ করে রেখে দিতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।

চারা রোপণ ও পরিচর্যাঃ

গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর নির্বাচিত চারাটি গর্তের ঠিক মাঝখানে এমনভাবে বসাতে হবে, যেন চারার গোড়া ঠিক খাড়া থাকে এবং কোনভাবে আঘাত পাবার সম্ভাবনা না থাকে। চারা রোপণের পরপর পানি দিতে হবে এবং খুটিঁ ও বেড়া ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর ১-২ দিন অন্তর পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

জলপাই চাষে সার ব্যবস্থাপনা

ভাল ফলন ও উন্নত মানের জলপাই পেতে নিয়মিতভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে। বারি জলপাই-১ এর ক্ষেত্রেঃ

গাছের বয়স সারের পরিমাণ

শতকের জন্য

মন্তব্য
গোবর সার ইউরিয়া টিএসপি এমওপি
এক তিন বছর ১০.০০-১৫.০০ কেজি ৩০০.০০-৪০০.০০ গ্রাম ৩০০.০০-৪০০.০০ গ্রাম ৩০০.০০-৪০০.০০ গ্রাম
চার ছয় বছর ১৫.০০-২০.০০ কেজি ৪০০.০০-৬০০.০০ গ্রাম ৪০০.০০-৬০০.০০ গ্রাম ৪০০.০০-৬০০.০০ গ্রাম
সাত দশ বছর ২০.০০-৩০.০০ কেজি ৬০০.০০-৮০০.০০ গ্রাম ৬০০.০০-৮০০.০০ গ্রাম ৬০০.০০-৮০০.০০ গ্রাম
দশ বছরের ঊর্ধ্বে ৩০.০০-৪০.০০ কেজি ১.০০ কেজি ১.০০ কেজি ১.০০ কেজি

 

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

উল্লিখিত সার সমান তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি বর্ষার শুরুতে (বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য) মাসে, ২য় কিস্তি বর্ষার শেষে (ফল আহরণের পর) এবং শেষ কিস্তি শীতের শেষে (মাঘ-ফাল্গুন মাসে) প্রয়োগ করতে হবে। সারগুলো গাছের গোড়া থেকে প্রায় পৌণে দুইফুট থেকে সোয়া ৩ ফুট জায়গা ছেড়ে দিয়ে শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত এলাকা পর্যন্ত মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।

সেচ প্রয়োগ ও পানি নিষ্কাশনঃ

শুকনো আবহাওয়া ও খরা সহ্য করতে পারে বিধায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, মাটি ও গাছের বয়সের উপর ভিত্তি করে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। শীতকালে ৪-৫ সপ্তাহ ও গরমকালে ২-৩ সপ্তাহ পর পর সেচ দিলে ভাল হয়। ফল ধরার পর কমপক্ষে দুবার সেচ দিতে হবে। বর্ষা মৌসুমে গাছের গোড়ায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয় সে জন্য দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।

জলপাইয়ের পাতা পোড়া রোগ

রোগের লক্ষণঃ

এ রোগে আক্রান্ত হলে পাতায় প্রথমে হলুদ দাগ পড়ে পরে তা বাদামী হয় । পাতা শুকিয়ে যায়।

 

রোগের সমন্বিত ব্যবস্থাপনাঃ

রোগ দেখা দেয়ার পূর্বে করণীয়ঃ 

১.ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডাল পালা ও অতিঘন ডাল পালা ছাটাই করে পরিস্কার করে দিন
২. পরিস্কার করার পর একটি ছত্রাক নাশক ও একটি কীটনাশক দ্বারা পুরো গাছ ভালভাবে স্প্রে করুন
৩. নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করুন।

রোগ দেখা দেয়ার পর করণীয়ঃ

১. আক্রান্ত ডাল বা পাতা অপসারণ করা ২. ডাইথেন এম ৪৫ বা রিদোমিল গোল্ড ২ গ্রাম / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

জলপাইয়ের স্ক্যাব বা দাদ রোগ

রোগের লক্ষণঃ

এ রোগের আক্রমনে ফলে ছোট বা মাঝারি আকারের কাল দাগ পড়ে।

রোগ দেখা দেয়ার পূর্বে করণীয়ঃ 

১. গাছের পাতা শুকনো থাকা আবস্থায় বাগানের পরিচর্যা করা ও বাগান পরিচ্ছন্ন রাখা।

রোগ দেখা দেয়ার পর করণীয়ঃ

# টিল্ট ২৫০ ইসি ১০ লি. পানিতে ৫ মি.লি. মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করা

 

ফল সংগ্রহঃ

বর্ষার প্রারম্ভে এপ্রিল-মে মাসে গাছে ফুল আসে এবং শীতের পূর্বে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফল পাকে। পাকার পরও ফল সবুজ থাকে। তাই ফলের আকার বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে ফল সংগ্রহ করতে হবে।

সতর্কতাঃ

ডালপালায় ঝাকুনি দিয়ে ফল মাটিতে ফেললে ফল আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তবে গাছের নিচে জাল ধরে শাখায় ঝাকুনি দিয়েও ফল সংগ্রহ করা যায়।

ফলনঃ

ভাল যত্ন নিলে পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে প্রতি বছর ২০০-২৫০ কেজি ফল পাওয়া যায়।

জীবন্ত শিল্প বনসাই চাষ ও পরিচর্যা

বনসাই একটি জীবন্ত শিল্প। একটি শক্ত কান্ড বিশিষ্ট গাছকে একটি ছোট পাত্রে রেখে বছরের পর বছর একে বাঁচিয়ে রাখার শিল্পকেই বনসাই বলে। প্রাণের স্পন্দন আর শিল্পকর্মের নান্দনিকতা এক সুতোয় প্রকাশ পায় বলেই বনসাই জীবন্ত শিল্পকর্ম হিসেবে পরিচিত। নগরে ইটের স্থাপনার মধ্যে এক টুকরো সবুজের উপস্থিতি এবং স্বল্প পরিসরে সহজ যত্ন-আত্তিতে বনসাই সংগ্রহ করা যায় বলেই বৃক্ষপ্রিয় মানুষের কাছে বনসাইয়ের কদর যেন একটু বেশিই। বহু বছর আগে চীন দেশে এই শিল্পের সূচনা হলেও পরবর্তী আজকাল শৌখিন সংগ্রহের পাশাপাশি ঘর সাজাতে এবং অন্যান্য ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজে বনসাই ব্যবহার করা হয়। মূল গাছের সব বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রেখে, অগভীর ছোট পাত্রে বৃক্ষজাতীয় গাছের ক্ষুদ্র সংস্করণ গড়ে তোলার কাজকেই বনসাইশিল্প বলা হয়। ক্ষুদ্র এই সংস্করণটিই বনসাই হিসেবে পরিচিত।

গাছ নির্বাচন
যে সকল গাছের বৃদ্ধি ধীরে ধীরে হয়। গাছের কান্ড মোটা হয়। বছরে একবার পাতা ঝরে। গাছের বয়স হলে গাছের ছাল মোটা হয়। গাছের ঝুরি নামে এমন গাছ, শিকড় কেটে দিলে ঝুরি গাছের শিকড়ের কাজ করে। গাছ অনেকদিন সতেজ থাকে এবং গাছের বয়স অনুযায়ী বেঁচে থাকে। যেখানে বা যেদেশে বনসাই করা হবে সে স্থানের আবহাওয়া উপযোগী হতে হয়।

বাংলাদেশে বনসাই উপযোগী গাছ:
বট * বকুল * শিমুল * পাকুড় * তেতুল * শিবীষ * বাবলা * পলাশ * বিলিতি বেল * ছাতিম * হিজল * জাম *নিম * বেলি * গাব * শেফালী * পেয়ারা * হেওরা * ডালিম * তমাল * জাম্বুরা * কমলা * তুলসী * বহেরা * বরই * কামিনী * মেহেদী * কড়ই * অর্জুন * জারুল * জুনিপার * নরশিংধ * করমচা * লুকলুকি * কৃষ্ণচূড়া * কদবেল * দেবদারু * সাইকেশ * হরিতকি * কামরাঙা * আমলকি * নীলজবা * লালজবা * অশ্বথ বট * নুডা বট * পাকুর বট * কাঠলি বট * রঙ্গন ছোট * রঙ্গন বড় * নিম সুন্দরী * লাল গোলাপ * খই বাবলা * কনকচাঁপা * গোলাপজাম * পাথরকুচি * সাদা নয়নতারা * স্টার কুইন * বাগান বিলাস * হেলিকুনিয়া * লাল টাইমফুল * গোলাপিটা ফুল * ক্যাকটাস গোল * ক্যাকটাস লম্বা * পান বিলাস * লালা পাতাবাহার * লাল জামরুল * চায়না বাঁশ * সন্ধ্যা মালতী হলুদ * যজ্ঞ ডুমুর * আলমন্ডা ইত্যাদি।

নিজেই তৈরি করুন বনসাই:
যে গাছটির বনসাই তৈরি করবেন, সেটার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ভালভাবে জেনে নিন। নির্বাচিত গাছের বীজ থেকে চারা তৈরি করে নিতে পারেন অথবা নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে তা থেকে বনসাই তৈরি করতে পারেন। বনসাইয়ের মাটি তৈরির ক্ষেত্রে দো-আঁশ বা পলিমাটির সঙ্গে পরিমিত জৈব সার ব্যবহার করুন।
পানি নিষ্কাশন ও গাছের বৃদ্ধি রোধে বিশেষভাবে তৈরি টবেই বনসাইয়ের চারা রোপণ করতে হবে। এই টবের নিচের দিকে পানি নিষ্কাশনের এবং কিনারা বরাবর দুই বা ততোধিক ছিদ্র থাকে, যা তার পেঁচিয়ে গাছের বৃদ্ধি কমিয়ে রাখে।
কিছুদিন বৃদ্ধির পর গাছটির জন্য উপযুক্ত আকৃতি নির্ধারণ করে ডালপালায় তার পেঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি নিয়মিত অবাঞ্ছিত ডাল-পাতা ছাঁটাই করতে থাকুন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হবে আপনার বনসাইটি। ঢাকার পাশাপাশি রাজশাহীতেও বনসাইয়ের প্রসার ব্যাপক

মাটি তৈরি
বনসাই চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। এছাড়া এতে কম্পোস্ট সার, ইটের গুড়ো, বালি, পাথর এর গুড়ো,পোড়ামাটির গুড়ো,ছাই ইত্যাদি মেশানো উচিৎ। সম্ভব হলে এতে কেঁচো সার, গোবর সার ইত্যাদি মেশানো উচিৎ। মাটি এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে পানি নিষ্কাশন ভাল হয়।

চারা সংগ্রহ:
বনসাই এর জন্য চারা গাছ যে কোন স্থান থেকে সংগ্রহ করা যায়। বীজ থেকেও চারা সংগ্রহ করা যায়, আবার কলমের চারাও সংগ্রহ করা যায়। কলমের মধ্যে কাটিং,লেয়ারিং,এয়ার লেয়ারিং ইত্যাদি উপায়ে চারা সংগ্রহ করা যায়। নার্সারি থেকে চারা লাগানো যায়। আবার, বট, পাকুড়, অশ্বত্থ গাছের চারা পুরাতন দেয়াল,পুরাতন ইটের স্তুপ থেকেও সংগ্রহ করা যায়।

বনসাই এর পাত্র:
বনসাই এর জন্য তেমন বড় পাত্র লাগে না। অপেক্ষাকৃত অনেক ছোট পাত্রে বনসাই চাষ করা হয়। বনসাই এর টব বা পটের নিচে পানি নিষ্কাশন এর জন্য ছোট ছিদ্র থাকতে হয়।
একটু আন্তরিকতাপূর্ণ দেখভাল আপনার বনসাইটিকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি ঝামেলার দরকার হয় না।

বনসাইয়ের পরিচর্যার নিয়মসমূহ:
১. গাছকে নিয়মিত খাবার দিন। যেমন, কালো মাটি, বালু বা ইটের চূর্ণ, সরিষা বা নীলের খোসা ইত্যাদি।

২. বনসাই অতিরিক্ত পানিবদ্ধতা এবং রোদ— কোনোটাই সহ্য করতে পারে না। তাই এ বিষয়ে খেয়াল রাখুন।

৩. বনসাই ধুলা-ময়লামুক্ত রাখতে পানি দিয়ে পাতা ও ডাল মুছে দিন।

৪. টবের মাটিতে পোকামাকড় কিংবা ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব হলে সঠিক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করুন।

৫. এমন স্থানে রাখুন, যেখানে আলো-বাতাস চলাচল করে কিন্তু লোকজনের যাওয়া-আসা কম।

৬. নির্ধারিত আকৃতি ঠিক রাখতে নির্ধারিত ডালপালা বাদে ছাঁটাই করুন।

৭. বেশি ব্যস্ত থাকলে সঠিক মাত্রায় তরল বা স্পেস সার প্রয়োগ করতে পারেন।

৮. অবশ্যই প্রতি এক বছর অন্তর টবের মাটি পরিবর্তন করুন।

৯. গাছের ছাঁটাইসহ অন্যান্য কাজে বনসাই পরিচর্যার জন্য নির্ধারিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করুন।

বনসাই ক্রয়কালে খেয়াল রাখুন—
#বনসাইটির রুট বেইস ভালো কি না?
#প্রাকৃতিকভাবেই গাছটি সৌন্দর্য প্রকাশ করছে কি না।
#গাছের বাকলে বয়সের ছাপ স্পষ্ট কি না। ভালো
#বনসাইয়ের মূল কাণ্ড মসৃণ ও দাগমুক্ত হয়।
#বনসাইটি আদি বৃক্ষের বৈশিষ্ট্য বহন করে কি না।

কীভাবে চাষ করবেন
সাধারণত বনসাইয়ের চারা বা গাছ নির্বাচন করা জরুরি। কারণ সঠিকভাবে গাছ নির্বাচন না করলে বনসাই বেশি দিন টিকে থাকে না। বনসাইয়ের জন্য ফলদ ও বনজ গাছ নির্বাচন করতে পারেন। বনসাই তৈরির জন্য উপযুক্ত প্রজাতির গাছ হলোÑ বট, পাকুর, হিজল, অশ্বথ, ডুমুর, ডালিম, কদম, বাগানবিলাস, বোতল ব্রাশ, নিম, জামরুল, তেঁতুল, করমচা ও কৃষ্ণচূড়া ইত্যাদি। আর টবের মধ্যে দোআঁশ মাটির সাথে জৈবসার মিশিয়ে বনসাইয়ের মাটি তৈরি করা হয়। টবের পানি নিষ্কাশনের ছিদ্রের ওপর ইটের কুচির পরিবর্তে এক টুকরা তারের জালি রেখে তা কিছু কাঁকর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। রোদ নেই কিন্তু আলো-বাতাস আছে এমন জায়গায় রাখতে হবে।

উপকরণ
বনসাই গাছের জন্য প্রাথমিকভাবে যে জিনিসটি দরকার তা হলো পট। পট না হলে চারা কোথায় তৈরি বা গাছ কোথায় রাখবেন। বনসাইয়ের জন্য ঢাকায় ভালো পট না পেলেও রাজশাহীতে পাওয়া যায় এবং খুব মজবুতও। এরপর বনসাইয়ের ডাল কাটার জন্য সিকেচার, পাতা কাটার জন্য কাঁচি, ডালের গোড়া সরানোর জন্য কনকেক এবং তার কাটার জন্য ওয়্যার টাকার প্রয়োজন বলে জানান জাতীয় উদ্যান ও বলধা বাগানের ফরেস্ট অফিসার মজিবুর রহমান।

স্থান নির্বাচন
বনসাই চাষ করতে চাইলে স্থান নির্বাচনের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ আলো-বাতাসের অভাবে গাছ মারা যেতে পারে। আবার রোদ আছে এমন জায়গায় বনসাই চাষ করা যাবে না। আলো-বাতাস আছে এমন স্থান নির্বাচন করাই বাঞ্ছনীয়। যেসব স্থানে বনসাই তৈরি করতে পারেন-ফ্ল্যাটের বারান্দায়, বাসার ছাদে অথবা পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস ঢোকে এমন ঘরে। এক একটি বনসাই ১৪-১৮ ইঞ্চির মধ্যে রাখাই ভালো।

বনসাই তৈরির ধাপ
বনসাই তৈরির জন্য কা-, শেকড়, শাখা-প্রশাখা ও পাতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করাই যথেষ্ট নয়। টবের ছোট গাছে প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা বয়োবৃদ্ধ গাছের সুঠাম ভঙ্গিমায় আনার চেষ্টা করতে হবে বলে জানান বলধা বাগানের ফরেস্ট অফিসার মজিবুর রহমান।
তিনি আরো বলেন, বনসাইকে যে মডেলের রূপ দেয়া হবে তা স্থির করে শাখা বাছাই করা দরকার। জোড়া পাতার কক্ষ থেকে কা-ের দুই পাশের দুটি শাখা গজায়। বাছাই পদ্ধতি অনুসারে এর একটি রাখতে হবে।

শাখা ছাঁটাই
বনসাইয়ের বয়স ৩-৪ বছর হলে তখন প্রুনিংয়ের প্রয়োজন হয়। বাছাই করা মোটা শাখাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটতে হবে।
তার বাঁধা
কা- বা শাখাকে সুন্দর, ভঙ্গিমায় আনতে যেসব কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করা হয় তার বাঁধা তাদের মধ্যে অন্যতম। সরল শাখায় তার জড়িয়ে আঁকাবাঁকা রূপ দেয়া যায়।

উপার্জন
বাংলাদেশে একটা সময় বনসাই দুর্লভ ছিল। বর্তমানে অনেকেই বনসাই করছেন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে মানুষ ভালোবাসে। শখের নেশা থেকে পেশা হিসেবে ক্যারিয়ারের জন্য অল্প বিনিয়োগ করে ভালো আয় করতে পারেন বনসাই তৈরি করে। এ পেশায় বাড়িতে বসে ৫০০০ থেকে ৮০০০ টাকা বিনিয়োগ করে মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। বনসাইয়ের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন, কারণ এরাই মূলত আপনার ক্রেতা। যেমন হাসপাতাল, ব্যাংক, রেস্তোরাঁ, বহুজাতিক কোম্পানি, শপিং কমপ্লেক্স সাজানোর জন্য বনসাই প্রয়োজন হয়।

ভালো করতে হলে
বনসাই একটি সৃষ্টিশীল কাজ। এর মাধ্যমে আনন্দ পাওয়া যায়। বনসাই করতে হলে শ্রম দিতে হবে। এর সাথে সব সময় লেগে থাকতে হবে। বনসাই যেমন কঠিন আবার তেমনি সহজ। প্রশিক্ষণ ছাড়া বনসাই করা সম্ভব নয়। এর সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে সফলতা পাওয়া কঠিন। তরুণ-তরুণীদের বর্তমানে বনসাইয়ের প্রতি বেশ ঝোঁক রয়েছে। তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করলে সফলতা পাবে নিশ্চিত।
প্রশিক্ষণ পেতে যোগাযোগ করতে পারেন, রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন কিংবা জাতীয় উদ্যান ও বলধা বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে।

বনসাই তৈরির কিছু বিশেষ কলা-কৌশল রয়েছে। যেমন প্রুনিং, লিফট্রিমিং, ওয়াইরিং, ক্লাম্পিং, গ্রাফিটং, ডিফলিয়েশন প্রভৃতি। বনসাই তৈরির জন্য পট বা ‘ট্রে’ নির্বাচনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পট গোলাকার, ডিম্বাকার, বর্গাকার ইত্যাদি বিভিন্ন আকারের হয়। চীনে কাঠের পাত্র বা রৌপ্য নির্মিত পাত্রে বনসাই তৈরির ঐতিহ্য রয়েছে।

Image may contain: plant, tree and outdoor
txd-hybrid-coconut-plant-seeding-500x500

খাটো জাতের হাইব্রিড নারিকেল চাষ

এই লিংকে ক্লিক করুন>>খাটো জাতের হাইব্রিড নারিকেল চাষ

Source of content: AIS Website(http://www.ais.gov.bd/site/page/287a5e52-c038-4e38-bf3f-db23467507dc/খাটো-জাতের-নারিকেল-চাষ”)
Source of featured image: https://www.indiamart.com/proddetail/txd-hybrid-coconut-plant-seeding-6261552691.html

স্টার আপেল: দেশে চাষযোগ্য বিদেশি ফল

star-apple

স্টার আপেল গ্রীস্মম-লীয় ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Chrysophyllum cainito L.। এটি মূলত সফেদা গোত্রের একটি সুস্বাদু ফল। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিদ্যমান দুর্লভ গাছসমূহের মধ্যে একটি হলো স্টার আপেল। এর কয়েকটি গাছ রয়েছে কৃষি অনুষদের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সামনে। গাছগুলো বেশ বড়। সবুজ আপেলের মতো ফল ধরে। ফলগুলো পাকলে হাল্কা বেগুনি রঙ ধারন করে। ফলের ভিতরে মাঝে সাদা এবং চারপাশে উজ্জ্বল বেগুনি রঙ বিদ্যমান। ফলের ভিতরে চারটি বিচি থাকে, দেখতে গাবের বিচির মতো, তবে আকারে অনেক ছোট। ফলটি মিষ্টি স্বাদযুক্ত এবং খেতে বেশ সুস্বাদু। ফলের স্বাদ সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কখনো গাব কিংবা সফেদার স্বাদের মতো মনে হয়।

নামকরণ
স্পেনে এটাকে কাইমিটা বা এস্টেরেলা, ওয়েস্ট ইন্ডিজে পোম সুরেট, বারবাডোজে স্টার পাম, কলম্বিয়াতে কাইমো, আর্জেন্টিনাতে আগুয়ে বা অলিভোয়া, চীন বা সিঙ্গাপুরে এটাকে চিকল ডুরিয়ান বলা হয়। তবে এর ভেতরের বীজগুলো ও পাল্প স্টার এর মতো থাকায় সাধারণভাবে এটাকে স্টার আপেল বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এটি ভালোভাবেই অভিযোজিত।

উৎপত্তি ও বিস্তার
সাধারণভাবে স্টার আপেল সেন্ট্রাল আমেরিকার ফল বলা হলেও এ নিয়ে মতভেদ আছে। কারও মতে এর উৎপত্তি মেক্সিকো ও পানামা অথবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গুয়াতেমালা, উত্তর আর্জেন্টিনা, পেরু, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুজ, বারমুদা, হাইতি, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ও হাওয়াই প্রভতি অঞ্চলে বর্তমানে স্টার আপেল চাষ হয়।

গাছের বৈশিষ্ট্য
স্টার আপেল গাছ বৃহৎ আকারের শোভাময়ী বৃক্ষ। উচ্চতা সাধারণত ৮-৩০ মিটার, কা- ১-৩ মিটার, বাদামি রোমশ এবং শাখা কাটলে সাদা কষ বের হয়। পাতা দোরঙা। অর্থাৎ ওপরের পিঠ গাড় সবুজ ও নিচের পিঠ মেরুন বাদামি। পাতা কিছুটা ডিম্বকার, বর্শার ফলার মতো। এই গাঢ় সবুজ চর্মবৎ পাতার নিচের দিক খয়েরী রঙের সুক্ষ রোমযুক্ত। পাতা ৫-১০ সেমি. লম্বা ও ৪-১০ সেমি. চওড়া হয়ে থাকে। পত্র কক্ষে ছোট গুচ্ছে সবুজাভ হলুদ বর্ণের ফুল উৎপন্ন হয় যাতে ৫টি দল থাকে।

ফল গোলাকার কখনো সামান্য লম্বাটে, ৫-১০ সেমি. লম্বা এবং ৫-১০ সেমি. ব্যাসযুক্ত সবুজ থেকে বেগুনি বর্ণের হয়ে থাকে। ফলের ভিতরে নরম জিলেটিনযুক্ত দুগ্ধবৎ সাদা মিষ্টি স্বাদযুক্ত পরস্পর সংযুক্ত ৬-১১টি কোষ থাকে যা কেন্দ্রীয় অক্ষের চতুর্দিকে ঘনসন্নিবিষ্ট থাকে। আড়াআড়ি কাটলে এটা এ স্টার বা তারার মতো দেখায় বলে সম্ভবত এ ফলটিতে স্টার আপেল বলা হয়।

আবহাওয়া ও মাটি
স্টার আপেল ট্রপিক্যাল বা সাব ট্রপিক্যাল অঞ্চলে এলাকায় ৪২০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত জন্মাতে দেখা যায়। গরম আবহাওয়ায় এটা ভালো জন্মে। তাপমাত্রা হিমাংকের বা তার নিচে নেমে গেলে এ গাছ মারা যায়। স্টার আপেল যে কোন ধরনের সুনিষ্কাশিত গভীরতা সম্পন্ন বেলে থেকে এঁটেল মাটিতে চাষ করা যেতে পারে।

জাত
স্টার আপেল এর ফলত্বকের রঙ অনুসারে দুই ধরনের জাত দেখা যায়। একটি সবুজ ও অন্যটি বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। ভালো ফল ধরে এমন গাছ থেকে অঙ্গজ উপায়ে তৈরিকৃত কলম লাগানো ভালো। শাখা কলমের চারা ২-৪ বছর পর অপরদিকে বীজ এর চারায় ৭-১০ বছর বয়সে ফল দেয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্টার আপেল বীজ থেকে উৎপন্ন চারা ব্যবহার করা হয়। এর বীজে বেশ কয়েক মাস অংকুরোদগম ক্ষমতা থাকে এবং রোপণের পর দ্রুত (৭-১০ দিন) চারা গজায়। গুটি কলমে ৪-৭ মাসে শিকড় আসে। একই জাতের গাছের বীজ থেকে উৎপাদিত চারার উপর বাডিং বা গ্রাফটিং এর মাধ্যমে ও বংশবিস্তার করা যায়। বাডিং বা গ্রাফটিং এর চারা লাগানোর ১-২ বছর পরই গাছে ফল ধরতে শুরু করে অপরদিকে বীজ চারা থেকে রোপিত গাছ ৫ থেকে ১০ বছর পর ফল ধরে।

চাষাবাদ
ভালো নিকাশযুক্ত যে কোন রকম মাটিতে স্টার আপেল গাছ ভালো জন্মায়। ৬-৮ মিটার দূরে দূরে বর্গাকারে বা ষড়ভূজী পদ্ধতিতে অন্যান্য ফল যেমন আম লিচু ইত্যাদির মতো করে গাছ লাগানো যায়। মাঝারি আকারের গাছ বিধায় চারা লাগানোর আগে চারার জায়গায় ৪৫ সেন্টিমিটার (১ হাত) ব্যাসের ৪৫ সেমি. গভীর গর্ত করে তাতে ১ ঝুড়ি পচা আবর্জনা বা পুকুরের তলার সার মাটি, আধা  কেজি টি.এস.পি বা ১ কেজি এস.এম.পি অথবা ৩ কেজি হাড়ের গুঁড়া, ২৫০ গ্রাম এম.পি অথবা ২ কেজি চুলার ছাই দিয়ে তা ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে এবং তার ৭-১০ দিন পর চারা লাগাতে হবে।

সদ্য লাগানো চারা গাছে প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত সাপ্তাহিকভাবে নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। পরবর্তীতে মাটিতে রস না থাকলে সেচ দিতে হয়। তবে গাছে ফুল আসার পর পানি সেচ দিলে ফল ধারন বৃদ্ধি পায়। স্টার আপেল গাছে তেমন সার প্রয়োগ করা হয় না তবে দুর্বল মাটিতে সার প্রয়োগে ফলের আকার ও ফলন বাড়ে।

ফল সংগ্রহ
শীতের শেষ থেকে গ্রীস্মের প্রথম পর্যন্ত স্টার আপেল এর পাকা ফল সংগ্রহ করা যায়। তবে আমাদের দেশে চৈত্র মাসে (মার্চ-এপ্রিল) সবচেয়ে বেশি পাকা স্টার আপেল পাওয়া যায়। গাছ থেকে পাকা ফল এর রঙ কিছুটা হালকা হয়ে এলে আর ফলত্বক স্পঞ্জ এর মতো বা রাবার বলের মতো নরম হলে ফল সংগ্রহ করা হয়। কাঁচা ফলে আঠা ও কষ্টাভাব থাকে ফলে খাওয়া যায় না। গাছ থেকে সাবধানে পাড়তে হয় কেননা মাটিতে পড়লে নরম ত্বকের এ ফল ফেটে যায় ও বাজারমূল্য কমে যায়।

ফলন
একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ফলন্ত গাছ থেকে গাছের আকারভেদে প্রতিটি ৫০-১০০ গ্রাম ওজনের ১৫০০-৩০০০টি ফল পাওয়া যেতে পারে যার ওজন ৬০ থেকে ২৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণভাবে পাকা ফল ২-৩ দিন রাখা গেলেও নিম্ন তাপমাত্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত এ ফল সংরক্ষণ করা যায়। স্টার আপেল এর বীজ ও খোসা বাদে ভেতরের মাংসল অংশ খাওয়া যায়। পাকা ফলের মাঝ বরাবর ছুরি দিয়ে কেটে চামচ দিয়ে ভেতরের অংশ তুলে খেতে এটা খুবই সুস্বাদু। এর নরম শাঁস থেকে বীজ আলাদা করে ডেজার্ট হিসাবে ও সালাদের সাথে খাওয়া যায়। জ্যামাইকাতে এটাকে বিবাহ উৎসবে খাওয়া হয়। অনেকসময় স্ট্রবেরি ও ক্রীম সহযোগেও স্টার আপেল খাওয়া হয়।

ফলের পুষ্টিগুণ
এ ফলটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে প্রোটিন থাকে ০.৭২-২.৩৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৪.৬৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭.৪-১৭.৩ মিলি গ্রাম, ফসফরাস ১৫.৯-২২.০ মিলিগ্রাম ও আয়রন ০.৩০-০.৬৮ মিলিগ্রাম।

নানাবিধ ব্যবহার
স্টার আপেল গাছের কাঠ থেকে বিভিন্ন ধরনের দামি আসবাবপত্র তৈরি করা যায়। রাবার তৈরিতে এ গাছের নির্যাস ব্যবহার করা হয়। এ গাছের ব্যাপক ওষুধিগুণও রয়েছে। স্টার আপেল এর পাকা ফল খেলে ফুসফুসের প্রদাহ ও নিউমোনিয়া রোগের উপশম হয়। এর ফল ডায়াবেটিস রোগে ব্যবহৃত হয়। ভেনিজুয়েলাতে পাকস্থলী ও অন্ত্রের গোলযোগে কম পাকা ফল খাওয়া হয়। তবে এরূপ কাচা ফল বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। পানিতে ফুটানো ফলের খোসা, বাকল ও পাতার কষ পেক্টোরাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ট্যানিন সমৃদ্ধ বাকল উত্তেজক হিসেবে, ডায়রিয়া প্রতিরোধে, আমাশয়ে, রক্তপাত বন্ধে এবং গনোরিয়া রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। কিউবাতে এটা ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আজকাল প্রায়শই কিছু নার্সারির লোকেরা এ গাছকে আপেল গাছ বলে চালিয়ে দিচ্ছে। যে গাছটিকে আপেল গাছ বলা হচ্ছে, সেটি আপেল নয়, স্টার আপেল ফলের গাছ। এদেশে আপেল হবে না। কারণ আপেল জন্মাতে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় বরফ পড়তে হয়। স্টার আপেল দেখতেও অনেকটা সবুজ আপেলের মতো। তাই ওকে আপেলের ভাই বলা চলে। এ দেশে আপেল হয় না সত্য তবে স্টার আপেল হয়। গাজীপুরে বিএআরআইয়ের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রে স্টার আপেলের বয়সী গাছটাতে যেভাবে ডাল ভেঙে ফল ধরেছে, তাতে অবাক না হয়ে পারা যায় না। তা থেকে আশা করা যায় এ দেশে ও ভালো ফল ফলতে পারে।

পাহাড়ি অঞ্চলে স্টার আপেল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বসতবাড়িতেও শোভাময় এ গাছটি লাগানো যেতে পারে। সামনে আসছে বর্ষাকাল। দেশের বিভিন্ন নার্সারিতে এ গাছটির চারা পাওয়া যায়। আপনার বাগানবাড়ির শোভা বর্ধন ও বৈচিত্র্য আনার জন্য দু’ একটা স্টার আপেল গাছ বাড়ির আঙ্গিনায় লাগাতে পারেন।

সুত্রঃ AgriNews24.com

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, প্লাণ্ট প্যথলজি বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

ছাদে বাগান প্রযুক্তি

images23
ছাদে বাগান কাকে বলে
সাধারণত: পাকা বাড়ির খালি ছাদে অথবা বেলকনীতে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে ফুল, ফল, শাক-সবজির বাগান গড়ে তোলাকে ছাদে বাগান বলা হয়। ছাদে বাগান সৃজনের সময় খেয়াল রাখতে হবে বাগান সৃজনের জন্য ছাদের কোন প্রকার ক্ষতি যেন না হয়। এজন্য রোপনকৃত গাছের টব গুলো ছাদের বীম বা কলামে নিকটবর্তী স্থান বরাবর স্থাপন করতে হবে। ড্রাম অথবা টব স্থাপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এগুলো সরাসরি ছাদের উপরে বসানো না হয়। এতে ছাদ ড্যাম্প বা সেঁতসেঁতে হয়ে যেতে পারে। তাই রিং-এর উপর বা ইটের উপর এগুলো স্থাপন করলে নিচে দিয়ে আলো বাতাস চলাচল করবে এবং ছাদও ড্যাম্প হতে রক্ষা পাবে। নেট ফিনিসিং এর মাধ্যমেও ছাদকে ড্যাম্প প্রতিরোধ করা যায়।
ছাদে চাষ উপযোগী গাছ
ক) আম- বারি আম-৩ (আম্রপালি), বাউ আম-২ (সিন্দুরী);
খ) পেয়ারা- বারি পেয়ারা-২, ইপসা পেয়ারা-১;
গ) কুল- বাউ কুল-১, ইপসা কুল-১ (আপেল কুল) , থাই কুল-২;
ঘ) লেবু- বারি লেবু -২ ও ৩, বাউ কাগজি লেবু-১;
ঙ) আমড়া- বারি আমড়া-১, বাউ আমড়া-১;
চ) করমচা- থাই করমচা;
ছ) ডালিম- (দেশী উন্নত);
জ) কমলা ও মাল্টা – বারি কমলা-১, বারি মাল্টা – ১;
ঝ) জামরুল- বাউ জামরুল-১ (নাসপাতি জামরুল), বাউ জামরুল-২ (আপেল জামরুল) ইত্যাদি।
ঞ) সবজি- লাল শাক, পালং শাক, মুলা শাক, ডাটা শাক, কলমী শাক, পুইঁশাক, লেটুস, বেগুন, টমেটো, মরিচ ইত্যাদি।
ছাদে গাছ লাগানোর পদ্ধতি
ক) হাফ ড্রাম এর তলদেশে অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের জন্য ১ ইঞ্চি ব্যাসের ৫ / ৬ টি ছিদ্র রাখতে হবে।
খ) ছিদ্র গুলোর উপর মাটির টবের ভাঙ্গা টুকরো বসিয়ে দিতে হবে।
গ) ড্রামের তলদেশে ১ ইঞ্চি পরিমাণ ইটের খোয়া বিছিয়ে তার উপর বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
ঘ) সমপরিমাণ দোঁআশ মাটি ও পঁচা গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ড্রামটির দুই তৃতীয়াংশ ভরার পর হাফ ড্রাম অনুযায়ী ড্রাম প্রতি মিশ্র সার আনুমানিক ৫০-১০০ গ্রাম প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এবং সম্পুর্ণ ড্রামটি মাটি দিযে ভর্তি করে নিতে হবে।
ঙ) ১৫ দিন পর ড্রামের ঠিক মাঝে মাটির বল পরিমাণ গর্ত করে কাংখিত গাছটি রোপন করতে হবে। এ সময় চারা গাছটির অতিরিক্ত শিকড়/ মরা শিকড় সমূহ কেটে ফেলতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে মাটির বলটি যেন  ভেঙ্গে না যায়।
চ) রোপিত গাছটিতে খুটি দিয়ে বেধে দিতে হবে।
ছ) রোপনের পর  গাছের গোড়া ভালভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।
জ) সময়ে সময়ে প্রয়োজন মত গাছে পানি সেচ ও উপরি সার প্রয়োগ, বালাই দমন ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঝ) রোপনের সময় হাফ ড্রাম প্রতি ২/৩ টি সিলভা মিক্সড ট্যাবলেট সার গাছের গোড়া হতে ৬ ইঞ্চি দুর দিয়ে মাটির ৪ ইঞ্চি গভীরে প্রয়োগ করতে হবে।
ঞ) গাছের বাড়-বাড়তি অনুযায়ী ২ বারে টব প্রতি ৫০/১০০ গ্রাম মিশ্র সার প্রয়োগ করে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
ট) গাছের রোগাক্রান্ত ও মরা ডালগুলো ছাটাই করতে হবে এবং কর্তিত স্থানে বোর্দ পেষ্ট লাগাতে হবে।
বালাই দমন
বালাই দমনে পরিবেশ বান্ধব আইপিএম বা আইসিএম পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করে জৈব রাসায়নিক বালাই নাশক যেমন- নিমবিসিডিন, বাইকাও ব্যাবহার করা যেতে পারে।
মিলি বাগঃ পেয়ারা, কুল, লেবু, আম, করমচা, জলপাই, বেগুন প্রভৃতি গাছে এ পোকার আক্রমন দেখা যায়।
লক্ষনঃ পাতার নিচে সাদা তুলার মত দেখা যায়। পোকা উড়তে পারেনা। টিপ দিলে হলুদ পানির মত বের হয়ে আসে। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায়, পাতা ও ফল ঝরে পড়ে, ফলের আকার বিকৃত হয়ে যায় অনেক সময় পাতায় শুটি মোল্ড রোগের আক্রমন হয়।
দমনঃ হাত বাছাইয়ের মাধ্যমে পোকা দমন করতে হবে। প্রয়োজনে জৈব বালাই নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
সাদা মাছিঃ পেয়ারা, লেবু, জলপাই, বেগুন প্রভৃতি গাছে এ পোকার আক্রমন দেখা যায়।
লক্ষনঃ পাতার নিচে সাদা তুলার মত মাছি পোকা দেখা যায়। পোকা উড়তে পারে। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায়, পাতা ঝরে পড়ে, পরবর্তী মৌসুমে ফলের উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পায়। পাতায় শুটি মোল্ড রোগের আক্রমন হয়।
দমনঃ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হুইল পাউডার মিশিয়ে পাতার নিচে সেপ্র করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
শুটি মোল্ডঃ ছত্রাক দ্বারা সংগঠিত হয়। পাতার ওপর কাল কাল পাউডার দেখা দেয়।  গাছের ফলন ব্যহত হয়। আক্রমর ব্যাপক হলে পাতা ও ফল ঝরে যায়।
দমনঃ টিল্ট-২৫০ ইসি, প্রতি লিটার পানিতে ০.৫০ মিঃলিঃ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
সুত্রঃ www.krishibangla.com

মুগ সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা

আমাদের দেশের কৃষক ভাইদের মাঝে ফসল সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত যথোপযুক্ত জ্ঞান ও প্রয়োজনীয় উপকরণাদির অভাব থাকায় প্রতি বছর মোট উৎপাদিতফসলের ১০ শতাংশ ফসল বিনষ্ট  হয়। তাই একজন সচেতন কৃষি-ব্যবসায়ী এবং চাষির ফসল সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা স¤পর্কে সম্যক ধারণা রাখা খুবই জরুরী।

মুগকাটার উপযুক্ত সময়

  • মুগের ফল বা পড বাদামী/কালো রং ধারণ করলে বুঝতে হবে দানা পরিপক্ক (পাকা) হয়েছে।
  • জাত ভেদে পাকার পর ২-৩ বার মুগের ফল বা পড সংগ্রহকরতেহবে।
  •  অধিকাংশজাতে সব পড একই সাথে না পাকার কারণে ২-৩ বার সংগ্রহ করতে হয়।
  •  পাকা ফল বা পড সাধারণতঃ সকালে বা বিকালে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সংগ্রহ করা ভাল। শেষবার ফল বা পড গাছসহ কাচি দ্বারা কেটে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।

মাড়াই

  • সংগ্রহকৃত ফসল (ফল বা পড) তাড়াতাড়ি মাড়াই করার স্থানে নিতে হবে যাতে দানা ঝরে না যায়।
  • ফল বা পডগুলো/গাছগুলো ১-২ দিন ছড়িয়ে দিয়ে রোদে শুকোতে হবে।
  • হাতের তালুতে ফসলের ফল/পড নিয়ে ঘষা দিলে মচমচ শব্দ হলেই বুঝতে হবে যে মাড়াই এর সময় হয়েছে।
  •  ভালভাবে শুকানোর পর কাঠ বা বাঁশের লাঠি দ্বারা পিটিয়ে বা গরু কিংবা ট্রাক্টর/পাওয়ার টিলার/মেশিন দিয়ে মাড়াই করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাড়াইয়ের সময় দানা ভেঙ্গে ডাল বের না হয়।
  •  মাড়াইকৃত মুগবীজ ঝেরে বা বাতাসে উড়িয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

মুগবীজ শুকানো, ঝাড়াই ও বাছাই

  •  মাড়াইকৃত বীজ সংরক্ষণের আগে কয়েকদিন ভালভাবে রোদে শুকাতে হবে।
  •  সংরক্ষণের পূর্বে কুলারসাহায্যে দানাবাতাসেউড়িয়েপরিষ্কার করতেহবে।
  •  প্রয়োজনে চালুনী দিয়ে চেলে পুষ্ট দানা বাছাই করতেহবে।
  •  ধাতব পাত্র ছাড়া অন্য যে কোন পাত্রে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে রোদে শুকানোর পর বীজ ঠান্ডা করতে হবে।
  •  বীজ দাঁতে চিবিয়ে নিশ্চিত হোন যে, বীজগুলো ভালোমত শুকানো হয়েছে।
  •  সংরক্ষণের সময় বীজের আর্দ্রতা শতকরা ৮-৯ ভাগ থাকা উত্তম।

মুগবীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি

  •  পরিষ্কার বীজ ৩/৪টি রোদ দিয়ে শুকিয়ে গুদাম জাত করতে হবে।
  •  আর্দ্র ও পোকামাকড় মুক্ত পাত্রে শুকানো বীজ ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে।
  •  মাটির পাত্র যেমন মটকি/কলসি হলে বীজ সংরক্ষণের পূর্বে আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে নিতে হবে যাতে পাত্রের ভিতর বায়ু প্রবেশ করতে না পারে।
  • বীজসংরক্ষণের পর পাত্রের মুখ ভালভাবে বন্ধ করে দিতে হবে যাতে বায়ু প্রবেশ করতে না পারে।
  • বীজের পরিমান পাত্রের ধারন ক্ষমতার চেয়ে কম হলে বীজ এর উপর একটি মোটা পলিথিন বিছিয়ে উপরের ফাঁকা জায়গা শুকনো বালি, তুষ বা ছাই দিয়ে পাত্রটি ভর্তি করুন। পাত্রে বীজ রেখে পাত্রের মুখ ভালভাবে বন্ধ করতে হবে।
  • বীজ সংরক্ষণে পলিথিন ব্যাগ/ধাতব টিন বা ড্রাম ব্যবহার করা উত্তম।
  • যে পাত্রেই বীজ রাখা হোক না কেন তা মেঝে থেকে উপরে (চকি /মাচায়) রাখতে হবে।
  • সংরক্ষিত বীজ মাঝে মাঝে (বিশেষ করে বর্ষাকালে)রৌদ্রে শুকিয়ে স্ব স্ব পাত্রে পুনরায় রেখে দিতে হবে।

মুগ-এর বিপণন ও পরিবহন

মুগ দানা প্লাস্টিক/চটের বস্তায় ভরে গরুর গাড়ী, ভ্যান, নসিমন বা ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়ে থাকে। দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে বৃহত্তর বরিশালে কৃষকগণ মুগের বস্তা বা ঝুড়ি মাথায় করে অথবা নৌকায় করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে যায়। তবে পরিবহণের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন দানা কোন ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। দুরে পরিবহণের সময় বস্তা গুলি ত্রিপল দিয়ে ঢেঁকে নেওয়া ভাল যাতে বৃষ্টি কিংবা কুয়াশায় মুগদানার ক্ষতি না হয়।

Source: USAID Agricultutral Value Chains project