মুখী কচু | ই-কৃষক

মুখী কচু

১. ফসলঃ মুখী কচু
Baby Taro Root

২. জাতঃ

দেশী জাতঃ মুখী কচু বাংলাদেশে গুড়া কচু, কুড়ি কচু, ছড়া কচু, দুলি কচু, বিন্নি কচু, ইত্যাদি নামে ও পরিচিত। স্থানীয় ভাবে বেশ কিছু দেশী জাত চাষ হয়ে থাকে।

উচ্চ ফলনশীল জাতঃ উচ্চ ফলনশীল জাতের মধ্যে বাংলদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট (বারি)-এর উদ্ভবিত  ‘বিলাসী’ নামের নতুন জাতটি চাষের জন্য মাঠ পর্যায়ে বেশ জনপ্রিয়।

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ দোআঁশ মাটি মুখী কচুর জন্য উত্তম। তবে বসতবাড়ির আঙ্গিনায়, উঁচু ভিটায়, টিলায়ও চাষাবাদ করা যায়।

৪. বীজঃ

ভালো বীজ নির্বাচনঃ মুখীর ছড়া রোগ মুক্ত, পুষ্ট হতে হবে।

বীজের হারঃ মুখীর ছড়া বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রোপণের জন্য মুখীর ছড়া প্রতি শতকে ২ কেজি (১৫-২০ গ্রাম ওজনের) পরিমাণ দরকার হয়।

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ মুখীকচুর জন্য মাটি গভীরভাবে ৪টি চাষ দিয়ে ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি)। মধ্য-চৈত্র থেকে মধ্য-বৈশাখ (এপ্রিল-মে)।

ছিটিয়ে বা লাইনে বপনঃ সাধারনত লাইনে বপন করতে হবে।

রোপনঃ উর্বর মাটির জন্য লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ৩০ ইঞ্চি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১৫-১৮ ইঞ্চি। অনুর্বর মাটির বেলায় লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ২৫ ইঞ্চি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১২-১৪ ইঞ্চি রাখতে হয়।

 

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

সারের পরিমাণ ( প্রতি শতকে)

গোবর

৫০ কেজি

ইউরিয়া

৬০০ গ্রাম

টিএসপি

৫০০ গ্রাম

এমপি

৭০০ গ্রাম

 

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ গোবর, টিএসপি এবং এমওপি রোপণের সময় এবং ইউরিয়া ৪০-৪৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হয়।

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ রোপনের ৪০-৪৫ দিন পর এবং ৯০-১০০ দিন পর আগাছা বাছাই করতে হবে।

দমন পদ্ধতিঃ সাধারনত নীড়ানি / ছোট কোদাল দিয়ে আগাছা দমন করা হয়ে থাকে।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ মুখীকচুর জমিতে রস না থাকলে সেচের প্রয়োজন হয়। দু’সারির মাঝখানে নালা দিয়ে সেচ দেওয়া সুবিধাজনক।

সেচের পরিমাণঃ পরিমিত মাত্রায় সেচ দিতে হবে।

নিষ্কাশনঃ কচু সাধারনত দাড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। তাই নালার মাধ্যমে অধিক বৃষ্টি বা সেচের পানিও বের করে দেয়া যেতে পরে।

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ

রোগের নাম লক্ষন প্রতিকার কীটনাশকের নাম উৎস
ফাইটোফথেরা পাতা পচে বা শুকিয়ে যায়। রিডোমিল গোল্ড/ফলিও গোল্ড অনুমোদিত মাত্রায় গাছে ছিটিয়ে দিতে হবে। ১০-১৫ দিন পর আবার একই হারে দিতে হবে। রিডোমিল গোল্ড/ফলিও গোল্ড সিনজেনটা
লিফ্‌ ব্লাইট পাতায় কালো দাগ পড়ে। যে কোন ছত্রাকনাশক ওষুধ অনুমোদিত মাত্রায় ছিটানো যেতে পারে।
পোকামাকড়ের নাম লক্ষন প্রতিকার কীটনাসকের নাম উৎস
লেদা পোকা পাতা খেয়ে নষ্ট করে। এতে খাদ্য প্রস্তুতিতে অসুবিধা হয়। ফলে ফলন কম হয়। সেভিন, ম্যালাথিয়ন ইত্যাদি গ্রুপের ওষুধ অনুমোদিত মাত্রায় ছিটানো যায়।
বিছাপোকা পাতা খেয়ে নষ্ট করে। এতে খাদ্য প্রস্তুতিতে অসুবিধা হয়। ফলে ফলন কম হয় ফাইটার ২.৫ ইসি-অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। ফাইটার ২.৫ ইসি এ সি আই
ডায়াজিলন টি ৬০-অনুমোদিত মাত্রায় স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। ডায়াজিলন টি ৬০ এ সি আই
বিছাপোকা কেরাটে ২.৫ ইসি- ২০০ এম এল/একর কেরাটে ২.৫ ইসি সিনজেনটা

 

১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ

গাছের গোড়ায় মাটি

সারিতে মাটি তুলে দেওয়া মুখীকচু ফসলের প্রধান পরিচর্যা। মাটি একবারে না তুলে দুই-তিনবারে তোলা ভালো। ভালো ফলন পাওয়ার জন্যে নিড়ানী বা ছোট কোদালের সাহায্যে গাছের গোড়ায় মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে গোড়ার মাটি উঁচু করতে হবে। মাটি কুপানো, গাছের গোড়ার মাটি দেওয়া ও সারের উপরি প্রয়োগ প্রভৃতি একই সাথে করা যায়। সাবধানতার সাথে এ কাজটি করতে হবে যেন গাছ কোনভাবে আক্রান্ত বা ক্ষত না হয়।

 

জমিতে খড় বিছানো

জমিতে খড় বা পাতা বিছিয়ে দিলে, জমিতে আগাছা কম হয়, মাটির রস ধারন ক্ষমতা বাড়ে এবং পাতা বা খড় পরবর্তীতে পচে মাটির সাথে মিশে জমির উর্বরা শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

 

১২. ফসল কাটাঃ

সময়ঃ মুখী কচুর গাছ হলদে হয়ে শুকিয়ে গেলে এ কচু তুলতে হয়। রোপণের পর থেকে ৬-৭ মাস সময় লাগে।

পদ্ধতিঃ লাঙ্গল/কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করে কচু সংগ্রহ করা হয়।

১৩. পরিবহণ ব্যবস্থাঃ

পরিবহণ পদ্ধতিঃ চটের বস্তা/বাঁশের খাচাতে করে সাধারনত পরিনহন করা হয়।

পরিবহণের মাধ্যমঃ ভ্যান / গরুগাড়ী / ট্রাকটোর এর মাধ্যমে পরিবহন করা হয়ে থাকে।

১৪. প্যাকেজিং:
colocasia-250x250

প্যাকেজিং পদ্ধতিঃ স্হানীয় পর্যায়ে বাজারজাত করার জন্য বর্তমানে চটের বস্তা ও বাঁশের তৈরী খাঁচা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।

১৫. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

স্বল্প পরিসরেঃ ভালোভাবে সতর্কতার সাথে গুড়ি তুলতে হবে। কাটা, পচা, ক্ষতযুক্ত, ছোট-মাঝারি-বড়  আকার দেখে আলাদা করে রাখতে হবে। ঠান্ডা ও ছায়াময় এবং বাতাস চলাচলের সুবিধাযুক্ত স্হানে স্তুপ করে বা মেঝেতে ছড়িয়ে মুখীকচু শুকানো যায়। ছায়ায় শুকানোর পর নাড়াচড়া করলে গুড়ির গায়ের মাটিসহ অন্যান্য ময়লা পড়ে গিয়ে গুড়ি পরিষ্কার হয়ে যাবে। এরপর ঘরের ছায়াযুক্ত স্হানে মাচা বা কাঠের উপর রেখে শুকনো ঠান্ডা পরিষ্কার বালি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এভাবে মুখীকচু ৪/৬ মাস পর্যন্ত অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়।

১৬. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ

বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।

১৭. তথ্যের উৎসঃ  AIS, BARI, কৃষি প্রযুক্তি হাত বই, ekrishok.com

১৮. সর্বশেষ সংযোজন : জুলাই,২০১৪

 

 

 

Leave a Reply