২. জাতঃ
উচ্চ ফলনশীল জাতঃ ডিমলা ও সিন্দুরী নামে বাংলাদেশে দু’টি উন্নত জাত রয়েছে। ডিমলা জাতটি স্থানীয় জাতের তুলনায় ৩ গুণ ফলন বেশী দেয়।
৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ সব ধরনের মাটিতে হলুদ চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে-দো-আঁশ মাটি হলুদ চাষের জন্য অতি উত্তম।
৪. বীজঃ
বীজের হারঃ সাধারণতঃ হলুদ চাষের জন্য একর প্রতি প্রায় ৮১০ থেকে ১২১৫ কেজি বীজের (মোথা) প্রয়োজন হয়। তবে ছড়া বীজ ব্যবহার করলে একর প্রতি ৬০০-৮০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সাধারণত: ২৫ থেকে ৪০ গ্রাম ওজনের মোথা বীজ হিসেবে রোপণ করা দরকার।
৫. জমি তৈরীঃ
জমি চাষঃ ভালো ফলনের জন্য গভীরভাবে ৪ থেকে ৫ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে এবং আগাছা পরিষ্কার করে ঢেলা ভেঙ্গে ভালোভাবে জমি তৈরি করে নিতে হবে।
৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ
বপন ও রোপন এর সময়ঃ হলুদ খরিপ মৌসুমে রোপণ করা হয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রোপণ করা ভাল। তবে মে মাসেও রোপণ করা যায়।
ছিটিয়ে বা লাইনে বপনঃ
সাধারনত সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০ ইঞ্চি এবং কন্দ থেকে কন্দের দূরত্ব ১০ ইঞ্চি। কন্দের গভীরতা ২-৩ ইঞ্চি।
৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ
সার |
মোট পরিমাণ (একর প্রতি) |
জমি তৈরির সময় দেয় |
পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে দেয় |
||
১ম কিস্তি |
২য় কিস্তি |
৩য় কিস্তি |
|||
রোপণের ৫০-৬০ দিন পর |
১ম কিস্তির ৫০-৬০ দিন পর |
২য় কিস্তির ৫০-৬০ দিন পর |
|||
গোবর |
১৬১৯-২৪২৯ কেজি |
সব |
- | - | - |
ইউরিয়া |
৮১-৯৭ কেজি |
- |
৪০-৪৯ কেজি |
২০-২৪ কেজি |
২০-২৪ কেজি |
টিএসপি |
৬৯-৭৭ কেজি |
সব |
- | - | - |
এমওপি (পটাশ) |
৬৫-৭৩ কেজি |
৩২ কেজি |
- |
১৬-১৮ কেজি |
১৬-১৮ কেজি |
জিপসাম |
৪৩-৪৯ কেজি |
সব |
- | - | - |
জিংক সালফেট |
০.৮-১.২ কেজি |
সব |
- | - | - |
৮. আগাছা দমনঃ
সময়ঃ মাটিতে রস না থাকলে মাঝে মাঝে সেচ দিতে।
দমন পদ্ধতিঃ হবে।সারির মাঝখানে সার প্রয়োগ করে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে এবং এই ঝুরঝুরা মাটি সারির উপর ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি উচু করে বেঁধে দিতে হয়।
৯. সেচ ব্যবস্থাঃ
সেচের সময়ঃ মাটিতে রস কমে গেলে সময়মত সেচ দেয়া প্রয়োজন।
নিষ্কাশনঃ হলুদের ক্ষেত্রে বেশি বৃষ্টির সময় যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে থাকে সেজন্য দ্রুত নালা কেটে পানি বের করার ব্যবস্হা করতে হবে।
রোগের নাম |
লক্ষণ |
প্রতিকার |
কীটনাশকের নাম |
রাইজোম রট (কন্দপচা) |
পাতার কিনার থেকে আক্রান্ত শুরু হয়ে ক্রমশ: পাতা শুকিয়ে যায়। ডগা নরম হয়ে পচতে শুরু করে ও এক সময় গাছ মরেযায়। পরবর্তীতে কন্দ আক্রান্ত হয়ে পচে যায়। | রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি – প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে ৫ শতাংশজমিতেভালভাবে প্রয়োগ করুন। |
রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি |
লিফ স্পট |
পাতার উপর বাদামী রংয়ের দাগ দেখা যায় এবং দাগের কেন্দ্রস্হলে মেটে রং ধারণ করে। দাগের চারপাশে হলুদ রঙের গর্ত সৃষ্টি হয়। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যায় এবং ঢলে পড়ে। | রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি – প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে ৫ শতাংশজমিতেভালভাবে প্রয়োগ করুন। |
রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি |
লিফ ব্লচ |
পাতার দুইপাশে ছোট ছোট বাদামী রংয়ের দাগ পড়ে। দাগ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। | রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি – প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে ৫ শতাংশজমিতেভালভাবে প্রয়োগ করুন। |
রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি |
পোকামাকড়ের নাম |
লক্ষণ |
প্রতিকার |
কীটনাশকের নাম |
কান্ড-ছেদক পোকা |
কীড়া কচি ডগা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে নরম অংশ খাওয়া শুরু করে এতে আক্রান্ত ডগা হলুদাভ হয়ে শুকিয়ে যায়। | এমকোজিম ৫০ ডবলিউ পি ২০ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করে এ পোকা দমনে রাখা যায়। |
এমকোজিম ৫০ ডবলিউ পি |
পাতা মোড়ানো পোকা |
মোড়ানো পাতা খেতে থাকে এবং এর অভ্যন্তরে পোকার পুত্তলি লুকিয়ে থাকে। | এমকোজিম ৫০ ডবলিউ পি ২০ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করে এ পোকা দমনে রাখা যায়। |
এমকোজিম ৫০ ডবলিউপি |
১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ
ফসল সংগ্রহের পর করণীয়
ঘাম ঝরানো
পাতা, কাণ্ড, শিকড়, পাশ্ব শিকড় কেটে পরিষ্কার করে পানি দিয়ে হলুদ একাধিকবার ধুয়ে আলাদা করতে হবে। এরপর পরিষ্কার ছায়াযুক্ত স্হানে গাদা করে পাতা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এভাবে দু’তিন দিন হলুদ থেকে উৎপন্ন ঘাম সম্পূর্ণরূপে ঝরানো হয়। ঘাম ঝরানো শেষ হলে হলুদ সিদ্ধ করার উপযুক্ত হয়।
লৌহ অথবা মাটির পাত্রে ফুটন্ত পানিতে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা হলুদগুলো সিদ্ধ করতে হবে (যতক্ষণ না সাদা ফেনা এবং হলুদের গন্ধযুক্ত সাদা ধোঁয়া বের হয়)। অতিরিক্ত সিদ্ধ করলে রং নষ্ট হয় এবং কম সিদ্ধ করলে হলুদ ভঙ্গুর হয়।
সিদ্ধ করার পর করণীয়: সিদ্ধ হলুদগুলোকে একটি পাত্রে রেখে, ২ থেকে ৩ ইঞ্চি উপর পর্যন্ত পানি দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। এই পানিতে চুন বা সোডিয়াম কার্বোনেট বা সোডিয়াম বাইকার্বোনেট মিশিয়ে অ্যালকালাইন দ্রবণ (০.০৫-১%) তৈরি করতে হবে। এখন হলুদগুলোকে পাত্র থেকে তুলে নিয়ে ২০ গ্রাম সোডিয়াম বাইসালফেট ও ২০ গ্রাম হাইড্রোক্লোরিক এসিডের জলীয় দ্রবণে ১৫ মিনিট যাবৎ ভিজিয়ে রাখার পর দ্রবণ থেকে ছেঁকে নিয়ে রোদে শুকানোর ব্যবস্হা করতে হবে।
ঠিকমত সিদ্ধ হলো কিনা: হলুদ ঠিকমত সিদ্ধ হবে তখন, যখন আঙ্গুল দিয়ে টিপলে নরম মনে হয় এবং ভোতা কাঠের টুকরো দিয়ে ছিদ্র করা যায়।
হলুদের রং: সিদ্ধ করার ফলে রাইজোমটি (হলুদের খাবারযোগ্য অংশকে রাইজোম বলে) নরম ও আঠালো হয় এবং মেটে গন্ধ দূর হয়। এ সময় রাইজোমের মধ্যে রঙিন উপাদানগুলি সমভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং হলুদের কমলা-হলুদ রং সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়।
শুকানোর সময়:
হলুদের রং, স্বাদ ও গন্ধ ঠিক রাখার জন্য, শুকানোর সময় কমাতে হবে।
কতক্ষণ সিদ্ধ করতে হবে: হলুদ কতক্ষণ সিদ্ধ করতে হবে তা রাইজোমের আকারের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। যেমন- ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির রাইজোম সিদ্ধ হওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় নেয়। হলুদ সিদ্ধ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পাশ্ববর্তী কন্দ এবং গুড়িকন্দ আলাদা করে সিদ্ধ করা হয়। গুড়িকন্দকে কেটে অর্ধেক করে সিদ্ধ করলে সময় কম লাগে। রাইজোমের সংখ্যার উপর সিদ্ধ করার সময় ১ থেকে ৪ অথবা ৬ ঘন্টা লাগতে পারে। সাধারণত: ৫০ থেকে ৭৫ কেজি রাইজোম একবারে সিদ্ধ করার জন্য নির্বাচন করা উচিত। একই পানিতে কয়েকবার হলুদ সিদ্ধ করা যায়।
কতদিনের মধ্যে সিদ্ধ করতে হবে:
মাঠ থেকে হলুদ সংগ্রহের ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সিদ্ধ করা উচিত যাতে রাইজোম নষ্ট না হয়। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশী হলে হলুদের গুণাগুণ কমে যেতে পারে।
শুকানো:
হলুদ রাইজোমগুলিকে সিদ্ধ করার পরপরই রোদে শুকানো উচিত। সিদ্ধকৃত রাইজোমকে ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি পুরু করে মোটা বাঁশের চাটাই অথবা মেঝের উপর ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত শুকানো হয়। সন্ধ্যার পূর্বেই হলুদকে ঢেকে রাখা দরকার। চূড়ান্ত পর্যায়ে হলুদের আদ্রতা ৫ থেকে ১০ ভাগে এ নিয়ে আসতে হবে। হাত দিয়ে ভাঙ্গলে যদি কট্ শব্দ হয় তাহলে বোঝা যাবে হলুদ পুরোপুরি শুকিয়েছে।
১২. ফসল কাটাঃ
সময়ঃ সাধারণতঃ গাছের পাতা যখন হলুদ রং ধারণ করে শুকিয়ে যায় তখনই হলুদ সংগ্রহের ভালো সময় হয়।লাগানোর ৯-১০ মাস পর পাতা শুকিয়ে গেলে হলুদ সংগ্রহ করা হয়।
পদ্ধতিঃ কোদাল / লাঙ্গল দিয়ে মাটি আলগা করে হলুদ সংগ্রহ করতে হবে।
১৩. পরিবহণ ব্যবস্থাঃ
পরিবহণ পদ্ধতিঃ শুকানোর পর চটের বস্তাতে ভরে পরিবহণ করা যেতে পারে।
১৪. প্যাকেজিং:
প্যাকেজিংপদ্ধতিঃ চটের বস্তার ভিতরে পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে শুকানো হলুদ প্যাকেজিং করা যেতে পারে।
১৫. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
স্বল্প পরিসরেঃ কোন ধাতু বা মাটির পাত্রে পানি দিয়ে হলুদ ধীরে-ধীরে জ্বাল দিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত সিদ্ধ করা হয়। এভাবে হলুদ সিদ্ধ করার পর ১২ থেকে ১৩ দিন রোদে শুকিয়ে হলুদ দীর্ঘদিন (১-২ বছর) সংরক্ষণ করা যায়।
১৬. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ
বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।
১৭. তথ্যের উৎসঃ AIS, BARI, krishitey.com, krishibangla.com
১৮. সর্বশেষ সংযোজন :জুলাই,২০১৪
আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com