মসুর চাষ | ই-কৃষক

মসুর চাষ

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

দামে সস্তা এবং প্রচুর পরিমাণে আমিষের উপস্থিতির কারণে ডালকে গরীবের মাংস বলা হয়। বাংলাদেশে ডালের মধ্যে মসুর সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বিভিন্ন কারণে দেশে দিন দিন মসুরের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। উৎপাদন হ্রাসের অন্যতম কারণগুলো হলো-পাতা ঝলসানো রোগের আক্রমণ, সময় মতো বপন ও যতœ না নেয়া। বাংলাদেশ পরিসংখান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে ১৯৯৫ সালে যেখানে মসুরের উৎপাদন ছিল এক লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন , ২০০৯-১০ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭২ হাজার মেট্রিক টনে। ফলে দেশের চাহিদা মেটাতে ২০১১ সালে এক হাজার ২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ৫২ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন মসুর ডাল আমদানি করতে হয়েছে। উন্নত পদ্ধতিতে মসুরের চাষ করে উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের চাহিদা পূরণ পূর্বক কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব।

মসুরের জাত:
মসুরের আধুনিক জাতগুলোর কোনোটিই পাতা ঝলসানো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন নয়। তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারিমসুর-৩, বারিমসুর-৪ বারিমসুর-৫, বারিমসুর-৬ ও বারি মসুর-৭ কৃষকের মাঠে ভাল ফলন দিতে সক্ষম।

জমি নির্বাচন:
দোআঁশ মাটি মসুর চাষের জন্য উত্তম, তবে এটেল দোআঁশ মাটিতেও মসুর ভাল জন্মে। মনে রাখতে হবে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি চাষ করার জন্য যে সব জমিতে উপযুক্ত জো আসে সে সমস্ত জমি মসুর চাষের জন্য নির্বাচন করা উচিত।

জমি তৈরি:
উপযুক্ত জো অবস্থায় ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি গভীরে ২ থেকে ৩টি চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে মসুরের জন্য জমি তৈরি করতে হবে, যাতে মাটিতে অতিরিক্ত রস না থাকে।

সার প্রয়োগ:
বিঘা প্রতি ৪ কেজি ইউরিয়া, ৫ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ১৩ কেজি টিএসপি ও ৭ কেজি জিপসাম শেষ চাষের সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।

বপনের সময়:
কার্তিকের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত মসুর বপন করার উপযুক্ত সময়। তবে অনেক এলাকায় আমন ধান কাটার পর কৃষক অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মসুর বপন করে থাকেন। বিলম্বে মসুর বপনের কারণে বিভিন্ন রোগের আক্রমণে মসুরের ফলন কম হয়।

বীজের পরিমাণ:
জমিতে উপযুক্ত জো থাকলে বিঘা প্রতি ৫ কেজি বীজ ব্যবহার করাই যথেষ্ট।

বীজ শোধন:
চারার গোড়া পচা রোগের আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষার করার জন্য বীজ বপনের পূর্বে প্রতি কেজি বীজ ২.৫ গ্রাম প্রোভেক্স ২০০ দ্বারা শোধন করতে হবে।

সেচ ব্যবস্থাপনা:
মসুর চাষে তেমন সেচের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে।তবে বপনের সময় জমিতে পরিমিত রস না থাকলে জমিতে হালকা সেচ দিয়ে উপযুক্ত জো অবস্থায় এনে বীজ বপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। এ ছাড়াও আমন ধান কাটার পর এটেল দোআঁশ মাটিতে নাবিতে মসুর বপন করলে গাছ বৃদ্ধির সময় মাটিতে রসের আভাব ঘটে। সে সময় জমিতে একটি হালকা সেচ দিলে ফলন বৃদ্ধি পায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো ক্রমেই জমিতে সেচের বা বৃষ্টির পানি জমে না থাকে। এতে গাছের শিকড় পচে গাছ হলুদ হয়ে যায় এবং পরে মারা যায়।

রোগ ব্যবস্থাপনা:
মসুরের সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ হলো পাতা ঝলসানো রোগ। এরোগের আক্রমণে গাছের পাতা, ফুলও অপরিপক্ক ফল শুকিয়ে মরে যায়। এই রোগ দমনের জন্য প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে বীজ বপনের ৬০ থেকে ৬৫ দিন বয়সে অর্থাৎ ফুল আসার সময়ে প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম রোভরাল মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া মসুরের চারা অবস্থায় ক্ষুদ্র পরিসরে চারার মড়ক দেখা দিলে প্রোভেক্স -২০০ ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ও মাটিতে ভালভাবে স্প্রে করলে এই রোগের প্রকোপ কমে যায়।

পোকামাকড় দমন:
মসুরে তেমন পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়না, তবে ফুল আসার সময় জাবপোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি. হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ: মসুর গাছ পেকে শুকিয়ে ভালভাবে মাড়াই, ঝাড়াই ও পরিস্কার করে শুকিয়ে বায়ুরোধক পাত্রে বা পলিথিনের বস্তায় সংরক্ষণ করতে হবে। মাঝে মধ্যে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে যেন মসুর বীজ ব্রুকিড পোকায় আক্রান্ত না হয়।

ফলন: ভালভাবে যত্ন নিলে বিঘা প্রতি ৩৬০ থেকে ৪০০ কেজি ফলন পাওয়া যায়।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

Leave a Reply