বোরো ধানের চিটা কমাতে করণীয় | ই-কৃষক

বোরো ধানের চিটা কমাতে করণীয়

15032233_1112162078903429_3758883572811805549_n

একটু সহজ করে বলতে চাই, আমরা জানি, ব্রি ধান২৮ এর গড় জীবনকাল ১৪০ দিন। মনেকরি, একজন কৃষক ২৫ নভেম্বর বীজতলায় বীজ বপন করল। ৪০ দিন বয়সের চারা মাঠে রোপন করেন (অর্থ্যাৎ ০৪ জানুয়ারি)। মূল জমিতে চারা লাগানোর পর থেকে সর্বোচ্চ কুশি স্তর পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৪০ দিন (অর্থ্যাৎ ১৫ ফেব্রæয়ারি)। অত:পর ধান গাছের প্রজনন পর্যায়ের কাইচ থোড় স্তর শুরু হয়। ধান গাছে কাইচ থোড় থেকে ফুল ফোটা স্তর পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৩০ দিন (অর্থ্যাৎ ১৫ মার্চ)। পরবর্তীতে ধান পাকা পর্যায়ের দুধ স্তর শুরু হয়ে পরিপক্কতায় পৌছাতে প্রায় ৩০ দিন সময় লাগে (অর্থ্যাৎ ১৫ এপ্রিল)। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রেক্ষিতে দেখা যায় জানুয়ারি মাস সবচেষে শীতল মাস। তাছাড়া এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি গরম থাকে। হাওর অঞ্চলে আগাম বোরো ধান আবাদ করলে অর্থ্যাৎ অক্টোবর মাসের শেষ দিকে বীজতলা এবং ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে মূল জমিতে রোপণ করলে নিশ্চিত অতিরিক্ত ঠান্ডা কালীন সময়ে (১৫ জানুয়ারি ) প্রজনন পর্যায়ের কাইচ থোড় স্তর আক্রান্ত হয় ফলে চিটা হয়। ঠান্ডাজনিত কারণে চিটা হলে আমরা এটাকে কোল্ড ইনজুরি বলে থাকি। আবার অনেক কৃষক ভাইয়েরা যদি একটু দেরিতে বোরো আবাদ করেন অর্থ্যাৎ জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে বা ফেব্রæয়ারি মাসের প্রথম দিকে তাহলে প্রজনন পর্যায়ের কাইচ থোড় স্তরটি অতি গরমকালীন সময়ে (১৫ মার্চ) গরমে আক্রান্ত হতে পারে। ফলে ধানে চিটা হতে পারে।
ব্রি ধান২৮, ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সমযে ৪৫ দিনের চারা রোপণ করলে সবচেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়। ব্রি ধান২৯, ২০ ডিসেম্বর হতে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৪৫ দিনের চারা রোপণ করলে চিটার পরিমান কম হয় এবং ফলন বেশি হয়। তাই ব্রি ধান২৯ এর বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ০৫ হতে ২৫ নভেম্বর এবং ব্রি ধান২৮ এর বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ১৫ থেকে ২৫ নভেম্বর। তাই, উফশী নাবী জাতগুলো ৫ নভেম্বর এবং আগাম জাতগুলো ১৫ নভেম্বর থেকে বীজ বপন শুরু করলে ফসলের থোড়/গর্ভাবস্থা ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিক্রম করতে পারে, ফলে ঠান্ডা বা গরমের কারণে ধান চিটা মুক্ত হবে এবং ফলন বেশি হবে।
মোদ্দাকথা হলো ধানের কাইচ থোড় থেকে ফুল স্তর পর্যন্ত সময়টুকু অতিরিক্ত ঠান্ডা (জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্রয়ারি) এবং অসহনীয় গরম (মার্চ থেকে মধ্য এপ্রিল) এ সময়ে ফ্রেমে যেন না পড়ে সেদিকে একটু বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

সূত্র: কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশিদ।

Leave a Reply