Author Archives: s.alam

ডাঁটা

১. ফসলঃ ডাঁটা

২. জাতঃ

উচ্চ ফলনশীল জাতঃ উচ্চ ফলনশীল জাত গুলো হলো-

জাত

কোম্পানীর নাম

বপনের সময়

বারি ডাঁটা-১ (লাবনী)

BARI

ফেব্রুয়ারী-জুন

বারি ডাঁটা-২

BARI

ফেব্রুয়ারী-জুন

বাঁশপাতা, আখি, সুফলা-১

ব্র্যাক সীড

কে এস ০১

কৃষিবিদ গ্রুপ সীড

মাঘ থেকে বৈশাখ মাস

ভুটান সফট, রেড ম্যান

গেটকো সীড

অপরাপা, স্বরূপা

নামধারী সীড

লাবনী

এনার্জি প্যাক এগ্রো লি:

বপনের সময় জানুয়ারী-জুন

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ  প্রায় সব ধরণের মাটিতেই ডাটা চাষ করা হয়। তবে দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো।

৪. বীজঃ

ভালো বীজ নির্বাচনঃ সাধারনত নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো ভালো বীজ নির্বাচনে সহায়ক

রোগমুক্ত, পরিষ্কার, পরিপুষ্ট ও চিটামুক্ত হতে হবে।

সকল বীজের আকার আকৃতি একই ধরনের হবে।

বীজের হারঃ প্রতি শতকে সারিতে বীজের হার  ৮০ গ্রাম এবং  ছিটিয়ে  ১২০ গ্রাম। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৬-১০ ইঞ্চি।

বীজ শোধনঃ ভিটাভেক্স ২০০ / টিলথ অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করে বীজ শোধন করা যায়।

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ আগে জমি খুব ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে।  জমি ও মাটির অবস্থা বুঝে ৪-৬ টি চাষ দিতে হবে।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ  বপনের সময় জানুয়ারী-জুন। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে।

ছিটিয়ে বা লাইনে বপনঃ ছিটিয়ে বা লাইনে বীজ বপন করা যায়।

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সার

এক শতকে

গোবর

৪০ কেজি

ইউরিয়া

৫০০ গ্রাম

টিএসপি

৩০০ গ্রাম

এমওপি

          ৪০০ গ্রাম

সার প্রয়োগের সময়ঃ ইউরিয়া তিন ভাগের এক ভাগ সহ অন্যান্য সব সার বীজ বোনার আগেই মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি দুই ভাগ ইউরিয়া বীজ গজানোর ১০-১৫ দিন পর এবং ২০-২৫ দিন পর দিতে হবে।

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ আগাছা হলে নিড়ানীর সাহায্যে তা দমন করতে হবে।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ মাটিতে রস কম থাকলে পরিমিত পরিমাণে সেচ দিতে হবে।

নিষ্কাশনঃ নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ

রোগের নাম

লক্ষণ

প্রতিকার

কীটনাশকের নাম

মরিচা রোগ

এ রোগ গাছের শিকড় ছাড়া সকল অংশকেই আক্রমণ করে। সাদা অথবা হলুদ দাগ পাতার নিচে দেখতে পাওয়া যায়। পরে সেগুলো লালচে বা মরিচা রং ধারন করে এবং পাতা মরে যায়। প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম ডাইথেন এম – ৪৫ ঔষধ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ডাইথেন এম – ৪৫

পোকামাকড়ের নাম

লক্ষণ

প্রতিকার

কীটনাশকের নাম

শুয়া পোকা

এ পোকা গাছের পাতা খেয়ে সমুহ ক্ষতি করে থাকে। ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি, রক্সিয়ন ৪০ ইসি, ইকালাক্স ২৫ ইসি ঔষধগুলোর যেকোন একটি ৪.৫ -৫ এম এল প্রতি শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে। ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি, রক্সিয়ন ৪০ ইসি, ইকালাক্স ২৫ ইসি

 

১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ নিয়মিত দেখা শোনা করতে হবে।

১২. ফসল কাটাঃ

সময়ঃ বীজ বোনার ৩০ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে শাক খাওয়ার উপযুক্ত হয়। আর ডাঁটার জন্যে আরো বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।

১৩. তথ্যের উৎসঃ  AIS, BARI, কৃষি প্রযুক্তি হাত বই, krishitey.com,

১৪. সর্বশেষ সংযোজন : জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com

কৈ

 

কৈ মাছের চাষ ব্যবস্থাপনা

কৈ মাছ সাধারণত খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, পুকুর-ডোবা নালা, প্লাবন ভূমি ইত্যাদিতে চাষ করা যায়। এরা কর্দমাক্তমাটি, গর্ত, গাছের গুঁড়ির তলা ইত্যাদি জায়গায় বাস করতে পছন্দ করে। শিং ও মাগুর মাছের মতোই কৈ মাছ আগাছা, কচুরিপানা, পচা পাতা, ডালপালা বেষ্টিতে জলাশয়ে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। নিচে পুকুরে কৈ মাছ চাষ করার পদ্ধতি দেয়া হলো-

১. পুকুর নির্বাচন ও পুকুর প্রস্তুতিঃ

  • ছোট বড় সব পুকুরেই চাষ করা যায় তবে পুকুরের আয়তন ২০-২৫ শতাংশ এবং গভীরতা ১.০-১.৫ মিটার হলে ভালো হয়।
  • পুকুরের পাড় মেরামত, কিছু জলজ আগাছা সংরৰণ ও বার বার জাল টেনে রাক্ষুসে মাছ অপসারণ করতে হবে।
  • প্রতি শতাংশে ১ কেজি চুন প্রয়োগের ৪-৫ দিন পর শতাংশ প্রতি ৮-১০ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
  • কৈ মাছ যাতে পুকুর থেকে উঠে যেতে না পারে সে জন্য বাঁশের তৈরী বেড়া বা নাইলনের নেট দিয়ে পুকুরের চার দিকে বেড়া দিতে হবে। একই সাথে এই বেড়া সাপ, গুঁইসাপ, ব্যাঙ, বেজী প্রতিরোধ করে।

২. পোনা মজুদ,খাদ্য প্রয়োগ ও উৎপাদনঃ

  • প্রাকৃতিক উৎস বা হ্যাচারী থেকে সুস্থ্য ও সবল পোনা সংগ্রহ করে প্রতি শতাংশে ২৫০-৩০০ টি পোনা মজুদ করা যায়।
  • পোনা মজুদের পর মাছের দেহ ওজনের শতকরা ৬-৮ শতাংশে হারে ৩৫-৪০ শতাংশ আমিষযুক্ত সম্পূরক খাবার দিনে ৩ বার সকাল, দুপুর ও বিকেলে দিতে হবে।

৩. কৈ মাছের রোগ বালাই দমনঃ

রোগের নাম রোগের লক্ষণ চিকিৎসা প্রতিরোধ ব্যবস্থা
শরীরে ক্ষত আক্রান্ত স্থানে তুলার মত সাদা পদার্থ জমা হয়, লেজ ও পাখায় সাদা দাগ সৃষ্টি হয়, লেজ ও পাখায় পচন ধরে ও ক্ষয় ধরে, মাছ দেহের ভারসাম্য হরিয়ে ফেলে। ১. আক্রান্ত মাছ কে ধরে ০.৫ %, ১.০ %, ২.০ % লবণ মিশ্রিত পানিতে ২০-২৫ মিনিট অথবা যতক্ষণ সহ্য করতে পারে ততক্ষণ পর্যন্ত গোসল করালে ভালো ফল পাওয়া যায়। ২. মাছের খাদ্যের সাথে প্রতি কেজি খাদ্যের জন্য ৫০-৭০ মিলিগ্রাম অক্সিটেট্রাসাইক্লিন অথবা ১০০-১২৫ মিলিগ্রাম সালফার জাতীয় ওষুধ মিশিয়ে ৭ দিন যাবত মাছকে খাওনো যেতে পারে। ৩. আক্রান্ত ব্রুড মাছের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি দেহের ওজনের জন্য ১০০ মিলিগ্রাম হারে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ইনজেকশন প্রদান করা যেতে পারে। ১. মাছ ছাড়ার পূর্বে পুকুর ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে ও পুকুরের তলার অতিরিক্ত কাদা তুলে ফেলতে হবে। ২. সঠিক ঘনত্নে মাছ মজুদ করতে হবে। ৩. পুকুরে পরিমিত মাত্রায় সার ও খাদ্য প্রদান করতে হবে। ৪. সুস্থ্য সবল পোনা মজুদ করতে হবে। ৫. মজুদের পূর্বে মাছের পোনাকে শতকরা ১ ভাগ লবণ মিশিত পানিতে ২০-২৫ মিনিট গোসল করালে রোগ সংক্রামনের পরিমাণ অনেকাংশে কমে যায়।
মাছের পরজীবী মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে পরজীবী মাছকে আক্রমণ করে। ২৫-৩০ পি পি এম ফরমালিন পানিতে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা রোগাক্রান্ত মাছকে রেখে পরবর্তীতে পরিষ্কার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে। প্রতি শতকে ২৫০ গ্রাম হারে প্রতি মাসে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
পুকুরে গ্যাস দমন পানিতে বুদ বুদ হয়, ও মাছ ভেসে উঠে, গ্যাসের পরিমাণ খুব বেশি হলে মাছ মারা যায়। জিওলাইট গোল্ড (দানাদার/পাউডার) অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

 

কৈ এর ব্রুড ব্যবস্থাপনাঃ

প্রথমে পুকুরের তলা ভাল করে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুরের তলা যদি শুকানো সম্ভব না হয় তাহলে জাল টেনে বা রটেনন প্রয়োগ করে সমস্ত অবাঞ্ছিত মাছ মেরে এক সপ্তাহ পর প্রতি শতাংশে ১ কেজিহারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। তারপর পুকুর পাড়ের চারপাশ দিয়ে মাটির ১ ফুট গভীর দিয়ে পলিথিন জাতীয় (যা মাটির নীচেও নষ্ট হয় না) জাল দিয়ে ভালভাবে বেড়া দিতে হবে। তারপর পুকুরে পানি দিতে হবে। পুকুরের পানির গভীরতা ৩ থেকে ৪ ফুট এবং অপেক্ষাকৃত কম কাঁদাযুক্ত পুকুর হলে ভাল হয়। পুকুরের দ্রুত বর্ধনশীল সুস্থ ও সবল মাছ প্রজননের জন্য মজুদ করতে হবে। যতদূর সম্ভব বেশি সংখ্যক মাছ থেকে কম সংখ্যক ব্রুড নির্বাচন করাই উত্তম এবং নির্বাচিত মাছকে অবশ্যই ভালভাবে যত্ন করতে হবে। ব্রুড প্রতিপালনের সাধারণত ১৫ থেকে ২০ শতাংশের পুকুর হলে ভাল। প্রতি শতাংশে ১০০ থেকে ১৫০ টি ব্রুড মাছ মজুত করা ভাল। খাবার হিসাবে বাজারের কৈ মাছের যে কোন ব্রান্ডের গ্রোয়ার খাবার খাওয়ালেই চলবে। দেহের ওজনের ৩% খাবারই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি খাবার দিলে কৈ মাছের দেহে বেশি চর্বি হয়ে যেতে পারে। শীতকালে ব্রুড মাছের বিশেষ পরিচর্যা করতে হবে।

প্রজননঃ চাষাবাদের জন্য ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কৈ মাছের প্রজননের জন্য উপযুক্ত সময়। এ ছাড়াও কৈ মাছ যে কেউ ইচ্ছা করলে প্রায় সারা বছরই প্রজনন করাতে পারে। সঠিক পরিচর্যা করলে প্রায় সারা বছরই পেটভর্তি ডিম থাকে যা দেখে স্ত্রী কৈ মাছ সনাক্ত করা যায়। এ ছাড়াও স্ত্রী কৈ মাছ পুরুষ কৈ মাছের তুলনায় অনেক বেশি বড় হয়ে থাকে। পুরুষ কৈ মাছকে সনাক্তের জন্য প্রজনন মৌসুমে পেটে হালকা চাপ দিলেই সাদা রঙের শুক্রাণু বের হয়ে আসে। প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে ১টি ইনঞ্জেকশন দিলেই চলে। ইনঞ্জেকশন দিতে হবে পি.জি. দিয়ে। স্ত্রী মাছের জন্য মাত্রা হবে ৬ থেকে ৮ মিঃ গ্রাঃ/কেজি, আর প্রতি কেজি পুরুষ মাছের জন্য পি.জি. দিতে হবে ২ থেকে ৩ মিঃ গ্রাঃ। ইনঞ্জেকশন দিতে হবে মুখের কাছে পাখনার নীচে ফুলার অংশে। পি. জি. দেয়ার পর স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে সমান অনুপাতে অর্থাৎ ১:১ অনুপাতে প্রজনন ট্যাংকে রেখে তারপর পানির স্রোতসহ ঝর্ণার ব্যবস্থা করতে হবে। ইনঞ্জেকশন দেয়ার ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পর মাছ ডিম দিতে শুরু করবে। ডিম ছাড়ার পর ডিমগুলোকে হ্যাচিং ট্যাংকে নিয়ে যেতে হবে। কৈ মাছের ডিমগুলো ভেসে থাকে। সে জন্য ডিমগুলোকে বিশেষ কায়দায় হ্যাচিং ট্যাংকে নিয়ে যেতে হবে। কৈ মাছের ডিম ভাসমান বিধায় এক বিশেষ পদ্ধতিতে ডিম সংগ্রহের কথা উল্লেখ হচ্ছে যা আমাদের দেশে প্রথম। ডিম সংগ্রহের সময় সর্তকতার অভাবে অনেক ডিম নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রজনন ট্যাংক থেকে হ্যাচিং ট্যাংক পর্যন্ত ৩ থেকে ৪টি সিরিজ ট্যাংক পাশাপাশি রাখতে হবে। প্রজনন ট্যাংক থেকে প্রতিটি ট্যাংকের বর্হিগমন নালা ২ ইঞ্চি নীচু হতে হবে। তাতে ডিমগুলো আপনা আপনি প্রজনন ট্যাংক থেকে হ্যাচিং ট্যাংকে এসে জমা হবে। নিষিক্ত ডিম এরেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ ও পানি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। তাপমাত্রা ভেদে ১৮/২০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে। এরপর ২ থেকে ৩ দিন হ্যাচিং ট্যাংকে রাখার পর রেনু পোনাকে সিদ্ধ ডিমের কুসুম ভাল করে ব্লেন্ডার করে তারপর ছেঁকে খাবার হিসাবে দিতে হবে। এভাবে ক’দিন খাওয়ানোর পর নার্সারি পুকুরে স্থানান্তর করতে হবে।

নার্সারি ব্যবস্থাপনাঃ নার্সারি পুকুরের ব্যবস্থাপনা ২টি ধাপে করা যায়। প্রথমটি হল ১টি পুকুর ব্যবহার করে আর দ্বিতীয়টি হল ২টি পুকুর ব্যবহার করে। ১টি পুকুর ব্যবহার করে পোনা উৎপাদন করলে পোনা ছোট বড় হয়ে যায় এবং চাষের ক্ষেত্রে নানাবিধ অসুবিধা হয়। ২টি পুকুর ব্যবহার করলে পোনা তেমন ছোট বড় হয় না। সে জন্য ২টি পুকুর ব্যবহার করাই ভাল। নার্সারি পুকুর আয়তাকার হলে ভাল হয়। এক্ষেত্রে ২য় পদ্ধতির কথা উল্লেখ থাকছে অর্থাৎ ২টি পুকুর ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। প্রথম পুকুরের আয়তন হবে ১০/১৫ শতাংশ এবং ২য় পুকুরের আয়তন হবে ৪০/৫০ শতাংশ। প্রথম পুকুরের পানি সেচ দিয়ে শুকিয়ে শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন পানির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিয়ে শুকাতে হবে। পুকুরের তলা শুকানোর পর পুকুরের পাড়ের চারপাশে জাল দিয়ে ঘিরে শ্যালো মেশিন বা গভীর নলকূপের সাহায্যে ৩ ফুট পরিষ্কার পানি দিতে হবে। পানি দেয়ার পর পরই শতাংশ প্রতি ১০০ গ্রাম আটা পানির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। এর ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাণী প্ল্যাংটন জন্মাবে যা কৈ মাছে রেনুর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আটা দেয়ার ২ দিন পর পুকুরে সন্ধ্যায় ০.২ পি.পি.এম হারে সুমিথিয়ন পানির সাথে মিশিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। এর ২দিন পর রেনু মজুত করতে হবে। ১৫/২০ শতাংশের নার্সারি পুকুরের জন্য ১০০/১৫০ জোড়া কৈ মাছের ব্রুড থেকে উৎপাদিত রেনু পুকুরে ছাড়া উচিৎ। এ পুকুরে ৭/৮ দিন খাওয়ানোর পর রেনুগুলো ধানীপোনাতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। তখন এই ধানীপোনাকে গ্লাস নাইলন কাপড়ের তৈরি হাপা দিয়ে কাটাই করে ২য় পুকুরে স্থানান্তরিত করতে হবে। এভাবে আরো ১০ দিন খাওয়ানোর পর ধানীপোনাগুলো চারা পোনাতে পরিণত হবে যা পরবর্তীতে চাষের পুকুরে ছাড়তে হবে।

খাবার প্রয়োগঃ রেনু ছাড়ার পর থেকেই পুকুরে সম্পূরক খাবার প্রয়োগ করতে হবে। খাবার হিসেবে ২০ শতাংশের একটি পুকুরে প্রতিবারে ১০টি হাঁসের ডিম সিদ্ধ করে ডিমের সাদা অংশসহ ভালভাবে ব্লেন্ডারে মিহি করে গ্লাস নাইলনের কাপড় দিয়ে ছেঁকে পানির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। এভাবে দৈনিক ২/৩ বার খাবার প্রয়োগ করতে হবে। ২ দিন খাবার দেয়ার পর ৩য় দিন থেকে ওই পরিমাণ ডিমের সাথে আরো আধাকেজি আটা সিদ্ধ করে ওই ডিমের সাথে মিশিয়ে পুকুরে দিনে ২/৩ বার প্রয়োগ করতে হবে। আটা প্রয়োগে রেনুমাছ খাওয়ার পাশাপাশি অধিক পরিমাণে প্রাণী প্ল্যাংকটনের জন্ম হবে যা রেনুপোনার জন্য খুবই দরকারী। এভাবে ৫/৬ দিন খাওয়ানোর পর রেনুপোনাগুলো ধানীপোনাতে পরিণত হবে যা পরবর্তীতে কাটাই পুকুরে অর্থাৎ ২য় পুকুরে স্থানান্তরিত করতে হবে। এই পুকুরে ধানীপোনার খাবার হিসাবে বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি নার্সারি খাবার খাওয়াতে হবে। খাবারে প্রয়োগ পদ্ধতিতে নার্সারি খাবারকে ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে তারপর পোনাকে খাওয়ানো উচিৎ। খাবারের পরিমাণ হবে প্রতি ৪ লক্ষ মাছের জন্য ১০ কেজি খাবার। এভাবে ৮/১০দিন খাওয়ানোর পর পোনাগুলো এক থেকে দেড় ইঞ্চি সাইজের হলে পরবর্তীতে চাষের পুকুরে ছাড়তে হবে।

 

৪. চষী ভাইদের জন্য কিছু গুরুত্তপূর্ণ পরামর্শঃ

  • লাভজনক মাছ চাষে সঠিকভাবে পুকুর নির্বাচন ও পুকুর প্রস্তুত করতে হবে।
  • প্রতি মাসে একবার প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম জিওলাইট ব্যবহার করতে হবে।
  • যে কোন রাক্ষুসে মাছ নিধন করতে হবে।
  • মানসম্মত পোনা সংগ্রহ করতে হবে।
  • নিয়মিত ফাইটো পালাংটনের ব্লুম হলে খাদ্য সরবরাহ কমিয়ে দিতে হবে।
  • প্রতি ১০/১২ দিন পর পর মাছের গড় ওজন ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষন করতে হবে।
  • মাছকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবের দেয়া যাবেনা।
  • নিয়মিত পানির পি এইচ ও গ্যাস পরীক্ষা করতে হবে।
  • মাছের কোন সমস্যা বা রোগ দেখা দিলে মৎস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

৫. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ

বাজার ব্যবস্থাঃ যথাযথ নিয়মে পরিচর্যা করলে ৬ মাসের মধ্যে কৈ মাছ গড়ে ৪০-৫০ গ্রাম হয় এবং প্রতি শতাংশে ৮-১০ কেজি উৎপাদন পাওয়া যায়। এবং পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।

৬. তথ্যের উৎসঃ  AIS, কৈ মাছ চাষ নির্দেশিকা, এস জি এস গ্রুপ

৭. কন্টেন্ট তৈরিঃ ১০/১০/২০১১

৮. সর্বশেষ সংযোজন : জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com

 

 

 

 

 

 

 

মুখী কচু

১. ফসলঃ মুখী কচু
Baby Taro Root

২. জাতঃ

দেশী জাতঃ মুখী কচু বাংলাদেশে গুড়া কচু, কুড়ি কচু, ছড়া কচু, দুলি কচু, বিন্নি কচু, ইত্যাদি নামে ও পরিচিত। স্থানীয় ভাবে বেশ কিছু দেশী জাত চাষ হয়ে থাকে।

উচ্চ ফলনশীল জাতঃ উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে বাংলদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট (বারি)-এর উদ্ভবিত  ‘বিলাসী’ নামের নতুন জাতটি চাষের জন্য মাঠ পর্যায়ে বেশ জনপ্রিয়।

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ দোআঁশ মাটি মুখী কচুর জন্য উত্তম। তবে বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, উঁচু ভিটায়, টিলায়ও চাষাবাদ করা যায়।

৪. বীজঃ

ভালো বীজ নির্বাচনঃ মুখীর ছড়া রোগ মুক্ত, পুষ্ট হতে হবে।

বীজের হারঃ মুখীর ছড়া বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রোপণের জন্য মুখীর ছড়া প্রতি শতকে ২ কেজি (১৫-২০ গ্রাম ওজনের) পরিমাণ দরকার হয়।

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ মুখীকচুর জন্য মাটি গভীরভাবে ৪টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি)। মধ্য-চৈত্র থেকে মধ্য-বৈশাখ (এপ্রিল-মে)।

ছিটিয়ে বা লাইনে বপনঃ সাধারনত লাইনে বপন করতে হবে।

রোপনঃ উর্বর মাটির জন্য লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩০ ইঞ্চি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১৫-১৮ ইঞ্চি। অনুর্বর মাটির বেলায় লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ২৫ ইঞ্চি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১২-১৪ ইঞ্চি রাখতে হয়।

 

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

সারের পরিমাণ ( প্রতি শতকে)

গোবর

৫০ কেজি

ইউরিয়া

৬০০ গ্রাম

টিএসপি

৫০০ গ্রাম

এমপি

৭০০ গ্রাম

 

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ গোবর, টিএসপি এবং এমওপি রোপণের সময় এবং ইউরিয়া ৪০-৪৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হয়।

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ রোপনের ৪০-৪৫ দিন পর এবং ৯০-১০০ দিন পর আগাছা বাছাই করতে হবে।

দমন পদ্ধতিঃ সাধারনত নীড়ানি / ছোট কোদাল দিয়ে আগাছা দমন করা হয়ে থাকে।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ মুখীকচুর জমিতে রস না থাকলে সেচের প্রয়োজন হয়। দু’সারির মাঝখানে নালা দিয়ে সেচ দেওয়া সুবিধাজনক।

সেচের পরিমাণঃ পরিমিত মাত্রায় সেচ দিতে হবে।

নিষ্কাশনঃ কচু সাধারনত দাড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। তাই নালার মাধ্যমে অধিক বৃষ্টি বা সেচের পানিও বের করে দেয়া যেতে পরে।

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ

রোগের নাম লক্ষন প্রতিকার কীটনাশকের নাম উৎস
ফাইটোফথেরা পাতা পচে বা শুকিয়ে যায়। রিডোমিল গোল্ড/ফলিও গোল্ড অনুমোদিত মাত্রায় গাছে ছিটিয়ে দিতে হবে। ১০-১৫ দিন পর আবার একই হারে দিতে হবে। রিডোমিল গোল্ড/ফলিও গোল্ড সিনজেনটা
লিফ্‌ ব্লাইট পাতায় কালো দাগ পড়ে। যে কোন ছত্রাকনাশক ওষুধ অনুমোদিত মাত্রায় ছিটানো যেতে পারে।
পোকামাকড়ের নাম লক্ষন প্রতিকার কীটনাসকের নাম উৎস
লেদা পোকা পাতা খেয়ে নষ্ট করে। এতে খাদ্য প্রস্তুতিতে অসুবিধা হয়। ফলে ফলন কম হয়। সেভিন, ম্যালাথিয়ন ইত্যাদি গ্রুপের ওষুধ অনুমোদিত মাত্রায় ছিটানো যায়।
বিছাপোকা পাতা খেয়ে নষ্ট করে। এতে খাদ্য প্রস্তুতিতে অসুবিধা হয়। ফলে ফলন কম হয় ফাইটার ২.৫ ইসি-অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। ফাইটার ২.৫ ইসি এ সি আই
ডায়াজিলন টি ৬০-অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। ডায়াজিলন টি ৬০ এ সি আই
বিছাপোকা কেরাটে ২.৫ ইসি- ২০০ এম এল/একর কেরাটে ২.৫ ইসি সিনজেনটা

 

১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ

গাছের গোড়ায় মাটি

সারিতে মাটি তুলে দেওয়া মুখীকচু ফসলের প্রধান পরিচর্যা। মাটি একবারে না তুলে দুই-তিনবারে তোলা ভালো। ভালো ফলন পাওয়ার জন্যে নিড়ানী বা ছোট কোদালের সাহায্যে গাছের গোড়ায় মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে গোড়ার মাটি উঁচু করতে হবে। মাটি কুপানো, গাছের গোড়ার মাটি দেওয়া ও সারের উপরি প্রয়োগ প্রভৃতি একই সাথে করা যায়। সাবধানতার সাথে এ কাজটি করতে হবে যেন গাছ কোনভাবে আক্রান্ত বা ক্ষত না হয়।

 

জমিতে খড় বিছানো

জমিতে খড় বা পাতা বিছিয়ে দিলে, জমিতে আগাছা কম হয়, মাটির রস ধারন ক্ষমতা বাড়ে এবং পাতা বা খড় পরবর্তীতে পচে মাটির সাথে মিশে জমির উর্বরা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

 

১২. ফসল কাটাঃ

সময়ঃ মুখী কচুর গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে গেলে এ কচু তুলতে হয়। রোপণের পর থেকে ৬-৭ মাস সময় লাগে।

পদ্ধতিঃ লাঙ্গল/কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করে কচু সংগ্রহ করা হয়।

১৩. পরিবহণ ব্যবস্থাঃ

পরিবহণ পদ্ধতিঃ চটের বস্তা/বাঁশের খাচাতে করে সাধারনত পরিনহন করা হয়।

পরিবহণের মাধ্যমঃ ভ্যান / গরুগাড়ী / ট্রাকটোর এর মাধ্যমে পরিবহন করা হয়ে থাকে।

১৪. প্যাকেজিং:
colocasia-250x250

প্যাকেজিং পদ্ধতিঃ স্হানীয় পর্যায়ে বাজারজাত করার জন্য বর্তমানে চটের বস্তা ও বাঁশের তৈরী খাঁচা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

১৫. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

স্বল্প পরিসরেঃ ভালোভাবে সতর্কতার সাথে গুড়ি তুলতে হবে। কাটা, পচা, ক্ষতযুক্ত, ছোট-মাঝারি-বড়  আকার দেখে আলাদা করে রাখতে হবে। ঠান্ডা ও ছায়াময় এবং বাতাস চলাচলের সুবিধাযুক্ত স্হানে স্তুপ করে বা মেঝেতে ছড়িয়ে মুখীকচু শুকানো যায়। ছায়ায় শুকানোর পর নাড়াচড়া করলে গুড়ির গায়ের মাটিসহ অন্যান্য ময়লা পড়ে গিয়ে গুড়ি পরিষ্কার হয়ে যাবে। এরপর ঘরের ছায়াযুক্ত স্হানে মাচা বা কাঠের উপর রেখে শুকনো ঠান্ডা পরিষ্কার বালি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এভাবে মুখীকচু ৪/৬ মাস পর্যন্ত অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়।

১৬. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ

বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।

১৭. তথ্যের উৎসঃ  AIS, BARI, কৃষি প্রযুক্তি হাত বই, ekrishok.com

১৮. সর্বশেষ সংযোজন : জুলাই,২০১৪

 

 

 

মরিচ

 

১. ফসলঃ মরিচ
images

২. জাতঃ

উচ্চ ফলনশীল জাতঃ উচ্চ ফলনশীল জাত গুলো হলো-

 

জাত

বপনের সময়

কোম্পানীর নাম

হাইব্রিড মরিচলং স্পাইসি

সারা বছর

গেটকো সীড

প্রিমিয়াম, ভিগর, (উফসীজাত – মেজর, চন্দ্রমুখী)

জুন-নভেম্বর

লাল তীর সীড

সনিক

সারা বছর

লাল তীর সীড

অগ্নি ২,৩

সারা বছর চাষ করা যায়

আফতাব সীড কো.

KS. 3, 4

জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারী এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত

কৃষিবিদ গ্রুপ সীড

BSS-805/811, সুপার আনমল

বেজো সীড

Darger, NS1701 (Capsicum Five Star)

নামধারী সীড কো.

গ্রীন ইট

পাশাপাশি সীড কো.

RK 607

সারা বছর

এনার্জি প্যাক সীড

হট মাষ্টার, মল্লিকা ১১৭, যমুনা, চাতক (উদ্ধমুখী)

সারা বছর

মল্লিকা সীড কো.

 

 

 

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ উর্বর দো-আঁশ মাটি, নদীপাড় ও চরাঞ্চলের মাটি।

 

 

 

৪. বীজঃ

ভালো বীজ নির্বাচনঃ ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নোরুপ-

রোগমুক্ত,পরিষ্কার,পরিপুষ্ট ও চিটামুক্ত হতে হবে।

সকল বীজের আকার আকৃতি একই ধরনের হবে।

বীজের হারঃ এক একরের (১০০ শতাংশ) উপযোগী চারা উৎপন্ন করতে ২৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হতে পারে। ছিটিয়ে বুনলে লাগে ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে।

বীজ শোধনঃ প্রতি কেজি বীজে ১ গ্রাম ভিটাভেক্স ২০০ দিয়ে বীজ শোধন করতে হবে

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ জমি ভালভাবে চাষ ও ও মই দিয়ে সমতল করে আগাছা বাছাই করতে হবে।

বীজ তলা তৈরীঃ ৩ ও ১ মিটার আকারের বীজতলা করে সেখানে বীজ বপন করা হয়।

বীজ তলার পরিচর্যাঃ মাঝে মাঝে সেচ দিতে হবে ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ শীতকালের জন্য ভাদ্র-আশ্বিণ মাসে ও বর্ষা মৌসুমের জন্য ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়।

ছিটিয়ে বা লাইনে বপনঃ

রোপনঃ আগাছা পরিষ্কার করে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্ত’তির পর চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১.৫-২ হাত ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ১ হাত বা তার কিছু বেশি রাখা হয়। চারা বিকেলে লাগাতে হবে এবং ২-৩ দিন সকাল বিকাল পানি দিতে হবে। চারা ৪-৫ ইঞ্চি উঁচু হলে রোপণের উপযোগী হয়।

 

 

 

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

একর প্রতি পরিমাণ

শেষ চাষের সময়

কিস্তিতে সার প্রয়োগ (কেজি)

জমিতে সার প্রয়োগ

১ম ২য় ৩য়
গোবর/কম্পোস্ট ৪০০০ কেজি

সব

- - -

ইউরিয়া

৮৫ কেজি - ২৮ ২৮ ২৮
টিএসপি ১২০ কেজি

সব

- - -

এমওপি

৮০ কেজি ২৬ কেজি ১৮ ১৮ ১৮
জিপসাম ৪৫ কেজি সব

-

- -

 

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ আগাছা দেখা দিলে তা পরিষ্কার করতে হবে।

দমন পদ্ধতিঃ নিড়ানির সাহায্যে আগাছা দমন করতে হবে।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ জমিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে।

সেচের পরিমাণঃ পরিমিত মাত্রায় সেচ দিতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে।

নিষ্কাশনঃ পানি নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ
anthracnoce

রোগের নাম

লক্ষন

প্রতিকার

পাতা পচা

প্রথমে পাতায় পানিভেজা দাগ হয়। এরপর পাতা দ্রুত পচতে থাকে। আগা ডাল একই সাথে আক্রান্ত হয়। রিডোমিল গোল্ড এম জেড ৬৮ ডবলিউ জি- ১ কেজি/একর জিমিতে প্তয়োগ করতে হবে

চারা ধবসা রোগ

বীজতলায় চারা গজানোর পর থেকে মূল ক্ষেতে চারা রোপন পর্যন্ত এ রোগের আক্রমন হয়ে থাকে। অংকুরিত বীজের বীজপত্র, কান্ড এবং শিকড় নষ্ট করে দেয়। আক্রান্ত চারা প্রথমে হালকা সবুজ হয়ে ঢলে যায় এবং সম্পূর্ন চারাটিই মরে যায়। আক্রান্ত চারা ২-৪ দিনের মধ্যেই পচে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ১. শোধনকৃত বীজ বপন করা এবং রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি (প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে ৫ শতাংশ জমির জন্য)। ব্যবহার করে বীজতলার মাটি শোধন করা যায়। ২. আক্রান্ত গাছ জমি থেকে তুলে ধ্বংস করতে হবে।

পাতায় দাগ

পাতায় বাদামী দাগ দেখা যায় স্কোর ২৫০ ইসি- ০.৫ মিলি/ লি. পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

মোজাইক

কচি চারার বীজপত্র হলুদ হয় এবং চারা নেতিয়ে পড়ে। কচি ডগা জটলার মত দেখায়।  আক্রান্ত পাতা ছোট, বিবর্ণ, বিকৃত ও নীচের দিকে কুঁকড়ানো হয় এবং শিরা-উপশিরাও হলুদ হয়ে যায়। ১. আক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করতে হবে।২. ক্ষেত আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।৩. বাহক পোকা সাদা মাছি দমন করতে হবে (একতরা ২৫ ডব্লিউজি- ২.৫ গ্রাম একতারা প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে সেপ্র করতে হবে)

লিফ কার্ল বা পাতা কোকড়ানো

গাছের যে কোনো অবস্থায় এ রোগ হতে পারে। আক্রান্ত গাছের পাতা কুকড়ে যায় ও স্বাভাবিক পাতার তুলনায় পুরু হয়। পাতাগুলো ছোট ও গুচ্ছাকৃতি হয়ে যায়, গাছের পর্বগুলো  যেখান থেকে নতুন পাতা বা ডাল গজায়) কাছাকাছি হয় ও গাছ খর্বাকৃতি হয়। গাছে অতিরিক্ত ডালপালা জন্মায় এবং ঝোপের মত হয়। ১. সুস্থ গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে এবং সুস্থ ও রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে। ২. বীজতলা থেকে আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্রই তুলে মাটিতে পুঁতে ধ্বংস করতে হবে।

এন্থ্রাকনোজ

এ রোগের আক্রমণ প্রথম পর্যায়ে গাছের ডগায় এবং পরে পাতা, ডাল ও ফলে দেখা যায়। ডগায় আক্রমণ হলে আস্তে আস্তে ডগা শুকিয়ে মরে যায়। ফলে পাতা ও ফুল ঝরে যায় এবং বাড়ন্ত ফল পরিপুষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে যায়। একরোবেট এম জেড- ৮০০ গ্রাম/একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

পোকামাকড়ের নাম

লক্ষন

প্রতিকার

ফল ছিদ্রকারী     পোকা

কচি ডগা ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে যায়। আক্রান্ত ফলের ভিতরটা ফাঁপা ও পোকার বিষ্ঠায় পরিপূর্ণ থাকে। নিমবিসিডিন, ৮০ এম এল/একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
রিপকর্ড ১০ ই সি ২০০ এম এল/একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে (১ এম এল /লি. পানি)
সবিক্রন ৪২৫ ই সি, ৪০০ এম এল / একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
আলফাটাফ ৫০ এস পি, ২৪৫-৩২৫ গ্রাম/একর(১২-১৬ গ্রাম/১০ লি. পানি)

মাছি পোকা

১. স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে।২. ডিম ফুটে কীড়াগুলো বরে হয়ে ফলের শাস খায় এবং ফল পচে যায় ও অকালে ঝরে পড়ে। ১. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ২. সবিক্রন ৪২৫ ইসি- প্রতি লিটার পানিতে ২ এমএল হারে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন।
টিডো ২০ এস.এল-১০০-১০৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

জাব পোকা

পূণবয়স্ক ও নিম্ফ উভয়েই পাতা, কচি কান্ড, ফুল ও ফলের কুঁড়ি, বোঁটা এবং ফলের কচি অংশের রস চুষে খায়। ফলে গাছ প্রথমে দুর্বল ও পরে হলুদ হয়ে যায়। গাছে ফুল ও ফল অবস্থায় আক্রমণ হলে ফুলের কুঁড়ি ও কচি ফল ঝরে পড়ে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে কচি ডগা মরে যায়। ১. আক্রান্ত পাতা, ডগা, ফুল পোকাসহ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।২. একতারা ২৫ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে ২.৫ গ্রাম একতারা প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাব গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।৩. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
টিডো ২০ এস.এল-১০০-১০৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।
ফাস্টাক ২ ই সি, ২০২ মি লি ১ একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে(১ এম এল/১ লি. পানি)

 

১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ গাছে ফুল আসার সময় এবং তার ২০ থেকে ৩০ দিন পর হরমোন জাতীয় ওষুধ প্ল্যানোফিক্স ১০ থেকে ১২ লিটার পানিতে ২ মিলি হারে বা  ৪ থেকে ৫ লিটার পানিতে ১ মিলি সেলমন দ্রবন তৈরি করে গাছে প্রয়োগ করলে মরিচ অকালে ঝরে পড়ে না ও ফলন বাড়ে।

১২. ফসল কাটাঃ
images222IMG_7950.JPG

সময়ঃ রোপণের ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে ফুল আসে। তার ৩০ থেকে ৪০ দিন পর পাকা মরিচ তোলা যায়। এক মৌসুমে ১০ থেকে ১২ বার ফল তোলা যায়।

পদ্ধতিঃ সাধারনত হাত দিয়ে মরিচ তোলা হয়।

১৩. ফসল মাড়াইঃ

মাড়াইপদ্ধতিঃ ফুল আসার পর ১৫-২০ দিনের মধ্যে কাঁচা মরিচ হাত দিয়ে তোলা হয়। তবে মরিচের রং লাল হলে তুলে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা যায়।

১৪. প্যাকেজিং:

প্যাকেজিংপদ্ধতিঃ চটের বস্তা তার ভিতরে পলিথিন পেপার দিয়ে মরিচ প্যাকেজিং করতে হবে।

 

 

১৫. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
drying

স্বল্প পরিসরেঃ মরিচের রং লাল হলে তুলে রোদে শুকিয়ে অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়।

বৃহৎ পরিসরে (উৎস): মরিচ শুকানোর পর মাচার উপরে টিনের ডোল, গোলা, বেড়ি, পলিথিন বা ড্রামে রাখতে হবে। মরিচের গোলা এমন হওয়া উচিৎ যেন বাইরে থেকে বাতাস ঢুকতে না পারে। মরিচ সাধারণত: অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা, ছায়াযুক্ত এবং শুকানো জায়গায় রাখতে হবে।

১৬. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ

বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।

১৭. তথ্যের উৎসঃ  AIS, BARI, কৃষি প্রযুক্তি হাত বই, ekrishok.com, krishitey.com, ruralinfobd.com, infokosh.bangladesh.gov.bd

১৮. সর্বশেষ সংযোজন : জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com

 

হলুদ

১. ফসলঃ হলুদ
images (3)

২. জাতঃ

উচ্চ ফলনশীল জাতঃ ডিমলা সিন্দুরী নামে বাংলাদেশে দু’টি উন্নত জাত রয়েছে। ডিমলা জাতটি স্থানীয় জাতের তুলনায় ৩ গুণ ফলন বেশী দেয়।

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ সব ধরনের মাটিতে হলুদ চাষ করা যায়। তবে দো-আঁশ ও বেলে-দো-আঁশ মাটি হলুদ চাষের জন্য অতি উত্তম।

৪. বীজঃ

বীজের হারঃ সাধারণতঃ হলুদ চাষের জন্য একর প্রতি প্রায় ৮১০ থেকে ১২১৫ কেজি বীজের (মোথা) প্রয়োজন হয়। তবে ছড়া বীজ ব্যবহার করলে একর প্রতি ৬০০-৮০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। সাধারণত: ২৫ থেকে ৪০ গ্রাম ওজনের মোথা বীজ হিসেবে রোপণ করা দরকার।

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ ভালো ফলনের জন্য গভীরভাবে ৪ থেকে ৫ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে এবং আগাছা পরিষ্কার করে ঢেলা ভেঙ্গে ভালোভাবে জমি তৈরি করে নিতে হবে।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ হলুদ খরিপ মৌসুমে রোপণ করা হয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত রোপণ করা ভাল। তবে মে মাসেও রোপণ করা যায়।

ছিটিয়ে বা লাইনে বপনঃ
images (2) সাধারনত সারি থেকে সারির দূরত্ব ২০ ইঞ্চি  এবং কন্দ থেকে কন্দের দূরত্ব ১০ ইঞ্চি। কন্দের গভীরতা ২-৩ ইঞ্চি।

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সার

মোট পরিমাণ (একর প্রতি)

জমি তৈরির সময় দেয়

পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে দেয়

১ম কিস্তি

২য় কিস্তি

৩য় কিস্তি

রোপণের ৫০-৬০ দিন পর

১ম কিস্তির ৫০-৬০ দিন পর

২য় কিস্তির ৫০-৬০ দিন পর

গোবর

১৬১৯-২৪২৯ কেজি

সব

- - -

ইউরিয়া

৮১-৯৭ কেজি

-

৪০-৪৯ কেজি

২০-২৪ কেজি

২০-২৪ কেজি

টিএসপি

৬৯-৭৭ কেজি

সব

- - -

এমওপি (পটাশ)

৬৫-৭৩ কেজি

৩২ কেজি

-

১৬-১৮ কেজি

১৬-১৮

কেজি

জিপসাম

৪৩-৪৯ কেজি

সব

- - -

জিংক সালফেট

০.৮-১.২ কেজি

সব

- - -

 

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ মাটিতে রস না থাকলে মাঝে মাঝে সেচ দিতে।

দমন পদ্ধতিঃ হবে।সারির মাঝখানে সার প্রয়োগ করে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে মাটি ঝুরঝুরা করে দিতে হবে এবং এই ঝুরঝুরা মাটি সারির উপর ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি উচু করে বেঁধে দিতে হয়।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ মাটিতে রস কমে গেলে সময়মত সেচ দেয়া প্রয়োজন।

নিষ্কাশনঃ হলুদের ক্ষেত্রে বেশি বৃষ্টির সময় যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে থাকে সেজন্য দ্রুত নালা কেটে পানি বের করার ব্যবস্হা করতে হবে।

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ
disease of turmeric

রোগের নাম

লক্ষণ

প্রতিকার

কীটনাশকের নাম

রাইজোম রট (কন্দপচা)

পাতার কিনার থেকে আক্রান্ত শুরু হয়ে ক্রমশ: পাতা শুকিয়ে যায়। ডগা নরম হয়ে পচতে শুরু করে ও এক সময় গাছ মরেযায়। পরবর্তীতে কন্দ আক্রান্ত হয়ে পচে যায়। রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি – প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে ৫ শতাংশজমিতেভালভাবে প্রয়োগ করুন।

রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি

লিফ স্পট

পাতার উপর বাদামী রংয়ের দাগ দেখা যায় এবং দাগের কেন্দ্রস্হলে মেটে রং ধারণ করে। দাগের চারপাশে হলুদ রঙের  গর্ত সৃষ্টি হয়। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে যায় এবং ঢলে পড়ে। রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি – প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে ৫ শতাংশজমিতেভালভাবে প্রয়োগ করুন।

রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি

লিফ ব্লচ

পাতার দুইপাশে ছোট ছোট বাদামী রংয়ের দাগ পড়ে। দাগ ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি – প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে ৫ শতাংশজমিতেভালভাবে প্রয়োগ করুন।

রিডোমিল গোল্ড ৬৮ ডব্লিউজি

পোকামাকড়ের নাম

লক্ষণ

প্রতিকার

কীটনাশকের নাম

কান্ড-ছেদক পোকা

কীড়া কচি ডগা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে নরম অংশ খাওয়া শুরু করে এতে আক্রান্ত ডগা হলুদাভ হয়ে শুকিয়ে যায়। এমকোজিম ৫০ ডবলিউ পি ২০ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করে এ পোকা দমনে রাখা যায়।

এমকোজিম ৫০ ডবলিউ পি

পাতা মোড়ানো পোকা

মোড়ানো পাতা খেতে থাকে এবং এর অভ্যন্তরে পোকার পুত্তলি লুকিয়ে থাকে। এমকোজিম ৫০ ডবলিউ পি ২০ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর স্প্রে করে এ পোকা দমনে রাখা যায়।

এমকোজিম ৫০ ডবলিউপি

 

১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ

ফসল সংগ্রহের পর করণীয়

ঘাম ঝরানো

পাতা, কাণ্ড, শিকড়, পাশ্ব শিকড় কেটে পরিষ্কার করে পানি দিয়ে হলুদ একাধিকবার ধুয়ে আলাদা করতে হবে। এরপর পরিষ্কার ছায়াযুক্ত স্হানে গাদা করে পাতা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এভাবে দু’তিন দিন হলুদ থেকে উৎপন্ন ঘাম সম্পূর্ণরূপে ঝরানো হয়। ঘাম ঝরানো শেষ হলে হলুদ সিদ্ধ করার উপযুক্ত হয়।

সিদ্ধ করার পদ্ধতি:
সিদ্ধ করা:
boiling

লৌহ অথবা মাটির পাত্রে ফুটন্ত পানিতে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা  হলুদগুলো সিদ্ধ করতে হবে (যতক্ষণ না সাদা ফেনা এবং হলুদের গন্ধযুক্ত সাদা ধোঁয়া বের হয়)। অতিরিক্ত সিদ্ধ করলে রং নষ্ট হয় এবং কম সিদ্ধ করলে হলুদ ভঙ্গুর হয়।

সিদ্ধ করার পর করণীয়: সিদ্ধ হলুদগুলোকে একটি পাত্রে রেখে, ২ থেকে ৩ ইঞ্চি উপর পর্যন্ত পানি দ্বারা পূর্ণ করতে হবে। এই পানিতে চুন বা সোডিয়াম কার্বোনেট বা সোডিয়াম বাইকার্বোনেট মিশিয়ে অ্যালকালাইন দ্রবণ (০.০৫-১%) তৈরি করতে হবে। এখন হলুদগুলোকে পাত্র থেকে তুলে নিয়ে ২০ গ্রাম সোডিয়াম বাইসালফেট ও ২০ গ্রাম হাইড্রোক্লোরিক এসিডের জলীয় দ্রবণে ১৫ মিনিট যাবৎ ভিজিয়ে রাখার পর দ্রবণ থেকে ছেঁকে নিয়ে রোদে শুকানোর ব্যবস্হা করতে হবে।

ঠিকমত সিদ্ধ হলো কিনা: হলুদ ঠিকমত সিদ্ধ হবে তখন, যখন আঙ্গুল দিয়ে টিপলে নরম মনে হয় এবং ভোতা কাঠের টুকরো দিয়ে ছিদ্র করা যায়।
হলুদের রং: সিদ্ধ করার ফলে রাইজোমটি (হলুদের খাবারযোগ্য অংশকে রাইজোম বলে) নরম ও আঠালো হয় এবং মেটে গন্ধ দূর হয়। এ  সময় রাইজোমের মধ্যে রঙিন উপাদানগুলি সমভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং হলুদের কমলা-হলুদ রং সুন্দরভাবে প্রকাশ পায়।

শুকানোর সময়:
drying
হলুদের রং, স্বাদ ও গন্ধ ঠিক রাখার জন্য, শুকানোর সময় কমাতে হবে।

কতক্ষণ সিদ্ধ করতে হবে:  হলুদ কতক্ষণ সিদ্ধ করতে হবে তা রাইজোমের আকারের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। যেমন- ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির রাইজোম সিদ্ধ হওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় নেয়। হলুদ সিদ্ধ করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন পাশ্ববর্তী কন্দ এবং গুড়িকন্দ আলাদা করে সিদ্ধ করা হয়। গুড়িকন্দকে কেটে অর্ধেক করে সিদ্ধ করলে সময় কম লাগে। রাইজোমের সংখ্যার উপর সিদ্ধ করার সময় ১ থেকে ৪ অথবা ৬ ঘন্টা লাগতে পারে। সাধারণত: ৫০ থেকে ৭৫ কেজি রাইজোম একবারে সিদ্ধ করার জন্য নির্বাচন করা উচিত। একই পানিতে কয়েকবার হলুদ সিদ্ধ করা যায়।

কতদিনের মধ্যে সিদ্ধ করতে হবে:

মাঠ থেকে হলুদ সংগ্রহের ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে সিদ্ধ করা উচিত যাতে রাইজোম নষ্ট না হয়। জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশী হলে হলুদের গুণাগুণ  কমে যেতে পারে।

শুকানো:
হলুদ রাইজোমগুলিকে সিদ্ধ করার পরপরই রোদে শুকানো উচিত। সিদ্ধকৃত রাইজোমকে ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি পুরু করে মোটা বাঁশের চাটাই অথবা মেঝের উপর ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত শুকানো হয়। সন্ধ্যার পূর্বেই হলুদকে ঢেকে রাখা দরকার। চূড়ান্ত পর্যায়ে হলুদের আদ্রতা ৫ থেকে ১০ ভাগে এ নিয়ে আসতে হবে। হাত দিয়ে ভাঙ্গলে যদি কট্‌ শব্দ হয় তাহলে বোঝা যাবে হলুদ পুরোপুরি শুকিয়েছে।

১২. ফসল কাটাঃ

সময়ঃ সাধারণতঃ গাছের পাতা যখন হলুদ রং ধারণ করে শুকিয়ে যায় তখনই হলুদ সংগ্রহের ভালো সময় হয়।লাগানোর ৯-১০ মাস পর পাতা শুকিয়ে গেলে হলুদ সংগ্রহ করা হয়।

পদ্ধতিঃ কোদাল / লাঙ্গল দিয়ে মাটি আলগা করে হলুদ সংগ্রহ করতে হবে।

১৩. পরিবহণ ব্যবস্থাঃ

পরিবহণ পদ্ধতিঃ শুকানোর পর চটের বস্তাতে ভরে পরিবহণ করা যেতে পারে।

১৪. প্যাকেজিং:

প্যাকেজিংপদ্ধতিঃ চটের বস্তার ভিতরে পলিথিন দিয়ে ভালোভাবে শুকানো হলুদ প্যাকেজিং করা যেতে পারে।

১৫. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

স্বল্প পরিসরেঃ কোন ধাতু বা মাটির পাত্রে পানি দিয়ে হলুদ ধীরে-ধীরে জ্বাল দিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর্যন্ত সিদ্ধ করা হয়। এভাবে হলুদ সিদ্ধ করার পর ১২ থেকে ১৩ দিন রোদে শুকিয়ে হলুদ দীর্ঘদিন (১-২ বছর) সংরক্ষণ করা যায়।

১৬. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ

বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।

১৭. তথ্যের উৎসঃ  AIS, BARI, krishitey.com, krishibangla.com

১৮. সর্বশেষ সংযোজন :জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com

 

স্ট্রবেরি

১. ফসলঃ স্ট্রবেরি
images

২. জাতঃ

জাতের নাম

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম

চাষের সময়

বারি স্ট্রবেরী-১*

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট

সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ

রাবি-১, রাবি-২ এবং রাবি-৩

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর

মর্ডান স্ট্রবেরী-১, মর্ডান স্ট্রবেরী- ২, মর্ডান স্ট্রবেরী- ৩, মর্ডান স্ট্রবেরী- ৪ (Camarosa),  মর্ডান স্ট্রবেরী- ৫(Festival)

মর্ডান হর্টিকালচার সেন্টার, নাটোর

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর

*উচ্চ ফলনশীল জাত

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ বেলে দোঁআশ ও মাটিতে প্রচুর জৈব সার প্রয়োগ করে স্ট্রবেরি ফলানো যায়। যেসব জমিতে পানি জমে সেখানে স্ট্রবেরি ফলানো যাবে না।

৪. বীজঃ স্ট্রবেরী রানারের মাধামে বংশ বিস্তার করে থাকে। তাই পূর্ববর্তী বছরের গাছ নষ্ট না করে জমি থেকে তুলে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হালকা ছায়াযুক্ত স্থানে রোপণ করতে হবে। উক্ত গাছ হতে   উৎপন্ন রানারের পর্বসন্ধির নীচ থেকে যখন মূল বের হবে, তখন রানারটি মাতৃগাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভালভাবে মিশানো গোবরমাটি (১:১) দিয়ে ভরা পলিথিন ব্যাগে (৪” x ৩”) লাগাতে হবে এবং তা হালকা ছায়াযুক্ত নার্সারীতে সংরক্ষণ করতে হবে।

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ জমি ভালভাবে চাষ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে অন্তত ৩০ সেন্টিমিটার গভীর করে জমি চাষ দিতে হবে। যেহেতু স্ট্রবেরি গাছের শিকড় মাটির উপর দিকে থাকে সেজন্য মাটি ঝুরঝুরা করে নির্ধারিত মাত্রায় সার মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

চারা তৈরীঃ স্ট্রবেরি গাছগুলো গুল্ম ও লতা জাতীয় গাছ বলে গাছের গোড়া থেকে বেশ কিছু লম্বা লম্বা লতা মাটির উপর দিয়ে লতিয়ে যায়। মাটির সংস্পর্শে লতার গিট থেকে শিকড় গজায়। শিকড়যুক্ত গিট কেটে নিয়ে মাটিতে পুতে দিলে নতুন চারা তৈরি হবে। অর্ধেক মাটি অর্ধেক গোবর সার মিশিয়ে পলিব্যাগে ভরে একটি করে শিকড়যুক্ত গিটসহ লতা পুঁতে দিতে হয়। এক্ষেত্রে একটি গাছ থেকে ১৮-২০ টি চারা তৈরি করা সম্ভব।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ
DSCN7849

চারা রোপন এর সময়ঃ স্ট্রবেরির চারা মধ্যঅক্টোবর থেকে মধ্যডিসেম্বর পর্যন- রোপণ করা যায়। তবে নভেম্বর মাস স্ট্রবেরি চারা রোপণের জন্য সবচেয়ে ভাল। জমি তৈরির পর লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ৫০ সেন্টিমিটার ও প্রতি সারিতে ৩০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে স্ট্রবেরির চারা লাগাতে হয়। বৃষ্টি হলে ক্ষেত থেকে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে দিতে হবে না হলে গাছ পঁচে যাবে।

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের পরিমাণঃ স্ট্রবেরির জন্য দরকার প্রচুর জৈব সার। এজন্য প্রতি একরে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া সার, ৭০ কেজি টিএসপি সার এবং ৮০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে।

সার প্রয়োগের সময়ঃ এসব সারকে সমান দুভাগে ভাগ করে একভাগ দিতে হয় ফুল আসার একমাস আগে এবং অন্য ভাগ দিতে হবে ফুল ফোটার সময়। প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ সাধারনত জমিতে রস না থাকলে সেচ দিতে হবে এবং ফল ধরা শুরু হলে ২-৩ দিন পর পরই সেচ দিতে হবে।

নিষ্কাশনঃ স্ট্রবেরী জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। তাই বৃষ্টি বা সেচের অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ
4dff9cd1-b03c-4f30-b57c-3ce104bd6586

 

রোগের নাম

লক্ষণ

প্রতিকার

কীটনাশকের নাম

পাতায় দাগপড়া রোগ কোন কোন সময়, বিশেষত কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় পাতায় বাদামী রং এর দাগ পরিলক্ষিত হয়। এ রোগের আক্রমন হলে ফলন এবং ফলের গুনগত মান হ্রাস পায়। রিডোমিল গোল্ড নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করে সুফল পাওয়া যায়। রিডোমিল গোল্ড
ফল পঁচা রোগ এ রোগের আক্রমণে ফলের গায়ে জলে ভেজা বাদামী বা কালো দাগের সৃষ্টি হয়। দাগ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ফল খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। ফল পরিপক্ক হওয়ার পূর্বে নোইন ৫০  ডব্লিউ পি অথবা ব্যাভিস্টিন ডিএফ নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৮-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। নোইন ৫০  ডব্লিউ পি অথবা ব্যাভিস্টিন ডিএফ
ভারটিসিলিয়াম উইল্ট এ রোগে আক্রানত্গাছ হঠাৎ করে দূর্বল ও বিবর্ণ হয়ে পড়ে। আক্রমণ বেশী হলে গাছ বাদামী বর্ণ ধারণ করে এবং মারা যায়। সাধারনতঃ জলাবদ্ধ জমিতে এ রোগের আক্রমণ বেশী হয়। জমি শুষ্ক রাখতে হবে। পলিথিন মাল্‌চ ব্যবহার করলে তা  তুলে ফেলতে হবে। কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন বর্দ্দোমিক্সার (১:১:১০), কুপ্রাভিট অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৮-১০ দিন পর পর ২-৩ বার গাছের গোড়া ও মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন বর্দ্দোমিক্সার (১:১:১০), কুপ্রাভিট অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড

পোকামাকড়ের নাম

লক্ষণ

প্রতিকার

কীটনাশকের নাম
পাখি বিশেষ করে বুলবুলি ও শালিক স্ট্রবেরী ফলের সবচেয়ে বড় শত্রু। ফল আসার পর সম্পূর্ণ পরিপক্ক হওয়ার পূর্বেই পাখির উপদ্রব শুরু হয়। ফুল আসার পর সম্পূর্ণ বেড জাল দ্বারা ঢেকে দিতে হবে যাতে পাখি ফল খেতে না পারে।

 

১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ
strawberry-007

স্ট্রবেরি গাছে ফুল ধরাতে চাইলে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। গাছ লাগানোর পর তার গোড়া থেকে প্রচুর রানার বা কচুর লতির মতো লতা বের হতে থাকে। এগুলো জমি ঢেকে ফেলে। এতে ফলন ভাল হয় না। আবার মাটির সংস্পর্শে এলে স্ট্রবেরীর ফল পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য চারা রোপনের ২০-২৫ দিন পর স্ট্রবেরী গাছের গোড়ায় খড় বা পলিথিন বিছিয়ে দিতে হয়। পলিথিন সিট ৩০ সেন্টিমিটার পর গোলাকার ছিদ্র করে স্ট্রবেরি গাছের ঝোপকে মুঠো করে ঢুকিয়ে দিতে হয়।  বেশি ফলন ও তাড়াতাড়ি ফল পেতে হরমোন গাছ পাতায় স্প্রে করা যেতে পারে। স্ট্রবেরীর গাছ প্রখর সৌর-তাপ এবং ভারী বর্ষণ সহ্য করতে পারেনা। এজন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে হালকা ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা ফল আহরণের পর মাতৃগাছ তুলে টবে রোপণ করে ছায়ায় রাখতে হবে। ফল আহরণ শেষ হওয়ার পর সুস্থ্য-সবল গাছ তুলে পলিথিন ছাউনির নীচে রোপণ করলে মাতৃ গাছকে খরতাপ ও ভারী বর্ষণের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাবে। মাতৃ গাছ থেকে উৎপাদিত রানার পরবর্তি সময়ে চারা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।  ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে (সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে) রোপণকৃত বারি স্ট্রবেরী-১ এর ফল সংগ্রহ পৌষ মাসে আরম্ভ হয়ে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত (ডিসেম্বর থেকে মার্চ) চলে।

১২. ফসল কাটাঃ
images (1)

সময়ঃ কাঁচা ফল যখন হলদে বা লালচে রঙের হতে শুরু করে তখন বুঝা যাবে ফল পাকা শুরু হয়েছে। ফল পুরো পাকলে লাল হয়ে যায়। তবে বিক্রির জন্য ফল পুরো লাল হওয়ার দরকার নেই। সেক্ষেত্রে ফলগুলো শক্ত থাকা অবস্থায় তুলতে হবে।

পদ্ধতিঃ ফল তুলতে হবে বোটা সমেত। এতে ফলের স্থায়ীত্ত বারে।

১৩. পরিবহণ ব্যবস্থাঃ

পরিবহণ পদ্ধতিঃ কাগজের কার্টুন বা প্লাস্টিক কেজ দারা প্যাকেজিং করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহণ করা হয়ে থাকে এতে করে ফলে দাগ বা পঁচন কম হয়।

১৪. প্যাকেজিং:
M&P-15T 397

প্যাকেজিং পদ্ধতিঃ সাধারনত কাগজের কার্টুন বা প্লাস্টিক কেজ দারা প্যাকেজিং করা হয়ে থাকে।

১৫. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

স্বল্প পরিসরেঃ ফল তোলার পর ১০-১২ দিন পর্যন উপযুক্ত পরিবেশে ভালো থাকে।

১৬. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ

বাজার ব্যবস্থাঃ কাগজের প্যাকেটে বা টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে প্লাস্টিকের ঝুড়ি বা ডিমের ট্রেতে করে বাজারজাত করতে হবে।

১৭. তথ্যের উৎসঃ AIS, ekrishok.com, BARI. agrobangla.com

১৮. সর্বশেষ সংযোজন : জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com

 

পুঁইশাক

১. ফসলঃ পুঁইশাক
images

২. জাতঃ

উচ্চ ফলনশীল জাতঃ উচ্চ ফলনশীল জাত গুলো হলো-

জাত

কোম্পানীর নাম

বপনের সময়

বারি পুঁইশাক-১ (চিত্রা), বারি পুঁইশাক-২

BARI

ফেব্রুয়ারী-মার্চ

KS green

কৃষিবিদ গ্রুপ সীড

মাঘ থেকে ভাদ্র

মাধুরী, মনীষা

লালতীর সীড

ফেব্রুয়ারী থেকে আগষ্ট মাস

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ সব ধরনের মাটিতেই পুঁইশাক জন্মে তবে  এটি সুনিকাশনযুক্ত বেলে দোআঁশ থেকে এটেল দোআঁশ মাটিতে সবচেয়ে ভাল হয়।

৪. বীজঃ

ভালো বীজ নির্বাচনঃ সাধারনত নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো ভালো বীজ নির্বাচনে সহায়ক :

  • রোগমুক্ত,পরিষ্কার,পরিপুষ্ট ও চিটামুক্ত হতে হবে।
  • সকল বীজের আকার আকৃতি একই ধরনের হবে।

বীজের হারঃ সারিতে বুনলে প্রতি শতকে ৮-১০ গ্রাম বীজ লাগবে (তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে) । আর ছিটিয়ে বুনলে বীজের পরিমাণ বেশী লাগবে।

বীজ শোধনঃ ভিটাভেক্স ২০০ / টিলথ অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করে বীজ শোধন করা যায়।

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ ৫ থেকে ৬ টি চাষ ও মই দিয়ে উত্তমরূপে জমি তৈরি করতে হয়।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ ফাল্গুন থেকে জ্যৈষ্ঠ। সাধারণতঃ গ্রীষ্মকালে ও বর্ষায় এর চাষ ভাল হয়। বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে জমিতে বুনতে হয়। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে।

ছিটিয়ে বা লাইনে বপনঃ ছিটিয়ে বা লাইনে দু ভাবেই বীজ বপন করা যায়।

রোপনঃ চারা উৎপাদন করে ১৫-২০ দিনের চারা লাগানো যায়। পুঁই শাকের চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারি ১ মিটার এবং প্রতি সারিতে ০.৫ মিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হয়।

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নামঃ গোবর, সরিষার খৈল, ইউরিয়া, টিএসপি ও এমও পি।

সার প্রয়োগের সময়ঃ ইউরিয়া ছাড়া সব সারই জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে।

সারের পরিমাণঃ প্রতি শতকে গোবর -৬০ কেজি, সরিষার খৈল -৫০০ গ্রাম, ইউরিয়া- ৮০০,গ্রাম, টিএসপি-৪০০ গ্রাম, এমও পি-৪০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে।

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ চারার বয়স ১০-১২ হলে ইউরিয়া সার প্রথম কিস্তি, ৩০-৪০ দিন পর এবং প্রথমবার ফলন তোলার পর বাকি দুই কিস্তি এই মোট তিন কিস্তিতে উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।

৮. আগাছা দমন

সময়ঃ প্রায়ই মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিস্কার করতে হয়।

দমন পদ্ধতিঃ কোদাল / নীরানির সাহয্যে আগাছা দমন করা যেতে পারে।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ মাটিতে রস না থাকলে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। এবং তার আগে মাটি আলগা করে দিতে হবে।

সেচের পরিমাণঃ পরিমিত মাত্রায় সেচ দিতে হবে।

নিষ্কাশনঃ জমিতে পানি জমে থাকলে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১০. রোগ দমনঃ
1208.280x185.clip

রোগের নাম

লক্ষণ

প্রতিকার

কীটনাশকের নাম

পাতায় দাগ (বীজ বাহিত) রোগ

এ রোগের কারণে পাতায় দাগ পড়ে। শাকের গুণগত মান ও বাজারমূল্য কমে যায়।

এমকোজিন ৫০ ডব্লিউ পি, ২ এম এল/১ লিঃ পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

এমকোজিন ৫০ ডব্লিউ পি

কান্ডের গোড়া পচা রোগ

এ রোগের কারণে পুঁইশাকের গোড়া পচে যায় এবং গাছ মরে যেতে পারে।

এমকোজিন ৫০ ডব্লিউ পি, ২ এম এল/১ লিঃ পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

এমকোজিন ৫০ ডব্লিউ পি

১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ ফলন বেশী পেতে হলে বাউনি দিতে হবে। চারা ১ ফুট সমপরিমাণ উঁচু হলে আগা কেটে দিতে হয়। এতে গাছ ঝোপালো হয়।

১২. ফসল কাটাঃ

সময়ঃ পুঁই গাছের ডগা মাঝে মাঝে কেটে দিতে হয়। এতে শাকও খাওয়া হয় আবার গাছে নতুন ডগাও বেরোয়। একবার চারা লাগিয়ে ৮ থেকে ১০ বার পুঁইশাক সংগ্রহ করা যায়।

পদ্ধতিঃ ধারালো ছুরি দিয়ে পুঁই গাছের ডগা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।

১৩. পরিবহণ ব্যবস্থাঃ

পরিবহণ পদ্ধতিঃ পরিবহনের সময় পুঁই গাছের ডগা সংগ্রহ করে ছোট ছোট আটি বেধে নিতে হয়।

পরিবহণের মাধ্যমঃ ভার / বাইঙ্গা অথবা বেশি পরিমানের হলে ট্রাকের সাহায্যে পরিবহন করা হয়।

১৪. প্যাকেজিং:

প্যাকেজিংপদ্ধতিঃ প্যাকেজিং এর জন্য ফুড রেপিং পেপার, পেরফোরেটেড পেপার, ঝুড়ি, খাঁচা, প্লাস্টিক কেস, ব্যবহার করা যায়।

১৫. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

স্বল্প পরিসরেঃ ১-২ দিন সংরক্ষণ করা যায়।

১৬. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ
new
বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।

১৭. তথ্যের উৎসঃ  AIS, BARI, কৃষি প্রযুক্তি হাত বই, ekrishok.com, krishitey.com,

১৮. সর্বশেষ সংযোজন :জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com

 

 

পান

১. ফসলঃ পান
images

২. জাতঃ

দেশী জাতঃ সাধারনত বাংলা, মিঠা, সাচি, কর্পূরী, গ্যাচ, নাতিয়াবাসুত, উজানী, মাঘি, দেশী, বরিশাল ও ঝালি প্রভৃতি জাতের পান বরজে চাষ করা হয়

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ পান চাষের জন্য দরকার উঁচু, বন্যামুক্ত, বেলে দোআঁশ বা এটেল দোআঁশযুক্ত জমি। (ছায়াযুক্ত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পান চাষের জন্য ভাল)।

৪. বীজঃ

বীজের হারঃ কাটিং সামান্য কাৎ করে (৪৫ ডিগ্রী) অর্ধেক অংশ মাটির ভেতর এবং বাকি অংশ চোখ বা মুকুল মাটির ওপর রাখা হয়। দ্বিসারি পদ্ধতিতে ৩-৬ ইঞ্চি লম্বা কাটিং লাগে শতক প্রতি ৪০০-৫০০ টি।

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ জমিকে আগাছামুক্ত, সমতল ও উঁচু করে তৈরি করে প্রতি ৬০ সে.মি পর পর ২০ সে.মি চওড়া করে নালা তৈরি করে নিতে হয়। বরোজের বাইরে একটি বড় নিকাশ নালার সাথে ছোট নালাগুলোকে যুক্ত করে দিতে হয়।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ সাধারণত বর্ষাকাল বা আষাঢ় মাস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়।

রোপনঃ বরোজের ভেতরে চারিদিকে ২৫ ইঞ্চি চওড়া রাস্তা রাখতে হয়। প্রতিটি বেড ৫০ ইঞ্চি চওড়া করে তৈরি করে নেয়া দরকার। প্রতিটি বেডে দুই লাইনে চারা রোপণ করতে হয়। একটি লাইন থেকে আরেকটি লাইনের দূরত্ব ১২-১৫ ইঞ্চি রাখতে হয়। আবার প্রতি দুই বেডের মাঝখানে ১২ ইঞ্চি নালা রাখা দরকার।

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নামঃ তিলের খৈল বা নিম তৈল, টিএসপি, এমওপি, ইউরিয়া ও এসএসপি।

সার প্রয়োগের সময়ঃ প্রাথমিক ভাবে জমি তৈরির সময় শেষ চাষের পর মাটিতে একর প্রতি ২০০ কেজি তিলের খৈল বা নিম তৈল, ৪০ কেজি টিএসপি ও ৬০ কেজি এমওপি সার মিশিয়ে দেয়া দরকার। পরবর্তিতে প্রতি শতক জমির জন্য খৈল ২০ কেজি, ২.৫ কেজি এসএসপি, ৬০০ গ্রাম এমওপি এবং ১.৮ কেজি ইউরিয়া সার সমান চার ভাগ করে বছরে ৪ বার জমিতে প্রয়োগ করতে হয়।

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ কাটিং এর গোড়ার আস পাশে আগছা হলে, আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

দমন পদ্ধতিঃ ছোট কোদাল/নীড়ানির সাহায্যে আগাছা পরিষ্কার করা যেতে পারে।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ পরিমিত পানি / সেচ দিতে হবে এবং চারা রোপণের পর ঝাঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।

নিষ্কাশনঃ বেশি পানি তাকলে তা বের করে দিতে হবে।

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ
tocp58_3

রোগের নাম

লক্ষন

প্রতিকার

কীটনাশকের নাম

গোড়া পঁচা

এটি এক ধরণের ছত্রাকের আক্রমণের কারনে হয়ে থাকে। বোঁর্দে মিশ্রণ দিযে মাটি শোধন করলে রোগের আক্রমণ কম হয়। আক্রমণ বেশি হলে ডায়থেন এম-৪৫ বা রিডোমিল গোল্ড/ফলিও গোল্ড ছত্রাক নাশক ২.৫ গ্রাম/লি. পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয। রিডোমিল গোল্ড/ফলিও গোল্ড

পানের লিফ স্পট

প্রাউড ২৫ ইসি ১মিলি/লি. হারে স্প্রে করতে হবে। প্রাউড ২৫ ইসি
রিডোমিল গোল্ড এম জেড ৬৮ ডব্লিউ জি- ২.৫ গ্রাম / লি. পানি রিডোমিল গোল্ড এম জেড ৬৮ ডব্লিউ জি
টিলথ ২৫০ ইসি; ০.৫ এম এল / লি. পানি টিলথ ২৫০ ইসি

পানের পাতা পঁচা

নিউবেন ৭২ ডব্লিউ পি-২.৫ মিলি/লি হারে স্প্রে করতে হবে। নিউবেন ৭২ ডব্লিউ পি

 

১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ

রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা: কাটিং থেকে অনেক সময় অনেকগুলো চারা জন্মে, সেৰেত্রে অপ্রয়োজনীয় চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। লতা বাড়তে বাড়তে বরোজের ছাউনি বা ছাদে ঠেকে গেলে নীচের দিকের পাতা তুলে রতাটি নামিয়ে দিতে হয়। এতে পান পাতার আকার স্বাভাবিক থাকে এবং ফলনও বেশি পাওয়া যায়। বছরে ৩/৪ বার গোড়ার মাটি তুলে দেয়া দরকার।

বরোজ তৈরি
img.177255_t:
পান গাছকে ছায়া দেয়া ও প্রবল বাতাসের হাত থেকে রৰা করার জন্য উন্নতমানের বরোজ তৈরি করা একান্ত জর্বরি। বরোজ তৈরিতে পাকা বাঁশ/খুঁটি, বাঁশের চটা, ছন বা কাশ জাতীয় ঘাস, খড় এসবের দরকার হয়। বরোজ তৈরির জন্য প্রথমে ২.৫-৩.০ মিটার লম্বা পাকা বাঁশের খুঁটি তৈরি করে গোড়ায় আলকাতরার প্রলেপ দিতে হবে। এতে বরোজে উঁইয়ের আক্রমণ হবে না। খুঁটি চারিদিকে পোঁতার পর তাতে বাঁশের চটা, ছন/খড় দিয়ে ছাউনি ও শুকনা কলাপাতা, খেজুর পাতা, সুপাড়ি পাতা এসব দিয়ে বেষ্টনী বা বেড়া দেয়া হয়। ভেতরে চারা রোপনের পর প্রয়োজনমত কাঠি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়।

লতা নামানো

পানের লতা বরজের (পান চাষের জন্য তৈরি ছাউনি বা ঘর) ছাউনি পর্যন্ত (২-২.৫ মিটার উচ্চতা) পৌঁছালে তা টেনে নিচে নামিয়ে পাতাছাড়া অংশকে পেঁচিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। একে বলে পানের লতা নামানো। বছরে সাধরাণত দু’বার (১৫ ফেব্রুয়ারি-১৫ এপ্রিল এবং ১৫ জুলাই-১৫ সেপ্টেম্বর) পানের লতা নামানো হয়। গাছের বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে লতা নামাতে হবে। বৃদ্ধি বেশি হলে ঘনঘন নামাতে হবে। লতা নামানোর আগে সংগ্রহ করার যোগ্য সব পান তুলে ফেলতে হবে। লতার উপরের ১২-২০ ইঞ্চি অংশ মাটির উপরে রেখে নিচের অংশটুকু গোল করে অথবা বাংলা ৪ এর মতো করে পেঁচিয়ে মাটির নিচে পুঁতে দিতে হবে।

১২. ফসল কাটাঃ

সময়ঃ বর্ষাকালে চারা রোপণ করা হলে ৫-৬ মাস পর থেকেই পাতা তোলা শুরু করা যায়। নিচের দিকের পাতা আগে তুলতে হয়। এতটি পাতা সম্পূর্ণভাবে পরিণত হতে ৬-৮ সপ্তাহ সময় দরকার হয়।

পদ্ধতিঃ সাধারনত হাত দিয়ে পান পাতা তুলতে হয়। লতার নিচের দিকের পাতা আগে তুলতে হয়।

১৩. পরিবহণ ব্যবস্থাঃ

পরিবহণ পদ্ধতিঃ বাঁশ ও কলাপাতা দিয়ে মোড়কে বেধে পরিবহণ করা যেতে পারে।

পরিবহণের মাধ্যমঃ ভার / বাইঙ্কা / ভ্যান / ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন করতে হবে।

১৫. প্যাকেজিং:

প্যাকেজিং পদ্ধতিঃ ভালো পান পাতা বাছায়ের পর তা ভেজা কাপর বা কলা পাতা দিয়ে মোড়কে সাজাতে হবে। মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। একটি মোড়কে ১০ হাজার এর বেশি পান রাখা ঠিক নয়।

১৬. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

স্বল্প পরিসরেঃ পাতা বেশিক্ষণ সতেজ রাখার জন্য প্যাকিং করার সময় একটু পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।  মোড়োকে সাজানোর পর ২-৩ দিন সংরক্ষণ করা যায়।

১৭. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ
1305280111828

বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।

১৮. তথ্যের উৎসঃ  AIS, BARI, ekrishok.com, ruralinfobd.com

১৯. সর্বশেষ সংযোজনঃ জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com

 

মিষ্টি কুমড়া

১. ফসলঃ মিষ্টি কুমড়া
692

আমাদের দেশে প্রাই সব অঞ্চলেই মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়ে থাকে, মিষ্টি কুমড়া একটি খরিপ মৌসুমের সবজি তবে রবি মৌসুমেও ব্যাপকভাবে চাষ হয়ে থাকে। কাচা বা পাকা কুমড়া এবং এদের কচি  ডগা ও পাতা রান্না করে সবজি হিসাবে খাওয়া যায়। পাকা মিষ্টি কুমড়া ভিটামিন “এ” সমৃদ্ধ সবজি।

২. জাতঃ বর্তমানে দেশে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে বেশ কিছু উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে, নিচে তা উল্লেখ করা হলো-

জাত

বীজ বপনের সময়

কোম্পানী

বারমাসী হাইব্রীড মিষ্টিকুমড়া ইয়েলো কার্ড, বিগবস

সারা বছর

মল্লিকা সীড কো. (MSC)

হাইব্রীড মিষ্টিকুমড়া কে. এস-১, ২

সারা বছর চাষ করা যায়

কৃষিবিদ গ্রুপ কো.

হাইব্রীড মিষ্টিকুমড়া সুপ্রিমা

চৈত্র হতে মধ্য আষাঢ় বাদে সারা বছর চাষ করা যায়। শ্রাবণ ভাদ্র, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ মাসে চাষ করে অধিক ফলন পাওয়া যায়

লালতীর সীড লি:

হাইব্রীড মিষ্টিকুমড়া বিএসএস-৭৪৯, ৭৫০

সারা বছর

বেজো শীতল সীডস (বাংলাদেশ) লি: (BCSBL)

হাইব্রীড মিষ্টিকুমড়া সুইট গোল্ড

প্রায় সারা বছর চাষ উপযোগী তবে আগস্ট থেকে জানুয়ারী বীজতলায় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়

ACI Seed (ACI)

হাইব্রীড মিষ্টিকুমড়া সুইট নামা এফ-১, সুইটবল এফ-১, ডেলিকা এফ-১

ভাদ্র অগ্রহায়ণ ও ফাল্গুন-জৈষ্ঠ

পাশাপাশি সীড কো:

হাইব্রীড মিষ্টিকুমড়া জি.শুমো

বপনের সময় আগষ্ট

এনার্জি প্যাক এগ্রো লি:

 

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ চরাঞ্চলের পলি মাটিতে মিষ্টি কুমড়া ভালো ফলন হয়। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁ-আশ বা এঁটেল দোঁ-আশ মাটি এর চাষাবাদের জন্য উত্তম।

৪. বীজঃ

ভালো বীজ নির্বাচনঃ ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নোরুপ-

  • রোগমুক্ত,পরিষ্কার,পরিপুষ্ট হতে হবে।
  • সকল বীজের আকার আকৃতি একই ধরনের হবে।

বীজের হারঃ মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য শতাংশ প্রতি ২.৫ গ্রাম পরিমাণ বীজের প্রয়োজন হয়। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে।

বীজ শোধনঃ ভিটাভেক্স ২০০ / টিলথ অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করে বীজ শোধন করা ভাল।

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ বানিজ্যিক ভাবে চাষের জন্য জমিকে প্রথমে ভাল ভাবে চাষ ও মই দিয়ে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন জমিতে কোন বড় ঢিলা এবং আগাছা না থাকে।

বীজ তলা তৈরীঃ পলিব্যাগে মিষ্টি কুমড়ার চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৪x৬ ইঞ্চি আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্রযুক্ত পলিব্যাগে ব্যবহার করতে হবে। তার আগে বীজকে ২৪ ঘন্টা ভিজানোর পর পলিব্যাগে বীজ বপন করতে হবে।

৬. বপন ও রোপন এর সময়ঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ সাধারন ভাবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বছরের যে কোনো সময় মিষ্টি কুমড়ার বীজ বোনা যায়। শীতকালীন ফসলের জন্য অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালীন ফসলের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময় এবং বীজ উৎপাদনের জন্য নভেম্বরের মধ্যভাগে বীজ বপন করা উত্তম। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে।

মাদা তৈরীঃ মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য ৬×৬ ফুট দূরত্বে প্রতি মাদায় ৪-৫ টি বীজ / চারা বোনা বা রোপন করা উচিত। চারা রোপনের ক্ষেত্রে বীজ গজানোর পর ১৫-১৬ দিন বয়সের চারা মূল জমিতে লাগানোর উত্তম।

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

কম উর্বর

মধ্যম উর্বর

বেশি উর্বর

কেজি/ শতাংশ

পঁচাগোবর / কম্পোষ্ট

৩২

২৪

১৬

ইউরিয়া

০.৫২

০.৪৪

০.৩৬

টিএসপি

০.৮

০.৭

০.৬

এমওপি

০.৬০

০.৫২

০.৪৪

জিপসাম

০.৪৪

০.৩২

০.২৪

দস্তা

০.০৫

০.০৩

০.০২

বোরিক এসিড

০.০৪

০.০৩

০.০২

ম্যাগনেশিয়াম

০.২

০.১

০.০৮

খৈল

২.০

১.৬

১.২

 

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ মূল জমি তৈরীর সময় জৈব সার, টিএসপি, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরিক এসিডের অর্ধেক অংশ প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক জৈব সার, টিএসপি, দস্তা, ম্যাগনেসিয়াম ও বোরিক এসিড মাদায় প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি বা পটাশ সার সমান তিনভাগে ভাগ করে বীজ বপনের সময় প্রথম ভাগ, ১৫-২০ দিন পর দ্বিতীয় ভাগ এবং ৩৫-৪০ দিন পর তৃতীয়ভাগ প্রয়োগ করতে হবে।

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ মাদাতে অথবা এর চার পাশে আগাছা হলে তা দমন করতে হবে।

দমন পদ্ধতিঃ হাত / নিড়ানী / কোদালের সাহয্যে আগাছা দমন করতে হবে।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ মাদার ও মাদার চার পাশের মাটি শুকায়ে গেলে সেচ দিতে হবে।

সেচের পরিমাণঃ কদাল দিয়ে মাটি আলগা করে পরিমিত মাত্রায় সেচ দিতে হবে। সেচ দেয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে।

নিষ্কাশনঃ কোন অবস্তাতেই গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকতে দেয়া যাবে না, সে জন্য জমিতে নালা কেটে সুনিষ্কাশনের ব্যাবস্থা রাখতে হবে।

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ
bottlegourd-redpumkinbeetle

রোগের নাম

লক্ষণ

প্রতিকার

কীটনাশকের নাম

উৎস

পাউডারী মিল্ডিউ পাতার উভয় পাশে প্রথমে সাদা সাদা পাউডারের মত দাগ দেখা যায়।ধীরে ধীরে দাগগুলো বড় ও বাদামী হয়ে শুকিয়ে যায়।আক্রান্ত লতা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়, ফল ঝরে পড়ে এমনকি সম্পূর্ন গাছ মরে যায়।  ১. জমির আশে পাশে কুমড়া জাতীয় অন্য যে কোন রকমের সবজি চাষ থেকে বিরত থাকা।২. আক্রান্ত পাতা ও গাছ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা।৩. থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি- প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম থিয়োভিট মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ১৫ দিন পর পর সেপ্র করুন। থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি

সিনজেনটা

এমকোজিম ৫০ ডবলিউপি ৭০-৭৫ এম.এল / বিঘতে(৩৩ শতাংশ) ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। এমকোজিম ৫০ ডবলিউপি

এ সি আই

হেকোনাজল ৫ ই সি ২০০ মি লি প্রতি একরে (১ মিলি/ ১ লিটার পানিতে) স্প্রে করতে হবে। হেকোনাজল ৫ ই সি

পদ্মাওয়েল কো. লি.

ডাউনি মিল্ডিউ এর জন্য গাছের পাতা ধূসর হয়ে যায়। পাতায় সাদা পাউডার দেখা যায় ১. থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি- প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম থিয়োভিট মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ১৫ দিন পর পর সেপ্র করুন। থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি

সিনজেনটা

পোকামাকড়ের নাম লক্ষণ প্রতিকার কীটনাশকের নাম

উৎস

মাছি পোকা ১. স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে। ২. ডিম ফুটে কীড়াগুলো বরে হয়ে ফলের শাস খায় এবং ফল পচে যায় ও অকালে ঝরে পড়ে। ১. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ২. সবিক্রন ৪২৫ ইসি- প্রতি লিটার পানিতে ২ এমএল হারে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন। প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি,সবিক্রন ৪২৫ ইসি

সিনজেনটা

পামকিন বিটল র্পূণাঙ্গ পোকা চারা গাছের পাতা ছিদ্র করে খায়।  কীড়া গাছের গোড়ায় মাটিতে বাস করে এবং গাছের শিকড়ের ক্ষতি করে। ১. আক্রান্ত গাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ পোকা হাতে ধরে মেরে ফেলা।  ২০-২৫  দিন চারা মশারির জাল দিয়ে ঢেকে রাখা। ২. কীড়া দমনের জন্য প্রতি গাছের গোড়ায় ২.৫ গ্রাম  বাসুডিন-১০ জি মিশিয়ে দিয়ে তারপর সেচ দিতে হবে। ৩. সবিক্রন ৪২৫ ইসি- প্রতি লিটার পানিতে ২ এমএল হারে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন। সবিক্রন ৪২৫ ইসি, বাসুডিন-১০ জি সিনজেনটা
টিডো ২০ এস.এল-৫০-৫৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। টিডো ২০ এস.এল

এ সি আই

জাব পোকা পূণবয়স্ক ও নিম্ফ উভয়েই পাতা, কচি কান্ড, ফুল ও ফলের কুঁড়ি, বোঁটা এবং ফলের কচি অংশের রস চুষে খায়। ফলে গাছ প্রথমে দুর্বল ও পরে হলুদ হয়ে যায়। গাছে ফুল ও ফল অবস্থায় আক্রমণ হলে ফুলের কুঁড়ি ও কচি ফল ঝরে পড়ে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে কচি ডগা মরে যায়। ১. আক্রান্ত পাতা, ডগা, ফুল পোকাসহ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা। ২. একতারা ২৫ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে ২.৫ গ্রাম একতারা প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাব গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। ৩. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। একতারা ২৫ ডব্লিউজি,  প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি

সিনজেনটা

টিডো ২০ এস.এল-১০০-১০৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। টিডো ২০ এস.এল

এ সি আই

কাঁটালে পোকা বা এপিল্যাকনা বিটল  এই পোকা পাতার শিরাগুরোর মাঝের অংশ খেয়ে ফেলে। মধ্য শিরা বাদে পাতার সমস্ত অংশ খেয়ে ঝাঝরা করে ফেলতে পারে। ফলের উপরি ভাগের কিছু অংশ খেয়ে ফেলতে পারে অথবা ছোট ছিদ্র করতে পারে ১. পোকা সহ আক্রান্ত পাতা হাত বাছাই করে মেরে ফেলতে হবে।
৩. এক কেজি আধা ভাঙ্গা নিম বীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি স্প্রে করতে হবে

 

১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ

বাউনী দেয়া বা মাটিতে খড় বিছানো :

কুমড়া চাষে সাধারণত বাউনী ব্যবহার করতে হয়। বাউনীর উপর কান্ড তুলে দিলে ফলন বেশি হয় ও ফলের গুণাগুণ ভালো হয়। গাছ যখন ১২-১৫ ইঞ্চি হয় তখনই মাচার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

কৃত্রিম পরাগায়ন :

কৃত্রিম পরাগায়ন মিষ্টি কুমড়ার অধিক ফল ধারণে খুবই সহায়ক। কৃত্রিম পরাগায়নের জন্য ভোর বেলা একটি সদ্য ফোটা পুরুষ ফুলের পরাগধানী স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডে আলতো ভাবে ২-৩ বার ঘষে দিতে হবে। এ কাজটি করার আগে পুরুষ ফুলের পাপড়ি গুলো সব অপসারণ করে নিতে হবে। একটি  পুরুষ ফুল দিয়ে সাধারণত ১০টি স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন সম্ভব। পরাগায়ন অবশ্যই সকাল ১০ টার মধ্যে শেষ করতে হবে।

 

১২. ফসল কাটাঃ
Bangladesh

সময়ঃ সবজি হিসোবে ব্যবহার করতে হলে কুমড়ার ওজন ১-৩ কেজি হলেই  সংগ্রহ করা উচিত। তবে সাধারণত বীজ বপন বা চারা রোপণের ৩ থেকে ৪ মাস পর গাছ থেকে মিষ্টি কুমড়া তোলার উপযোগী হয়। আর পাকা কুমড়ার ক্ষেত্রে ফল হলুদ বা হলদে বাদামী রঙ ধারণ করে। ফলের বোঁটা খয়েরী রঙ ধারণ করে এবং গাছ মরতে শুরু করে। পাকা কুমড়া সংগ্রহ করে ৫-৭ দিন ছায়াযুক্ত স্থান রেখে দিতে হবে। এভাবে ক’এক মাস পর্যন্ত পাকা কুমড়া সংরক্ষণ করা যায়।

পদ্ধতিঃ ধারাল ছুরি দারা মিষ্টি কুমড়া কিছুটা বোঁটা রেখে গাছ থেকে তুললে তারাতারি পঁচার সম্ভাবনা কম থাকে।

১৩. পরিবহণ ব্যবস্থাঃ

পরিবহণ পদ্ধতিঃ পরিবহনের সময় ফসল সংগ্রহের পর প্রথমে ডালিতে কলা পাতা বিছিয়ে তার উপর ঝিঙ্গা সাজায়ে রাখতে হবে যাতে কোনো দাগ না পরে।

পরিবহণের মাধ্যমঃ সাধারনত ঝড়ি / ডালিতে করে পরিবহন করা হয় তবে বেশি আকারে হলে ট্রাকের মাধমেও পরিবহন করে হয়।

১৪. প্যাকেজিং:

প্যাকেজিংপদ্ধতিঃ প্যাকেজিং এর জন্য ফুড রেপিং পেপার, পেরফোরেটেড পেপার, ঝুড়ি, খাঁচা, প্লাস্টিক কেস, ব্যবহার করা জেতে পারে।

১৫. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

স্বল্প পরিসরেঃ এক মাস পর্যন্ত পাকা কুমড়া সংরক্ষণ করা যায়।

১৬. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ

বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।

১৭. মিষ্টি কুমড়া বাছাইকরণ ও শ্রেণীকরণ পদ্ধতিঃ
images মাঠ থেকে শস্য নিয়ে আসার পর বাছাইকরণ ও শ্রেণীকরণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাজ। বাল্ক বায়ার বা বৃহৎ ক্রেতার চাহিদা অনুসারে কৃষিজাত শস্য/পণ্য বিক্রয় করতে হলে মান নিয়ন্ত্রনের স্বার্থে বাছাইকরণ ও শ্রেণীকরণ করতে হবে। মিষ্টি কুমড়া শ্রেনীকরণের ক্ষেত্রে নিম্নে দেয়া নির্দেশক গুলোর প্রতি জত্নবান হতে হবে।

নূন্যতম নির্দেশকঃসুগঠিত, পূর্ণাঙ্গ ও শক্ত হতে হবেপরিস্কার, সতেজ ও জড় পদার্থ মুক্ত হতে হবেআঘাত, পোকা ও রোগ মুক্ত হতে হবে

গ্রেড “এ”

১। আকার আকৃতিঃ ন্যূনতম ৪ কেজি

২। রং: হলুদাভ কালচে সবুজ

৩। মিষ্টতাঃ উচ্চমাত্রার

৪। পরিপক্কতাঃ শুকনা বোঁটা ( পরিপক্কতার নির্দেশক )

৫। ত্রুটির ধরণঃ দাগ মুক্ত

৬। রোগবালাই এবং কীটপতঙ্গঃ পোকা ও রোগ মুক্ত

গ্রেড “বি”

১। আকার আকৃতিঃ ন্যূনতম ২-৪ কেজি

২। রং: হলুদাভ কালচে সবুজ

৩। মিষ্টতাঃ মাঝারি

৪। পরিপক্কতাঃ শুকনা বোঁটা ( পরিপক্কতার নির্দেশক )

৫। ত্রুটির ধরণঃ অল্প আঘাতজনিত দাগ , কুমড়ার উপরিভাগের দাগ সর্বোচ্চ ৫%

৬। রোগবালাই এবং কীটপতঙ্গঃ পোকা ও রোগ মুক্ত

গ্রেড “সি”

১। আকার আকৃতিঃ ছোট বড় মিশ্রণ

২। রং: হলুদাভ কালচে সবুজ

৩। মিষ্টতাঃ কম

৪। পরিপক্কতাঃ শুকনা বোঁটা ( পরিপক্কতার নির্দেশক )

৫। ত্রুটির ধরণঃ অল্প আঘাতজনিত দাগ , কুমড়ার উপরিভাগের দাগ সর্বোচ্চ ১০%

৬। রোগবালাই এবং কীটপতঙ্গঃ পোকা ও রোগ মুক্ত

Sliced Squash

১৭. তথ্যের উৎসঃ AIS (www.ais.gov.bd), সবজি উৎপাদন প্রশিক্ষন ম্যানুয়াল, BARI, krishitey.com, krishibangla.com, কৃষি পণ্যের গ্রেডিং নির্দেশিকা,

১৯. সর্বশেষ সংযোজন : জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com

 

চালকুমড়া

১. ফসলঃ চালকুমড়া
Wax-gourd
২. জাতঃ

উচ্চ ফলনশীল জাতঃ উচ্চ ফলনশীল জাত গুলো হলো-

জাত

কোম্পানী

বীজ বপনের সময়

বারি চালকুমড়া-১

BARI

ফেব্রুয়ারী-মে

হাইব্রীড চালকুমড়া সুফলা-১

ব্র্যাক সীড

-

হাইব্রীড চালকুমড়া বাসন্তী, নিরালা

মল্লিকা সীড কো. (MSC)

মাঘ মাস থেকে আশ্বিন মাস

হাইব্রীড চালকুমড়া বিজয়, (উফশী-বিজয়)

গেটকো এগ্রো ভিশন লি:

হাইব্রীড চালকুমড়া সোনালী এফ-১

পাশাপাশি সীড কো:

সারা বছরই চাষ করা হয়

হাইব্রীড চালকুমড়া মাধবী

ইউনাইটেড সীড ষ্টোর (USS)

হাইব্রীড চালকুমড়া ইউনিক

এনার্জি প্যাক এগ্রো লি:

বপনের সময় ফেব্রুয়ারী-আগষ্ট

হাইব্রীড চালকুমড়া সুপারস্টার

এসিআই সীড (ACI)

সারা বছর চাষ করা হয় তবে ফাল্গুন থেকে আশ্বিন মাস উপযুক্ত সময়

 

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ বন্যামুক্ত এবং নিস্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন দো-আঁশ, এটেল দো-আঁশ ও বেলে-দো-আঁশ  মাটিতে এর চাষ ভাল হয়।

৪. বীজঃ

ভালো বীজ নির্বাচনঃ ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নোরুপ-

  • রোগমুক্ত, পরিষ্কার, পরিপুষ্ট হতে হবে।
  • সকল বীজের আকার আকৃতি একই ধরনের হবে।

বীজের হারঃ চালকুমড়া চাষের জন্যে একর প্রতি ৪০৫-৪১০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে।

বীজ শোধনঃ ভিটাভেক্স ২০০ / টিলথ অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করে বীজ় শোধন করা যেতে পারে।

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ ঘরের চালে তুলে দিলে মাদা তৈরি করে নিতে হয়। আর জমিতে চাষ করলে কয়েকটি চাষ ও মই দিতে হয়।

বীজ তলা তৈরীঃ  নার্সারিতে চারা উৎপাদন করে নিতে হবে। এ কাজে ৫×৭ ইঞ্চি আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। প্রথমে অর্ধেক মাটি অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে।
মাটিতে বীজ গজানোর জন্য “জো” নিশ্চিত করে তা পলিব্যাগে ভরতে হবে।
অত:পর প্রতি ব্যাগে ২টি করে বীজ বপন করতে হবে। নার্সারিতে চারা প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। বেশি শীতে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজ গজানোর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি রাতে প্লাস্টিক দিয়ে পলিব্যাগ ঢেকে রাখতে হবে এবং দিনে খোলা রাখতে হবে। চারার বয়স ১৬ থেকে ২০ দিন হলে মাঠে প্রস্তুত গর্তে পলিব্যাগ কেটে মাটিসহ চারা রোপণ করতে হবে। গর্তে চারা লাগানোর পরপরই গাছের গোড়ায় কিছু পরিমান পানি দিতে হবে।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ সারা বছর কুমড়ার চাষ করা যায়।  তবে চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বুনতে হয়।  প্রতি মাদায় দুটি সবল চারা রাখতে হবে। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে।

মাদা তৈরীঃ ৫-৭ ফুট দূরে দূরে ২.৫ ফুট চওড়া ও ২ ফুট গভীর গর্ত / মাদা  তৈরি করে বীজ / চারা বুনতে হবে।

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

জমি তৈরির সময় (শতাংশ প্রতি)

প্রতি মাদায়

চারা রোপণের ৭ থেকে ১০ দিন আগে

চারা রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন পর

চারা রোপণের ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর

চারা রোপণের ৫০ থেকে ৫৫ দিন পর

চারা রোপণের ৭০ থেকে ৭৫ দিন পর

পচা গোবর

২০ কেজি

১০ কেজি

-

-

-

-

টিএসপি

৩৫০ গ্রাম

৬০ গ্রাম

-

-

-

-

ইউরিয়া

-

-

৩০ গ্রাম

৩০ গ্রাম

৩০ গ্রাম

৩০ গ্রাম

এমপি

২০০ গ্রাম

৫০ গ্রাম

২৫ গ্রাম

-

-

-

জিপসাম

৪০০ গ্রাম

-

-

-

-

-

দস্তা

৫০ গ্রাম

-

-

-

-

-

বোরাক্স

৪০ গ্রাম

-

-

-

-

-

ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড

-

৮ গ্রাম

-

-

-

-

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ মাদাতে অথবা এর চার পাশে আগাছা হলে তা দমন করতে হবে।

দমন পদ্ধতিঃ হাত / নিড়ানীর সাহয্যে আগাছা দমন করতে হবে।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ মাদার ও মাদার চার পাশের মাটি শুকায়ে গেলে।

সেচের পরিমাণঃ কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করে হাল্কা সেচ দিতে হবে।

নিষ্কাশনঃ কোন অবস্তাতেই গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকতে দেয়া যাবেনা।

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ
images

রোগের নাম

লক্ষণ

প্রতিকার

কীটনাশকের নাম

পাউডারী মিল্ডিউ পাতার উভয় পাশে প্রথমে সাদা সাদা পাউডারের মত দাগ দেখা যায়।ধীরে ধীরে দাগগুলো বড় ও বাদামী হয়ে শুকিয়ে যায়।আক্রান্ত লতা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়, ফল ঝরে পড়ে এমনকি সম্পূর্ন গাছ মরে যায়।

 

১. জমির আশে পাশে কুমড়া জাতীয় অন্য যে কোন রকমের সবজি চাষ থেকে বিরত থাকা। ২. আক্রান্ত পাতা ও গাছ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা। ৩. থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি- প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম থিয়োভিট মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ১৫ দিন পর পর সেপ্র করুন। থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি
এমকোজিম ৫০ ডবলিউপি ৭০-৭৫ এম.এল / বিঘতে(৩৩ শতাংশ) ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। এমকোজিম ৫০ ডবলিউপি
হেকোনাজল ৫ ই সি ২০০ মি লি প্রতি একরে (১ মিলি/ ১ লিটার পানিতে) স্প্রে করতে হবে। হেকোনাজল ৫ ই সি
ডাউনি মিল্ডিউ এর জন্য গাছের পাতা ধূসর হয়ে যায়। পাতায় সাদা পাউডার দেখা যায় ১. থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি- প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম থিয়োভিট মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ১৫ দিন পর পর সেপ্র করুন। থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি

পোকামাকড়ের নাম

লক্ষণ

প্রতিকার

কীটনাশকের নাম

মাছি পোকা

১. স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে। ২. ডিম ফুটে কীড়াগুলো বরে হয়ে ফলের শাস খায় এবং ফল পচে যায় ও অকালে ঝরে পড়ে। ১. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ২. সবিক্রন ৪২৫ ইসি- প্রতি লিটার পানিতে ২ এমএল হারে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন। প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি,সবিক্রন ৪২৫ ইসি

পামকিন বিটল

র্পূণাঙ্গ পোকা চারা গাছের পাতা ছিদ্র করে খায়।  কীড়া গাছের গোড়ায় মাটিতে বাস করে এবং গাছের শিকড়ের ক্ষতি করে। ১. আক্রান্ত গাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ পোকা হাতে ধরে মেরে ফেলা।  ২০-২৫  দিন চারা মশারির জাল দিয়ে ঢেকে রাখা। ২. কীড়া দমনের জন্য প্রতি গাছের গোড়ায় ২.৫ গ্রাম  বাসুডিন-১০ জি মিশিয়ে দিয়ে তারপর সেচ দিতে হবে। ৩. সবিক্রন ৪২৫ ইসি- প্রতি লিটার পানিতে ২ এমএল হারে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন। সবিক্রন ৪২৫ ইসি, বাসুডিন-১০ জি
টিডো ২০ এস.এল-৫০-৫৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। টিডো ২০ এস.এল

জাব পোকা

পূণবয়স্ক ও নিম্ফ উভয়েই পাতা, কচি কান্ড, ফুল ও ফলের কুঁড়ি, বোঁটা এবং ফলের কচি অংশের রস চুষে খায়। ফলে গাছ প্রথমে দুর্বল ও পরে হলুদ হয়ে যায়। গাছে ফুল ও ফল অবস্থায় আক্রমণ হলে ফুলের কুঁড়ি ও কচি ফল ঝরে পড়ে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে কচি ডগা মরে যায়। ১. আক্রান্ত পাতা, ডগা, ফুল পোকাসহ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা। ২. একতারা ২৫ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে ২.৫ গ্রাম একতারা প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাব গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। ৩. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। একতারা ২৫ ডব্লিউজি,  প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি
টিডো ২০ এস.এল-১০০-১০৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। টিডো ২০ এস.এল

কাঁটালে পোকা বা এপিল্যাকনা বিটল

 

এই পোকা পাতার শিরাগুরোর মাঝের অংশ খেয়ে ফেলে। মধ্য শিরা বাদে পাতার সমস্ত অংশ খেয়ে ঝাঝরা করে ফেলতে পারে। ফলের উপরি ভাগের কিছু অংশ খেয়ে ফেলতে পারে অথবা ছোট ছিদ্র করতে পারে ১. পোকা সহ আক্রান্ত পাতা হাত বাছাই করে মেরে ফেলতে হবে।
৩. এক কেজি আধা ভাঙ্গা নিম বীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি স্প্রে করতে হবে
ভাঙ্গা নিম বীজ

 

১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ বাউনি বা মাচায় চাষ দিতে হবে। বাউনী বাঁশ অথবা জি আই তার বা নাইলন সুতা দিয়ে তৈরি করা যায়। জি আই তার দিয়ে একবার বাউনী তৈরি করতে পারলে তা ২০ থেকে ২৫ বছর অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে।
পরাগায়ন ও ফল ধারণ

চালকুমড়ার ফুল ফোটা, পরাগরেনুর বিদারণ এবং ফল ধারণ পরিবেশগত অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়। চালকুমড়ার ফুল খুব ভোরে ফোটে।চালকুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ১০ ঘটিকার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

১২. ফসল কাটাঃ

সময়ঃ বীজ বপনের দুই মাস পর থেকে ফল ধরা শুরু হয়। প্রায় আড়াই মাসব্যাপী এর ফল পাওয়া যায়। সবজি হিসেবে ব্যবহারের জন্য পরাগায়নের ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে (ফলের ওজন প্রায় ৬০০ গ্রাম) ফল সংগ্রহ করতে হবে।

পদ্ধতিঃ সাধারনত হাত দিয়ে ধারালো ছুরি দারা চালকুমড়া ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে হয়।

১৩. পরিবহণ ব্যবস্থাঃ

পরিবহনের সময়ঃ ফসল সংগ্রহের পর প্রথমে ঝুড়িতে / ডালিতে কলা পাতা বিছিয়ে তার উপর চিচিঙ্গা সাজায়ে রাখতে হবে যাতে কোনো দাগ না পরে।

পরিবহণের মাধ্যমঃ সাধারনত ঝুড়িতে / ডালিতে করে পরিবহন করা হয় তবে বেশি আকারে হলে ট্রাকের মাধ্যমেও পরিবহন করে হয়।

১৪. প্যাকেজিং:

প্যাকেজিংপদ্ধতিঃ প্যাকেজিং এর জন্য ফুড রেপিং পেপার, পেরফোরেটেড পেপার, ঝুড়ি, খাঁচা, প্লাস্টিক কেস, ব্যবহার করা জেতে পারে।

১৫. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

স্বল্প পরিসরেঃ ১০-১২ দিন সংরক্ষণ করা যায়।

১৬. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ
images (1)

বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন। অথবা কোনো আড়তদারের বা পাইকারের কাছে বেশি দামে বিক্রয় করতে পারেন।

১৭. তথ্যের উৎসঃ  AIS, BARI, কৃষি প্রযুক্তি হাত বই, ekrishok.com, krishitey.com

১৮. সর্বশেষ সংযোজন : জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com