উৎপাদন সংক্রান্ত ফ্যাক্টসীট | ই-কৃষক | Page 3

Category Archives: উৎপাদন সংক্রান্ত ফ্যাক্টসীট

কুমড়া গাছের ফলন বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম পরাগায়ন

Image may contain: one or more people, outdoor and nature

লাউ আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। ভাল ভাবে লাউ ধরাতে হলে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন করতেই হবে। লাউ গাছের ফুল একলিঙ্গ এবং গাছটি ভিন্নবাসী উদ্ভিদ । অর্থাৎ এসব গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পৃথক পৃথক হয়। একই বয়সের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল কাছাকাছি থাকলে এবং বাতাসের বেগ প্রবল হলে কিছু পরাগায়নের সম্ভাবনা থাকে তবে তা একেবারেই নগন্য। তাই পোকা-মাকড় বা মৌমাছি বেশি না থাকলে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পরাগায়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরাগায়ন সমভব হয় না।লাউয়ের ফুল সাদা বলে মৌমাছি বা পোকামাকড় থাকলেও লাউ ফুলে পরিভ্রমণ কম করে। এ জন্য লাউ ধরে না। লাউয়ের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পৃথক হওয়ায় কৃত্রিমভাবে পুরুষ ফুল এনে স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন ঘটাতে হয়। এ জন্য পুরুষ ও স্ত্রী ফুল চেনা প্রয়োজন। পুরুষ ফুল ফুলের বোঁটার অগ্রভাগে ফুটে। পাপড়ির গোড়ায় গর্ভাশয় থাকে না। পাপড়ির মাঝখান দিয়ে বেড়ে যাওয়া পুংদণ্ডে পাউডারের গুঁড়ার মত পুংরেণু থাকে। পুংদণ্ডের শীর্ষভাগে গর্ভমুণ্ড থাকে না। শুধু বোঁটার অগ্রভাগে ফুটে থাকা ফুলগুলো পুরুষ ফুল। আর ক্ষুদ্রাকৃতি লাউয়ের মত গর্ভাশয়ধারী ফুলগুলো স্ত্রী ফুল। গর্ভাশয়ের ওপর থেকে পাপড়ি থাকবে। পুংদণ্ড থাকবে না। গর্ভদণ্ড ছোট ও মোটা। গর্ভদণ্ডে আঠালো পদার্থ থাকবে। পুংরেণু এখানে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আঠায় আটকে যায়। অনেকেরই ধারণা, শুধু স্ত্রী ফুলের এই গর্ভাশয় থাকলেই লাউ ধরবে। এ ধারনাটা ভুল। গর্ভমুণ্ডে পুরুষ ফুলের পুংরেণু না লাগা পর্যন্ত লাউ ধরবে না। পুরুষ ফুল থেকে ফল হয় না ফল হয় স্ত্রী ফুল থেকে , তাই মনে রাখবেন পুরুষ ফুল ছিড়ে এনে স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করতে হবে। স্ত্রী ফুল ছেড়া যাবেনা। তাহলেত ফলই হবে না।

কুমড়া জাতীয় ফুলের মধ্যে একমাত্র লাউয়ের ফুলই হলো সাদা , অন্য সব ফুল হলুদ রঙের। মোটামুটি সব সাদা ফুল সন্ধার আগে ফুটে। আগের দিনের সন্ধা হওয়ার ১ ঘন্টা পূর্ব থেকে পরের দিনের সকাল ৮টা পর্যন্ত লাউ ফুলের পরাগ রেনু জীবিত থাকে। এই সময়ের ভিতরে আপনাকে পরাগায়ন করতে হবে। আবহাওয়া ও তাপের বিভিন্নতার কারণে ফুলের পরাগ রেনুর জীবন কালের সময়ে কম বেশি হতে পারে। মনে রাখা দরকার যে পরাগায়নের জন্য একই দিনে ফোটা পুরুষ ও স্ত্রী ফুল নির্বাচন করতে হবে।প্রতিদিন উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সদ্যফোটা পুরুষ ফুল রেণুসমৃদ্ধ পুংকেশর রেখে পাপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হয়। এরপর সদ্যফোটা স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে পুরুষ ফুলের পুংরেণু হালকাভাবে সামান্য একটু ঘষে দিতে হয়। এতে স্ত্রী ফুল নিষিক্ত হয়ে ফল ধরবে । একটি পুরুষ ফুলের পুংকেশর দিয়ে ৬ থেকে ৭টি স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে পরাগায়ন করা যায়। আপনি একটি পুরুষ ফুল দিয়ে একটি স্ত্রী ফুল নিষিক্ত করুন। এতে শতকরা ৯৯টি স্ত্রী ফুলে ফল ধরবে।

source: Modern Agriculture Facebook Page

আদার চাষ পদ্ধতি

আদা একটি মূল্যবান মশলা জাতীয় ফসল। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমি থেকে মাত্র ৩৮ হাজার ৫০০ টন আদা উৎপাদন হয়। এ উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই চাহিদা পূরণের জন্য প্রতি বছর বিদেশ থেকে প্রচুর আদা আমদানি করতে হয়। উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আদার ফলন এবং উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আদা রফতানি করা সম্ভব।

পুষ্টিগুণ:
আদায় শতকরা ৮০ ভাগ জলীয় অংশ, ২ ভাগ এলবুমিনয়েড, ১২.৩ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ১.০ ভাগ ফ্যাট, ২৪ ভাগ অাঁশজাতীয় পদার্থ এবং ১.২ ভাগ খনিজ পদার্থ রয়েছে।

ভেষজ গুণ:
আদা জ্বর, ঠা-া লাগা ও ব্যথায় বেশ উপকারী। কুচি আদা চিবিয়ে খেলে গা গোলানো ও বমিভাব থেকে রেহাই পওয়া যায়। অ্যান্টি অঙ্েিডন্টে ভরপুর আদা ক্যানসার ও হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। আদা দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। আদার রস খেলে আহারের রুচি আসে এবং ক্ষুধা বাড়ে। আদার রস মধু মিশিয়ে খেলে কাশি দূর হয়। আদার রস পেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আদা মল পরিষ্কার করে এবং পাকস্থলী ও লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। আদা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। আদার রস রক্তশূন্যতা দূর করে ও শরীর শীতল রাখে। আদা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কার্যকরভাবে কমাতে সাহায্য করে। আদা রক্তনালির ভেতরের রক্ত জমাটে বাঁধতে বাধা দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

উৎপাদন এলাকা:
নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং যশোর জেলায় প্রচুর আদা উৎপাদন হয়।

আদার জাত:
বাংলাদেশে চাষকৃত আদার জাতের মধ্যে বারি আদা-১ জাতটি ২০০৮ সালে সারা দেশে চাষের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। এটি একটি উচ্চফলনশীল জাত। এর জীবনকাল ২৭০ থেকে ৩০০ দিন। এ জাতের গাছের গড় উচ্চতা ৭৯ থেকে ৮২ সেন্টিমিটার। প্রতি গাছে কুশির সংখ্যা ৩০ থেকে ৩২টি ও পাতার সংখ্যা ২১০ থেকে ২১২টি। প্রতি গাছে প্রাথমিক কন্দের সংখ্যা ৫৪ থেকে ৫৭টি এবং মাধ্যমিক কন্দের সংখ্যা ৩৯০ থেকে ৩৯৫টি। জাতটি রোগ প্রতিরোধ ও সংরক্ষণ ক্ষমতাসম্পন্ন।

জলবায়ু:
আদার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া দরকার। অল্প ছায়াযুক্ত স্থানে আদা ভালো হয়।

মাটি:
উঁচু বেলে দোঅাঁশ, বেলে ও এঁটেল দোঅাঁশ মাটিতে আদা ভালো জন্মে। আদার জন্য জমিতে পানি নিকাশের সুব্যবস্থা থাকা উচিত। কারণ জমিতে পানি জমে থাকলে আদা পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

জমি তৈরি:
আদা চাষের জন্য জমি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়। ৬ থেকে ৮ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হয়।

বীজ বোনার সময়:
মধ্য চৈত্র থেকে মধ্য বৈশাখ হলো স্থানীয় উন্নত জাতের বীজ আদা লাগানোর উপযুক্ত সময়। সেচের সুবিধা থাকলে বৈশাখ মাসে আদা লাগানো যায়। সেচের সুবিধা না থাকলে জ্যৈষ্ঠ মাসে আদা লাগানো উচিত।

বীজ শোধন:
পচন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বীজ আদা শোধন করা উচিত। এজন্য ৮ লিটার পানিতে ১৬ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড বা এক্রোবেট এম জেড মিশিয়ে তাতে ১০ কেজি আদা বীজ ৩০ মিনিট শোধন করে ছায়াযুক্ত স্থানে শুকিয়ে নেয়ার পর রোপণ করতে হবে। আদা লাগানের আগে একটি ঝুড়িতে কিছু খড় বিছিয়ে ছোট ছোট আদা তার ওপর বিছিয়ে খড় বা শুকনা পাতা দিয়ে সেগুলো ঢেকে রাখলে আদার কল বের হবে এবং এ রকম আদা লাগালে তাড়াতাড়ি গাছ বের হবে।

বীজের পরিমাণ:
আদা রোপণের জন্য হেক্টরপ্রতি প্রায় ২.০ থেকে ২.৫ টনের মতো বীজের প্রয়োজন হয়।

রোপণ পদ্ধতি:
ছোট লাঙল বা কোদাল দিয়ে ৫০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে নালা কেটে তাতে ১৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে ৮ সেন্টিমিটার গভীরতায় দু-তিনটি চোখসহ আদার টুকরা লাগাতে হবে। বীজ আদার ওজন ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম হওয়া উচিত। সারিতে আদা লাগানোর পর সারির ওপর দিয়ে ৫ সেন্টিমিটার পুরু করে খড় বা শুকনা পাতার আচ্ছাদন দিলে তাড়াতাড়ি বীজ থেকে গাছ গজায়। যে অঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হয় এবং মাটি এঁটেল অথবা সেচ দিয়ে আদা চাষ করা হয়, সেখানে ওই একই দূরত্বে কোদাল দিয়ে ভেলি তৈরি করে তাতে আদা লাগাতে হবে।

সার প্রয়োগ:
ভালো ফলনের জন্য আদার জমিতে হেক্টরপ্রতি ১০ টন পচা গোবর, ৩০০ থেকে ৩২০ কেজি ইউরিয়া, ২৬০ থেকে ২৮০ কেজি টিএসপি, ২৯০ থেকে ৩১০ কেজি এমওপি, ১০০ থেকে ১২০ কেজি জিপসাম, প্রয়োজনে ১.৮ থেকে ২.২ কেজি বরিক এসিড এবং ৩.৫ থেকে ৪.০ কেজি জিংক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপনের ৭ দিন আগে শেষ চাষের সময় জমিতে সম্পূর্ণ গোবর, টিএসটি, জিপসাম, বরিক এসিড, জিংক সালফেট ও অর্ধেক এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপনের ৫০ দিন পর অর্ধেক ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমপি সার সমান দুই ভাগে ভাগ করে বপনের ৮০ দিন পর একবার এবং ১১০ দিন পর আর একবার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

রোগ দমন:
আদার জমিতে তেমন কোনো রোগবালাইয়ের উপদ্রব দেখা যায় না। তবে কখনও কন্দ পচা রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে।

প্রতিকার:
রোগমুক্ত বীজ আদা রোপণ করা, একই জমিতে বারবার আদা চাষ না করা। জমিতে পানি নিকাশের ব্যবস্থা করা। প্রতি লিটার পানিতে তিন গ্রাম রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। রোগাক্রান্ত জমিতে ০.৩ শতাংশ রিডোমিল গোল্ড দ্বারা বর্ষার আগে ও পরে আদা গাছের গোড়া ভিজিয়ে দিতে হবে।

পোকা দমন:
আদা গাছে কান্ড ছিদ্রকারী ও পাতাখেকো পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। কা- ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য সেভিন ডাস্ট ২ শতাংশ হারে ৭ থেকে ১০ দিন পর পর দুই থেকে তিনবার স্প্রে করতে হবে। অনেক সময় পাতাখেকো পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। এ পোকা দমনের জন্য বিকালবেলা ১ শতাংশ ডেসিস ২ শতাংশ রাইসন স্প্রে করতে হবে।

পরিচর্যাঃ- আদা লাগানোর ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে গাছ বের হয়। দু-তিনবার নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। গাছ কিছুটা বড় হলে গোড়ায় মাটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।

পানি সেচ:
ভালো ফলনের জন্য আদার জমিতে সেচ দেয়া দরকার। সেজন্য সময়মতো বৃষ্টি না হলে বা খরার সময় ৮ থেকে ১০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।

আদা তোলা:
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে লাগানো আদা পৌষ মাসে শুকাতে শুরু করলে আদা তুলতে হবে। কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে আদা তোলা উচিত। আদা তুলে মাটি পরিষ্কার করে সংরক্ষণ করতে হবে।

বীজ আদা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:
নির্বাচিত গাছ সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে যাওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিন পর বীজ আদা সংগ্রহ করতে হবে। সংরক্ষণের আগে শতকরা ৩ ভাগ ডাইথেন এম-৪৫ দ্বারা বীজ শোধন করলে পচন থেকে আদা রক্ষা করা যায়।

গর্ত খনন করে আদা সংরক্ষণ:
উঁচু জমিতে ৪৫০ সেন্টিমিটার লম্বা, ৩০০ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ১৮০ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত করে শুকিয়ে গর্তের চারপাশ খড় বিছিয়ে থলিতে ভরে একে একে সাজিয়ে মাটির আবরণ দিয়ে ঢেকে আদা সংরক্ষণ করা যায়।

শুকনা বালুতে সংরক্ষণ: এ পদ্ধতিতে শুকনা বালি স্তরের ওপর বীজ আদা ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পুরু স্তর করে রেখে প্রথমে শুকনা পাতা ও পরে ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার বালির আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। বীজের পরিমাণ বেশি হলে এ পদ্ধতিতে আদা সংরক্ষণ করে স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখতে হবে।

ফলন: উন্নত পদ্ধতিতে আদার চাষ করে হেক্টরপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

কলার উৎপাদন বৃদ্ধির কলাকৌশল

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

কলা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল। অন্য সব ফলের তুলনায় এটি সস্তা এবং সারাবছরই পাওয়া যায়। কলার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞানসম্মত কিছু কলাকৌশল আছে যা উল্লেখ করা হলো।

জাত নির্বাচন
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৪০-৫০টি জাতের কলার চাষ হয়ে থাকে। এসব জাতের মধ্যে অমৃতসাগর, সবরি, কবরি, চাঁপা, সিঙ্গাপুরি বা কাবুলী, মেহেরসাগর, এঁটে বা বিচি কলা, কাঁচকলা বা আনাজি কলা এবং জাহাজি কলা উলেৱখযোগ্য। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বারিকলা-১, বারিকলা-২ ও বারিকলা-৩ নামে কলার তিনটি উন্নতজাত অবমুক্ত করা হয়েছে।

চারা নির্বাচন
কলার চারা বা সাকার দুই রকমের। অসি চারা ও পানি চারা। অসি চারার পাতা চিকন, গোড়ার দিকে মোটা ও গোলাকার। পানির চারার পাতা চওড়া, কাণ্ড চিকন ও দুর্বল। তবে চাষের জন্য অসি চারা লাগানো উত্তম।

মাটি ও জলবায়ু
পর্যাপ্ত রস আছে এমন মাটিতে কলা চাষ করা যায়। তবে সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটি কলা চাষের জন্য ভালো। এছাড়া জমি পর্যাপ্ত আলো বাতাসপূর্ণ হওয়া দরকার। অপরদিকে শীতকালে এবং প্রচুর আর্দ্রতাযুক্ত জলবায়ুতে কলা গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।

চারা রোপণ
ভাদ্র মাস ছাড়া যে কোনো মাসেই চারা রোপণ করা যায়। তবে চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হলো মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ এবং মধ্য মাঘ থেকে মধ্য চৈত্র। তিন মাস বয়সী সুস্থ সবল অসি চারা লাগানো উত্তম। চারা রোপণের আগে ৫০ সেমি. দৈর্ঘ্য ৫০ সেমি. প্রস্ত এবং ৫০ সেমি. গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে। এক মাদা থেকে অপর মাদা বা এক চারা থেকে অপর চারার দূরত্ব রাখতে হবে ২ মিটার। এ হিসাবে বিঘাপ্রতি ৩৫০-৪০০টি চারা রোপণ করা যায়।

সার ব্যবস্থাপনা
কলা চাষের জন্য জমি তৈরির শেষ সময় বিঘাপ্রতি ৩.৫-৪.০ টন পচা গোবর বা আবর্জনা পচা সার প্রয়োগ করতে হবে। এরপর পূর্ববর্তী পৃষ্ঠায় উল্লেখিত তালিকা অনুযায়ী সার ও সার জাতীয় খাদ্য উপাদান প্রয়োগ করতে হবে।
জেনে রাখা দরকার যে, লিবরেল দস্তা, লিবরেল বোরণ ও আলগা-গোল্ড কলাগাছের পাতায় ও ফলে সেপ্র করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। এসব খাদ্য উপাদান অন্যান্য সার বা বালাইনাশকের সাথে মিশিয়েও সেপ্র করা যাবে।

অতিরিক্ত চারা কর্তন
কলা গাছের গোড়া থেকে নতুন সাকার বা চারা বের হয়ে থাকে। কলার ছড়া বের হওয়ার আগ পর্যন্ত কলা গাছে নতুন চারা কোনো অবস্থাতেই রাখা উচিত নয়। সাধারণত দু-এক মাস পরপর এসব চারা মাটি সমান করে কাটা দরকার।

সেচ প্রদান ও পানি নিষ্কাশন
কলা গাছে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু গাছ অতিরিক্ত পানি সহ্য করতে পারে না। তাই পানি যাতে না দাঁড়ায় সেজন্য নিষ্কাশন নালা এবং শুকনো মৌসুমে সেচ নালা তৈরি করে তা দিয়ে দু-একবার সেচ দিতে হবে।

অন্তর্বর্তী ফসল
কলাবাগানে অন্তর্বর্তী হিসেবে মুলা, পালংশাক, মরিচ, ছোলা, মসুর, বরবটি, বাঁধাকপি, লালশাক, ডাঁটাশাক এসব ফসলের চাষ করা যেতে পারে। তবে এসব ফসলের জন্য অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করতে হবে।

পোকামাকড় ও দমন
কলা চাষের অন্যতম শত্র্ব হলো এর বিটল পোকা, উইভিল ও থ্রিপস বা জাবপোকা। বিটল পোকা ফল ও পাতায় আক্রমণ করে। আক্রান্ত ফল ও পাতায় কালো বর্ণের গোল ও লম্বা দাগ দেখা যায়। ফল ছোট হয় এবং বাজারমূল্য কমে যায়। উইভিল পোকা কলার কন্দ ছিদ্র করে ভেতরে প্রবেশ করে ও নরম অংশ খেয়ে ফেলে। থ্রিপস বা জাবপোকা সাধারণত কলার খোসায় আক্রমণ করে এবং খোসার ওপর ছোট ছোট বাদামি লম্বা দাগ দেখা যায়। কলার উইভিল পোকা দমনের জন্য চারা রোপণের সাড়ে তিন থেকে চার মাস পর বিঘাপ্রতি ৩ কেজি হারে নিউফুরান-৫ জি অন্যান্য সারের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া ফল ও পাতার বিটল পোকা দমনের জন্য আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি মর্টার-৪৮ ইসি প্রতি ১০-১৫ দিন পর পর সেপ্র করতে হবে।

রোগ ও প্রতিকার
কলার রোগের মধ্যে পানামা, সিগাটোকা ও গুচ্ছমাথা রোগ অন্যতম। পানামা রোগের আক্রমণে গাছের পাতা হলুদ হয়, পাতা বোঁটার কাছে ভেঙে ঝুলে যায় এবং কাণ্ড অনেক সময় ফেটে যায়। আক্রান্ত গাছ আস্তে আস্তে মরে যায় অথবা ফুল ও ফল ধরে না।
সিগাটোকা রোগের আক্রমণে পাতার ওপর গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির গাঢ় বাদামি রঙের দাগ পড়ে। ফল ছোট আকারের হয় এবং গাছের ফলন বহুলাংশে কমে যায়।
গুচ্ছ মাথা রোগে আক্রান্ত গাছের পাতা সর্ব এবং ফ্যাকাশে রঙের হয়। জাব পোকা ও জ্যাসিডের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।
পানামা ও সিগাটোকা রোগ থেকে প্রতিকারের জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ মিলি. এন্টিসিকা ও ১০ গ্রাম বেনডাজিম অথবা ২০ গ্রাম হেমেঙিল এমজেড-৭২ ডব্লিউপি একত্রে মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে।
গুচ্ছ মাথা রোগ এক ধরনের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।
জাবপোকা জ্যাসিড এই ভাইরাস বিভিন্ন গাছে ছড়ায়। জাবপোকা দমনের জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ মিলি. স্টার্টার ৪০ ইসি সেপ্র করতে হবে। এছাড়া রোগমুক্ত এবং রোগ সহনশীল জাতের সাকার চাষ করেও এসব রোগের হাত থেকে রৰা পাওয়া যায়।

উপরোল্লিখিত নিয়ম মেনে কলার চাষ করলে বিঘাপ্রতি ১২-১৫ টন ফলন পাওয়া যাবে যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

কুমড়াজাতীয় সবজির হাত পরাগায়ন

স্ত্রী ফুলের গর্ভমুন্ডের উপর পুরুষ ফুলের পরাগরেণু পতিত হওয়ায় হচ্ছে পরাগায়ন। পরাগায়ন দুই প্রকার। যথা-

ক) প্রাকৃতিক পরাগায়ন: প্রাকৃতিক উপায়ে সাধারণত পোকার সাহায্যে।
খ) কৃত্রিম/হাত পরাগায়ন: হাত দিয়ে পরাগায়ন সম্পন্ন করা হয়। ১টি পুরুষ ফুল দিয়ে ১০-১২ টি স্ত্রী ফুল পরাগায়ন করানো যায়।

কুমড়াজাতীয় সবজির ক্ষেত্রে হাত পরাগায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কুমড়াজাতীয় সবজিতে দুই ধরণের গাছ দেখা যায়।
ক) ভিন্নবাসী-স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল আলাদা গাছে থাকে অর্থাৎ স্ত্রী ও পুরুষ গাছ ভিন্ন। যেমন-পটল, কাকরোল ইত্যাদি। ভাল ফলন পেতে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই হাত পরাগায়ন করতে হবে।
খ) সহবাসী-স্ত্রী ফুল ও পুরুষ ফুল একই গাছের ভিন্ন জায়গায় ধরে। যেমনঃ-অন্যান্য কুমড়াজাতীয় সবজি।

হাত পরাগায়নের সময়:
ফুল ফোটার সময় জানতে হবে এবং সে অনুযায়ী হাত পরাগায়ন সম্পন্ন করতে হবে। যেমন- সাদা ফুল (লাউ, চিচিঙ্গা) সাধারণত: বিকালে ফুটে। রঙিন ফুল (চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, করল্লা, ধুন্দল) সাধারণত সকাল ফুটে।
পরিপূর্ণভাবে ফোটার আগে করতে হবে।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

মসুর চাষ

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

দামে সস্তা এবং প্রচুর পরিমাণে আমিষের উপস্থিতির কারণে ডালকে গরীবের মাংস বলা হয়। বাংলাদেশে ডালের মধ্যে মসুর সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বিভিন্ন কারণে দেশে দিন দিন মসুরের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। উৎপাদন হ্রাসের অন্যতম কারণগুলো হলো-পাতা ঝলসানো রোগের আক্রমণ, সময় মতো বপন ও যতœ না নেয়া। বাংলাদেশ পরিসংখান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে ১৯৯৫ সালে যেখানে মসুরের উৎপাদন ছিল এক লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন , ২০০৯-১০ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার মেট্রিক টনে। ফলে দেশের চাহিদা মেটাতে ২০১১ সালে এক হাজার ২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ৫২ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন মসুর ডাল আমদানি করতে হয়েছে। উন্নত পদ্ধতিতে মসুরের চাষ করে উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের চাহিদা পূরণ পূর্বক কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব।

মসুরের জাত:
মসুরের আধুনিক জাতগুলোর কোনোটিই পাতা ঝলসানো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন নয়। তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারিমসুর-৩, বারিমসুর-৪ বারিমসুর-৫, বারিমসুর-৬ ও বারি মসুর-৭ কৃষকের মাঠে ভাল ফলন দিতে সক্ষম।

জমি নির্বাচন:
দোআঁশ মাটি মসুর চাষের জন্য উত্তম, তবে এটেল দোআঁশ মাটিতেও মসুর ভাল জন্মে। মনে রাখতে হবে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি চাষ করার জন্য যে সব জমিতে উপযুক্ত জো আসে সে সমস্ত জমি মসুর চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত।

জমি তৈরি:
উপযুক্ত জো অবস্থায় ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি গভীরে ২ থেকে ৩টি চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে মসুরের জন্য জমি তৈরি করতে হবে, যাতে মাটিতে অতিরিক্ত রস না থাকে।

সার প্রয়োগ:
বিঘা প্রতি ৪ কেজি ইউরিয়া, ৫ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ১৩ কেজি টিএসপি ও ৭ কেজি জিপসাম শেষ চাষের সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।

বপনের সময়:
কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত মসুর বপন করার উপযুক্ত সময়। তবে অনেক এলাকায় আমন ধান কাটার পর কৃষক অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মসুর বপন করে থাকেন। বিলম্বে মসুর বপনের কারণে বিভিন্ন রোগের আক্রমণে মসুরের ফলন কম হয়।

বীজের পরিমাণ:
জমিতে উপযুক্ত জো থাকলে বিঘা প্রতি ৫ কেজি বীজ ব্যবহার করাই যথেষ্ট।

বীজ শোধন:
চারার গোড়া পচা রোগের আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষার করার জন্য বীজ বপনের পূর্বে প্রতি কেজি বীজ ২.৫ গ্রাম প্রোভেক্স ২০০ দ্বারা শোধন করতে হবে।

সেচ ব্যবস্থাপনা:
মসুর চাষে তেমন সেচের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে।তবে বপনের সময় জমিতে পরিমিত রস না থাকলে জমিতে হালকা সেচ দিয়ে উপযুক্ত জো অবস্থায় এনে বীজ বপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। এ ছাড়াও আমন ধান কাটার পর এটেল দোআঁশ মাটিতে নাবিতে মসুর বপন করলে গাছ বৃদ্ধির সময় মাটিতে রসের আভাব ঘটে। সে সময় জমিতে একটি হালকা সেচ দিলে ফলন বৃদ্ধি পায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো ক্রমেই জমিতে সেচের বা বৃষ্টির পানি জমে না থাকে। এতে গাছের শিকড় পচে গাছ হলুদ হয়ে যায় এবং পরে মারা যায়।

রোগ ব্যবস্থাপনা:
মসুরের সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ হলো পাতা ঝলসানো রোগ। এরোগের আক্রমণে গাছের পাতা, ফুলও অপরিপক্ক ফল শুকিয়ে মরে যায়। এই রোগ দমনের জন্য প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে বীজ বপনের ৬০ থেকে ৬৫ দিন বয়সে অর্থাৎ ফুল আসার সময়ে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া মসুরের চারা অবস্থায় ক্ষুদ্র পরিসরে চারার মড়ক দেখা দিলে প্রোভেক্স -২০০ ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ও মাটিতে ভালভাবে স্প্রে করলে এই রোগের প্রকোপ কমে যায়।

পোকামাকড় দমন:
মসুরে তেমন পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়না, তবে ফুল আসার সময় জাবপোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি. হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ: মসুর গাছ পেকে শুকিয়ে ভালভাবে মাড়াই, ঝাড়াই ও পরিস্কার করে শুকিয়ে বায়ুরোধক পাত্রে বা পলিথিনের বস্তায় সংরক্ষণ করতে হবে। মাঝে মধ্যে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে যেন মসুর বীজ ব্রুকিড পোকায় আক্রান্ত না হয়।

ফলন: ভালভাবে যত্ন নিলে বিঘা প্রতি ৩৬০ থেকে ৪০০ কেজি ফলন পাওয়া যায়।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

পেঁয়ারা চাষাবাদ

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

পেঁয়ারা গাছের পাতা, কান্ড, শাখা-প্রশাখা ও ফল এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এক ধরণের ছত্রাকের আক্রমনে এমনটি হয়ে থাকে।

পুষ্টি মূল্য:
পেঁয়ারা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি ফল।

ভেষজ গুণ:
শিকড়, গাছের বাকল, পাতা এবং অপরিপক্ক ফল কলেরা, আমাশয় ও অন্যান্য পেটের পীড়া নিরাময়ে কাজ করে।

উপযুক্ত জমি ও মাটি:
সুনিষ্কাসিত উঁচু জমি ও মাঝারি উঁচু জমি পেয়ারা চাষের জন্য উপযোগি।

জাত পরিচিতি:
স্থানীয় জাতের মধ্যে-স্বরুপকাঠি, কাঞ্চননগর, মুকুন্দপুরী এবং উন্নত জাতের মধ্যে কাজী পেঁয়ারা, বারি পেঁয়ারা -২ অন্যতম।

কাজী পেঁয়ারা: ফল আকারে বেশ বড়। ওজন ৪০০-৫০০ গ্রাম। পরিপক্ক ফল হলুদাভ সবুজ এবং ভিতরের শাঁস সাদা। এ ফল ৭-১০ দিন ঘরে সাধারণ তাপমাত্রায় সংরক্ষন করা যায়। কাজী পেঁয়ারা খেতে সামান্য টক।

বারি পেঁয়ারা-২: গাছ ছাতাকৃতি ও কাজী পেঁয়ারার চেয়ে খাটো হয়। পাতার অগ্রভাগ সুচালো। এ জাতটি বর্ষাকাল ও শীতকাল ২ বার ফল দেয়। পেঁয়ারা খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি।

চারা তৈরি:
গুটি কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করা হয়।চারা রোপণ: সমতল ভূমিতে বর্গাকার ও ষড়ভূজী এবং পাহাড়ি ভূমিতে কন্টুর পদ্ধতিতে করা হয়। পেঁয়ারার চারা মধ্য জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য আশ্বিন মাসে রোপণ করা হয়। রোপণের আগে গর্ত তৈরি করে নিতে হয়। প্রতি চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪ মিটার রাখতে হয়।

সার ব্যবস্থাপনা:
প্রতি গর্তে গোবর ২০ কেজি, পচা খৈল ২ কেজি, টিএসপি সার ২০০ গ্রাম, এমওপি সার ২০০ গ্রাম প্রযোগ করতে হয়। তবে বয়সবৃদ্ধির সাথে সাখে সারের পরিমানও বৃদ্ধি করতে হয়।

অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা:
পেঁয়ারা সংগ্রহের পর ভাঙ্গা, রোগাক্রান্ত ও মরা শাখা-প্রশাখা ছাঁটাই করে ফেলতে হয়। তাতে গাছে আবার নতুন নতুন কুঁড়ি জন্মায়। পেঁয়ারা গাছে প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক ফল দিয়ে থাকে। তাই মার্বেল আকৃতি হলেই কিছু ফল ফেলে দেয়া দরকার।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা:
খরার সময় ২-৩ বার পানি সেচ দিতে হয়। তাছাড়া গাছের গোড়া থেকে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়।

রোগব্যবস্থাপনা
রোগের নাম:
পেঁয়ারার এ্যানথ্রাকনোজ রোগ দমন
ক্ষতির নমুনা:
প্রথমে পেঁয়ারার গায়ে ছোট ছোট বাদামী রঙের দাগ দেখা যায়। দাগগুলো ক্রমান্বয়ে বড় হয়ে পেঁয়ারার গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করে। আক্রান্ত ফল অনেক সময় ফেটে যায়। তাছাড়া এ রোগে আক্রান্ত ফলের শাঁস শক্ত হয়ে যায়।

অনুকূল পরিবেশ:
বাতাস ও বৃষ্টির মাধ্যমে রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে।

বিস্তার:
গাছের পরিত্যক্ত শাখা প্রশাখা, ফল এবং পাতায় এ রোগের জীবাণু বেঁচে থাকে এবং পরে বিস-ার লাভ করে।

প্রতিকার:
গাছের নিচে ঝরে পড়া পাতা ও ফল সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলতে হয়। গাছে ফুল ধরার পর টপসিন-এম প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম অথবা টিল্ট ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মি.লি হারে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ৩-৪ বার ভালভাবে সেপ্র করে এ রোগ দমন করা যায়।

ফসল তোলা:
সবুজ থেকে হলদে সবুজ রঙ ধারণ করলে ফল সংগ্রহ করতে হয়।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

পেঁপে চাষাবাদ

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

পুষ্টি মূল্য:
পাকা পেঁপে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ একটি ফল। কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমানে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে।

ভেষজ গুণ:
অজীর্ণ,কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনি ও পাকস্থলীর ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে।

ব্যবহার:
পাকা পেঁপে ফল হিসেবে এবং কাঁচা পেপে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।

ঔষধি গুণাগুণ:

১। রক্ত আমাশয়:
প্রত্যেহ সকালে কাঁচা পেঁপের আঠা ৫/৭ ফোঁটা ৫/৬ টি বাতাসার সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। ২/৩ দিন খাওয়ার পর রক্তপড়া কমতে থাকবে।

২। ক্রিমি:
যে কোনো প্রকারের ক্রিমি হলে, পেঁপের আঠা ১৫ ফোঁটা ও মধু ১চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এরপর আধা ঘন্টা পরে উঞ্চ পানি আধ কাপ খেয়ে তারপরে ১ চামচ বাখারি (শসা-ক্ষীরার মতো এর স্বাদ) চুনের পানি খেতে হয়। এভাবে ২ দিন খেলে ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে।

৩। আমাশয়:
আমাশয় ও পেটে যন্ত্রনা থাকলে কাঁচা পেঁপের আঠা ৩০ ফোঁটা ও ১ চামচ চুনের পানি মিশিয়ে তাতে একটু দুধ দিয়ে খেতে হবে। একবার খেলেই পেটের যন্ত্রনা কমে যাবে এবং আমাশয় কমে যাবে

৪। যকৃত বৃদ্ধিতে:
এই অবস্থা হলে ৩০ ফোঁটা পেঁপের আঠাতে এক চামচ চিনি মিশিয়ে এক কাপ পানিতে ভালো করে নেড়ে মিশ্রণটি সারাদিনে ৩ বার খেতে হবে। ৪/৫ দিনের পর থেকে যকৃতের বৃদ্ধিটা কমতে থাকবে, তবে ৫/৬ দিন খাওয়ার পর সপ্তাহে ২ দিন খাওয়াই ভালো। এভাবে ১ মাস খেলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।

৫। ক্ষুধা ও হজম শক্তিতে:
প্রত্যেক দিন সকালে ২/৩ ফোঁটা পেঁপের আঠা পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা ক্ষুধাও বেড়ে যাবে এবং হজমও ঠিকভাবে হবে।

৬। পেট ফাঁপায়:
কয়েক টুকরো পাকা পেঁপের শাঁষ, আর সামান্য লবন এবং একটু গোলমরিচের গুড়ো একসংগে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা পেট ফাঁপার উপশম হয।

৭। প্রবল জ্বরে:
দেড় চামচ পেঁপে পাতার রস এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা জ্বরের বেগ, বমি, মাথার যন্ত্রনা, শরীরে দাহ কমে যাবে। জ্বর কমে গেলে আর খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

৮। মাসিক ঋতু বন্ধে:
যাদের মাসিক ঋতু বন্ধ হওয়ার সময় হয়নি অথচ বন্ধ হয়ে গিয়েছে অথবা যেটুকু হয় তা না হওয়ারই মত, সেক্ষেত্রে ৫/৬ টি পাকা পেঁপের বিচি গুড়া করে রোজ সকালে ও বিকালে দু’বার পানিসহ খেতে হবে। এর ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই মাসিক স্রাব ঠিক হয়ে যাবে, তবে অন্য কোন কারনে এটা বন্ধ হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

৯। দাদে:
সে যে কোনো প্রকারের হোক না কেন, কাঁচা পেঁপের/গাছের আঠা ঐ দাদে লাগিয়ে দিতে হবে, একদিন লাগিয়ে পরের দিন লাগাতে হবে না, এরপরের দিন আবার লাগাতে হবে, এইভাবে ৩/৪ দিন লাগালে দাদ মিলিয়ে যাবে।

১০। একজিমায়:
যে একজিমা শুকনা অথবা রস গড়ায় না, সেখানে ১ দিন অথবা ২ দিন অন্তর পেঁপের আঠা লাগালে ওটার চামড়া উঠতে উঠতে পাতলা হয়ে যায়।

১১। উকুন হলে:
১ চামচ পেঁপের আঠা, তার সঙ্গে ৭/৮ চামচ পানি মিশিয়ে ফেটিয়ে নিতে হয়। তারপর ওই পানি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর মাথা ধুয়ে ফেলতে হয়। এইভাবে একদিন অন্তর আর একদিন বা ২ দিন লাগালে উকুন মরে যায়।

উপযুক্ত জমি ও মাটি:
উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি ভাল।

জাত পরিচিতি:
বারি পেঁপে-১ (শাহী পেঁপে):
স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা গাছে ধরে। চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর ফুল আসে। কান্ডের খুব নিচ থেকেই ফল ধরা শুরু হয়। প্রতিটি ফলের ওজন ৮৫০-৯৫০ গ্রাম। চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর ফুল আসে, ফুল আসার ৩-৪ মাস পর পাকা পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। এ জাতটি প্রায় সার বছরই ফল দিয়ে থাকে।

চারা তৈরি:
বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। পলিথিন ব্যাগে চার তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

চারা রোপণ:
দেড় থেকে দুই মাস বয়সের চারা রোপণ করা হয়। ২ মিটার দূরে দূরে চারিদিকে ২ ফুট পরিমান গর্ত তৈরি করে রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মিশাতে হবে। পানি নিকাশের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৫০ সে.মি নালা রাখা দরকার। বানিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষের জন্য বর্গাকার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। প্রতি গর্তে ৩ টি করে চার রোপণ করতে হয়। ফুল আসলে ১ টি স্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলা দরকার। পরাগায়ণের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখা দরকার।

সার ব্যবস্থাপনা:
প্রতি গাছে ১৫ কেজি জৈব সার, ৫৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ৫৫০ গ্রাম টিএসপি সার, ৫৫০ গ্রাম এমওপি সার, ২৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২৫ গ্রাম বোরাক্স সার এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার একত্রে ভালভাবে প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া সব সার গর্ত তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর পর গাচে নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস পর পর প্রয়োগ করতে হয়। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করা হয়।

অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা:
ফুল হতে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে। গাছ যাতে ঝড়ে না ভেঙ্গে যায় তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হয়।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা:
চারা রোপণ এবং সার প্রয়োগের পর প্রয়োজনমতো পানি দিতে হবে। খরা মৌসুমে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে।

রোগ ব্যবস্থাপনা:

রোগের নাম:
পেঁপের ড্যাম্পিং অফ রোগ দমন।
ভূমিকা: মাটিতে যে ছত্রাক থাকে তার দ্বারা এ রোগ হতে পারে। এ রোগটি সাধারণত: চারা অবস্থায় অথবা বীজ গজানোর সময় হয়ে থাকে। বীজের অংকুর গজানোর সময় এ রোগের জীবাণু অতি সহজেই বীজ অথবা অংকুরকে আক্রমণ করে।

ক্ষতির নমুনা:
এ অবস্থায় বীজ পচে যায় এবং চারা মাটির উপর বের হয়ে আসতে পারেনা। এভাবে অংকুর গজানোর আগেই পচন হতে পারে। চারা গজানোর পরেও জীবাণুর আক্রমণ ঘটে। এ পর্যায়ে চারার গোড়া বা শিকড় পচে গিয়ে আক্রান্ত চারা মাটিতে পড়ে যায় এবং মারা যায়। চারার বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগের প্রকোপ কমে যায়।

অনুকূল পরিবেশ:
বর্সা মৌসুমে ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ খুব বেশি।
বিস্তার: বৃষ্টির পানিতে অথবা সেচের পানিতে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়।

ব্যবস্থাপনা:
গাছের গোড়ার পানি নিকাশের ভাল ব্যবস্থা রাখা দরকার। রোগাক্রান্ত চারা গাছ মাটি থেকে উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রমন বেশি হলে রিডোমিল এমজেড-৭২ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর গাছের গোড়ার চারিদিকের মাটিতে প্রয়োগ করা দরকার। জিংকের ঘাটতির জন্য মোজাইক লক্ষণ দেখা দিলে গাছের গোড়ায় গাছপ্রতি ৫-১০ গ্রাম জিংক প্রয়োগ করলে এবং ০.২% জিংক গাছের পাতায় স্প্রে করলে এ সমস্যা কমে যায়।

ফসল তোলা:
সবজি হিসেবে কচি ফল সংগ্রহ করা হয়। পাকানোর জন্য ফলের ত্বক হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে সংগ্রহ করতে হয়।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

স্ট্রবেরি চাষ

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

চাষ এলাকা:
শীতের দেশে স্ট্রবেরি ভালো হয়। গরমের দেশে গাছ হয় কিন্তু সহজে ফল হতে চায় না। কিন’ গবেষকদের প্রচেষ্টায় এদেশে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু জাতের চাষ হচ্ছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলায় স্ট্রবেরি ফলানো সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে যেসব জেলায় শীত বেশি পড়ে ও বেশিদিন থাকে সেসব এলাকায় স্ট্রবেরি চাষ করা যেতে পারে। পঞ্চগড়, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এমনকি পাবনা, নাটোরেও চাষ করা যায়।

উপযুক্ত মাটি:
বেলে দোঁআশ ও মাটিতে প্রচুর জৈব সার প্রয়োগ করে স্ট্রবেরি ফলানো যায়। যেসব জমিতে পানি জমে সেখানে স্ট্রবেরি ফলানো যাবে না।

চারা তৈরি:
স্ট্রবেরির চারা এখনও তেমন সহজে পাওয়া যায় না। বিশেষ করে কাঙ্ক্ষিত চারা অবশ্যই বিশ্বস- কোনো নার্সারি থেকে সংগ্রহ করা দরকার। স্ট্রবেরি গাছগুলো গুল্ম ও লতা জাতীয় গাছ বলে গাছের গোড়া থেকে বেশ কিছু লম্বা লম্বা লতা মাটির উপর দিয়ে লতিয়ে যায়। মাটির সংস্পর্শে লতার গিট থেকে শিকড় গজায়। শিকড়যুক্ত গিট কেটে নিয়ে মাটিতে পুতে দিলে নতুন চারা তৈরি হবে। অর্ধেক মাটি অর্ধেক গোবর সার মিশিয়ে পলিব্যাগে ভরে একটি করে শিকড়যুক্ত গিটসহ লতা পুঁতে দিতে হয়। এক্ষেত্রে একটি গাছ থেকে ১৮-২০ টি চারা তৈরি করা সম্ভব।

জমি তৈরি:
জমি ভালভাবে চাষ করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে অন-ত ৩০ সেন্টিমিটার গভীর করে জমি চাষ দিতে হবে। যেহেতু স্ট্রবেরি গাছের শিকড় মাটির উপর দিকে থাকে সেজন্য মাটি ঝুরঝুরা করে নির্ধারিত মাত্রায় সার মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দতিে হবে।

চারা রোপণ:
স্ট্রবেরির চারা মধ্যঅক্টোবর থেকে মধ্যডিসেম্বর পর্যন- রোপণ করা যায়। তবে নভেম্বর মাস স্ট্রবেরি চারা রোপণের জন্য সবচে ভাল। জমি তৈরির পর লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ৫০ সেন্টিমিটার ও প্রতি সারিতে ৩০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে স্ট্রবেরির চারা লাগাতে হয়। বৃষ্টি হলে ক্ষেত থেকে অতিরিক্ত পানি সরিয়ে দিতে হবে না হলে গাছ পঁচে যাবে।

সার প্রয়োগ ও সেচ:
স্ট্রবেরির জন্য দরকার প্রচুর জৈব সার। এজন্য প্রতি একরে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া সার, ৭০ কেজি টিএসপি সার এবং ৮০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এসব সারকে সমান দুভাগে ভাগ করে একভাগ দিতে হয় ফুল আসার একমাস আগে এবং অন্য ভাগ দিতে হবে ফুল ফোটার সময়। ফল ধরা শুরু হলে ২-৩ দিন পর পরই সেচ দিতে হবে।

অন্যান্য যত্ন:
স্ট্রবেরি গাছে ফুল ধরাতে চাইলে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। গাছ লাগানোর পর তার গোড়া থেকে প্রচুর রানার বা কচুর লতির মতো লতা বের হতে থাকে। এগুলো জমি ঢেকে ফেলে। এতে ফলন ভাল হয় না। এসব লতা যাতে কম বের হয় সেজন্য গাছের গোড়ায় খড় বা পলিথিন বিছিয়ে দিতে হয়। পলিথিন সিট ৩০ সেন্টিমিটার পর গোলাকার ছিদ্র করে স্ট্রবেরি গাছের ঝোপকে মুঠো করে ঢুকিয়ে দিতে হয়। বেশি ফলন ও তাড়াতাড়ি ফল পেতে হরমোন গাছ পাতায় সেপ্র করা যেতে পারে।

ফল সংগ্রহ ও বিক্রি:
কাঁচা ফল যখন হলদে বা লালচে রঙের হতে শুরু করে তখন বুঝা যাবে ফল পাকা শুরু হয়েছে। ফল পুরো পাকলে লাল হয়ে যায়। তবে বিক্রির জন্য ফল পুরো লাল হওয়ার দরকার নেই। সেক্ষেত্রে ফলগুলো শক্ত থাকা অবস’ায় তুলতে হবে। আর ফল তুলতে হবে বোটা সমেত। পরে কাগজের প্যাকেটে করে বাজারজাত করতে হবে। ফল তোলার পর ১০-১২ দিন পর্যন- ভালো থাকে। গড়ে প্রতি গাছে ১৫০-২০০ গ্রাম ফল ধরে। ফলটি এদেশে নতুন তাই ঝুঁকিও বেশি। তবুও মেধা ও বুদ্ধি প্রয়োগ করে স্ট্রবেরি চাষ একদিন লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হবে সে কথা বলা যায়।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

আধুনিক পদ্ধতিতে গোলাপের চাষ

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

গোলাপ একটি শীতকালীন মৌসুমী ফুল। তবে বর্তমানে গোলাপ সারা বছর ধরেই চাষ করা হচ্ছে। বর্ণ, গন্ধ, কমনীয়তা ও সৌন্দর্যের বিচারে গোলাপকে ফুলের রাণী বলা হয়। পুষ্প প্রেমীদের সবচেয়ে প্রিয় ফুল লাল গোলাপ। এটি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জলবায়ুতে খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারে বলে পৃথিবীর সব দেশেই সারাবছর কমবেশি গোলাপের চাষ হয়। গোলাপ সাধারণত কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, বাগান, লন, কেয়ারী, বারান্দা সাজাতে গোলাপের জুড়ি নাই। আতর ও সুগন্ধি শিল্পেও গোলাপের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

গোলাপের জাত:
গোলাপের জাত প্রধানত ৭টি। যথা-হাইব্রিড টি, হাইব্রিড পার্পেচুয়েল, পলিয়েন্থা, ফ্লোরিবান্ডা, মিনিয়েচার ও প্লেমবার। জাত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গোলাপ সাদা, লাল, হলুদ, কমলা, গোলাপি এবং মিশ্রিত রঙের হয়ে থাকে। এছাড়াও রানি এলিজাবেথ (গোলাপি), ব্ল্যাক প্রিন্স (কালো), ইরানি (গোলাপি), মিরিন্ডা (লাল), দুই রঙা ফুল আইক্যাচার চাষ করা হয়।

জমি নিবার্চন:
পানি জমেনা এমন ধরনের মাটিতে এই ফুল ভাল হয়; তবে জৈব সার মিশ্রিত দো-আঁশ মাটি খুবই উপযোগী। উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি, ছায়াহীন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল, পানি সেচ সুবিধা আছে এমন এবং জমির পিএইচ মান ৬.০ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে আছে এমন জমি।

আবহাওয়া:
ফুলের ভাল বৃদ্ধির জন্য ৬ ঘন্টা সূর্যের আলো দরকার। তাপমাত্রা ১৫০ থেকে ২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকা ভাল।

গোলাপের চারা লাগানোর সময়:
গোলাপ গাছের চারা লাগানোর সময় নির্ভর করে সেই অঞ্চলের জলবায়ুর উপর। তবে আমাদের দেশে সারা বছরই লাগানো হয়। সাধারণত দুই মৌসুমে এই ফুলের চাষ করা হয়ে থাকে। একর প্রতি ১২ হাজার টি চারা লাগাতে হবে।

রবি মৌসুম:
সেপ্টেম্বরের শুরু হতে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত (ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি হতে আশ্বিন মাসের শেষ পর্যন্ত)।

খরিপ মৌসুম:
মার্চের মাঝামাঝি হতে মধ্য এপ্রিলের মাঝ পর্যন্ত ।
লক্ষণীয়:
অতিরিক্ত গরম ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ঊভয়ই গোলাপ ফুল চাষে বাধার সৃষ্টি করে।

বংশবৃদ্ধি:
কয়েক প্রকার বীজ থেকে গোলাপের চারা তৈরি করা গেলেও চাষের জন্য প্রধানত কলমের চারাই ব্যবহার করা হয়। সাধারণত গুটি কলম, শাখা কলম (কাটিং), চোখ কলম (বাডিং) ইত্যাদি উপায়ে গোলাপের চারা প্রস্ত্তত করা যায়।

ক. গুটিকলম:
যে গাছের চারা তৈরি করা হবে সে গাছের একটি সুস্থ্য সবল ডালের ৩-৫ সেঃমিঃ পরিমাণ ছাল গোল করে একটি ধারালো ছুরি দিয়ে তুলে দিতে হয়। এরপর দো-আঁশ মাটি ও পচা গোবর সার সমান অংশে মিশিয়ে সেই ছালতোলা জায়গায় মুঠো করে লাগিয়ে দিতে হয়। মাটিটি পরে পলিথিন দিয়ে বেঁধে দিতে হয়। এতে মাটির জল শুকাতে পারে না, তাছাড়া শিকড় বের হলে বাইরে থেকে দেখতে সুবিধা হয়। যদি জল শুকিয়ে যায় তা হলে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে জল ঢুকিয়ে দিতে হয়। ৫-৬ সপ্তাহের মধ্যেই শিকড় বের হয়। তখন পলিথিনের বাঁধনের ঠিক নিচে প্রথম দফায় অর্ধেক এবং ২/৩ দিন পর বাকি অর্ধেক আলগা করে কলমটি ২/৩ দিন ছায়ায় রেখে পরে পলিথিনের বাঁধন খুলে মাটিতে লাগাতে হয়।

খ. শাখা কলম:
শাখা কলম তৈরির জন্য শক্ত ও নিখুঁত শাখা নির্বাচন করতে হয়। প্রায় ২০-২২ সেঃমিঃ লম্বা করে কলমের ডাল এমনভাবে কাটতে হয় যেন উপরের মাথা সমান ও নীচের মাথা অর্থাৎ সে মাথা মাটিতে পোঁতা হবে তা তেরচা থাকে। ডালের নিচের কয়েকটি পাতা ও কাঁটা ভেঙ্গে ফেলে জৈব সার মেশানো ঝুরঝুরে মাটিতে পুঁতে দিয়ে নিয়মিত জলদিতে হয়। ৬/৭ সপ্তাহ সময়ের মধ্যে কলম তৈরি হয়। যেসব বিদেশী গোলাপের কাষ্ঠল অংশ কম সেগুলোতে প্রায়ই কলম হতে চায় না।

গ. চোখ কলম:
চোখ কলম দ্বারা অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বহু সংখ্যক চারা উৎপন্ন করা যায়। এ পদ্ধতিতে জংলী গোলাপ গাছের শাখা বা কান্ডের সাথে ভাল জাতের গোলাপের কুঁড়ি বা চোখ লাগিয়ে তৈরি করতে হয়। এ পদ্ধতিতে দেশী জংলী গোলাপ গাছকে শিকড় গাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কেননা এদের ফুল ভাল মানের না হলেও দেশীয় আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে বেঁচে থাকতে পারে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে জংলী গোলাপের ডাল কেটে কাটিং লাগাতে হয়। আমাদের দেশে কুঁড়ি সংযোজন করার উপযুক্ত সময় হচ্ছে অগ্রহায়ণের প্রথম থেকে মাঘের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এ পদ্ধতিতে শিকড়-গাছের বর্ধনশীল কান্ডে বা গোড়ার দিকে খুব ছোট ধারালো ছুরি দিয়ে ইংরেজী T অক্ষরের মত করে শিকড় গাছের কাটা স্থানে এমন করে বসাতে হয় যাতে কুঁড়িটি বাইরে থাকে। এভাবে কুঁড়িটি স্থাপন করে পলিথিনের চিকন ফিতা দিয়ে বেঁধে দিতে হয় এবং শিকড় গাছের অংশ কেটে ফেলতে হয়। এভাবে ৩/৪ দিন ছায়ায় রেখে পরে রোদে দিতে হবে। প্রথম কয়েক দিন এমন ভাবে জল দিতে হবে যাতে কুঁড়ির সংযোগ স্থল না ভিজে। শিকড় গাছের কোন মুকুলযাতে গজাতে বা বাড়তে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি গজায় তাহলে সেগুলোকে ভেঙ্গে দিতে হয। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই আসল কুঁড়ি থেকে চারা বেরিয়ে আসবে। এটি বেশ কিছু বড় হলে পলিথিনের বাঁধন সাবধানে খুলে দিতে হয় যাতে গোড়ার অংশ ঠিকমত বাতাস পায়।

জমি তৈরী:
জমি বেশি শুকনো থাকলে হালকা সেচ দিয়ে জো আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। জৈব সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। জমির pH ঠিক রাখার জন্য চুন অথবা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সার দিতে হবে। জমিতে গভীর চাষ অর্থাৎ ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি গভীরতায় জমি চাষ দিতে হবে। পোকা মাকড় মুক্ত রাখতে জমি চাষের সময় ক্লোরডেন এবং মাটি বাহিত রোগ থেকে মুক্ত রাখার জন্য ব্রোমাইড ক্লোরোপিকরিন (১৬২ কেজি /একর) প্রয়োগ করতে হবে। শেষ চাষের সময় পরিমাণমত টিএসপি ও এমওপি সার জমিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে ।

রোপণ পদ্ধতি:
দেশীয় গোলাপ ফুল কাটিং পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে বেড সিস্টেমে লাগিয়ে নির্বাচিত জাতের সায়ন (যে ডাল দিয়ে কলম করা হয়) সংগ্রহ করে বিভিন্ন কলম (জোড় কলম, চোখ কলম ইত্যাদি) পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা হয়। যে চারাটি উৎপন্ন হলো, তার গোড়ায় মাটির বল তৈরী করে নির্দিষ্ট জমিতে লাগানো হয়। চারাটি লাগাতে সাধারণত: ২০ থেকে ৩০ সেমি (৮ থেকে ১২ ইঞ্চি) আয়তনের এবং ২৫ থেকে ৩০ সেমি (১০ থেকে ১২ ইঞ্চি) গর্ত তৈরী করে , তার ভিতর ভালোভাবে বসাতে হয় এবং গর্তটি মাটি দিয়ে ভালোভাবে আটকাতে হবে। যে গাছ দ্রুত বাড়ে তার জন্য ২ ফুট (গাছ থেকে গাছ) এবং ৩ ফুট (সারি থেকে সারির) দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। কলমের নীচের অংশ হতে কোন ডালপালা হতে দেওয়া যাবেনা।

সার প্রয়োগ
সারের নাম
পরিমাণ/একর প্রতি
প্রয়োগ সময়
কাঁচা গোবর
২০০০ কেজি
জমি তৈরির সময়
জৈব সার
৬০০ কেজি
জমি তৈরির সময়
টিএসপি
৫০ কেজি
জমি তৈরির সময়
এমওপি
২০ কেজি
জমি তৈরির সময়
ইউরিয়া
১০০ কেজি (প্রথম বছর)
চারা লাগানোর ২০ থেকে ২৫ দিন পর
ইউরিয়া
১৫ কেজি
কুঁড়ি বের হওয়ার পূর্বে
দসত্মা
১২ কেজি
জমি তৈরির সময়
খৈল
১৫০ কেজি
জমি তৈরির সময়

চাষের সময়ে পরিচর্যা
(ক) সেচ ও পানি নিষ্কাশন:
গোলাপের চারা লাগানোর ২ থেকে ৩ দিন পরে জমিতে হালকা সেচ দিতে হবে। পরবর্তীতে ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। জমিতে বৃষ্টির অথবা সেচের কারণে অতিরিক্ত পানি জমা থাকলে তা বের করে দিতে হবে।

(খ) আগাছা দমন:
আগাছা ফুল গাছের কোন ক্ষতি করার আগেই তা দমন করা উচিত। আগাছা দমনে আগাছা নাশক ট্রাইফ্লুরালিন ১.৮ কেজি /একর স্প্রে করতে হবে।

(গ) ডালপালা ছাঁটাইকরণ:
গোলাপ গাছের ডালপালা ছাঁটাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ডালপালা ছাঁটাই-এর মাধ্যমে গাছের মৃত, দুর্বল, রোগাক্রান্ত, ও নষ্ট অংশ দূর করা হয়। যার ফলে নতুন ডালপালা জন্মে ও নতুনভাবে ভাল ফুল উৎপন্ন সম্ভব হয়।

(ঘ) মালচিং:
সাধারণত: কম্পোষ্ট, গোবর সার, খড়, কাঠের গুড়া, চালের কুঁড়া, কচুরিপানা প্রভৃতি দিয়ে ঢেকে দেওয়াকে মালচিং বলে। গোলাপ গাছে মালচিং করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ-মালচিং মাটিকে ভেজাভেজা (আর্দ্র) রাখতে সাহায্য করে, জৈব সার তৈরিতে সাহায্য করে, আগাছা কমতে সাহায্য করে।

(ঙ) নিড়ানী:
গোলাপ চাষের জমিতে হালকা নিড়ানী দিতে হবে । নিড়ানী দিলে গাছের মূল সহজেই আলো বাতাস,পানি পায় যার ফলে মাটির আর্দ্রতার ধারন ক্ষমতা বাড়ে এবং আগাছা মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

(চ)গোলাপ চাষে ক্যাপ প্রযুক্তি
গোলাপ চাষে ক্যাপ প্রযুক্তি একটি সফল ও জনপ্রিয় প্রযুক্তি হওয়ার পরও বাংলাদেশে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে। যে গোলাপ ফুলটির দাম বর্তমানে দুই টাকা, ক্যাপ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সেই ফুলটির গুণগতমান বৃদ্ধি পেয়ে দাম হয় ১০ টাকা। শুধু তাই নয়, ফুলটি আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানির উপযোগী হয়। আর এ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য ফুলপ্রতি খরচ হয় মাত্র ৫০ পয়সা।
আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের ফুলের চাহিদা বেশি। উন্নতমানের গোলাপ উত্পাদনের জন্য সে দেশের ফুলচাষিরা নিয়মিত রোজক্যাপ ব্যবহার করেন। রোজক্যাপ হল স্থিতিস্থাপকতা গুণসম্পন্ন প্লাস্টিকের এক ধরনের ক্যাপ। গোলাপের কুঁড়ি বের হওয়ার পর ক্যাপটি ওই কুঁড়িতে পরিয়ে দিতে হয়। এতে গোলাপ কুঁড়িটি সুরক্ষিত থাকে এবং পোকা-মাকড়ের উপদ্রব ও প্রাকৃতিক সব ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। এ ক্যাপটি স্থিতিস্থাপক হওয়ায় কুঁড়িটি বড় হওয়ার সাথে সাথে ক্যাপটিও বাড়তে থাকে। এ কারণেই ক্যাপের ভেতর কুঁড়িটি একটি উন্নতমানের পূর্ণাঙ্গ গোলাপ হিসেবে প্রস্ফুটিত হয়। গোলাপের বাহিরে ক্যাপটি থাকায় ফুল সংগ্রহ, পরিবহন এবং বাজারজাতকরণে ফুলের কোনো ক্ষতি হয় না।

রোগবালাই ব্যবস্থাপনা
জাবপোকা:
পাতা, ডগা, ডাল, কুড়িঁ, ফুল ইত্যাদির উপর দলবেধে বসে থাকে এবং রস চুষে খায়। ফলে আক্রান্ত স্থান দুর্বল হয়ে শুকিয়ে যায়। কান্ড সরু হয়ে শাখা-প্রশাখা কমে যায় এবং গাছ নিসেত্মজ হয়ে পরে, আক্রান্ত কুঁড়ি ফোটে না ও ফুল উৎপাদন কমে যায়।

ব্যবস্থাপনা:
1. প্রাথমিকভাবে গাছে দু’একটি পাতায় আক্রমন দেখা দিলে সেসব পাতা তুলে পাতার পোকা পিষে মেরে ফেলতে হবে। আধা লিটার পানিতে ১ থেকে ২টি তামাক পাতা ৩ থেকে ৪ দিন ভিজিয়ে রেখে ছেকে সেই মিশ্রণ স্পঞ্জে নিয়ে জাব পোকা আক্রান্ত স্থানে আস্তে আস্তে মুছে দিলে জাব পোকা চলে যায়। এভাবে প্রতি ১০ দিন পর ৩ বার মুছে দিলে জাব পোকা থাকে না। টবে বা বাগানে লাগানো স্বল্প কয়েকটি গাছে অল্প আক্রমণ দেখা দিলে এ পদ্ধতিতে ভাল ফল পাওয়া যায়।

2. আক্রান্ত গাছে ১ লিটার পানিতে ৩ থেকে ৪ গ্রাম গুড়া সাবান/ডিটারজেন্ট গুলে স্প্রে করা যেতে পারে।

3. আক্রমণ বেশি হলে ম্যালাটাফ ৫৭ ইসি বা ফাইফানন ৫৭ ইসি বা ম্যালাডান ৫৭ ইসি/পারফেকথিয়ন/স্টার্টার/টাফগর ৪০ ইসি ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

থ্রিপস:
প্রথম আক্রমণ দেখা যায় ডগার নরম অংশে। পাতা বের হওয়ার আগে পাতা কুঁকড়ে যায়। কচি পাতা ও ফুলে আক্রমণ বেশি হয়। পাতার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়, কুঁচকে যায়, বাদামী ও কালো তিল তিল দাগ পড়ে, কুঁড়ি ভালভাবে ফোটে না। পাতা ও গাছের বৃদ্ধি কমে যায়।

ব্যবস্থাপনা:
1. সব রকমের আবর্জনা ও গোবর সার বাগান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।

2. সাবান পানি এমনকি শুধু পানি নিয়মিতভাবে বৃষ্টির মত স্প্রে করেও থ্রিপস কমানো যায়।

3. গোলাপ বাগানে আঠাযুক্ত সাদা ফাঁদ পেতেও থ্রিপস কমানো যায়।

4. মেটাসিস্টক্স আর ২৫ ইসি বা মিপসিন ৭৫ ডবিস্নউপি বা সুমিথিয়ন ৫০ ইসি ১ মিলি/লিটার অথবা পারফেকথিয়ন/স্টার্টার ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

জ্যাসিড:
কীড়া অবস্থা থেকেই এরা পাতার রস চুষে খেতে শুরু করে। ফলে আক্রান্ত পাতা ফ্যাকাশে ও বিবর্ণ হয়ে যায়, শেষে শুকিয়ে ঝড়ে পড়ে।

ব্যবস্থাপনা:
1. স্টার্টার/পারফেকথিয়ন ২ মিলি/লিটার অথবা মর্টার ৪৮ ইসি ১ মিলি/লিটার বা পাইরিফস ২০ ইসি ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

কুঁড়ি ছিদ্রকারী পোকা:
এ পোকা কুঁড়ি খেয়ে নষ্ট করে। পোকার বাচ্চা বা কীড়া কুঁড়ির ভেতরের অংশ খাওয়ার পর বাইরে বেরিয়ে আসে। যে কুঁড়িতে আক্রমণ করে তার বাজার মূল্য কমে যায়।

ব্যবস্থাপনা:
1. প্রথম দিকে নিমজাত নির্যাস ব্যবহার করতে হবে।

2. জমির চারপাশে পাখি বসার ব্যবস্থা করতে হবে। নিমতেল ১ মিলিলিটার/লিটার পানি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

3. আক্রমণ বেশি হলে প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম ফিলটাপ/কাপ/কারটাপ অথবা ১ মিলি মর্টার/ ২মিলি পাইরিফস ও ১ মিলি বুস্টার/রেলোথ্রিন/রিপকর্ড একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

মাকড়:
পাতা থেকে রস চুষে খেতে থাকে ফলে পাতার উপরে পিঠে পিন ফুটানো দাগের মত দাগ দেখা যায়। পাতর রং হলদে বা বাদামী রঙের ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং শেষে ঝরে পড়ে।

ব্যবস্থাপনা:
1. প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতার কান্ড ছিড়ে ধবংস করতে হবে।

2. টবে বা বাগানে নিম খৈল প্রয়োগ করতে হবে।

3. শুধু পরিষ্কার পানি স্প্রে করে মাকড় দমন করা যায়।

4. নিম্বিসিডিন বা নিমতেল ১ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

5. ৮০% সালফার বা থিওভিট/এগ্রিসাল/কুমুলাস ২ থেকে ৩ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিযে স্প্রে করতে হবে। তবে এবাটিন ১.৮ ইসি ১ মিলি/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করলে বেশি সুফল পাওয়া যায়।

গোলাপের ডগা শুকানো রোগ:
ছত্রাকের কারণে রোগ হয়। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। রোগের লক্ষণ প্রধানত কোন ছাঁটাই করা ডালের কাটা অংশের আগায় দেখা যায়। কাটা প্রান্ত থেকে নীচে সামান্য কিছুটা অংশ শুকিয়ে কাল কাল হয়ে যায়। শুকানোর দাগ ডালটির একপাশে অথবা ডালটির চারপাশে ঘিরে বৃত্তাকারে দেখা যেতে পারে। অনুকুল পরিবেশে আক্রান্ত ডালটি পুরোপুরি শুকিয়ে কাল হয়ে যায় এবং পাতা ঝরে যায়। ডালের আগা থেকে শুকাতে শুকাতে নীচের দিকে নামতে থাকে। শেষে রোগের আক্রমণে শিকড়গুলোও শুকিয়ে যায় এবং গাছটি মারা যায়।

ব্যবস্থাপনা:
1. আক্রান্ত ডাল অন্ততপক্ষে আক্রান্ত অংশ থেকে প্রায় তিন ইঞ্চি নীচে ধারালো ছুরি বা ছুরিজাতীয় জিনিস দিয়ে কেটে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ডাল কাটা যন্ত্রটি স্পিরিটে ডুবিয়ে শোধন করে নিতে হবে। গোলাপ ডাল ছাঁটাইয়ের পর কপার অক্সিক্লোরাইড পেস্ট আকারে মাথায় লাগাতে হবে। ছত্রাকনাশকের পেস্ট বিশেষ করে কপার অক্সিক্লোরাইড পেস্ট আকারে লাগিয়ে দিতে হবে।

2. গোলাপ গাছে নিয়মিতভাবে সুষমমাত্রায় সার এবং সেচ প্রয়োগ করতে হবে।

3. কপার অক্সিক্লোরাইড ৪ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। গাছে ফুল থাকলে কুপ্রাভিট/কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করা যাবে না। এক্ষেত্রে ম্যানকোজেব/এন্টিব্লাইট ২.৫ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

গোলাপের পাতার কাল দাগ রোগ:
এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ এবং রোগ সংক্রমণকারী ছত্রাক ইথিলিন গ্যাস ত্যাগ করে এবং ঐ গ্যাসের প্রভাবে গাছের পাতা মরে যায় । গোলাপ গাছে এই রোগের আক্রমণ ব্যাপকভাবে দেখা দেয়। রোগের ফলে পাতার দু’পিঠে গাঢ় কাল রঙের দাড় পড়ে। কাপড়ের পাড় কোঁচকালে যেমন দেখায়, দাগের কিনারা দেখতে ঠিক সেই রকম। কোন কোন জাতের গোলাপ গাছে, রোগ সংক্রমণ শুরু হওয়ার ঠিক পর থেকে ব্যাপকভাবে পাতা ঝরতে দেখা যায়। আবার কোন কোন জাতের গোলাপ গাছ তীব্রভাবে রোগাক্রান্ত হলেও পাতা ঝরে যায় না। তীব্রভাবে আক্রান্ত পাতাগুলো (অসংখ্য দাগযুক্ত) গাছে লেগে থাকে।

ব্যবস্থাপনা:
1. কাটিং ও চারা শোধন করে টবে বা বাগানে রোপণ করতে হবে। সুস্থ সবল গাছ থেকে কাটিং সংগ্রহ করতে হবে।

2. রোগাক্রান্ত ঝরা পাতা কুড়িয়ে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

3. নিয়মিত যত্ন এবং প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম লিবরেল দসত্মা ও ২ গ্রাম লিবরেল বোরন একত্রে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়।

4. এ রোগে জৈব সার প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আক্রান্ত কান্ড, ডগা ছেঁটে ফেলা এবং ছাঁটাই অংশে কপার অক্সিক্লোরাইডের পেস্ট লাগাতে হবে। কপার অক্সিক্লোরাইড ৪ গ্রাম/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৭ থেকে ১৪ দিন পর ৩ থেকে ৪ বার ভালোভাবে স্প্রে করে সম্পূর্ণ গাছ ভিজিয়ে দিতে হবে। অথবা ম্যানকোজেব/এন্টিবস্নাইট ২.৫ গ্রাম/লিটার পানিতে গুলে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার সময় ঔষধ মিশ্রিত পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে নিয়ে স্প্রে করতে হবে।

গোলাপের পাউডারী মিলডিউ রোগ: ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। মাটির উপরিভাগে অবস্থিত গাছের প্রত্যেক অংশে এই ছত্রাকের ব্যাপক সংক্রমণ ঘটে। গাছের নরম পাতাগুলো মুচড়ে যায়। আক্রান্ত পাতার কিছু অংশ উপরের দিকে উঠে যায়। আক্রান্ত অংশে পাউডারের মত গুঁড়ি গুঁড়ি বস্ত্ত দেখা যায়। আক্রমণ তীব্র হলে আক্রান্ত অংশ শুকিয়ে যায় এবং এসব স্থানে কাল দাগ পড়ে। গাছের কচি ডালের ডগাতেও গুঁড়ি গুঁড়ি বস্ত্ত দেখা যায়। আক্রান্ত ফুলের কুঁড়িগুলি ভালোভাবে ফোটে না।

ব্যবস্থাপনা:
গাছের রোগাক্রান্ত অংশগুলি কেটে সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম থিওভিট/এগ্রিসাল বা ৮০% সালফার মিশিয়ে ১০ থেকে ১২ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার প্রয়োগ করতে হবে।

ফুল কাটা:
চারা লাগানোর ৮০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে গাছে কুঁড়ি আসা শুরু হয়। কুঁড়ি অবস্থায় অর্থাৎ কুঁড়িটিতে রং দেখা যাবে কিন্তু পাঁপড়ি গুলো মেলবে না সেই অবস্থায় কাটতে হবে। ফুল কাটতে ধারালো ছুরি বা ছুরিজাতীয় জিনিস ব্যবহার করতে হবে। খুব ভোরে এবং সূর্যাসেত্মর পূর্বে ফুল কাটার জন্য উপযুক্ত সময়। ফুলের সাথে লম্বা স্টিক রাখতে পারলে বাজার দর ভাল পাওয়া যায়।

ফুল উৎপাদন:
প্রতি বৎসরে একর প্রতি ফুল উৎপাদন হয় প্রায় ৩৭০৫০০ থেকে ৪৯৪০০০ টি।

প্রক্রিয়াজাতকরণ:
৪০০ পিপিএম হাইড্রক্সি কুইনোলিন সাইট্রেট এর সাথে ৪% চিনির দ্রবণ মিশিয়ে তা কুঁড়ির উপর স্প্রে করতে হবে। কুঁড়িকে পলিথিন মোড়কে মুড়ে কার্টুনে রাখতে হবে। এভাবে কার্টুনটি ৪ থেকে ১০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় তিন দিন সংরক্ষণ বা পরিবহন করা যাবে।

প্যাকিং বা মোড়কীকরণ:
গোলাপ ফুল সংরক্ষণ করতে ৩.২৮ ফুট লম্বা ১৩ ইঞ্চি প্রশসত্ম ২.৫ ইঞ্চি উঁচু বক্স তৈরী করতে হবে। এই বক্সে ২৬ থেকে ২৮ ইঞ্চি লম্বা কান্ড বিশিষ্ট ৮০ টি গোলাপ রাখা সম্ভব। বক্সের ফাঁকে ফাঁকে পলিথিন ও পানি শোষক কাগজ রাখতে হবে। ২০টা কুঁড়ি নিয়ে একটা আঁটি রাবার ব্যান্ড দিয়ে এমনভাবে বাধঁতে হবে যেন কুড়ির কোন ক্ষতি না হয়। প্রতিটি বান্ডেলের উপরি ভাগ মোড়ক কাগজ দিয়ে বেঁধে সংযুক্ত ফিতা দিয়ে আটকাতে হবে।

সূত্র: Modern Agriculture  ফেইজবুক পেইজ

আমের ভালো ফলন পেতে রোগবালাই দমন ও অন্যান্য

ভারত উপমহাদেশে আম সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল। এ জন্য আমকে বলা হয় ফলের রাজা। রাজা হলেও বেড়ে ওঠার সময় অন্যান্য ফলের মতো তাকেও নানা সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। এসব সমস্যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণই প্রধান। সঠিক সময়ে রোগ ও পোকামাকড় দমন করতে ব্যর্থ হলে আমের ফলন অনেক কমে যায়। তবে এসব রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য সঠিক বালাইনাশক বা ছত্রাকনাশক সঠিক মাত্রায়, সঠিক সময়ে, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবহার করলে আমের ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। আমের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য পরিচর্যা শুরু করতে হবে আমবাগানে মুকুল বের হওয়ার আগেই।

আমের মহালাগা:
সঠিক সময়ে হপার পোকা দমন করা না যায় তাহলে আমের মুকুল বের হওয়ার সাথে সাথে এগুলো মুকুলকে আক্রমণ করে। এই পোকার আমের মুকুল থেকে রস চুসে খায় ফলে মুকুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে যায়। পরে শুধু গাছে আম শূন্য মুকুল দেখা যায়। একটি হপার পোকা দৈনিক তার দেহের ওজনের ২০গুন পরিমাণ রস খায় এবং দেহের প্রয়োজনের অতিরিক্ত আঠালো রস মলদ্বার দিয়ে বের করে যা মধুরস নামে পরিচিত। এ মধুরস মুকুলের ফুল ও গাছের পাতায় জমা হয়। পরে এ থেকে জন্ম নেয় এক প্রকার ছত্রাক। এর ফলে মুকুল, ফুল ও পাতার উপর কালো রংয়ের স্তর পড়ে যা সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। ছত্রাকের এ আক্রমণকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় স্থানীয়ভাবে মহালাগা বলে। চলতি মৌসুমে বৃষ্টি হওয়ার পর এই ছত্রাকের আক্রমণ সেখানে ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থা চলতে থাকলে অন্যান্য এলাকাতেও এর বিস্তার ঘটে। তবে বৃষ্টি হওয়া মাত্রই এর আক্রমণ কমবে। এই পোকার আক্রমণে আমের উৎপাদন শতকরা ১০০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যেতে পারে।

দমন পদ্ধতি:
১. হপার পোকা অন্ধকার বা বেশি ছায়াযুক্ত স্থান পছন্দ করে তাই নিয়মিতভাবে গাছের ডালপালা ছাঁটাই করতে হবে যাতে গাছের মধ্যে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে।

২. আম বাগানে মুকুল বা পুস্পমঞ্জুরী বের হওয়ার আনুমানিক ১৫-২০ দিন আগে সাইপারমেথ্রিন (রিপকর্ড বা সিমবুস বা ফেনম বা এরিভো), কার্বারিল, ইমিডাক্লোরোপিড, সাইহ্যালাথ্রিন গ্রুপের যে কোনো কীটনাশক দিয়ে ভালভাবে সমস্ত গাছে স্প্রে করে দিতে হবে।

৩. আমের মুকুল যখন ৮ থেকে ১০ সে. মি. হয় অর্থাৎ ফুল ফোটার আগে একবার এবং আম যখন মটর দানাকৃতি হয় তখন আর একবার প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে সাইপারমেথ্রিন ১০ইসি, ডেসিস ২.৫ইসি, কার্বারিল, ইমিডাক্লোরোপিড, সাইহ্যালাথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক ভালভাবে মিশিয়ে সম্পূর্ণ গাছ স্প্রে করতে হবে।

৪. আমের হপার পোকার কারণে সুটিমোল্ড বা ঝুল রোগের আক্রমণ ঘটে। রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক হপার পোকা দমনের জন্য ব্যবহার্য কীটনাশকের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

৫. আমের হপার পোকার কারণে যেহেতু সুটিমোল্ড বা ঝুল রোগের আক্রমণ ঘটে তাই রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফারজাতীয় ছত্রাকনাশক হপার পোকা দমনের জন্য ব্যবহার করা কীটনাশকের সাথে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ম্যাঙ্গো উইভিল
আমের ভেতর ম্যাঙ্গো উইভিল নামের এ পোকা আমের ক্ষতি করে থাকে। আশ্চর্যের বিষয় হল আমের ত্বকে কোনো ছিদ্র থাকে না। এত বড় পোকা কীভাবে আমের ভেতর ঢুকে এবং বেঁচে থাকে তা সত্যিই অবাক করার মত। আমের যখন মুকুল আসে, তখন এ পোকা মুকুলে ডিম পাড়ে। মুকুল থেকে কচি আম হওয়ার সময় ফুলের ভেতরই ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে কচি আমের ভেতর আস্তে আস্তে ঢাকা পড়ে। আমের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর ভেতরের পোকাও বড় হতে থাকে। পোকাগুলো দিন দিন বেড়ে ওঠে আম খেয়ে। সাধারণত মুকুল ধরার সময় তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা একটু বেশি এবং উচ্চ আর্দ্রতা থাকলে এ পোকা আক্রমণ করার আশঙ্কা বেশি থাকে। এক বছর আক্রমণ করলে প্রতিবছরই এ পোকা আক্রমণ করে।

দমন
১। আমের ভেতর পোকা ঢুকে গেলে দমনের কোনো ব্যবস্থা নেই।

২। এটি দমনের জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১৫ মিলিলিটার ম্যালাথিয়ন বা সুমিথিয়ন মিশিয়ে মুকুল ধরার সময় মুকুলে স্প্রে করতে হবে। অথবা ৩০ মিলিলিটার ডায়াজিনন বা ১৫ মিলিলিটার ডাইমেক্রন প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে মুকুলে স্প্রে করতে হবে।

৩। এছাড়া আমগাছের নিচে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ডিমের গাদা নষ্ট করতে হবে। আক্রান্ত আমগাছের নিচে পড়ে থাকা পাতা ও মুকুল পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

৪। মুকুল ধরার সময় এলাকার সব আক্রান্ত গাছে একসঙ্গে কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। অন্যথায় যে গাছে স্প্রে করা হবে না, সেই গাছে অন্য গাছ থেকে পোকা আক্রমণ করবে।

৫। এ ছাড়া আমের ফলন বাড়াতে হলে বছরে অন্তত দু’বার সুষম মাত্রায় সার দিতে হবে।

৬। সেচ দিতে হবে প্রতি মাসে একবার।

ফলের মাছি পোকা :
মাছি পোকা দ্বারা পরিপক্ব ও পাকা আম আক্রান্ত হয়। ফজলি, ল্যাংড়া, খিরসাপাতসহ বিভিন্ন জাতের পরিপক্ব ও পাকা আম গাছে থাকা অবস্থায় এ পোকা আক্রমণ করে।

ক্ষতির ধরন
স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ার অঙ্গের সাহায্যে গাছে থাকা অবস্থায় পরিপক্ব ও পাকা আমের গা চিরে ডিম পাড়ে অর্থাৎ খোসার নিচে ডিম পাড়ে। আক্রান্ত স্থান থেকে অনেক সময় রস বের হয়। বাইরে থেকে দেখে কোনটি আক্রান্ত আম তা ঝুঝা যায় না। আক্রান্ত পাকা আম কাটলে ভেতের সাদা রঙের কীড়া দেখা যায়। বেশি আক্রান্ত আম অনেক সময় পচে যায়। সাধারণত এ পোকা আমের ওপর এবং নিচ উভয় অংশে আক্রমণ করে

প্রতিকার
ক) আম গাছে পাকার আগেই পরিপক্ব অবস্থায় পেড়ে আনা
খ) আক্রান্ত আম সংগ্রহ করে মাটির নিচে গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে
গ) প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমের রসের সাথে ৫ গ্রাম সেভিন মিশিয়ে বিষটোপ বানিয়ে এ বিষটোপ বাগানে রেখে মাছিপোকা দমন করা যেতে পারে।
ঘ) আম পরিপক্ব ও পাকার মৌসুমে আমবাগানে ব্লিচিং পাউডার প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম হারে স্প্রে করতে হবে
ঙ) আম পরিপক্ব ও পাকার মৌসুমে প্রতিটি আম কাগজ (ব্রাউন পেপার) দ্বারা মুড়িয়ে দিলে আমকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাবে।
চ) মিথাইল ইউজেনল ফেরোমন ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে প্রচুর পুরুষ পোকা মারা যাবে এবং বাগানে মাছি পোকার আক্রমণ কমে যাবে।

পরগাছা উদ্ভিদ :
আমাদের দেশে আমগাছে দু-তিন প্রকার পরগাছা উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা যায়। স্খানীয়ভাবে পরগাছা উদ্ভিদ ধ্যারা নামে পরিচিত। ছোট গাছের চেয়ে বড় বা বয়স্ক আমগাছে পরগাছার আক্রমণ বেশি হয়। পরগাছা উদ্ভিদের বীজ আমগাছের ডালে অঙ্কুরিত হয়ে বাড়তে থাকে। পরগাছা ডাল থেকে প্রয়োজনীয় পানি, খাদ্যরস, খনিজ পদার্থ ইত্যাদি শোষণ করে বেঁচে থাকে। পরগাছার শিকড় থাকে না, তারা শিকড়ের মতো এক প্রকার হস্টোরিয়া তৈরি করে। হস্টোরিয়া গাছের ডালে প্রবেশ করে ডাল থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। আক্রান্ত ডালের প্রায় সব খাবার পরগাছা খেয়ে ফেলে। ফলে আক্রান্ত ডাল দুর্বল হয়ে পড়ে। আক্রমণ বেশি হলে আম ডালের অস্তিত্ব থাকে না বরং পরগাছা প্রভাব বিস্তার করে বাড়তে থাকে। লরানথাসজাতীয় পরগাছার পাতা দেখতে কিছুটা আমপাতার মতোই। তাই ভালোভাবে লক্ষ না করলে দূর থেকে পরগাছার উপস্খিতি বোঝা যায় না। তবে পরগাছায় ফুল ও ফল ধরলে দূর থেকে পরগাছার উপস্খিতি বোঝা যায়। এ সময় পরগাছা ফুল ফুটন্ত অবস্খায় থাকে। ফলে সহজেই শনাক্ত করা যায়। পরগাছা আকর্ষণীয় ফুল ও ফল উৎপন্ন করে। বীজসহ ফল পাখিরা খায়, কিন্তু বীজ হজম না হওয়ায় তা মলের সাথে বের হয়ে আসে। এ বীজ আমের ডালে পতিত হয়ে অঙ্কুরিত হয় ও বাড়তে থাকে। বর্ষাকালে পরগাছার বীজ বিস্তার লাভ করে।

প্রতিকারের উপায় :
আক্রান্ত ডাল পরগাছার গোড়াসহ কেটে ফেলতে হবে। কাটা স্খানে রোগের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য বোর্দো পেস্টের প্রলেপ দিতে হবে। পরগাছায় ফুল-ফল আসার আগেই পরগাছা ছাঁটাই করা উচিত।

আমের রোগ
যাদের বাড়িতে আমগাছ আছে কিংবা যিনি প্রথমবারের মত আমের চাষ করছেন তারা প্রথমদিকে বেশ কিছু বিষয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন, যেমন- আম মুকুল হয়ে প্রতিবছরই সব মুকুল ঝরে পড়ে, পাতায় অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক দাগ দেখা যায়, আমের অঙ্গ বিকৃতি কিংবা আম সংগ্রহ করার পর বোঁটায় পচন ধরাসহ ইত্যাদি। এসব বিড়ম্বনা থেকে আগেভাগেই আম এবং আমগাছ বাঁচাতে হলে আমের গুরুত্বপূর্ণ কিছু রোগ সম্পর্কে ধারণা থাকা খুবই প্রয়োজন।

আমের আনথ্রাকনোজ:
লক্ষণ:
১. পাতায়, কাণ্ডে, মুকুলে ও ফলে এই রোগ দেখা যায়;

২. পাতায় অনিয়মিত দাগ দেখা যায় যেগুলো পরে বাদামী থেকে কালো হয়ে বড় বড় দাগের সৃষ্টি করে এবং পাতা ঝরে যায়;

৩. মুকুল কালো হয়ে যায় এবং গুটিগুলো পড়ে যায়;

৪. পাকা আমে স্পষ্ট দাগ দেখা যায় যা পরবর্তীতে বড় হয়ে আমে পচন ধরায়।

দমন:
১. মুকুল আসার আগে টিল্ট ২৫০ ইসি- ০.৫ মিলিলিটার/ লিটার বা ডায়থান এম ৪৫ -২ গ্রাম/লিটার সেপ্র করতে হবে;

২. বোরডোয়াক্স মিশ্রণের ১% দ্রবণ ১০-১২ দিন পর পর ৩-৪ বার সেপ্র করতে হবে।

বোঁটা পচা রোগ:
লক্ষণ:
১. সবচেয়ে মারাত্মক রোগ, প্রথমে বোঁটার দিকে পচন ধরে পরে পুরো ফলটি পচে গিয়ে কালো বর্ণ ধারণ করে;

২. প্রথমে গাছে থাকা অবস্থায় জীবাণুটি মুক্ত অবস্থায় থাকে পরে আম সংগ্রহের পরে উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় রাখা হলে আক্রান্ত আমের পাল্পগুলো বাদামী হয়ে যায় যা আর খাওয়ার উপযোগী থাকে না।

দমন:
১. প্রায় ২-৩ সে.মি. বোঁটা রেখে আম সংগ্রহ করতে হবে;
২. ডায়থান এম ৪৫ অথবা বেভিসটিন (০.২%) সেপ্র করতে হবে।

আম গাছের গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক রোগ
বর্তমানে আম গাছের যে সমস্ত রোগ দেখা যায় তাদের মধ্যে আমের আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক অন্যতম । বর্তমানে সব জেলাতেই এ রোগটির আক্রমন পরিলক্ষিত হচ্ছে । বিজ্ঞানী এবং আম চাষীদের মতে, আম গাছের গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক সবচেয়ে মারাত্মক । কারণ এ রোগটি ছোট বড় সব বয়সী গাছেই আক্রমন করে এবং আক্রান্ত গাছ খুব অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায় । গবেষনায় দেখা গেছে যে গামোসিস বা আঠা ঝরা এবং হঠাৎ মড়ক রোগে আক্রান্ত বড় একটি গাছ (৫০ বছরের উর্ধে বয়স) ৩-৬ মাসের মধ্যেই মারা যায়।

রোগের লক্ষণ
১. প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত গাছের কান্ড বা ধড় বা শাখাপ্রশাখার কিছু কিছু জায়গা থেকে ক্ষুদ্র বিন্দুর মত হালকা বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি বা কালো রঙের আঠা বা রস বের হতে থাকে ।

২. আক্রমন বাড়ার সাথে সাথে কান্ড এবং শাখা-প্রশাখার অনেক স্থানথেকে আঠা বা রস বের হতে থাকে । আক্রান্ত ডগাটির কোষ বিবর্ণ হয়ে উঠে। আক্রান্ত গাছের ডগা এবং শাখাপ্রশাখা লম্বালম্বিভাবে কাটলে বাদামী লম্বা দাগের নজরে পড়ে । বেশী আক্রান- ডগা বা ডালটি অল্প দিনের মধ্যেই মারা যায়। এ অবস্থায় মরা ডালে পাতাগুলো ডগায় আঁটকে থাকে ।

৩. কোন কোন ক্ষেত্রে পাতাগুলো কিছুদিন পর ঝরে পড়ে । কিছুদিন পর দেখা যায় আরেকটি ডাল একই ভাবে মারা যাচ্ছে। এভাবে এক পর্যায়ে সম্পূর্ণ গাছ মারা যেতে পারে।

৪. এ রোগটির উল্লেখযোগ্য একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে যে সব গুলো ডাল একসাথে মারা যাবে না । একটা একটা করে পর্যাযক্রমিক ভাবে আক্রান্ত হবে এবং মারা যাবে । সবশেষে সম্পূর্ণ গাছটিই মারা যাবে

প্রতিকার:
১. আঠা বা রস বের হওয়ার স্থানের ছাল/বাকল কিছু সুস্থ অংশসহ তুলে ফেলে দিয়ে উক্ত স্থানে বোর্দো পেষ্টের ( ১০০ গ্রাম তুঁতে ও ১০০ গ্রাম চুন ১ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরী করা যায়) প্রলেপ দিতে হবে।

২. গাছে আক্রান্ত বা মরা ডাল পালা থাকলে তা কিছু সুস্থ অংশসহ কোটে ফেলতে হবে । কাটা ডাল পালা গাছের নীচে জমা না রেখে যত শীগ্র সম্ভব পুড়ে ফেলতে হবে। কাটা অংশে বোর্দো পেষ্টের প্রলেপ দিতে হবে।

৩. যে সকল গাছে পেষ্টের প্রলেপ দেওয়া সম্ভব না সেক্ষেত্রে বোর্দো মিকসার অথবা কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন- কুপ্রাভিট প্রতি লিটার পানিতে ৭ গ্রাম হারে মিশিয়ে সেপ্র্র করতে হবে

৪. গাছে নতুন পাতা বের হলে মেনকোজেব গ্রূপের ছত্রাকনাশক যেমন-ডায়থেন এম ৪৫/ পেনকোজেব/ইন্ডোফিল/কাফা ইত্যাদি প্রতি লিটার পানিতে ২-৩ গ্রাম হারে অথবা কার্বেন্ডাজিম গ্রূপের ছত্রাকনাশক যেমন- ব্যভিষ্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে ৭-১০ দিনের ব্যবধানে ৩/৪ বার সেপ্র্র করতে হবে।

৫. আক্রান্ত গাছে পর্যাপ্ত পরিমান গোবর /আবর্জনা পঁচা/ কম্পোসট এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে এবং নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে ।

পাউডারি মিলডিউ:
লক্ষণ:
১. আক্রান্ত আম গাছের পাতায় সাদা পাউডারের মত গুঁড়ো দেখা যায়, পরে আক্রান্ত স্থানের টিস্যুগুলো মারা যায় এবং কালো বর্ণ ধারণ করে,

২. আক্রান্ত আমের মুকুল বা গুটি ঝরে পড়ে।

দমন:
১. থিওভিট বা সালফার জাতীয় যেকোনো ছত্রাকনাশক (০.২%) ব্যবহার করতে হবে।

স্যুটি মোল্ড:
লক্ষণ:
১. পাতা, ফল, মুকুল আক্রান্ত হলে কালো কালো দাগ পড়ে যায়।

দমন:
১. স্যুটি মোল্ড দমনে সালফার (৪ গ্রাম/লিটার) ব্যবহার করা যেতে পারে।

আমের অঙ্গ বিকৃতি বা ম্যালফরমেশন:
লক্ষণ:
১. এটা সাধারণত মুকুলে হয় তবে ডালের আগায়ও হতে পারে;

২. আক্রান্ত মুকুল কালো হয়ে যায় এবং মুকুলগুলো একীভূত হয়ে জটলার সৃষ্টি করে।

দমন:
১. আম ধরার ৮০ থেকে ৯০ দিন আগে ন্যাপথেলিক এসিটিক এসিড সেপ্র করতে হবে;

২. আক্রান্ত স্থানে কার্বোন্ডাজিম (১ গ্রাম/ লিটার পানি) সেপ্র করতে হবে।

দাদ (Scab)
লক্ষণ
আম মটর দানার মত হলেই এ রোগের আক্রমণ শুরু হতে পারে। আক্রান্ত আমের শরীর বাদামী রং ধারণ করে, খোসা ফেটে যায় ও খসখসে হয়ে উঠে। আক্রান্ত আমের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং কয়েক দিনের মধ্যে তা ঝড়ে পড়ে। রোগের আক্রমণে বাড়ন্ত আমের শরীরে বাদামী দাগের দৃষ্টি হয়। অনুকূল আবহাওয়ায় দাগগুলো বাড়তে থাকে এবং সম্পূর্ণ আমের শরীর ঢেকে ফেলে। আক্রান্ত স্থানে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। আমের শরীর খসখসে অমসৃণ হওয়ার কারণে আমের বাজার দর কমে যায়।

প্রতিকার
রোগের আক্রমণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে রোভরাল (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম) অথবা ব্যাভিস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে ৭-১০ দিন পর পর ৩/৪ বার স্প্রে করে গাছ রোগমুক্ত রাখা যায়।

ঝুল রোগ (Sooty mould)
লক্ষণ
ঝুল রোগের আক্রমণে পাতার উপর কালো আবরণ পড়ে। এই কালো আবরণ হচ্ছে ছত্রাকের দেহ (Mycellium) ও বীজ কণার সমষ্টি। আমের শরীরেও কালো আবরণ দেখা দেয়।

বিস্তার :
রোগের বীজকণা বা কনিডিয়া বাতানের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে থাকে। হপার বা শোষক পোকা আমের মুকুলের মারাত্নক শত্রু । এ পোকা মুকুল থেকে অতিরিক্ত রস শোষণ করে এবং মধু জাতীয় এক প্রকার আঠাল পদার্থ (যা হানিডিউ নামে পরিচিত) নিঃসরণ করে। উক্ত হানিডিউ মুকুল ও পাতার উপর পতিত হয় তার উপর ছত্রাকের বীজকণা জন্মায় এবং কালো আবরণের সৃষ্টি করে। হপার ছাড়াও ছাতরা পোকা (মিলিবাগ)ও স্কেল পোকা হানিডিউ নিঃসরণ করে এবং ঝুল রোগের আক্রমণে সহায়তা করে। হানিডিউ ছাড়া এ রোগ জন্মাতে পারে না।

প্রতিকার
১। হানিডিউ নিঃনরণকারী হপার, মিলিবাগ বা স্কেল পোকা কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে দমনে রাখতে পারলে ঝুল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

২। আক্রান্ত গাছে সালফার গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।

আমগাছের ‘অন-ইয়ার’ ও ‘অফ-ইয়ার’সমস্যা ও প্রতিকার
আমগাছের বহু সমস্যার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো প্রতি বছর ফুল ও ফল না আসা। দেখা গেছে, একেবারেই ফুল হয় না বা হলেও কোনো কোনো বছর খুব কম হয়। যখন অনেক গাছে এক বছর খুব ফুল হয় আর পরের বছর একেবারেই হয় না বা খুব সামান্য হয় এবং তৃতীয় বছর আবার খুব বেশি ফুল আর চতুর্থ বছর কিছুই না বা কম অর্থাৎ এরা একটু ছন্দের মতো চলে। এই রকম হলে বলা হয় ‘অলটারনেট বা বায়িনিয়াল বেয়ারিং’। আবার যেসব গাছে হয়তো এক বছর খুব বেশি ফুল হলো, তারপর দু-তিন বছর হলো না বা কম হলো, কিংবা পরপর দু’তিন বছর বেশ ফুল হলো তারপর এক বছর বা কয়েক বছর বন্ধ থাকে অর্থাৎ এরা একটু এলোপাতাড়ি ধরনের। এদের বলা হয় ‘ইরেগুলার বেয়ারার’। এই দুটি সমস্যা অনেক আমগাছে দেখা যায়। যে বছর খুব বেশি ফুল হয়, সেই বছরটিকে উদ্যান বিজ্ঞানে বলা হয় ‘অন ইয়ার’, আর বিনা ফলন বা কম ফলনের বছরকে বলা হয় ‘অফ-ইয়ার’।

সম্ভাব্য কারণ
ক. জাতের বৈশিষ্ট্য
আমের যে জাতগুলো কেবল শাখার অগ্রভাগে ফুল ধারণ করে জাতগুলোর পর্যায় ক্রমিক অর্থাৎ এক বছর অন্তর ফল উৎপাদন হয়। এই সমস্যা সব জাতের আমের মধ্যে দেখা যায় না কিন্তু কিছু ভালো আমের জাতের মধ্যে যেমন ল্যাংড়া, খিরসাপাত, গোপালভোগ ইত্যাদিতে সমস্যাটি ভালোভাবে দেখা যায়। আর কিছু কিছু আমের জাত আছে যাদের ‘অফ ইয়ারে’ ফুল ও ফল হয়, তবে অপেক্ষাকৃত কম যেমন-ফজলি। আবার যে জাতগুলো শাখার অগ্রভাবে প্রথম বছর ও পরের বছর শাখার কক্ষে পুষ্পমুকুল উৎপন্ন করতে পারে সে জাতগুলো নিয়মিতভাবে কম/বেশি ফল উৎপাদন করতে পারে, যেমন- বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদি।

খ. গাছের বয়স
যেসব জাতের মধ্যে সমস্যাটি দেখা যায় যেমন- ল্যাংড়া। কিন্তু যখন ওই ল্যাংড়া গাছের বয়স কম তখন সমস্যাটি থাকে না অর্থাৎ প্রথম দিকে প্রতি বারেই ফুল হয় কিন্তু সাধারণত ১৫-২০ বছর বয়সের পর তারা এই গুণটি হারিয়ে ফেলে।

গ. গাছের ডালের বয়স
মুকুল ধরার জন্য ডালের বয়স কমপক্ষে ৪-৫ মাস হওয়া দরকার।তবে যেসব ডালের বয়স ৮-১০ মাসের হয় সেসব ডালে বেশি মুকুল ধরে।

ঘ. পাতাওয়ালা মুকুল
আমের মুকুল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডালের ডগায় আসে এবং ওপর দিকে আস্তে আস্তে সুচালো হয়ে যায়, যা দেখতে পিরামিডের মতো। উপ-শাখাগুলো ফুলে ভরা থাকে, তাতে পাতা থাকে না। কিন্তু কিছু কিছু জাতের গাছ আছে,যাদের মুকুলে শুধু ফুলই থাকে না, সেই সঙ্গে পাতাও থাকে। বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদিতে বেশি পাতাওয়ালা মুকুল দেখা যায়। ফজলি গাছেও কিছুসংখ্যক পাতাওয়ালা মুকুল হয়, তাই এই জাতগুলো প্রায় প্রতি বছর মোটামুটি ফল আসে। অন্যান্য জাতেও মাঝে মধ্যে কিছু কিছু পাতাওয়ালা মুকুল দেখা যায়। পাতাওয়ালা প্যানিকলকে মিঙড প্যানিকল বলে।

ঙ. ডালে শর্করা ও নাইট্রোজেনের অনুপাত
আমের একটি ডালে মুকুল আসতে হলে, ফুল আসার আগে ডালটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা ও নাইট্রোজেন দুই-ই থাকতে হবে আর শুধু তাই নয়, শর্করার ভাগ নাইট্রোজেনের ভাগের চেয়ে যথেষ্ট বেশি থাকতে হবে তবেই মুকুল আসবে। আর যদি দুটির ভাগ সমান হয় বা বিশেষ করে ডালটির নাইট্রোজেনের মাত্রা শর্করার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে ঐ ডালটির ডগায়, বসন্তকালে মুকুল আসার বদলে পাতা এসে যাবে।

চ. উদ্ভিদ হরমোনের বৈষম্য
আম গাছের এই সমস্যাটির জন্য উদ্ভিদ হরমোন ‘অক্সিন’, ‘জিবেরেলিন’ ও বিশেষ করে ‘গ্রোথ ইনহিবিটর’ জাতীয় হরমোনগুলো দায়ী বলে মনে করা হয়।

প্রতিকার
বাণিজ্যিক জাত যেমন- গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, আশ্বিনা ইত্যাদির অলটারনেট বেয়ারিং হ্যাবিট আছে এবং বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদি রেগুলার বেয়ারর জাত। তাই বাগানে শুধু ‘অলটারনেট বেয়ারার’ জাতের গাছ না লাগিয়ে, অন্তত কিছুসংখ্যক ‘রেগুলার বেয়ারার’ জাতও লাগানো উচিত। এতে প্রতি বছরই বাগান থেকে কিছু না কিছু ফলন পাওয়া যাবে।

১। বাগানের গাছগুলোকে অধিক উৎপাদনক্ষম করার জন্য অবশ্যই আম বাগান বছরে ৩ বার বর্ষার আগে, বর্ষার পরে ও শীতকালে লাঙল, পাওয়ার টিলার অথবা কোদাল দ্বারা কুপিয়ে ভালোভাবে গভীর চাষাবাদ করতে হবে। ফলে বাগানের আগাছা মারা যাবে এবং মাটির সাথে মিশে জৈবসারে পরিণত হবে। মাটির ভেতরকার পোকামাকড়ও মরে জৈব পদার্থ হিসেবে মাটিতে যোগ হবে। তাছাড়া মাটির আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং পুষ্টি উপাদানগুলো গাছের গ্রহণের উপযোগী হবে।

২। গাছের বৃদ্ধি ও বেশি ফলনের জন্য সঠিক সময়ে, সঠিক পরিমাণে ও সঠিক পদ্ধতিতে সার ও সেচ দেয়া আবশ্যক।

গাছের বয়স অনুযায়ী সারের পরিমাণ
সারের নাম গাছের বয়স (বছর)
২-৫ ৬-৯ ১০-২০ ২০ এর ঊর্ধ্বে
জৈবসার (কেজি) ২০-৩০ ৩০-৪০ ৪০-৫০ ৪০-৫০
ইউরিয়া (গ্রাম) ২৫০ ৫০০ ১০০০ ২০০০
টিএসপি (গ্রাম) ২০০ ২৫০ ৫০০ ১০০০
এমপি (গ্রাম) ১২৫ ২৫০ ৫০০ ১০০০
জিপসাম (গ্রাম) ১০০ ২৫০ ৫০০ ৫০০
জিঙ্কসালফেট (গ্রাম) ২৫ ২৫ ২৫ ২৫

৩। বছরে দু’বার সার প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষার শুরুতে একবার এবং বর্ষার শেষে আর একবার। একবারেও সব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে ভাগ করে প্রয়োগ করলে বেশিলাভবান হওয়া যায়। মাটিতে প্রয়োজনীয় পানি/রসের অভাব হলে সার প্রয়োগের পর সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিডার রুটগুলো গাছের গোড়া থেকে দূরে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে গাছের বয়স অনুযায়ী এ দূরত্ব (মাঝামাঝি থেকে বড় গাছ) ১.৫-৩.০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে ছোট চারা গাছের ক্ষেত্রে ১৫-৩০ সেমি. হতে পারে। কাজেই যেখানে ফিডার রুটগুলো থাকে সেখানেই সার দিতে হবে। দুভাবে সার দেয়া যায়। নালা পদ্ধতিতে গাছের গোড়া থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ২-৩.০ মিটার দূরে ৩০ সেমি. প্রশস্ত ও ১৫-২০ সেমি. গভীর করে চক্রাকারে নালা তৈরি করে তাতে সার দিতে হবে। পরে মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হবে। অথবা দুপুর বেলা যে জায়গায় গাছের ছায়া পড়ে সেই জায়গায় সার ছিটিয়ে কোদাল দ্বারা কুপিয়ে ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। কোদাল দ্বারা কুপানোর সময় সোজা না কুপিয়ে পার্শ্বভাবে কোপাতে হবে যাতে করে গাছের শিকড় না কাটে।

৪। বাগানে নিয়মিতভাবে সেচ দিতে হবে। জমিতে কখনই যেন রসের টান না পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ফলন্ত আম গাছে দুইবার বেসিন পদ্ধতিতে সেচ দেয়া প্রয়োজন। প্রথমবার প্যানিকল যখন ৬-৮ ইঞ্চি (১৫-২০ সেমি.) লম্বা হয় এবং দ্বিতীয়বার যখন ফল মটর দানার মতো হয়। এতে ফল এর আকার, মান ও ফলন ভালো হয়। প্রচন্ড খরা দেখা দিলে এবং ফল ঝরার পরিমাণ বেশি হলে তখনও সেচ দিতে হবে। গাছে ফুল আসার কমপক্ষে ২-৩ মাস আগে সেচ দেয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ এ সময় বাড ডিফারেনশিয়েশন হয়। ফলে গাছ অল্প পানির অভাব পছন্দ করে। কিন্তু যদি সেচ দেয়া হয় অথবা বৃষ্টি হয়ে যায় তাহলে গাছের ফুলের পরিবর্তে নতুন পাতা গজাবে বেশি করে কারণ বিটপে বিদ্যমান কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে গেলে নতুন পাতা গজাবে।

৫। সাধারণত আম গাছের ডাল ছাঁটাই প্রয়োজন হয় না। কারণ আমের মুকুল আসে ৪-৫ মাস বয়সের বিটপ এর মাথায়। তবে ছোট এবং বয়স্ক গাছের মৃত, শুকনা রোগাক্রান্ত শাখা ও কেবলমাত্র বয়স্ক গাছের পরজীবী উদ্ভিদ দ্বারা আক্রান্ত শাখা আম পাড়ার পর পরই ছাঁটাই করা দরকার। তাছাড়া গাছের ভেতরের অনেক সুস্থ ডাল থাকে যেগুলোতে ফুল ধরে না সেগুলো ছাঁটাই করা দরকার। ছাঁটাই এমনভাবে করতে হবে যেন গাছের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে। কাটা ডালের মাথায় বোর্দোপেস্টের প্রলেপ দিতে হবে যাতে করে রোগের আক্রমণ হতে না পারে। পেস্ট তৈরি জন্য তুঁত ২৫০ গ্রাম ও চুন ২৫০ গ্রাম নিয়ে এমনভাবে এক লিটার পানিতে মিশাতে হবে যাতে করে পেস্ট তৈরি হয়। এ পেস্ট তৈরির ১২ ঘণ্টার মধ্যে ব্রাশের মাধ্যমে ডালের কাটা অংশে প্রয়োগ করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে,ডাল ছাঁটাই এর আগে গাছ নিয়মিত এবং যথেষ্ট পরিমাণে গুণসম্পন্ন ফল দেয়। এতে প্রতি বছর ফল না আসার সমস্যা কিছুটা কমানো যায়।

৬। যে বছর গাছে প্রচুর ফুল আসে, সে বছর যদি গাছের অধের্ক ফুল ভেঙে দেয়া হয়, তাহলে গাছের সেই অংশ নতুন শাখা উৎপন্ন করবে। আগামী বছর সেই অংশে ফুল ও ফল উৎপন্ন করবে। এভাবে আম গাছ থেকে নিয়মিত ফলন পাওয়া যেতে পারে।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ