কৃষি সম্প্রসারন সংক্রান্ত ফ্যাক্টসীট | ই-কৃষক

Category Archives: কৃষি সম্প্রসারন সংক্রান্ত ফ্যাক্টসীট

Management of BLB in Aman Rice

22490126_1563868040347269_8804196294439689585_n

“Severe attack of BLB (bacterial Blight of Rice) is detected and diagnosed in almost all Aman rice fields of Bangladesh. Almost all varieties are seen affected. Early sown crops (30 -40 days to mature) suffered less while late sown crops have severe attack. Severely affected crops appeared burnt. However, nothing to worry, we can manage BLB. The farmers are advised to practice wet and dry method. If you have water in the rice field, drain out and wait for 3-4 days. Afterwards apply potash @ 3 Kg per acre and re-water the field. If possible repeat the practice twice (with water only). This will reduce bacterial population in the soil and improve plant health. Additional measure is to apply Bactroban ( 4g per litre of water or 800g per 200L water for one acre of land). Bactroban is a bactericide marketed by Haychem Bangladesh. Alternatively, one can use Cuproxat 345SC (tri basic copper sulphate) (5ml dissolved in one Litre of water).”

Courtesy: Hon’ble Prof. Dr. M. Bahadur Meah Sir.

জলপাই

জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ

বন্যার পানি দাঁড়ায় না এমন উঁচু বা মাঝারী উঁচু জমি নির্বাচন করে আগাছা পরিষ্কারপূর্বক ভালভাবে চাষ দিতে হবে।

রোপণের সময়ঃ

মে-অক্টোবর মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে পানি সেরে সুব্যবস্থা থাকলে সারা বছরই চারা রোপণ করা যেতে পারে।

গর্ত তৈরিঃ

কলম রোপণের অন্তত ১৫-২০ দিন পূর্বে সোয়া ২৩ ফুট ×  সোয়া ২৩ ফুট দূরত্বে সোয়া তিন ফুট ×  সোয়া ৩ ফুট×  সোয়া ৩ ফুট আকারের গর্ত করে উন্মুক্ত অবস্থায় রাখতে হবে। কলম রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে গর্ত প্রতি ১৫-২০ কেজি পচা গোবর, ৩০০-৪০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০-৩০০ গ্রাম পটাশ, ২০০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০ গ্রাম দস্তা সার গর্তের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত বন্ধ করে রেখে দিতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।

চারা রোপণ ও পরিচর্যাঃ

গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর নির্বাচিত চারাটি গর্তের ঠিক মাঝখানে এমনভাবে বসাতে হবে, যেন চারার গোড়া ঠিক খাড়া থাকে এবং কোনভাবে আঘাত পাবার সম্ভাবনা না থাকে। চারা রোপণের পরপর পানি দিতে হবে এবং খুটিঁ ও বেড়া ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর ১-২ দিন অন্তর পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

জলপাই চাষে সার ব্যবস্থাপনা

ভাল ফলন ও উন্নত মানের জলপাই পেতে নিয়মিতভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে। বারি জলপাই-১ এর ক্ষেত্রেঃ

গাছের বয়স সারের পরিমাণ

শতকের জন্য

মন্তব্য
গোবর সার ইউরিয়া টিএসপি এমওপি
এক তিন বছর ১০.০০-১৫.০০ কেজি ৩০০.০০-৪০০.০০ গ্রাম ৩০০.০০-৪০০.০০ গ্রাম ৩০০.০০-৪০০.০০ গ্রাম
চার ছয় বছর ১৫.০০-২০.০০ কেজি ৪০০.০০-৬০০.০০ গ্রাম ৪০০.০০-৬০০.০০ গ্রাম ৪০০.০০-৬০০.০০ গ্রাম
সাত দশ বছর ২০.০০-৩০.০০ কেজি ৬০০.০০-৮০০.০০ গ্রাম ৬০০.০০-৮০০.০০ গ্রাম ৬০০.০০-৮০০.০০ গ্রাম
দশ বছরের ঊর্ধ্বে ৩০.০০-৪০.০০ কেজি ১.০০ কেজি ১.০০ কেজি ১.০০ কেজি

 

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

উল্লিখিত সার সমান তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি বর্ষার শুরুতে (বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য) মাসে, ২য় কিস্তি বর্ষার শেষে (ফল আহরণের পর) এবং শেষ কিস্তি শীতের শেষে (মাঘ-ফাল্গুন মাসে) প্রয়োগ করতে হবে। সারগুলো গাছের গোড়া থেকে প্রায় পৌণে দুইফুট থেকে সোয়া ৩ ফুট জায়গা ছেড়ে দিয়ে শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত এলাকা পর্যন্ত মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।

সেচ প্রয়োগ ও পানি নিষ্কাশনঃ

শুকনো আবহাওয়া ও খরা সহ্য করতে পারে বিধায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, মাটি ও গাছের বয়সের উপর ভিত্তি করে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। শীতকালে ৪-৫ সপ্তাহ ও গরমকালে ২-৩ সপ্তাহ পর পর সেচ দিলে ভাল হয়। ফল ধরার পর কমপক্ষে দুবার সেচ দিতে হবে। বর্ষা মৌসুমে গাছের গোড়ায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয় সে জন্য দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।

জলপাইয়ের পাতা পোড়া রোগ

রোগের লক্ষণঃ

এ রোগে আক্রান্ত হলে পাতায় প্রথমে হলুদ দাগ পড়ে পরে তা বাদামী হয় । পাতা শুকিয়ে যায়।

 

রোগের সমন্বিত ব্যবস্থাপনাঃ

রোগ দেখা দেয়ার পূর্বে করণীয়ঃ 

১.ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডাল পালা ও অতিঘন ডাল পালা ছাটাই করে পরিস্কার করে দিন
২. পরিস্কার করার পর একটি ছত্রাক নাশক ও একটি কীটনাশক দ্বারা পুরো গাছ ভালভাবে স্প্রে করুন
৩. নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করুন।

রোগ দেখা দেয়ার পর করণীয়ঃ

১. আক্রান্ত ডাল বা পাতা অপসারণ করা ২. ডাইথেন এম ৪৫ বা রিদোমিল গোল্ড ২ গ্রাম / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।

জলপাইয়ের স্ক্যাব বা দাদ রোগ

রোগের লক্ষণঃ

এ রোগের আক্রমনে ফলে ছোট বা মাঝারি আকারের কাল দাগ পড়ে।

রোগ দেখা দেয়ার পূর্বে করণীয়ঃ 

১. গাছের পাতা শুকনো থাকা আবস্থায় বাগানের পরিচর্যা করা ও বাগান পরিচ্ছন্ন রাখা।

রোগ দেখা দেয়ার পর করণীয়ঃ

# টিল্ট ২৫০ ইসি ১০ লি. পানিতে ৫ মি.লি. মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করা

 

ফল সংগ্রহঃ

বর্ষার প্রারম্ভে এপ্রিল-মে মাসে গাছে ফুল আসে এবং শীতের পূর্বে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফল পাকে। পাকার পরও ফল সবুজ থাকে। তাই ফলের আকার বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে ফল সংগ্রহ করতে হবে।

সতর্কতাঃ

ডালপালায় ঝাকুনি দিয়ে ফল মাটিতে ফেললে ফল আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তবে গাছের নিচে জাল ধরে শাখায় ঝাকুনি দিয়েও ফল সংগ্রহ করা যায়।

ফলনঃ

ভাল যত্ন নিলে পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে প্রতি বছর ২০০-২৫০ কেজি ফল পাওয়া যায়।

পাটের নতুন জাতের যাত্রা শুরু

পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করে উদ্ভাবিত নতুন জাত রবি–১ পরীক্ষামূলক চাষে কৃষকের মাঠে বড় হয়েছে। এখন চলছে তা কাটার ধুম। ছবিটি গত বৃহস্পতিবার ফরিদপুরের নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের মানিকনগরের লক্ষ্মণ সেনের জমি থেকে তোলা l প্রথম আলো

পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনের সাত বছরের মাথায় এই সাফল্যের প্রথম বাস্তব প্রয়োগ ঘটল। জিন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে রবি-১ নামে পাটের একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন মাকসুদুল আলমের অনুসারীরা। শুধু উদ্ভাবনই নয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের চারটি গবেষণাকেন্দ্রের মাঠে ও কৃষকের জমিতে এটি চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে। এর মধ্য দিয়ে পাটের নতুন যাত্রা শুরু হলো বলে মনে করা হচ্ছে।

পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে উদ্ভাবিত ওই জাত সাধারণ তোষা পাটের জাত থেকে কমপক্ষে ২০ শতাংশ বেশি ফলন দিয়েছে। এর উচ্চতা সাধারণ পাটের চেয়ে ২০ সেন্টিমিটার বেশি। আঁশের পরিমাণও বেশি, ২০ শতাংশ। সাধারণ তোষা পাট ১২০ দিন পর কাটতে হয়। নতুন এই জাত ১০০ দিনে কাটা যাবে। ২০ দিন বেঁচে যাওয়ায় একই জমিতে আমন চাষে সুবিধা পাবেন কৃষক। সাধারণ পাটের আগা চিকন ও গোড়া মোটা হয়, নতুন এই জাতের আগা-গোড়া সমান। এর আঁশের উজ্জ্বলতা বেশি বলে জানিয়েছেন পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।

পাটের এই নতুন জাত নিয়ে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান জার্নাল নেচার-এ গত জানুয়ারি মাসে একটি নিবন্ধ ছাপা হয়। নেচার প্ল্যান্টসে সেটিরই টুইটসংস্থাটির মহাপরিচালক ও নতুন জাত উদ্ভাবনের নেতৃত্বদানকারী গবেষক দলের প্রধান মনজুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রচলিত তোষা পাটের জিন কাঠামোয় সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে এই নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি তোষা পাটের চেয়ে মান ও গুণে ভালো। গত তিন বছরের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আমরা এ প্রমাণ পেয়েছি।’

মহাপরিচালক জানালেন, আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাঁরা এটি জাতীয় বীজ বোর্ডের কাছে অনুমোদনের জন্য দেবেন। প্রয়োজনীয় বীজ উৎপাদনের পর তা আগামী দু-এক বছরের মধ্যে সারা দেশের কৃষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাবে। গত ৩০ জানুয়ারি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার প্ল্যান্টসে এই নতুন জাত উদ্ভাবনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাসহ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ৯ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব কর্তৃপক্ষ (আইপিও) কর্তৃক এর মেধাস্বত্বের প্রাথমিক অনুমোদন (কোড) পাওয়ার বিষয়টি জাতির সামনে তুলে ধরেন।

মাঠজোড়া সবুজের গালিচা

সরেজমিনে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের মানিকনগর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল দিগন্তজোড়া পাট। দেখে মনে হয় সবুজের গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে বাতাস বয়ে যাওয়ায় হেলেদুলে ওঠে পাট পাতা ও গাছগুলো। এই মানিকনগর গ্রামেরই একজন কৃষক লক্ষ্মণ সেন। তিনি পাট চাষ করেন। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পশ্চিম পাশে তাঁর বাড়ি। বাড়ির পাশেই জমি। সে জমিতে এবারও পাট চাষ করেছেন তিনি।

পাশাপাশি কয়েক টুকরো জমিতে পাট রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু জমিতে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের তত্ত্বাবধানে সদ্য উদ্ভাবিত রবি-১ পাট রোপণ করা হয়েছে সারিবদ্ধভাবে। পাশের আরেক জমিতে লক্ষ্মণ সেন রোপণ করেছেন রবি-১ পাট, তবে সনাতনী পদ্ধতিতে বীজ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। এর পাশে ওই গ্রামের আরেক কৃষক মিলন খান রোপণ করেছেন ভারতীয় জেআরও-৫২৪ জাতের পাট, যেটা বাজারে বেশি প্রচলিত। পাশাপাশি তিনি প্রথাগত দেশি তোষা পাটের বীজ রোপণ করেছেন আরেকটি জমিতে।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে মানিকনগর গ্রামে পাশাপাশি রোপণ করা বিভিন্ন পাটের ফলন, বৃদ্ধি ও উৎকর্ষ যাচাই করে সাদা চোখেই ধরা পড়ল অনেক পার্থক্য।

দেখা গেল, দেশি তোষা ও ভারতীয় জাতের পাটগাছের তুলনায় রবি-১ পাটগাছগুলো বেশি সতেজ ও তাজা। রবি-১ পাটগাছগুলো গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত মোটামুটিভাবে একই প্রশস্তবিশিষ্ট, কিন্তু অন্য দুই জাতের গাছগুলোর কাণ্ড মোটা হলেও আগা ও গোড়ার দিকে চিকন।

ফরিদপুর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, ‘পাটের মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা’ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী উদ্ভাবিত রবি-১ জাতের এ পাট শুধু ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের মানিকনগর ও চৌশালা গ্রামের তিন কৃষকের মাধ্যমে চাষ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মানিকনগরের কৃষক লক্ষ্মণ সেনের ৪৮ শতাংশ, চৌশালা গ্রামের ছেকেন শেখের ৩৬, একই গ্রামের নইমুদ্দিনের ৩০ শতাংশসহ মোট ১ একর ১৪ শতাংশ জমিতে এ পাট রোপণ করা হয়েছে।

সরেজমিনে চৌশালা গ্রামের ছেকেন শেখের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পাট কাটা হচ্ছে। একই গ্রামের নইমুদ্দিনকে দেখা গেল পাট জাগ দেওয়ার পর আঁশ শুকানোর জন্য বাঁশ দিয়ে ঝুলিয়ে দিচ্ছেন।

ছেকেনের স্ত্রী শাবান বেগম বলেন, ‘রবি পাট ভালো হইছে। যারাই জমির পাশ দিয়া যায়, তারাই বলে, কত সুন্দর আর ডাগর পাট হাইছে। আমাগো ওই জমিতে এর আগে এত ভালো পাট হয় নাই।’

পাটের আঁশ দেখে উৎফুল্ল কৃষক নইমুদ্দিন। বারবার এই প্রতিনিধিকে আঁশ ধরে দেখিয়ে বলছেন, ‘দেখেন, দেখেন আমার পাটের আঁশ কত ভালো হইছে। কত মোটা হইছে। রংটা কেমন ঝকঝক করতেছে সোনার লাহান।’

বীজ আমদানি কমবে

পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী শাহ মো. তামিম কবির বলেন, ‘আমরা পরীক্ষামূলক আবাদ করে দেখেছি, তোষা ও ভারতীয় পাটের চেয়ে রবি-১ পাটের ফলন বেশি। এক হেক্টর জমিতে তোষা পাটের গাছ হয়েছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৭২৭টি এবং ভারতীয় জাতের গাছ হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭২৭টি। আর রবি-১-এর গাছ হয়েছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫৮টি।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, গাছের উচ্চতার দিকে থেকেও এগিয়ে রবি-১। গড়ে রবি-১ বীজের একটি গাছের উচ্চতা যেখানে ৩ দশমিক ৩০ মিটার, সেখানে তোষা ও ভারতীয় জাতের গাছের উচ্চতা যথাক্রমে ৩ দশমিক ১৫ ও ৩ দশমিক ১৪ মিটার। তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, রবি-১ পাট রোপণ করা হলে ফলন অন্য পাটের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ বেশি পাওয়া যাবে।’

প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম জানান, পাটের ফাইবার কোয়ালিটি ভালো হয় যদি আঁশে লিগনিনের পরিমাণ কম হয়। রবি-১ পাটে অন্য জাতের পাটের তুলনায় লিগনিনের পরিমাণ ২ শতাংশ কম হবে। এতে আঁশের মান ভালো হবে।

বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটের ৮৫ শতাংশ আসে তোষা জাত থেকে। আর তোষা জাতের জন্য যত বীজ দরকার হয়, তার ৮৫ শতাংশ ভারত থেকে আমদানি করা হয়। ভারত থেকে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার টন জেআরও-৫২৪ জাতের পাটবীজ আমদানি করতে হয়। কৃষক পর্যায়ে ওই বীজ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে বিক্রি হয়। রবি-১ জাতের পাটের বীজ কৃষক নিজেরা সংরক্ষণ করতে পারবেন। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে বলে মনে করছে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট।

মাকসুদুল আলমের উত্তরাধিকার

আশির দশকে দেশে প্রথম পাটের জিন সিকোয়েন্সিং বা জীবনরহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম। দেশি ও আন্তর্জাতিক পরিসরে বিজ্ঞান তখনো খুব একটা এগোয়নি বলে তাঁর সেই চেষ্টা সফল হয়নি। ২০১০ ও ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনষ্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী তোষা ও দেশি পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন করেন।

মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে পাটের নতুন এই জাত উদ্ভাবনের কাজ শুরু হয়েছিল। ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর মাকসুদুল আলমের মৃত্যুর পর পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বর্তমান মহাপরিচালক মনজুরুল আলমের নেতৃত্বে নতুন জাত উদ্ভাবনের কাজ চলতে থাকে। সংস্থাটির নিজস্ব গবেষণাকেন্দ্রে দুই বছর পরীক্ষার পর এ বছর তা কৃষকের মাঠে চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে।

৯২ বছর বয়সী অধ্যাপক শামসুল আলম এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, মাঝখানে কয়েক বছর বিরতির পর আবারও বিশ্ববাজারে প্রাকৃতিক তন্তু হিসেবে পাটের চাহিদা বাড়ছে। রবি-১ নামে পাটের এই নতুন জাত বিশ্ববাজারের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য ব্যবহার করতে হবে। দেশে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরে পাটের বাজার ধরতে হবে। তবেই এসব উদ্ভাবনের সফলতা কাজে লাগবে।

ইফতেখার মাহমুদ ও পান্না বালা
১৫ জুলাই ২০১৭, ০২:১১

বহুগুণে গুণান্বিত কাসাভা

kasava-cover-pic20170408164820

আফ্রিকা মহাদেশের বেশির ভাগ মানুষ কাসাভা খেয়ে জীবন ধারণ করে। তবে বাংলাদেশে এখনো এটি নিতান্তই অপরিচিত। গুল্মজাতীয় এ উদ্ভিদটি বাংলাদেশে চাষ না হলেও পাহাড়ে-জঙ্গলে দীর্ঘদিন থেকে এ গাছ জন্মায়। স্থানীয়ভাবে কাসাভার ব্যবহার আছে অনেক আগে থেকেই। গ্রামের মানুষ কাসাভার কন্দকে ‘শিমুল আলু’ বলে। গাছটির পাতা অনেকটা শিমুল গাছের মতো দেখতে বলেই হয়তো এরকম নামকরণ।

পুষ্টিগুণ

কাসাভা আটার পুষ্টিগুণ গমের আটার চেয়ে অনেক বেশি। এই আটা থেকে রুটি ছাড়াও অনেক প্রকার সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়। কাসাভা ভিটামিনের দিক দিয়েও শীর্ষে। কাসাভার খাদ্যমানের মধ্যে প্রোটিন আছে ১০ শতাংশেরও বেশি। অ্যামাইনো অ্যাসিড ও কার্বোহাইড্রেট আছে যথাক্রমে ১০ ও ৩০ শতাংশ। আরো আছে ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজ। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কাসাভা আলুতে রয়েছে ৩৭ গ্রাম শর্করা, ১.২ গ্রাম আমিষ, ০.৩ গ্রাম চর্বি, ৩৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৭ মিলিগ্রাম আয়রন, ০.০৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ, ৩৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং ১৪৬ ক্যালরি খাদ্যশক্তি।

রোগ প্রতিরোধ

সব পুষ্টিগুণ মিলে সেলুলোজের সঙ্গে পাওয়া যাবে মিনারেল ও ফাইবার গ্লুটামিন। এর আঠালো অংশ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ উপশমের ক্ষেত্রে কাজ করে। কাসাভা ফাইবার বাড়তি কোলেস্টরলের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করে। এমনকি এটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।

বাজারজাত

সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে কাসাভা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাসাভা থেকে আটা ও স্টার্চ তৈরি করে বাজারজাতকরণের উদ্যোগে নিয়েছে।

kasava-pic-in-(1)-sm20170408164355

প্রক্রিয়াজাত

কাসাভা আলুকে প্রক্রিয়াজাত করে তা থেকে আটা ও স্টার্চ পাওয়া যায়। এই আটা দিয়ে রুটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাবার পাওয়া সম্ভব। প্রতি কেজি আলু থেকে আটা ও স্টার্চ মিলিয়ে প্রায় ৩৪০ গ্রাম পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব। এক হেক্টর জমি থেকে বছরে প্রায় ২৫.৫ মেট্রিক টন অর্থাৎ ৩ হাজার ৪০০ কেজি কাসাভা আটা ও স্টার্চ পাওয়া সম্ভব।

খাদ্যসামগ্রী
কাসাভার আটা দিয়ে রুটি ছাড়াও পাঁপর, চিপস, নুডলস, ক্র্যাকার্স, বিস্কুট, কেক, পাউরুটি ইত্যাদি তৈরি করা যায়। কাসাভা আলু যেমন সিদ্ধ করে খাওয়া যায়, তেমনই তরকারি করে মাছ-মাংসের সঙ্গে খাওয়া যায়।

kasava-pic-in-(2)20170408164734

সুত্রঃ www.jagonews24.com

০৮ এপ্রিল ২০১৭

মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা করবেন যেভাবে

পৃথিবীতে তিন ভাগ পানি আর এক ভাগ মাটি। সেই এক ভাগ মাটিতেই মানুষের বসবাস। তাই মাটিতেই নির্ভর করে মানুষের জীবিকা। ফলে মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা মানুষের প্রধান কাজ। ফসল ফলাতে মাটির গুরুত্ব অপরিসীম। মাটির গুরুত্ব বুঝেই এর আর্দ্রতা নির্ণয় করতে হয়।

Soil-in-(1)20170506161114

উত্তম মাটি ভালো ফসলের জন্য একান্ত জরুরি। কেননা বীজ বপন করা থেকে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত বিষয়টি নির্ভর করে জমি তৈরির উপর। জমির মাটি কীভাবে তৈরি করা হবে তা নির্ভর করে বীজের আকৃতির উপর এবং আর্দ্রতার উপর। অাসুন মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষার পদ্ধতিগুলো জেনে নেই।

পরীক্ষা পদ্ধতি

• প্রচলিত জ্ঞানের মাধ্যমে মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা করা যায়।
• মাটি হাতে মুঠি করে নিয়ে জোড়ে চাপ দিতে হবে।
• চাপ দেওয়ায় মাটি থেকে পানি বের হলে বুঝতে হবে মাটি এখনো ভেজা। ভেজা মাটি চাষের উপযোগী নয়।
• মাটি থেকে পানি বের না হলে তা চাকা বা বলের আকার ধারণ করে।
• মাটির চাকা কোমর সমান উচ্চতা থেকে ফেললে যদি ভেঙে না যায়; তখন বুঝতে হবে মাটি ভেজা।
• ভেজা মাটিতে লাঙ্গল চালাতে ২-৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
• মাটির বলটি যদি সম্পূর্ণ ভেঙে যায় তাহলে চাষ দেওয়া যাবে।
• মাটি যদি চাকা বা বল কোনোটির আকারই ধারণ না করে তাহলে বৃষ্টি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
• মাটির আর্দ্রতার জন্য সেচ দিয়ে জো বা রস আনতে হবে।

Soil-in-(2)20170506161109

উপকারিতা

• এ পরীক্ষার সাহায্যে কৃষক সঠিক সময়ে সুন্দর ও পরিপাটি করে জমি তৈরি করতে পারেন।
• যার ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আয় বৃদ্ধি সম্ভব।

সুত্রঃ www.jagonews24.com

০৬ মে ২০১৭, শনিবার

ব্রোকলি খেলে যে ৭ উপকার

af2d786f81e3cb958e550bd5c7b303db-brokly

সালাদে ও রান্নায় এখন অনেকেই ব্রোকলি খান। এখন বাজারে প্রচুর ব্রোকলি পাওয়া যাচ্ছে। পুষ্টিবিদেরা ব্রোকলিকে দারুণ পুষ্টিকর সবজি বলেন। এতে দুর্দান্ত কিছু উপকারী উপাদান আছে, যা দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে পারে।
এতে প্রচুর ভিটামিন সি আছে। আমেরিকান ক্যানসার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তালিকায় ক্যানসার প্রতিরোধী দশম খাবার হিসেবে স্থান করে নিয়েছে ব্রোকলি।
পুষ্টিবিদদের তথ্য অনুযায়ী, ব্রোকলিতে আয়রনের পরিমাণ অনেক থাকে। ভিটামিন এ-এর একটি ভালো উৎস। এ ছাড়া এটি ত্বকের জন্য ভালো। কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে এতে। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।

ব্রোকলির সাত উপকার সম্পর্কে জেনে নিন:

১. ভিটামিন সি: লেবুর দ্বিগুণ ও আলুর সাত গুণ ভিটামিন সি ব্রোকলিতে। বলা হয়, যাঁদের ভিটামিন সি দরকার, তাঁরা অল্প করে হলেও ব্রোকলি প্রতিদিন খেতে পারেন।

২. ক্যানসার প্রতিরোধ: ব্রোকলির বিটা ক্যারোটিন ও সেলিনিয়াম যৌথ ও ভিটামিন সি প্রোস্টেট, কোলন, ফুসফুস, যকৃত, স্তন ও প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: সেলিনিয়াম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে প্রচুর ভিটামিন এ থাকায় ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে বাধা দেয়। সর্দি-কাশিও ঠেকাতে পারে ব্রোকলি।

৪. গ্যাসট্রাইটিস প্রতিরোধ: গ্যাসট্রিক আলসার ও গ্যাসট্রাইটিস প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর ব্রোকলি। বাঁধাকপির চেয়ে এতে অনেক বেশি ভিটামিন ইউ (মেথিওনাইনের উপজাত) থাকে। এতে সালফরাফেন নামের উপাদান থাকে যা গ্যাসট্রিক অ্যালসার ও ক্যানসার প্রতিরোধ করে।

৫. বয়স ঠেকাতে: শরীরে সক্রিয় অক্সিজেন প্রতিরোধ করে ও বিষমুক্ত করে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে সাহায্য করে ব্রোকলি।

৬. ত্বক সুন্দর করে: ব্রোকলিতে থাকা ভিটামিন সি ত্বক সুন্দর করে। এ ছাড়া এতে ডায়াটারি আঁশ থাকায় কোষ্ঠকাঠিণ্য প্রতিরোধ করে।

৭. ওজন নিয়ন্ত্রণে: ব্রোকলিতে চর্বি ও ক্যালরি কম কিন্তু আঁশ বেশি। তাই বেশি করে ব্রোকলি খেলে ক্ষতি নেই। বেশি লৌহ থাকায় ডায়েটের সময় ব্রোকলি থেকে ঝিম ধরা ভাব দূর হয়।

যেভাবে খাবেন: ব্রোকলি কেনার সময় সতেজ, শক্ত কুঁড়ি ও গাঢ সবুজ দেখে কিনতে হবে। ব্রোকলির শুধু কুঁড়ি অংশটি খেতে পারেন। আবার চাইলে নরম ডাঁটা অংশটুকু রাখতে পারেন। ডাঁটাতেও পুষ্টি আছে। ব্রোকলি রান্নার পাশাপাশি সালাদ ও মাংসের সঙ্গে রোস্ট করে খাওয়া যায়।

সূত্র: প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭

বোরো ধানের চিটা কমাতে করণীয়

15032233_1112162078903429_3758883572811805549_n

একটু সহজ করে বলতে চাই, আমরা জানি, ব্রি ধান২৮ এর গড় জীবনকাল ১৪০ দিন। মনেকরি, একজন কৃষক ২৫ নভেম্বর বীজতলায় বীজ বপন করল। ৪০ দিন বয়সের চারা মাঠে রোপন করেন (অর্থ্যাৎ ০৪ জানুয়ারি)। মূল জমিতে চারা লাগানোর পর থেকে সর্বোচ্চ কুশি স্তর পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৪০ দিন (অর্থ্যাৎ ১৫ ফেব্রæয়ারি)। অত:পর ধান গাছের প্রজনন পর্যায়ের কাইচ থোড় স্তর শুরু হয়। ধান গাছে কাইচ থোড় থেকে ফুল ফোটা স্তর পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৩০ দিন (অর্থ্যাৎ ১৫ মার্চ)। পরবর্তীতে ধান পাকা পর্যায়ের দুধ স্তর শুরু হয়ে পরিপক্কতায় পৌছাতে প্রায় ৩০ দিন সময় লাগে (অর্থ্যাৎ ১৫ এপ্রিল)। এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রেক্ষিতে দেখা যায় জানুয়ারি মাস সবচেষে শীতল মাস। তাছাড়া এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি গরম থাকে। হাওর অঞ্চলে আগাম বোরো ধান আবাদ করলে অর্থ্যাৎ অক্টোবর মাসের শেষ দিকে বীজতলা এবং ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধে মূল জমিতে রোপণ করলে নিশ্চিত অতিরিক্ত ঠান্ডা কালীন সময়ে (১৫ জানুয়ারি ) প্রজনন পর্যায়ের কাইচ থোড় স্তর আক্রান্ত হয় ফলে চিটা হয়। ঠান্ডাজনিত কারণে চিটা হলে আমরা এটাকে কোল্ড ইনজুরি বলে থাকি। আবার অনেক কৃষক ভাইয়েরা যদি একটু দেরিতে বোরো আবাদ করেন অর্থ্যাৎ জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে বা ফেব্রæয়ারি মাসের প্রথম দিকে তাহলে প্রজনন পর্যায়ের কাইচ থোড় স্তরটি অতি গরমকালীন সময়ে (১৫ মার্চ) গরমে আক্রান্ত হতে পারে। ফলে ধানে চিটা হতে পারে।
ব্রি ধান২৮, ৩০ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সমযে ৪৫ দিনের চারা রোপণ করলে সবচেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়। ব্রি ধান২৯, ২০ ডিসেম্বর হতে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৪৫ দিনের চারা রোপণ করলে চিটার পরিমান কম হয় এবং ফলন বেশি হয়। তাই ব্রি ধান২৯ এর বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ০৫ হতে ২৫ নভেম্বর এবং ব্রি ধান২৮ এর বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো ১৫ থেকে ২৫ নভেম্বর। তাই, উফশী নাবী জাতগুলো ৫ নভেম্বর এবং আগাম জাতগুলো ১৫ নভেম্বর থেকে বীজ বপন শুরু করলে ফসলের থোড়/গর্ভাবস্থা ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা অতিক্রম করতে পারে, ফলে ঠান্ডা বা গরমের কারণে ধান চিটা মুক্ত হবে এবং ফলন বেশি হবে।
মোদ্দাকথা হলো ধানের কাইচ থোড় থেকে ফুল স্তর পর্যন্ত সময়টুকু অতিরিক্ত ঠান্ডা (জানুয়ারি থেকে মধ্য ফেব্রয়ারি) এবং অসহনীয় গরম (মার্চ থেকে মধ্য এপ্রিল) এ সময়ে ফ্রেমে যেন না পড়ে সেদিকে একটু বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

সূত্র: কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশিদ।

অধিক ধান উৎপাদনে এসআরআই পদ্ধতি

Rice

ধানচাষে কম খরচে, অতি যত্ন নিয়ে ও কম কৃষি উপকরণ ব্যবহার করে অধিক ধান উৎপাদন করার পদ্ধতিকে (System of Rice Intensification), এসআরআই, বাংলায় একে সমন্বিত ধানচাষ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বলা যেতে পারে। বলে। ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় উপকরণ কম ব্যবহার করে আধুনিক পদ্ধতিতে ধানচাষ করার কৌশল ১৯৮০ সালে উদ্ভাবন করেন মাদাগাস্কার বিজ্ঞানী ফাদার হেনরি ললানি। এই পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন, রোপণ, সেচ, সার, কীটনাশক কম লাগে। কিন্তু ধানের ফলন হয় বেশি।

এসআরআইয়ের বৈশিষ্ট্য : কৃষি উপকরণ কম লাগে। ফলে উৎপাদন খরচ কম হয়। ধান উৎপাদন বেশি হয়। সঠিক পরিমাণ সেচ, আগাছা দমনসহ বিভিন্ন কারণে ফলন বেশি হয়। অতি পরিচর্যা করা হয়। উৎপাদন সময় কম লাগে। অল্প বয়সের চারা রোপণ করা হয়। শ্রমিক কম লাগে। কম বয়সী চারা রোপণ করা হয়। জৈবসার প্রয়োগ করা হয়। পর্যায়ক্রমে জমি ভেজানো ও শুকানো হয়। বর্গাকারে চারা রোপণ করা হয়। যন্ত্র দিয়ে আগাছা দমন করা হয়। এটি একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি।

চারার বয়স : কম বয়সের ৩৫-৪০ দিনের চারা রোপণ করা হয়। এতে চারা শক্ত থাকে ফলে মারা যায় না এবং রোপণের পর আগাম থোড় বের হয় না। জলাবদ্ধ পদ্ধতির চেয়ে ১০-১৫ দিন আগে ধান পরিপক্ব হয়। সার ও সেচ কম লাগে। পোকা ও রোগ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। পরবর্তী ফসলের প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়।

রোপণ দূরত্ব : সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩৫-৪০ সেন্টিমিটার করে বর্গাকারে চারা রোপণ করা হয়। প্রতি গুছিতে একটি চারা রোপণ করা হয়। এতে গাছ পুষ্টি ও আলো-বাতাস বেশি পায়। কুশি বেশি, ফলন বেশি বীজ, সার ও সেচ কম লাগে। গুছিতে চারা বেশি দিলে পুষ্টি, পানি ও জায়গার জন্য প্রতিযোগিতা করে।

সার প্রয়োগ : রাসায়নিক সার কম দিয়ে জৈবসার বেশি দেয়া হয়। এতে মাটি, পানি ও বাতাসের পরিবেশ ভালো থাকে। উৎপাদন খরচ কমে। মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলির উন্নতি হয়। মাটির উর্বরতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। অণুজৈবিক কার্যাবলি বাড়ে। মাটির অমস্নত্ব নিয়ন্ত্রণ হয়। ফলন বেশি হয়।

আগাছা দমন : রাইচ উইডার দিয়ে আগাছা দমন করে মাটির সঙ্গে আগাছা মিশিয়ে দেয়া হয়। যা পচে জৈব সারের কাজ করে। সেচ ও নিকাশ দ্বারাও আগাছা দমন হয়। সনাতন পদ্ধতির মতো বার বার দমন করতে হয় না ফলে খরচ কমে।

পুষ্টি ব্যবস্থাপনা : ধানের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য মাটিতে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকা দরকার। মাটিতে পুষ্টি উপাদান সরবরাহের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে জমিতে পর্যাপ্ত জৈবসার প্রয়োগ করা। সেচ ও নিকাশ করে জৈবসার মাটির সঙ্গে মেশাতে হবে। সেচ ও নিকাশের দ্বারা কোনো কোনো পুষ্টি গাছের জন্য সহজলভ্য হয়। মাটিতে পুষ্টি থাকা সত্ত্বেও কিছু পুষ্টি গাছ পানির অভাব গ্রহণ করতে পারে না।

এজন্য সেচ দিয়ে পুষ্টি গাছ সহজে শোষণ করতে পারে। পানি বেশি হলে কিছু পুষ্টি গাছ গ্রহণ করতে পারে না। জমি থেকে পানি নিকাশ করলে গাছ পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে। মাটিতে প্রাকৃতিক উপায়ে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করার সবচেয়ে ভালো উপায় এসআরআই পদ্ধতিতে ধানচাষ করা। সনাতন পদ্ধতিতে ধানচাষে সবসময় প্লাবন পদ্ধতিতে সেচ দেয়া হয়। এসআরআই পদ্ধতিতে যখন গাছে পানির প্রয়োজন হবে ঠিক তখন যে পরিমাণ দরকার ঠিক সে পরিমাণই সেচ দেয়া হয়।

সূত্র: কৃষিবিদ ফরহাদ আহমেদ
লেখক: সম্পাদক, কৃষি প্রতিক্ষণ, বুধবার ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ইং