Author Archives: asma parvin

Management of BLB in Aman Rice

22490126_1563868040347269_8804196294439689585_n

“Severe attack of BLB (bacterial Blight of Rice) is detected and diagnosed in almost all Aman rice fields of Bangladesh. Almost all varieties are seen affected. Early sown crops (30 -40 days to mature) suffered less while late sown crops have severe attack. Severely affected crops appeared burnt. However, nothing to worry, we can manage BLB. The farmers are advised to practice wet and dry method. If you have water in the rice field, drain out and wait for 3-4 days. Afterwards apply potash @ 3 Kg per acre and re-water the field. If possible repeat the practice twice (with water only). This will reduce bacterial population in the soil and improve plant health. Additional measure is to apply Bactroban ( 4g per litre of water or 800g per 200L water for one acre of land). Bactroban is a bactericide marketed by Haychem Bangladesh. Alternatively, one can use Cuproxat 345SC (tri basic copper sulphate) (5ml dissolved in one Litre of water).”

Courtesy: Hon’ble Prof. Dr. M. Bahadur Meah Sir.

পাটের নতুন জাতের যাত্রা শুরু

পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করে উদ্ভাবিত নতুন জাত রবি–১ পরীক্ষামূলক চাষে কৃষকের মাঠে বড় হয়েছে। এখন চলছে তা কাটার ধুম। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার ফরিদপুরের নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের মানিকনগরের লক্ষ্মণ সেনের জমি থেকে তোলা l প্রথম আলো

পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের সাত বছরের মাথায় এই সাফল্যের প্রথম বাস্তব প্রয়োগ ঘটল। জিন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে রবি-১ নামে পাটের একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন মাকসুদুল আলমের অনুসারীরা। শুধু উদ্ভাবনই নয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের চারটি গবেষণাকেন্দ্রের মাঠে ও কৃষকের জমিতে এটি চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে। এর মধ্য দিয়ে পাটের নতুন যাত্রা শুরু হলো বলে মনে করা হচ্ছে।

পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে উদ্ভাবিত ওই জাত সাধারণ তোষা পাটের জাত থেকে কমপক্ষে ২০ শতাংশ বেশি ফলন দিয়েছে। এর উচ্চতা সাধারণ পাটের চেয়ে ২০ সেন্টিমিটার বেশি। আঁশের পরিমাণও বেশি, ২০ শতাংশ। সাধারণ তোষা পাট ১২০ দিন পর কাটতে হয়। নতুন এই জাত ১০০ দিনে কাটা যাবে। ২০ দিন বেঁচে যাওয়ায় একই জমিতে আমন চাষে সুবিধা পাবেন কৃষক। সাধারণ পাটের আগা চিকন ও গোড়া মোটা হয়, নতুন এই জাতের আগা-গোড়া সমান। এর আঁশের উজ্জ্বলতা বেশি বলে জানিয়েছেন পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।

পাটের এই নতুন জাত নিয়ে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল নেচার-এ গত জানুয়ারি মাসে একটি নিবন্ধ ছাপা হয়। নেচার প্ল্যান্টসে সেটিরই টুইটসংস্থাটির মহাপরিচালক ও নতুন জাত উদ্ভাবনের নেতৃত্বদানকারী গবেষক দলের প্রধান মনজুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রচলিত তোষা পাটের জিন কাঠামোয় সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে এই নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি তোষা পাটের চেয়ে মান ও গুণে ভালো। গত তিন বছরের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আমরা এ প্রমাণ পেয়েছি।’

মহাপরিচালক জানালেন, আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাঁরা এটি জাতীয় বীজ বোর্ডের কাছে অনুমোদনের জন্য দেবেন। প্রয়োজনীয় বীজ উৎপাদনের পর তা আগামী দু-এক বছরের মধ্যে সারা দেশের কৃষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাবে। গত ৩০ জানুয়ারি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার প্ল্যান্টসে এই নতুন জাত উদ্ভাবনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাসহ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব কর্তৃপক্ষ (আইপিও) কর্তৃক এর মেধাস্বত্বের প্রাথমিক অনুমোদন (কোড) পাওয়ার বিষয়টি জাতির সামনে তুলে ধরেন।

মাঠজোড়া সবুজের গালিচা

সরেজমিনে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল দিগন্তজোড়া পাট। দেখে মনে হয় সবুজের গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে বাতাস বয়ে যাওয়ায় হেলেদুলে ওঠে পাট পাতা ও গাছগুলো। এই মানিকনগর গ্রামেরই একজন কৃষক লক্ষ্মণ সেন। তিনি পাট চাষ করেন। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পশ্চিম পাশে তাঁর বাড়ি। বাড়ির পাশেই জমি। সে জমিতে এবারও পাট চাষ করেছেন তিনি।

পাশাপাশি কয়েক টুকরো জমিতে পাট রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু জমিতে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে সদ্য উদ্ভাবিত রবি-১ পাট রোপণ করা হয়েছে সারিবদ্ধভাবে। পাশের আরেক জমিতে লক্ষ্মণ সেন রোপণ করেছেন রবি-১ পাট, তবে সনাতনী পদ্ধতিতে বীজ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। এর পাশে ওই গ্রামের আরেক কৃষক মিলন খান রোপণ করেছেন ভারতীয় জেআরও-৫২৪ জাতের পাট, যেটা বাজারে বেশি প্রচলিত। পাশাপাশি তিনি প্রথাগত দেশি তোষা পাটের বীজ রোপণ করেছেন আরেকটি জমিতে।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে মানিকনগর গ্রামে পাশাপাশি রোপণ করা বিভিন্ন পাটের ফলন, বৃদ্ধি ও উৎকর্ষ যাচাই করে সাদা চোখেই ধরা পড়ল অনেক পার্থক্য।

দেখা গেল, দেশি তোষা ও ভারতীয় জাতের পাটগাছের তুলনায় রবি-১ পাটগাছগুলো বেশি সতেজ ও তাজা। রবি-১ পাটগাছগুলো গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত মোটামুটিভাবে একই প্রশস্তবিশিষ্ট, কিন্তু অন্য দুই জাতের গাছগুলোর কাণ্ড মোটা হলেও আগা ও গোড়ার দিকে চিকন।

ফরিদপুর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, ‘পাটের মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা’ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী উদ্ভাবিত রবি-১ জাতের এ পাট শুধু ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের মানিকনগর ও চৌশালা গ্রামের তিন কৃষকের মাধ্যমে চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মানিকনগরের কৃষক লক্ষ্মণ সেনের ৪৮ শতাংশ, চৌশালা গ্রামের ছেকেন শেখের ৩৬, একই গ্রামের নইমুদ্দিনের ৩০ শতাংশসহ মোট ১ একর ১৪ শতাংশ জমিতে এ পাট রোপণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে চৌশালা গ্রামের ছেকেন শেখের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পাট কাটা হচ্ছে। একই গ্রামের নইমুদ্দিনকে দেখা গেল পাট জাগ দেওয়ার পর আঁশ শুকানোর জন্য বাঁশ দিয়ে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন।

ছেকেনের স্ত্রী শাবান বেগম বলেন, ‘রবি পাট ভালো হইছে। যারাই জমির পাশ দিয়া যায়, তারাই বলে, কত সুন্দর আর ডাগর পাট হাইছে। আমাগো ওই জমিতে এর আগে এত ভালো পাট হয় নাই।’

পাটের আঁশ দেখে উৎফুল্ল কৃষক নইমুদ্দিন। বারবার এই প্রতিনিধিকে আঁশ ধরে দেখিয়ে বলছেন, ‘দেখেন, দেখেন আমার পাটের আঁশ কত ভালো হইছে। কত মোটা হইছে। রংটা কেমন ঝকঝক করতেছে সোনার লাহান।’

বীজ আমদানি কমবে

পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী শাহ মো. তামিম কবির বলেন, ‘আমরা পরীক্ষামূলক আবাদ করে দেখেছি, তোষা ও ভারতীয় পাটের চেয়ে রবি-১ পাটের ফলন বেশি। এক হেক্টর জমিতে তোষা পাটের গাছ হয়েছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৭২৭টি এবং ভারতীয় জাতের গাছ হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭২৭টি। আর রবি-১-এর গাছ হয়েছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৮টি।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, গাছের উচ্চতার দিকে থেকেও এগিয়ে রবি-১। গড়ে রবি-১ বীজের একটি গাছের উচ্চতা যেখানে ৩ দশমিক ৩০ মিটার, সেখানে তোষা ও ভারতীয় জাতের গাছের উচ্চতা যথাক্রমে ৩ দশমিক ১৫ ও ৩ দশমিক ১৪ মিটার। তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, রবি-১ পাট রোপণ করা হলে ফলন অন্য পাটের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ বেশি পাওয়া যাবে।’

প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম জানান, পাটের ফাইবার কোয়ালিটি ভালো হয় যদি আঁশে লিগনিনের পরিমাণ কম হয়। রবি-১ পাটে অন্য জাতের পাটের তুলনায় লিগনিনের পরিমাণ ২ শতাংশ কম হবে। এতে আঁশের মান ভালো হবে।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটের ৮৫ শতাংশ আসে তোষা জাত থেকে। আর তোষা জাতের জন্য যত বীজ দরকার হয়, তার ৮৫ শতাংশ ভারত থেকে আমদানি করা হয়। ভারত থেকে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার টন জেআরও-৫২৪ জাতের পাটবীজ আমদানি করতে হয়। কৃষক পর্যায়ে ওই বীজ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে বিক্রি হয়। রবি-১ জাতের পাটের বীজ কৃষক নিজেরা সংরক্ষণ করতে পারবেন। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে বলে মনে করছে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট।

মাকসুদুল আলমের উত্তরাধিকার

আশির দশকে দেশে প্রথম পাটের জিন সিকোয়েন্সিং বা জীবনরহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম। দেশি ও আন্তর্জাতিক পরিসরে বিজ্ঞান তখনো খুব একটা এগোয়নি বলে তাঁর সেই চেষ্টা সফল হয়নি। ২০১০ ও ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনষ্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী তোষা ও দেশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেন।

মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে পাটের নতুন এই জাত উদ্ভাবনের কাজ শুরু হয়েছিল। ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর মাকসুদুল আলমের মৃত্যুর পর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বর্তমান মহাপরিচালক মনজুরুল আলমের নেতৃত্বে নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ চলতে থাকে। সংস্থাটির নিজস্ব গবেষণাকেন্দ্রে দুই বছর পরীক্ষার পর এ বছর তা কৃষকের মাঠে চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে।

৯২ বছর বয়সী অধ্যাপক শামসুল আলম এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, মাঝখানে কয়েক বছর বিরতির পর আবারও বিশ্ববাজারে প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে পাটের চাহিদা বাড়ছে। রবি-১ নামে পাটের এই নতুন জাত বিশ্ববাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য ব্যবহার করতে হবে। দেশে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরে পাটের বাজার ধরতে হবে। তবেই এসব উদ্ভাবনের সফলতা কাজে লাগবে।

ইফতেখার মাহমুদ ও পান্না বালা
১৫ জুলাই ২০১৭, ০২:১১

জীবন্ত শিল্প বনসাই চাষ ও পরিচর্যা

বনসাই একটি জীবন্ত শিল্প। একটি শক্ত কান্ড বিশিষ্ট গাছকে একটি ছোট পাত্রে রেখে বছরের পর বছর একে বাঁচিয়ে রাখার শিল্পকেই বনসাই বলে। প্রাণের স্পন্দন আর শিল্পকর্মের নান্দনিকতা এক সুতোয় প্রকাশ পায় বলেই বনসাই জীবন্ত শিল্পকর্ম হিসেবে পরিচিত। নগরে ইটের স্থাপনার মধ্যে এক টুকরো সবুজের উপস্থিতি এবং স্বল্প পরিসরে সহজ যত্ন-আত্তিতে বনসাই সংগ্রহ করা যায় বলেই বৃক্ষপ্রিয় মানুষের কাছে বনসাইয়ের কদর যেন একটু বেশিই। বহু বছর আগে চীন দেশে এই শিল্পের সূচনা হলেও পরবর্তী আজকাল শৌখিন সংগ্রহের পাশাপাশি ঘর সাজাতে এবং অন্যান্য ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজে বনসাই ব্যবহার করা হয়। মূল গাছের সব বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রেখে, অগভীর ছোট পাত্রে বৃক্ষজাতীয় গাছের ক্ষুদ্র সংস্করণ গড়ে তোলার কাজকেই বনসাইশিল্প বলা হয়। ক্ষুদ্র এই সংস্করণটিই বনসাই হিসেবে পরিচিত।

গাছ নির্বাচন
যে সকল গাছের বৃদ্ধি ধীরে ধীরে হয়। গাছের কান্ড মোটা হয়। বছরে একবার পাতা ঝরে। গাছের বয়স হলে গাছের ছাল মোটা হয়। গাছের ঝুরি নামে এমন গাছ, শিকড় কেটে দিলে ঝুরি গাছের শিকড়ের কাজ করে। গাছ অনেকদিন সতেজ থাকে এবং গাছের বয়স অনুযায়ী বেঁচে থাকে। যেখানে বা যেদেশে বনসাই করা হবে সে স্থানের আবহাওয়া উপযোগী হতে হয়।

বাংলাদেশে বনসাই উপযোগী গাছ:
বট * বকুল * শিমুল * পাকুড় * তেতুল * শিবীষ * বাবলা * পলাশ * বিলিতি বেল * ছাতিম * হিজল * জাম *নিম * বেলি * গাব * শেফালী * পেয়ারা * হেওরা * ডালিম * তমাল * জাম্বুরা * কমলা * তুলসী * বহেরা * বরই * কামিনী * মেহেদী * কড়ই * অর্জুন * জারুল * জুনিপার * নরশিংধ * করমচা * লুকলুকি * কৃষ্ণচূড়া * কদবেল * দেবদারু * সাইকেশ * হরিতকি * কামরাঙা * আমলকি * নীলজবা * লালজবা * অশ্বথ বট * নুডা বট * পাকুর বট * কাঠলি বট * রঙ্গন ছোট * রঙ্গন বড় * নিম সুন্দরী * লাল গোলাপ * খই বাবলা * কনকচাঁপা * গোলাপজাম * পাথরকুচি * সাদা নয়নতারা * স্টার কুইন * বাগান বিলাস * হেলিকুনিয়া * লাল টাইমফুল * গোলাপিটা ফুল * ক্যাকটাস গোল * ক্যাকটাস লম্বা * পান বিলাস * লালা পাতাবাহার * লাল জামরুল * চায়না বাঁশ * সন্ধ্যা মালতী হলুদ * যজ্ঞ ডুমুর * আলমন্ডা ইত্যাদি।

নিজেই তৈরি করুন বনসাই:
যে গাছটির বনসাই তৈরি করবেন, সেটার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ভালভাবে জেনে নিন। নির্বাচিত গাছের বীজ থেকে চারা তৈরি করে নিতে পারেন অথবা নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে তা থেকে বনসাই তৈরি করতে পারেন। বনসাইয়ের মাটি তৈরির ক্ষেত্রে দো-আঁশ বা পলিমাটির সঙ্গে পরিমিত জৈব সার ব্যবহার করুন।
পানি নিষ্কাশন ও গাছের বৃদ্ধি রোধে বিশেষভাবে তৈরি টবেই বনসাইয়ের চারা রোপণ করতে হবে। এই টবের নিচের দিকে পানি নিষ্কাশনের এবং কিনারা বরাবর দুই বা ততোধিক ছিদ্র থাকে, যা তার পেঁচিয়ে গাছের বৃদ্ধি কমিয়ে রাখে।
কিছুদিন বৃদ্ধির পর গাছটির জন্য উপযুক্ত আকৃতি নির্ধারণ করে ডালপালায় তার পেঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি নিয়মিত অবাঞ্ছিত ডাল-পাতা ছাঁটাই করতে থাকুন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হবে আপনার বনসাইটি। ঢাকার পাশাপাশি রাজশাহীতেও বনসাইয়ের প্রসার ব্যাপক

মাটি তৈরি
বনসাই চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। এছাড়া এতে কম্পোস্ট সার, ইটের গুড়ো, বালি, পাথর এর গুড়ো,পোড়ামাটির গুড়ো,ছাই ইত্যাদি মেশানো উচিৎ। সম্ভব হলে এতে কেঁচো সার, গোবর সার ইত্যাদি মেশানো উচিৎ। মাটি এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যাতে পানি নিষ্কাশন ভাল হয়।

চারা সংগ্রহ:
বনসাই এর জন্য চারা গাছ যে কোন স্থান থেকে সংগ্রহ করা যায়। বীজ থেকেও চারা সংগ্রহ করা যায়, আবার কলমের চারাও সংগ্রহ করা যায়। কলমের মধ্যে কাটিং,লেয়ারিং,এয়ার লেয়ারিং ইত্যাদি উপায়ে চারা সংগ্রহ করা যায়। নার্সারি থেকে চারা লাগানো যায়। আবার, বট, পাকুড়, অশ্বত্থ গাছের চারা পুরাতন দেয়াল,পুরাতন ইটের স্তুপ থেকেও সংগ্রহ করা যায়।

বনসাই এর পাত্র:
বনসাই এর জন্য তেমন বড় পাত্র লাগে না। অপেক্ষাকৃত অনেক ছোট পাত্রে বনসাই চাষ করা হয়। বনসাই এর টব বা পটের নিচে পানি নিষ্কাশন এর জন্য ছোট ছিদ্র থাকতে হয়।
একটু আন্তরিকতাপূর্ণ দেখভাল আপনার বনসাইটিকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি ঝামেলার দরকার হয় না।

বনসাইয়ের পরিচর্যার নিয়মসমূহ:
১. গাছকে নিয়মিত খাবার দিন। যেমন, কালো মাটি, বালু বা ইটের চূর্ণ, সরিষা বা নীলের খোসা ইত্যাদি।

২. বনসাই অতিরিক্ত পানিবদ্ধতা এবং রোদ— কোনোটাই সহ্য করতে পারে না। তাই এ বিষয়ে খেয়াল রাখুন।

৩. বনসাই ধুলা-ময়লামুক্ত রাখতে পানি দিয়ে পাতা ও ডাল মুছে দিন।

৪. টবের মাটিতে পোকামাকড় কিংবা ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব হলে সঠিক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করুন।

৫. এমন স্থানে রাখুন, যেখানে আলো-বাতাস চলাচল করে কিন্তু লোকজনের যাওয়া-আসা কম।

৬. নির্ধারিত আকৃতি ঠিক রাখতে নির্ধারিত ডালপালা বাদে ছাঁটাই করুন।

৭. বেশি ব্যস্ত থাকলে সঠিক মাত্রায় তরল বা স্পেস সার প্রয়োগ করতে পারেন।

৮. অবশ্যই প্রতি এক বছর অন্তর টবের মাটি পরিবর্তন করুন।

৯. গাছের ছাঁটাইসহ অন্যান্য কাজে বনসাই পরিচর্যার জন্য নির্ধারিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করুন।

বনসাই ক্রয়কালে খেয়াল রাখুন—
#বনসাইটির রুট বেইস ভালো কি না?
#প্রাকৃতিকভাবেই গাছটি সৌন্দর্য প্রকাশ করছে কি না।
#গাছের বাকলে বয়সের ছাপ স্পষ্ট কি না। ভালো
#বনসাইয়ের মূল কাণ্ড মসৃণ ও দাগমুক্ত হয়।
#বনসাইটি আদি বৃক্ষের বৈশিষ্ট্য বহন করে কি না।

কীভাবে চাষ করবেন
সাধারণত বনসাইয়ের চারা বা গাছ নির্বাচন করা জরুরি। কারণ সঠিকভাবে গাছ নির্বাচন না করলে বনসাই বেশি দিন টিকে থাকে না। বনসাইয়ের জন্য ফলদ ও বনজ গাছ নির্বাচন করতে পারেন। বনসাই তৈরির জন্য উপযুক্ত প্রজাতির গাছ হলোÑ বট, পাকুর, হিজল, অশ্বথ, ডুমুর, ডালিম, কদম, বাগানবিলাস, বোতল ব্রাশ, নিম, জামরুল, তেঁতুল, করমচা ও কৃষ্ণচূড়া ইত্যাদি। আর টবের মধ্যে দোআঁশ মাটির সাথে জৈবসার মিশিয়ে বনসাইয়ের মাটি তৈরি করা হয়। টবের পানি নিষ্কাশনের ছিদ্রের ওপর ইটের কুচির পরিবর্তে এক টুকরা তারের জালি রেখে তা কিছু কাঁকর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। রোদ নেই কিন্তু আলো-বাতাস আছে এমন জায়গায় রাখতে হবে।

উপকরণ
বনসাই গাছের জন্য প্রাথমিকভাবে যে জিনিসটি দরকার তা হলো পট। পট না হলে চারা কোথায় তৈরি বা গাছ কোথায় রাখবেন। বনসাইয়ের জন্য ঢাকায় ভালো পট না পেলেও রাজশাহীতে পাওয়া যায় এবং খুব মজবুতও। এরপর বনসাইয়ের ডাল কাটার জন্য সিকেচার, পাতা কাটার জন্য কাঁচি, ডালের গোড়া সরানোর জন্য কনকেক এবং তার কাটার জন্য ওয়্যার টাকার প্রয়োজন বলে জানান জাতীয় উদ্যান ও বলধা বাগানের ফরেস্ট অফিসার মজিবুর রহমান।

স্থান নির্বাচন
বনসাই চাষ করতে চাইলে স্থান নির্বাচনের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ আলো-বাতাসের অভাবে গাছ মারা যেতে পারে। আবার রোদ আছে এমন জায়গায় বনসাই চাষ করা যাবে না। আলো-বাতাস আছে এমন স্থান নির্বাচন করাই বাঞ্ছনীয়। যেসব স্থানে বনসাই তৈরি করতে পারেন-ফ্ল্যাটের বারান্দায়, বাসার ছাদে অথবা পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো-বাতাস ঢোকে এমন ঘরে। এক একটি বনসাই ১৪-১৮ ইঞ্চির মধ্যে রাখাই ভালো।

বনসাই তৈরির ধাপ
বনসাই তৈরির জন্য কা-, শেকড়, শাখা-প্রশাখা ও পাতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করাই যথেষ্ট নয়। টবের ছোট গাছে প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা বয়োবৃদ্ধ গাছের সুঠাম ভঙ্গিমায় আনার চেষ্টা করতে হবে বলে জানান বলধা বাগানের ফরেস্ট অফিসার মজিবুর রহমান।
তিনি আরো বলেন, বনসাইকে যে মডেলের রূপ দেয়া হবে তা স্থির করে শাখা বাছাই করা দরকার। জোড়া পাতার কক্ষ থেকে কা-ের দুই পাশের দুটি শাখা গজায়। বাছাই পদ্ধতি অনুসারে এর একটি রাখতে হবে।

শাখা ছাঁটাই
বনসাইয়ের বয়স ৩-৪ বছর হলে তখন প্রুনিংয়ের প্রয়োজন হয়। বাছাই করা মোটা শাখাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটতে হবে।
তার বাঁধা
কা- বা শাখাকে সুন্দর, ভঙ্গিমায় আনতে যেসব কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করা হয় তার বাঁধা তাদের মধ্যে অন্যতম। সরল শাখায় তার জড়িয়ে আঁকাবাঁকা রূপ দেয়া যায়।

উপার্জন
বাংলাদেশে একটা সময় বনসাই দুর্লভ ছিল। বর্তমানে অনেকেই বনসাই করছেন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে মানুষ ভালোবাসে। শখের নেশা থেকে পেশা হিসেবে ক্যারিয়ারের জন্য অল্প বিনিয়োগ করে ভালো আয় করতে পারেন বনসাই তৈরি করে। এ পেশায় বাড়িতে বসে ৫০০০ থেকে ৮০০০ টাকা বিনিয়োগ করে মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। বনসাইয়ের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন, কারণ এরাই মূলত আপনার ক্রেতা। যেমন হাসপাতাল, ব্যাংক, রেস্তোরাঁ, বহুজাতিক কোম্পানি, শপিং কমপ্লেক্স সাজানোর জন্য বনসাই প্রয়োজন হয়।

ভালো করতে হলে
বনসাই একটি সৃষ্টিশীল কাজ। এর মাধ্যমে আনন্দ পাওয়া যায়। বনসাই করতে হলে শ্রম দিতে হবে। এর সাথে সব সময় লেগে থাকতে হবে। বনসাই যেমন কঠিন আবার তেমনি সহজ। প্রশিক্ষণ ছাড়া বনসাই করা সম্ভব নয়। এর সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকলে সফলতা পাওয়া কঠিন। তরুণ-তরুণীদের বর্তমানে বনসাইয়ের প্রতি বেশ ঝোঁক রয়েছে। তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করলে সফলতা পাবে নিশ্চিত।
প্রশিক্ষণ পেতে যোগাযোগ করতে পারেন, রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন কিংবা জাতীয় উদ্যান ও বলধা বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে।

বনসাই তৈরির কিছু বিশেষ কলা-কৌশল রয়েছে। যেমন প্রুনিং, লিফট্রিমিং, ওয়াইরিং, ক্লাম্পিং, গ্রাফিটং, ডিফলিয়েশন প্রভৃতি। বনসাই তৈরির জন্য পট বা ‘ট্রে’ নির্বাচনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পট গোলাকার, ডিম্বাকার, বর্গাকার ইত্যাদি বিভিন্ন আকারের হয়। চীনে কাঠের পাত্র বা রৌপ্য নির্মিত পাত্রে বনসাই তৈরির ঐতিহ্য রয়েছে।

Image may contain: plant, tree and outdoor

সময় ও খরচ বাঁচাবে উদ্ভাবিত ধান শুকানোর যন্ত্র

যন্ত্রটি সম্পর্কে প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহা বলেন, এ ড্রায়ারটি (শুকোনোর যন্ত্র) ব্লোয়ার, ভিতরের ও বাইরের খাঁচা, গরম বাতাস পরিবহন পাইপ এবং চুলার সমন্বয়ে গঠিত। দেশের কয়েকটি চাতাল মিলে এ ড্রায়ার পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে দেখা যায় যে এ ড্রায়ারে মাত্র ৩ থেকে ৫ ঘণ্টায় ৫০০ কেজি ধান শুকানো যায়। এতে ধান বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতাও প্রায় ৯০ ভাগ বজায় থাকে এবং চালের গুণগত মানও নিশ্চিত হয়। মাত্র দুজন লোক দিয়েই যন্ত্রটি পরিচালনা করা সম্ভব।

BAU-Pic-2

বর্তমানে দেশে প্রায় ৫৫.৫ মিলিয়ন টন ধান উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত ধানের বেশিরভাগই শুকানো হয় রোদে। এতে ধানকে চাল এবং চালকে ভাত করে খাবার টেবিলে পৌঁছাতে প্রায় ১৩ ভাগ ধানের অপচয় হয়। এছাড়াও বৃষ্টি বা মেঘলা দিনে ধান শুকানো কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। এ সমস্যা নিরসনের জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক উদ্ভাবন করেছেন বিএইউ-এসটিআর ড্রায়ার (ধান শুকানো যন্ত্র)। এ যন্ত্রের সাহায্যে স্বল্প সময় ও খরচে ধান শুকানো যাবে।

ধান শুকানোর যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের গবেষক অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহা ও তার গবেষক দল এবং গবেষণা প্রকল্পের ইন-কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ছিলেন অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল আলম।

যন্ত্রটি সম্পর্কে প্রকল্পের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহা বলেন, এ ড্রায়ারটি (শুকোনোর যন্ত্র) ব্লোয়ার, ভিতরের ও বাইরের খাঁচা, গরম বাতাস পরিবহন পাইপ এবং চুলার সমন্বয়ে গঠিত। দেশের কয়েকটি চাতাল মিলে এ ড্রায়ার পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে দেখা যায় যে এ ড্রায়ারে মাত্র ৩ থেকে ৫ ঘণ্টায় ৫০০ কেজি ধান শুকানো যায়। এতে ধান বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতাও প্রায় ৯০ ভাগ বজায় থাকে এবং চালের গুণগত মানও নিশ্চিত হয়। মাত্র দুজন লোক দিয়েই যন্ত্রটি পরিচালনা করা সম্ভব।

যন্ত্রের প্রধান উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, যন্ত্রটি দিয়ে কম সময়ে ও স্বল্প খরচে ধান শুকানো সম্ভব। এর মাধ্যমে ধানের আর্দ্রতা কমিয়ে উন্নত মানের চাল এবং বীজ বাজারজাতকরণ করা যায়। এছাড়া ফলনোত্তর অপচয় এবং শ্রম ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমানো সম্ভব। তিনি আরো বলেন, ২০১৫ সনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগ ইউএসএইড-ইউএসএ এবং ফিড দ্য ফিউচারের আওতায় ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েজ কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় গবেষণা শুরু করে। এতে সাফল্য আসে ২০১৬ সনের মাঝামাঝিতে। যন্ত্রের নামকরণ করা হয় বিএইউ-এসটিআর ড্রায়ার।

এই উদ্ভাবনী যন্ত্রের দাম ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তবে এতে ধান শুকানোর খরচ অনেক কম। একটি ড্রায়ারে প্রতিদিন ১ টন ধান শুকানো যায়। রাইস হাস্ক ব্রিকেট বা চারকোল (কয়েল খড়ি) এবং বিদ্যুৎ অথবা ডিজেল ইঞ্জিন দ্বারা চালিত হয় যন্ত্রটি। সারাদেশে এটি ছড়িয়ে দিলে কৃষকরা যেমন ন্যায্যমূল্য পাবেন, সেই সঙ্গে অনেক অপচয় রোধ হবে।

প্রকল্পের ইন-কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল আলম জানান, রোদে যদি ধান শুকাতে এক টাকা খরচ হয়, তাহলে এই যন্ত্রের সাহায্যে শুকাতে ৮৭ পয়সা লাগবে। এতে করে সময় ও শ্রম দুটিই সাশ্রয় হচ্ছে। এছাড়া তাপ উৎপাদনের জন্য কয়েল খড়ি ব্যবহার হয় বিধায় কোন রকম ধোঁয়া হয় না। ফলে অর্থনৈতিকভাবে এবং পরিবেশের জন্য এই ড্রায়ার কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

সূত্র: বাকৃবি গবেষকের সাফল্য, শাহীন সরদার, বাকৃবি প্রতিনিধি
Agri News 24.com; ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পুষ্টিগুণে এগিয়ে পাঙাশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা: একটি বিশেষ পুষ্টিগুণে পাঙাশ অন্য মাছের চেয়ে এগিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি গবেষকেরা দেখেছেন, পাঙাশ মাছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড (বা ইনডিসপেন্সেবল অ্যামাইনো অ্যাসিড) অনেক বেশি। এ কারণে পাঙাশে থাকা আমিষের মান উন্নত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা বলছেন, শস্যদানা, ফল বা সবজির চেয়ে উচ্চমানের আমিষ বেশি আছে মাছে। তাঁরা বলছেন, পাঙাশের মতো রুই ও তেলাপিয়াতেও উচ্চমানের আমিষ আছে।
পুষ্টিবিদেরা জানিয়েছেন, অ্যামাইনো অ্যাসিড আমিষ তৈরির মৌলিক উপাদান। অ্যামাইনো অ্যাসিড কোষের দেয়াল তৈরি, দেহের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। জন্ম থেকে ৬ মাস, ৬ মাস থেকে ৩ বছর এবং ৩ থেকে ১০ বছর—এই বয়সী শিশুর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অ্যামাইনো অ্যাসিডের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা আছে। পুষ্টিনীতি নির্ধারণ ও পুষ্টি পরিকল্পনা প্রণয়নে এই গবেষণা বড় ভূমিকা রাখবে বলে পুষ্টিবিদেরা মন্তব্য করেছেন। গবেষকেরা চাল, গম, মসুর, রুই, তেলাপিয়া ও
34df62fdcb17518323cb1599412f8c31-5

পাঙাশের আমিষের পরিমাণ নির্ণয় করেছেন। গবেষণা ফলাফল বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ হিসেবে প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা এলসিভিয়ার, তাদের ফুড কেমিস্ট্রি সাময়িকীতে। প্রধান গবেষক ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাজমা শাহিন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত এই ছয়টি খাদ্যে আমিষের পরিমাণ এবং কোন অ্যামাইনো অ্যাসিড কতটুকু আছে, তা চিহ্নিত করা ছিল এই গবেষণার লক্ষ্য। তাঁরা দাবি করেছেন, ডায়াস (ডাইজেস্টেবল ইনডিসপেন্সেবল অ্যামাইনো অ্যাসিড স্কোর) পদ্ধতি ব্যবহার করে পুষ্টিগুণ নির্ণয়ে এ ধরনের গবেষণা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এটাই প্রথম।
নাজমা শাহিন বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহায়তায় ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা ন্যাশনাল ফুড কম্পোজিশন টেবিল তৈরি করেছেন। দেশে পাওয়া যায় এমন ৩৮১টি খাদ্যের পুষ্টিগুণের বর্ণনা তাতে আছে। সেই পুষ্টিতথ্যকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য এই ছয়টি খাদ্যের আমিষ ও অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপাত্ত তাঁরা পৃথকভাবে বের করেছেন।
গবেষকেরা বলছেন, দেশের মানুষের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় শস্য দানার মধ্যে চাল, গম, মসুর এবং মাছের মধ্যে রুই, তেলাপিয়া, পাঙাশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। দেশের ৩০টি এগ্রো-ইকোলজিক্যাল জোনের ১৭টি থেকে চালের ১৭টি, গমের ২৫টি, মসুরের ২৪টি নমুনা এবং দেশের প্রধান ১১টি মাছের বাজার থেকে রুই, তেলাপিয়া ও পাঙাশের ১১টি করে নমুনা সংগ্রহ করেন। এসব নমুনা বিশ্লেষণ করা হয় ভারতের হায়দরাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশনে। গবেষকেরা প্রতিটি নমুনার আর্দ্রতা, শর্করা, আঁশ, লিপিড ও আমিষের পরিমাণ বের করেন। আমিষে ২০ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, এর মধ্যে কিছু অত্যাবশ্যকীয়। অধ্যাপক নাজমা শাহিন বলেন, কোন অ্যামাইনো অ্যাসিড কতটুকু আছে, তার ওপর নির্ভর করে আমিষের গুণমান। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মসুরে আমিষ বেশি, তবে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড কম। অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে পাঙাশের নমুনায়। এরপর তেলাপিয়া ও রুই মাছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সুপারিশে বলা হয়েছে, এক গ্রাম আমিষে ২৭৭ মিলিগ্রাম অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকা উচিত। পাঙাশের প্রতি গ্রামে আছে ৪৩০ মিলিগ্রাম।
জানার পর গবেষণার তথ্যকে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন পুষ্টিবিদ অধ্যাপক এম কিউ কে তালুকদার। কিছুটা সতর্ক অবস্থানে থেকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঙাশ অ্যামাইনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করে, এটা ভালো কথা। এই তথ্য যেমন জানা দরকার, তেমনি পাঙাশে চর্বি বেশি, সেই সতর্কতাও থাকা দরকার।’ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের শুরুতে বলা হয়েছে, সমৃদ্ধ জৈব ও কৃষিবৈচিত্র্য থাকার পরও অপুষ্টি দেশের জন্য বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে আছে। প্রবন্ধের শেষ দিকে বলা হয়েছে, ডায়াস পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনটি মাছের আমিষের মান নিয়ে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা অজানা ছিল।

সূত্র: প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭

ব্রোকলি খেলে যে ৭ উপকার

af2d786f81e3cb958e550bd5c7b303db-brokly

সালাদে ও রান্নায় এখন অনেকেই ব্রোকলি খান। এখন বাজারে প্রচুর ব্রোকলি পাওয়া যাচ্ছে। পুষ্টিবিদেরা ব্রোকলিকে দারুণ পুষ্টিকর সবজি বলেন। এতে দুর্দান্ত কিছু উপকারী উপাদান আছে, যা দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে পারে।
এতে প্রচুর ভিটামিন সি আছে। আমেরিকান ক্যানসার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তালিকায় ক্যানসার প্রতিরোধী দশম খাবার হিসেবে স্থান করে নিয়েছে ব্রোকলি।
পুষ্টিবিদদের তথ্য অনুযায়ী, ব্রোকলিতে আয়রনের পরিমাণ অনেক থাকে। ভিটামিন এ-এর একটি ভালো উৎস। এ ছাড়া এটি ত্বকের জন্য ভালো। কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে এতে। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।

ব্রোকলির সাত উপকার সম্পর্কে জেনে নিন:

১. ভিটামিন সি: লেবুর দ্বিগুণ ও আলুর সাত গুণ ভিটামিন সি ব্রোকলিতে। বলা হয়, যাঁদের ভিটামিন সি দরকার, তাঁরা অল্প করে হলেও ব্রোকলি প্রতিদিন খেতে পারেন।

২. ক্যানসার প্রতিরোধ: ব্রোকলির বিটা ক্যারোটিন ও সেলিনিয়াম যৌথ ও ভিটামিন সি প্রোস্টেট, কোলন, ফুসফুস, যকৃত, স্তন ও প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: সেলিনিয়াম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকায় ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে বাধা দেয়। সর্দি-কাশিও ঠেকাতে পারে ব্রোকলি।

৪. গ্যাসট্রাইটিস প্রতিরোধ: গ্যাসট্রিক আলসার ও গ্যাসট্রাইটিস প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর ব্রোকলি। বাঁধাকপির চেয়ে এতে অনেক বেশি ভিটামিন ইউ (মেথিওনাইনের উপজাত) থাকে। এতে সালফরাফেন নামের উপাদান থাকে যা গ্যাসট্রিক অ্যালসার ও ক্যানসার প্রতিরোধ করে।

৫. বয়স ঠেকাতে: শরীরে সক্রিয় অক্সিজেন প্রতিরোধ করে ও বিষমুক্ত করে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে সাহায্য করে ব্রোকলি।

৬. ত্বক সুন্দর করে: ব্রোকলিতে থাকা ভিটামিন সি ত্বক সুন্দর করে। এ ছাড়া এতে ডায়াটারি আঁশ থাকায় কোষ্ঠকাঠিণ্য প্রতিরোধ করে।

৭. ওজন নিয়ন্ত্রণে: ব্রোকলিতে চর্বি ও ক্যালরি কম কিন্তু আঁশ বেশি। তাই বেশি করে ব্রোকলি খেলে ক্ষতি নেই। বেশি লৌহ থাকায় ডায়েটের সময় ব্রোকলি থেকে ঝিম ধরা ভাব দূর হয়।

যেভাবে খাবেন: ব্রোকলি কেনার সময় সতেজ, শক্ত কুঁড়ি ও গাঢ সবুজ দেখে কিনতে হবে। ব্রোকলির শুধু কুঁড়ি অংশটি খেতে পারেন। আবার চাইলে নরম ডাঁটা অংশটুকু রাখতে পারেন। ডাঁটাতেও পুষ্টি আছে। ব্রোকলি রান্নার পাশাপাশি সালাদ ও মাংসের সঙ্গে রোস্ট করে খাওয়া যায়।

সূত্র: প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭

বোরো ধানের চিটা কমাতে করণীয়

15032233_1112162078903429_3758883572811805549_n

একটু সহজ করে বলতে চাই, আমরা জানি, ব্রি ধান২৮ এর গড় জীবনকাল ১৪০ দিন। মনেকরি, একজন কৃষক ২৫ নভেম্বর বীজতলায় বীজ বপন করল। ৪০ দিন বয়সের চারা মাঠে রোপন করেন (অর্থ্যাৎ ০৪ জানুয়ারি)। মূল জমিতে চারা লাগানোর পর থেকে সর্বোচ্চ কুশি স্তর পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৪০ দিন (অর্থ্যাৎ ১৫ ফেব্রæয়ারি)। অত:পর ধান গাছের প্রজনন পর্যায়ের কাইচ থোড় স্তর শুরু হয়। ধান গাছে কাইচ থোড় থেকে ফুল ফোটা স্তর পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৩০ দিন (অর্থ্যাৎ ১৫ মার্চ)। পরবর্তীতে ধান পাকা পর্যায়ের দুধ স্তর শুরু হয়ে পরিপক্কতায় পৌছাতে প্রায় ৩০ দিন সময় লাগে (অর্থ্যাৎ ১৫ এপ্রিল)। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রেক্ষিতে দেখা যায় জানুয়ারি মাস সবচেষে শীতল মাস। তাছাড়া এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি গরম থাকে। হাওর অঞ্চলে আগাম বোরো ধান আবাদ করলে অর্থ্যাৎ অক্টোবর মাসের শেষ দিকে বীজতলা এবং ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে মূল জমিতে রোপণ করলে নিশ্চিত অতিরিক্ত ঠান্ডা কালীন সময়ে (১৫ জানুয়ারি ) প্রজনন পর্যায়ের কাইচ থোড় স্তর আক্রান্ত হয় ফলে চিটা হয়। ঠান্ডাজনিত কারণে চিটা হলে আমরা এটাকে কোল্ড ইনজুরি বলে থাকি। আবার অনেক কৃষক ভাইয়েরা যদি একটু দেরিতে বোরো আবাদ করেন অর্থ্যাৎ জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে বা ফেব্রæয়ারি মাসের প্রথম দিকে তাহলে প্রজনন পর্যায়ের কাইচ থোড় স্তরটি অতি গরমকালীন সময়ে (১৫ মার্চ) গরমে আক্রান্ত হতে পারে। ফলে ধানে চিটা হতে পারে।
ব্রি ধান২৮, ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সমযে ৪৫ দিনের চারা রোপণ করলে সবচেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়। ব্রি ধান২৯, ২০ ডিসেম্বর হতে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৪৫ দিনের চারা রোপণ করলে চিটার পরিমান কম হয় এবং ফলন বেশি হয়। তাই ব্রি ধান২৯ এর বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ০৫ হতে ২৫ নভেম্বর এবং ব্রি ধান২৮ এর বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ১৫ থেকে ২৫ নভেম্বর। তাই, উফশী নাবী জাতগুলো ৫ নভেম্বর এবং আগাম জাতগুলো ১৫ নভেম্বর থেকে বীজ বপন শুরু করলে ফসলের থোড়/গর্ভাবস্থা ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিক্রম করতে পারে, ফলে ঠান্ডা বা গরমের কারণে ধান চিটা মুক্ত হবে এবং ফলন বেশি হবে।
মোদ্দাকথা হলো ধানের কাইচ থোড় থেকে ফুল স্তর পর্যন্ত সময়টুকু অতিরিক্ত ঠান্ডা (জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্রয়ারি) এবং অসহনীয় গরম (মার্চ থেকে মধ্য এপ্রিল) এ সময়ে ফ্রেমে যেন না পড়ে সেদিকে একটু বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

সূত্র: কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশিদ।

অধিক ধান উৎপাদনে এসআরআই পদ্ধতি

Rice

ধানচাষে কম খরচে, অতি যত্ন নিয়ে ও কম কৃষি উপকরণ ব্যবহার করে অধিক ধান উৎপাদন করার পদ্ধতিকে (System of Rice Intensification), এসআরআই, বাংলায় একে সমন্বিত ধানচাষ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বলা যেতে পারে। বলে। ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় উপকরণ কম ব্যবহার করে আধুনিক পদ্ধতিতে ধানচাষ করার কৌশল ১৯৮০ সালে উদ্ভাবন করেন মাদাগাস্কার বিজ্ঞানী ফাদার হেনরি ললানি। এই পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন, রোপণ, সেচ, সার, কীটনাশক কম লাগে। কিন্তু ধানের ফলন হয় বেশি।

এসআরআইয়ের বৈশিষ্ট্য : কৃষি উপকরণ কম লাগে। ফলে উৎপাদন খরচ কম হয়। ধান উৎপাদন বেশি হয়। সঠিক পরিমাণ সেচ, আগাছা দমনসহ বিভিন্ন কারণে ফলন বেশি হয়। অতি পরিচর্যা করা হয়। উৎপাদন সময় কম লাগে। অল্প বয়সের চারা রোপণ করা হয়। শ্রমিক কম লাগে। কম বয়সী চারা রোপণ করা হয়। জৈবসার প্রয়োগ করা হয়। পর্যায়ক্রমে জমি ভেজানো ও শুকানো হয়। বর্গাকারে চারা রোপণ করা হয়। যন্ত্র দিয়ে আগাছা দমন করা হয়। এটি একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি।

চারার বয়স : কম বয়সের ৩৫-৪০ দিনের চারা রোপণ করা হয়। এতে চারা শক্ত থাকে ফলে মারা যায় না এবং রোপণের পর আগাম থোড় বের হয় না। জলাবদ্ধ পদ্ধতির চেয়ে ১০-১৫ দিন আগে ধান পরিপক্ব হয়। সার ও সেচ কম লাগে। পোকা ও রোগ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। পরবর্তী ফসলের প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়।

রোপণ দূরত্ব : সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩৫-৪০ সেন্টিমিটার করে বর্গাকারে চারা রোপণ করা হয়। প্রতি গুছিতে একটি চারা রোপণ করা হয়। এতে গাছ পুষ্টি ও আলো-বাতাস বেশি পায়। কুশি বেশি, ফলন বেশি বীজ, সার ও সেচ কম লাগে। গুছিতে চারা বেশি দিলে পুষ্টি, পানি ও জায়গার জন্য প্রতিযোগিতা করে।

সার প্রয়োগ : রাসায়নিক সার কম দিয়ে জৈবসার বেশি দেয়া হয়। এতে মাটি, পানি ও বাতাসের পরিবেশ ভালো থাকে। উৎপাদন খরচ কমে। মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলির উন্নতি হয়। মাটির উর্বরতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। অণুজৈবিক কার্যাবলি বাড়ে। মাটির অমস্নত্ব নিয়ন্ত্রণ হয়। ফলন বেশি হয়।

আগাছা দমন : রাইচ উইডার দিয়ে আগাছা দমন করে মাটির সঙ্গে আগাছা মিশিয়ে দেয়া হয়। যা পচে জৈব সারের কাজ করে। সেচ ও নিকাশ দ্বারাও আগাছা দমন হয়। সনাতন পদ্ধতির মতো বার বার দমন করতে হয় না ফলে খরচ কমে।

পুষ্টি ব্যবস্থাপনা : ধানের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য মাটিতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকা দরকার। মাটিতে পুষ্টি উপাদান সরবরাহের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে জমিতে পর্যাপ্ত জৈবসার প্রয়োগ করা। সেচ ও নিকাশ করে জৈবসার মাটির সঙ্গে মেশাতে হবে। সেচ ও নিকাশের দ্বারা কোনো কোনো পুষ্টি গাছের জন্য সহজলভ্য হয়। মাটিতে পুষ্টি থাকা সত্ত্বেও কিছু পুষ্টি গাছ পানির অভাব গ্রহণ করতে পারে না।

এজন্য সেচ দিয়ে পুষ্টি গাছ সহজে শোষণ করতে পারে। পানি বেশি হলে কিছু পুষ্টি গাছ গ্রহণ করতে পারে না। জমি থেকে পানি নিকাশ করলে গাছ পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে। মাটিতে প্রাকৃতিক উপায়ে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার সবচেয়ে ভালো উপায় এসআরআই পদ্ধতিতে ধানচাষ করা। সনাতন পদ্ধতিতে ধানচাষে সবসময় প্লাবন পদ্ধতিতে সেচ দেয়া হয়। এসআরআই পদ্ধতিতে যখন গাছে পানির প্রয়োজন হবে ঠিক তখন যে পরিমাণ দরকার ঠিক সে পরিমাণই সেচ দেয়া হয়।

সূত্র: কৃষিবিদ ফরহাদ আহমেদ
লেখক: সম্পাদক, কৃষি প্রতিক্ষণ, বুধবার ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং