মরিচ | ই-কৃষক

মরিচ

 

১. ফসলঃ মরিচ
images

২. জাতঃ

উচ্চ ফলনশীল জাতঃ উচ্চ ফলনশীল জাত গুলো হলো-

 

জাত

বপনের সময়

কোম্পানীর নাম

হাইব্রিড মরিচলং স্পাইসি

সারা বছর

গেটকো সীড

প্রিমিয়াম, ভিগর, (উফসীজাত – মেজর, চন্দ্রমুখী)

জুন-নভেম্বর

লাল তীর সীড

সনিক

সারা বছর

লাল তীর সীড

অগ্নি ২,৩

সারা বছর চাষ করা যায়

আফতাব সীড কো.

KS. 3, 4

জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারী এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত

কৃষিবিদ গ্রুপ সীড

BSS-805/811, সুপার আনমল

বেজো সীড

Darger, NS1701 (Capsicum Five Star)

নামধারী সীড কো.

গ্রীন ইট

পাশাপাশি সীড কো.

RK 607

সারা বছর

এনার্জি প্যাক সীড

হট মাষ্টার, মল্লিকা ১১৭, যমুনা, চাতক (উদ্ধমুখী)

সারা বছর

মল্লিকা সীড কো.

 

 

 

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ উর্বর দো-আঁশ মাটি, নদীপাড় ও চরাঞ্চলের মাটি।

 

 

 

৪. বীজঃ

ভালো বীজ নির্বাচনঃ ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নোরুপ-

রোগমুক্ত,পরিষ্কার,পরিপুষ্ট ও চিটামুক্ত হতে হবে।

সকল বীজের আকার আকৃতি একই ধরনের হবে।

বীজের হারঃ এক একরের (১০০ শতাংশ) উপযোগী চারা উৎপন্ন করতে ২৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হতে পারে। ছিটিয়ে বুনলে লাগে ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে।

বীজ শোধনঃ প্রতি কেজি বীজে ১ গ্রাম ভিটাভেক্স ২০০ দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ জমি ভালভাবে চাষ ও ও মই দিয়ে সমতল করে আগাছা বাছাই করতে হবে।

বীজ তলা তৈরীঃ ৩ ও ১ মিটার আকারের বীজতলা করে সেখানে বীজ বপন করা হয়।

বীজ তলার পরিচর্যাঃ মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ শীতকালের জন্য ভাদ্র-আশ্বিণ মাসে ও বর্ষা মৌসুমের জন্য ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়।

ছিটিয়ে বা লাইনে বপনঃ

রোপনঃ আগাছা পরিষ্কার করে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্ত’তির পর চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১.৫-২ হাত ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ১ হাত বা তার কিছু বেশি রাখা হয়। চারা বিকেলে লাগাতে হবে এবং ২-৩ দিন সকাল বিকাল পানি দিতে হবে। চারা ৪-৫ ইঞ্চি উঁচু হলে রোপণের উপযোগী হয়।

 

 

 

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

একর প্রতি পরিমাণ

শেষ চাষের সময়

কিস্তিতে সার প্রয়োগ (কেজি)

জমিতে সার প্রয়োগ

১ম ২য় ৩য়
গোবর/কম্পোস্ট ৪০০০ কেজি

সব

- - -

ইউরিয়া

৮৫ কেজি - ২৮ ২৮ ২৮
টিএসপি ১২০ কেজি

সব

- - -

এমওপি

৮০ কেজি ২৬ কেজি ১৮ ১৮ ১৮
জিপসাম ৪৫ কেজি সব

-

- -

 

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে।

দমন পদ্ধতিঃ নিড়ানির সাহায্যে আগাছা দমন করতে হবে।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ জমিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে।

সেচের পরিমাণঃ পরিমিত মাত্রায় সেচ দিতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে।

নিষ্কাশনঃ পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ
anthracnoce

রোগের নাম

লক্ষন

প্রতিকার

পাতা পচা

প্রথমে পাতায় পানিভেজা দাগ হয়। এরপর পাতা দ্রুত পচতে থাকে। আগা ডাল একই সাথে আক্রান্ত হয়। রিডোমিল গোল্ড এম জেড ৬৮ ডবলিউ জি- ১ কেজি/একর জিমিতে প্তয়োগ করতে হবে

চারা ধবসা রোগ

বীজতলায় চারা গজানোর পর থেকে মূল ক্ষেতে চারা রোপন পর্যন্ত এ রোগের আক্রমন হয়ে থাকে। অংকুরিত বীজের বীজপত্র, কান্ড এবং শিকড় নষ্ট করে দেয়। আক্রান্ত চারা প্রথমে হালকা সবুজ হয়ে ঢলে যায় এবং সম্পূর্ন চারাটিই মরে যায়। আক্রান্ত চারা ২-৪ দিনের মধ্যেই পচে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ১. শোধনকৃত বীজ বপন করা এবং রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি (প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে ৫ শতাংশ জমির জন্য)। ব্যবহার করে বীজতলার মাটি শোধন করা যায়। ২. আক্রান্ত গাছ জমি থেকে তুলে ধ্বংস করতে হবে।

পাতায় দাগ

পাতায় বাদামী দাগ দেখা যায় স্কোর ২৫০ ইসি- ০.৫ মিলি/ লি. পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

মোজাইক

কচি চারার বীজপত্র হলুদ হয় এবং চারা নেতিয়ে পড়ে। কচি ডগা জটলার মত দেখায়।  আক্রান্ত পাতা ছোট, বিবর্ণ, বিকৃত ও নীচের দিকে কুঁকড়ানো হয় এবং শিরা-উপশিরাও হলুদ হয়ে যায়। ১. আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করতে হবে।২. ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।৩. বাহক পোকা সাদা মাছি দমন করতে হবে (একতরা ২৫ ডব্লিউজি- ২.৫ গ্রাম একতারা প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে সেপ্র করতে হবে)

লিফ কার্ল বা পাতা কোকড়ানো

গাছের যে কোনো অবস্থায় এ রোগ হতে পারে। আক্রান্ত গাছের পাতা কুকড়ে যায় ও স্বাভাবিক পাতার তুলনায় পুরু হয়। পাতাগুলো ছোট ও গুচ্ছাকৃতি হয়ে যায়, গাছের পর্বগুলো  যেখান থেকে নতুন পাতা বা ডাল গজায়) কাছাকাছি হয় ও গাছ খর্বাকৃতি হয়। গাছে অতিরিক্ত ডালপালা জন্মায় এবং ঝোপের মত হয়। ১. সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে এবং সুস্থ ও রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে। ২. বীজতলা থেকে আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্রই তুলে মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করতে হবে।

এন্থ্রাকনোজ

এ রোগের আক্রমণ প্রথম পর্যায়ে গাছের ডগায় এবং পরে পাতা, ডাল ও ফলে দেখা যায়। ডগায় আক্রমণ হলে আস্তে আস্তে ডগা শুকিয়ে মরে যায়। ফলে পাতা ও ফুল ঝরে যায় এবং বাড়ন্ত ফল পরিপুষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে যায়। একরোবেট এম জেড- ৮০০ গ্রাম/একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

পোকামাকড়ের নাম

লক্ষন

প্রতিকার

ফল ছিদ্রকারী     পোকা

কচি ডগা ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত ফলের ভিতরটা ফাঁপা ও পোকার বিষ্ঠায় পরিপূর্ণ থাকে। নিমবিসিডিন, ৮০ এম এল/একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
রিপকর্ড ১০ ই সি ২০০ এম এল/একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে (১ এম এল /লি. পানি)
সবিক্রন ৪২৫ ই সি, ৪০০ এম এল / একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
আলফাটাফ ৫০ এস পি, ২৪৫-৩২৫ গ্রাম/একর(১২-১৬ গ্রাম/১০ লি. পানি)

মাছি পোকা

১. স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে।২. ডিম ফুটে কীড়াগুলো বরে হয়ে ফলের শাস খায় এবং ফল পচে যায় ও অকালে ঝরে পড়ে। ১. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ২. সবিক্রন ৪২৫ ইসি- প্রতি লিটার পানিতে ২ এমএল হারে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন।
টিডো ২০ এস.এল-১০০-১০৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

জাব পোকা

পূণবয়স্ক ও নিম্ফ উভয়েই পাতা, কচি কান্ড, ফুল ও ফলের কুঁড়ি, বোঁটা এবং ফলের কচি অংশের রস চুষে খায়। ফলে গাছ প্রথমে দুর্বল ও পরে হলুদ হয়ে যায়। গাছে ফুল ও ফল অবস্থায় আক্রমণ হলে ফুলের কুঁড়ি ও কচি ফল ঝরে পড়ে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে কচি ডগা মরে যায়। ১. আক্রান্ত পাতা, ডগা, ফুল পোকাসহ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।২. একতারা ২৫ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে ২.৫ গ্রাম একতারা প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাব গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।৩. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
টিডো ২০ এস.এল-১০০-১০৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
ফাস্টাক ২ ই সি, ২০২ মি লি ১ একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে(১ এম এল/১ লি. পানি)

 

১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ গাছে ফুল আসার সময় এবং তার ২০ থেকে ৩০ দিন পর হরমোন জাতীয় ওষুধ প্ল্যানোফিক্স ১০ থেকে ১২ লিটার পানিতে ২ মিলি হারে বা  ৪ থেকে ৫ লিটার পানিতে ১ মিলি সেলমন দ্রবন তৈরি করে গাছে প্রয়োগ করলে মরিচ অকালে ঝরে পড়ে না ও ফলন বাড়ে।

১২. ফসল কাটাঃ
images222IMG_7950.JPG

সময়ঃ রোপণের ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ফুল আসে। তার ৩০ থেকে ৪০ দিন পর পাকা মরিচ তোলা যায়। এক মৌসুমে ১০ থেকে ১২ বার ফল তোলা যায়।

পদ্ধতিঃ সাধারনত হাত দিয়ে মরিচ তোলা হয়।

১৩. ফসল মাড়াইঃ

মাড়াইপদ্ধতিঃ ফুল আসার পর ১৫-২০ দিনের মধ্যে কাঁচা মরিচ হাত দিয়ে তোলা হয়। তবে মরিচের রং লাল হলে তুলে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়।

১৪. প্যাকেজিং:

প্যাকেজিংপদ্ধতিঃ চটের বস্তা তার ভিতরে পলিথিন পেপার দিয়ে মরিচ প্যাকেজিং করতে হবে।

 

 

১৫. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
drying

স্বল্প পরিসরেঃ মরিচের রং লাল হলে তুলে রোদে শুকিয়ে অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়।

বৃহৎ পরিসরে (উৎস): মরিচ শুকানোর পর মাচার উপরে টিনের ডোল, গোলা, বেড়ি, পলিথিন বা ড্রামে রাখতে হবে। মরিচের গোলা এমন হওয়া উচিৎ যেন বাইরে থেকে বাতাস ঢুকতে না পারে। মরিচ সাধারণত: অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা, ছায়াযুক্ত এবং শুকানো জায়গায় রাখতে হবে।

১৬. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ

বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।

১৭. তথ্যের উৎসঃ  AIS, BARI, কৃষি প্রযুক্তি হাত বই, ekrishok.com, krishitey.com, ruralinfobd.com, infokosh.bangladesh.gov.bd

১৮. সর্বশেষ সংযোজন : জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com

 

Leave a Reply