ধান | ই-কৃষক
rice

ধান

১. ফসলঃ ধান

২. জাতঃ

দেশী জাতঃ হাসিকলমী, কালিজিরা, চিনিসাগর

উচ্চ ফলনশীল জাতঃ অধিক ফলন ও লাভের জন্য চাষ উপযোগী সঠিক জাত নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশে প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল জাতের নাম ও তার উৎপাদনকারী কোম্পানীর নাম নিম্নরুপ-

জাত কোম্পানী / গবেষণা পতিষ্ঠান বীজ বপনের সময়/মৌসুম
ব্রি ধান ৫০ (বাংলামতি) BRRI বোরো
বিআর ১ (চান্দিনা) BRRI বোরো, আউশ
বিআর ২ (মালা) BRRI বোরো, আউশ
বিআর ৩ (বিপ্লব) BRRI বোরো, আউশ, আমন
ব্রি ধান ২৮ BRRI বোরো
ব্রি ধান ২৯ BRRI বোরো
হাইব্রিড সোনার বাংলা -৬ মল্লিকা সীড কো.
হাইব্রিড রূপসী বাংলা-১, রূপালী, সচ্ছল (চিকন) গেটকো এগ্রো সীড
হাইব্রিড চমক ১ আলমগীর সীড কোম্পানী
ব্রিধান- ২৮,২৯, ৪৫, ৪৭, বি. আর ১৪ (গাজী), বি. আর ১৬ (শাহী আলম) বি. আর ২৬ (শ্রাবনী) পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র (পদক্ষেপ বীজ ধান)
ব্রি-ধান-২৮, ২৯ Rangs Agro Biotech Ltd.
আফতাব এলপি ৫০, ৭০, ১০৮, ১০৬, ০৫ (হাইব্রিড) আফতাব সীড রবি (অক্টোবর-ডিসেম্বর), খরিপ-১ (ফেব্রুয়ারী-এপ্রিল) এবং খরিপ-২ (জুলাই-আগষ্ট)
ব্রিধান – ৩২,৪১, ৪৯, ২৮, ২৯হাইব্রিড – যমুনা (QDR-3) কৃষি বানিজ্য প্রতিষ্ঠান
হাইব্রিড হীরা-৯৯-৫, ২ (HS-273), হীরা -৪,৫,৬,১০, মিতালী- ১২ সুপ্রীম সীড কো.
সাথী (HB09), আলোড়ন (HB8), জাগরন (GB4), শক্তি-২ (ব্র্যাক-৫), শক্তি-৩ (ব্র্যাক-৬) ব্র্যাক সীড
বিনাধান-৭ (মংগা এলাকার জন্য) BINA
BRRI ধান -৪৭ (লবণাক্ত সহনীয় জাত) BRRI

 

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ বাংলাদেশে প্রায় ৭০ ভাগ জমিতে ধান চাষ হয়ে থাকে। তবে ভা্লো ফলনের জন্য উর্বর, সুনিষ্কাশিত ও সেচের সুবিধা রয়েছে এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।

 

৪. বীজঃ

ভালো বীজ নির্বাচনঃ

ভাল বীজের বৈশিষ্ট্যঃ রোগমুক্ত, পরিষ্কার, পরিপুষ্ট ও চিটামুক্ত হতে হবে।

সকল বীজের আকার আকৃতি একই ধরনের হবে।

ভাল বীজ বাছাইয়ের পদ্ধতিঃ প্রায় ৪০ লিটার পরিষ্কার পানিতে দেড় কেজি ইউরিয়া সার মিশিয়ে তার মধ্যে বীজ ধান ছেড়ে দিয়ে নেড়েচেড়ে দিতে হব। ভারী, পুষ্ট, সুস্থ ও সবল বীজ পাত্রের তলায় জমা হবে এবং অপরিপুষ্ট, হালকা, রোগা বা ভাঙ্গা বীজ ভেসে থাকবে। হাত অথবা চালনি দিয়ে ভাসমান বীজগুলো পৃথক করে নিতে হবে। ভারী বীজ নীচ থেকে তুলে নিয়ে পরিষ্কার পানিতে ৩ থেকে ৪ বার ভাল করে ধুয়ে ছায়াতে শুকিয়ে অথবা এভাবে বাছাইকৃত বীজ জাগ দিয়ে মুখ ফুটিয়ে বীজতলায় বোনা যেতে পারে। তাছাড়া কুলা দিয়ে খুব ভালোভাবে ঝেড়ে নিয়েও পরিপুষ্ট বীজ বাছাই করা যায়।

বিশেষ পরামর্শঃ বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে এবং ভালো সুষ্ঠ বীজ নির্বাচনের জন্য কৃষক, নমুনা বীজ মাঠ পর্যায়ে পরিক্ষা করতে পারেন, এ ক্ষেত্রে বীজ গজানোর হার ৮০% এর বেশী হবে।

বীজের হারঃ সাধারন ভাবে ১ কেজি অংকুরিত বীজ ১ শতক বীজ তলার জন্যে এবং ১ শতাংশের বীজ তলা দিয়ে ২২-২৫ শতাংশ জমিতে রোপন করা যায়। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটে লেখা নির্দেশিকা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

বীজ শোধনঃ ভিটাভেক্স ২০০ / টিলথ অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করে বীজ় শোধন করা ভাল।

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ

মাটির প্রকার ভেদে প্রয়োজনমত ৩-৪ টি  চাষ এবং মই দিয়ে জমি সমান করতে হবে এবং থকথকে কাদা করতে হবে।

জমি উঁচু নীচু থাকলে মই ও কোদাল দিয়ে সমতল করতে হবে।

প্রথম চাষের পর অন্তত ৭ দিন পর্যন্ত জমিতে পানি আটকে রাখুন। এতে জমির খড় ও আগাছা পচে জমি উর্বর বেসকরবে।

বীজ তলা তৈরীঃ চারটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করা যায়। এগুলো হচ্ছে শুকনো, কাদাময়, ভাসমান ও ডাপোগ বীজতলা। শুকনো বীজতলা- উপযুক্ত আর্দ্রতায় ৫-৬ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটিকে একেবারে ঝুরঝুরে করার পর জমি সমান করে শুকনো বীজতলা তৈরি করা যায়।দোঁআশ ও এটেল মাটি এ বীজতলায় জন্য ভাল। বীজতলার জমি উর্বর হওয়া প্রয়োজন। যদি জমি হয় তাহলে প্রতি বর্গমিটার জমিতে দুই কেজি হারে জৈব সার (পচা গোবর বা আবর্জনা) সুন্দরভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর জমিতে ২-২.৫ ইঞ্চি পানি দিয়ে দু-তিনটি চাষ ও মই দিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন রেখে দিন এবং পানি ভালভাবে আটকে রাখুন। আগাছা, খড় ইত্যাদি পচে গেল আবার চাষ ও মই দিয়ে থকথকে কাদাময় করে জমি তৈরি করতে হবে। এবার জমির দৈর্ঘ্য বরাবর ১ মিটার চওড়া বেড তৈরি করতে হবে। বেডের দুই পাশের মাটি দিয়ে বেড তৈরি করা যায়।এরপর বেডের উপরের মাটি বাঁশ বা কাঠের চ্যাপ্টা লাঠি দিয়ে সমান করতে হবে। কাদা বেশি হলে বীজ মাটিতে ডুবে যাবে এবং তাতে ভালভাবে বীজ গজাবে না। এ অবস্থায় বেড তৈরির পৌনে এক ঘন্টা পর বীজ বোনা দরকার।

বীজ তলার পরিচর্যাঃ বীজ তলার চার পাশে বেড়া/নেট দিয়ে ঘেরে দিতে হবে। সেচের প্রয়োজন হলে পরিমিত মাত্রায় সেচ দিতেন হবে।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ সাধারণভাবে বীজ তলার বয়স আউশে ২০-২৫ দিন, রোপা আমনে ২৫-৩০ দিন(বীজ তলায় বীজ বপন-আষাঢ় মাস)এবং বোরাতে ৩৫-৪৫ দিন(বীজ তলায় বীজ বপন-১লা কার্তিক থেকে অগ্রাহয়ণের ১ম সপ্তাহ) হওয়া উচিত। তবে কোম্পানীর উৎপাদিত বীজের ক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে লেখা  নির্দেশকা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

ছিটিয়ে বা লাইনে বপনঃ রোপা ধান সাধারনত লাইনে রোপন করা ভালো এতে করে ফসলে আলো বাতাসের প্রবেশ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা করতে অনেক সুবিধা হয়।

রোপনঃ রোপনের ক্ষেত্রে সাধারনত লাইন থেকে লাইনের দুরত্ব ৯-১০ ইঞ্চি এবং প্রতি লাইনে গোছা/থোর থেকে গোছা/থোরের দুরত্ব ৬ ইঞ্চি। তবে

বিভিন্ন কোম্পানীর উৎপাদিত বীজের ক্ষেত্রে প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশকা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

জমির উর্বরতা

প্রতি শতাংশে সারের পরিমাণ (গ্রাম)

ইউরিয়া টিএসপি/ডিএপি এমপি জিপসাম জিঙ্ক
অতি নিম্ন ১৪০০ ৪৯০ ৭০০ ৩১৫ ৬২
অতি নিম্ন ১২০০ ৪২০ ৬০০ ২৭০ ৫০
নিম্ন ১০০০ ৩৫০ ৫০০ ২২৫ ৩৭
নিম্ন মধ্যম ৮০০ ২৮০ ৪০০ ১৮০ ২৫
মধ্যম ৬০০ ২১০ ৩০০ ১৩৫ ১২
মধ্যম পরিমিত ৪০০ ১৪০ ২০০ ৯০ -
অতি নিম্ন ৯৪৫ ৩৫০ ৪৭২ ৩১৫ ৫০
অতি নিম্ন-নিম্ন ৮১০ ৩০০ ৪০৫ ২৭০ ৪০
নিম্ন ৬৭৫ ২৫০ ৩৩৭ ২২৫ ৩০
নিম্ন মধ্যম ৫৮০ ২০০ ২৭০ ১৮০
মধ্যম ৪০৫ ১৫০ ২০২ ১৩৫ ১০
মধ্যম পরিমিত ২৭০ ১০০ ১৩৫ ৯০ -
অতি নিম্ন ৭৮৭ ২৮০ ৪২০ ১৩১ ৫০
অতি নিম্ন-নিম্ন ৬৭৫ ২৪০ ৩৬০ ১৯৮ ৪০
নিম্ন ৫৬২ ২০০ ৩০০ ১৬৫ ৩০
নিম্ন মধ্যম ৪৫০ ১৬০ ২৪০ ১৩২ ২০
মধ্যম ৩৩৭ ১২০ ১৮০ ৯৯ ১০
মধ্যম পরিমিত ২২৫ ৮০ ১২০ ৬৬ -

 

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা জমিতে কম সময় থাকে তাই এ সার তিন কিস্তি-তে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি- জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে, ২য় কিস্তি- ধানের গোছায় ৪-৫ টি কুশি অবস্থায় ও ৩ য় কিস্তি- কাইচথোড় আসার ৫-৭ দিন পূর্বে দিতে হবে এবং ইউরিয়া ছারা অন্যান্য সার গুলো জমি তৈরীর শেষ চাষের আগে দিতে হিবে।

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ সব ধরনের ধানের জমিতেই আগাছা জন্মে। আগাছা সময়মত পরিষ্কার না করলে তা ধানের সাথে খাদ্য ও জায়গা নিয়ে প্রতিযোগিতা করে। আগাছা ধান ফসলের সাথে আলো, পানি ও পুষ্টি নিয়ে প্রতিযোগিতা করে।

দমন পদ্ধতিঃ হাত / নিড়ানি / রাইস উইডারের সাহায্যে দমন করতে হবে। অথবা চারা রোপনের ৭-১৫ দিনের মধ্যে সুপার পাওয়ার ২০ গ্রম ৩৩ শতক জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ
rice-field-irrigation

সেচের সময়ঃ চারা রোপনের পর জমিতে পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত অবশ্যই ১-২ ইঞ্চি দাড়ানো পানি রাখতে হবে।

সেচের পরিমাণঃ কাইচ থেকে দানা শক্ত হওয়া পর্যন্ত সময় (১৫ দিন) জমিতে অবশ্যই ১-২ ইঞ্চি দাড়ানো পানি রাখুন। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে সেচ দেয় ও জমি শুকানোর জন্য পানি পাইপ প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ

রোগের নাম লক্ষণ প্রতিকার কীটনাসকের নাম উৎস
খোলপড়া রোগ প্রথমে ধান গাছের নীচের অংশে সবুজ ধূসর গোল দাগ দেখা যায়।আস্তে আস্তে দাগ বড় হয়ে খোলের উপরিভাগে ও সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে।খোল দেখতে গোখরা সাপের চামড়ার দাগের মত মনে হয়।একটি কুশী বা গাছ থেকে অন্য কুশী বা  গাছে রোগ ছড়ায়।ধান গাছের বৃদ্ধির যে কোন স্তরে এ রোগের আক্রমণ হতে পারে তবে কুশী ছাড়ার শেষ পর্যায় থেকে ধানের ছড়া বের হওয়া  র্পযন্ত খোলপচা রোগের প্রকোপ বেশী হয়। আক্রমণ তীব্র হলে ধান গাছ পোড়া মনে হয় এবং ক্ষেতের মধ্যে অংশ বিশেয় বসে যায় ও ধান গাছ মরে যায়। খোলপচা রোগের আক্রমণে শতকরাপ ২৫-৩০ ভাগ ফলন কমে যায়। টিল্ট ২৫০ ইসি, মাত্রা : ৪০০ এমএল/একর; ব্যবহার বিধি:প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ এমএল  টিল্ট মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ধান গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করুন।আক্রমণের মাত্রা তীব্র হলে প্রয়োজনে ১৫ দিন পর পুনরায় একই নিয়মে স্প্রে করুন। অথবা স্কোর ২৫০ ইসি, মাত্রা : ২০০ এমএল/একর; ব্যবহার বিধি : প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ এমএল অথবা  স্কোর মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ধান গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করুন।আক্রমণের মাত্রা তীব্র হলে প্রয়োজনে ১৫ দিন পর পুনরায় একই নিয়মে স্প্রে করুন। অথবা এনভিল ৫ এসসি, মাত্রা : ২০০ এমএল/একর, ব্যবহার বিধি : ১০ লিটার পানিতে ১০ এমএল এনভিল মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ধান গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করুন।আক্রমণের মাত্রা তীব্র হলে প্রয়োজনে ১৫ দিন পর পুনরায় একই নিয়মে স্প্রে করুন। টিল্ট ২৫০ ইসি, স্কোর ২৫০ ইসি, এনভিল ৫ এসসি সিনজেনটা
গোল্ডজিম ৫০০ এসসি, ২০ এম এল/১০ লি. পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। গোল্ডজিম ৫০০ এসসি এসিআই
বাদামী দাগ ধান গাছের পাতায় এবং বীজের খোসায় এই রোগের স্পষ্ট লক্ষন দেখা যায়। প্রথমে পাতার দাগগুলো ডিম্বাকৃতি এবং তিল বীজের মত মনে হয়। প্রায় একই রকম দাগ পাতার সমস্ত অংশে সমানভাবে দেখা যায়। দাগের কেন্দ্র ধূসর বা সাদা বর্নের এবং কিনারা হালকা রংয়ের হয়। টিল্ট ২৫০ ইসিঃ ৪০০ এমএল/একর বা স্কোর ২৫০ ইসিঃ ২০০ এমএল/একর টিল্ট ২৫০ ইসি, স্কোর ২৫০ ইসি সিনজেনটা
সরু বাদামী দাগ পাতার মধ্যে ছোট, সরু ও চিকন লম্বা-লম্বি বাদামী দাগ খোলা বীজের বোটায় এবং ধানের তুষের উপর হতে পারে। লম্বা দাগগুলো পাতার শিরার সমান্তরালে থাকে। দাগের কেন্দ্রে হালকা রংয়ের এবং সরু। সাধারনত এই সরু বাদামী দাগ লাল বাদামী এবং দাগের কিনারা বাদামী রংয়ের হয়ে যায়। টিল্ট ২৫০ ইসিঃ ৪০০ এমএল/একর বা স্কোর ২৫০ ইসিঃ ২০০ এমএল/একর টিল্ট ২৫০ ইসি, স্কোর ২৫০ ইসি সিনজেনটা
খোল পচা ধান গাছে থোড় আসার শেষ পর্যায় যে খোল ছড়াকে আবৃত করে রাখে সেই খোলে এই রোগ হয়। প্রথমে গোলাকার বা অনিয়মিত লম্বা দাগ হয়। দাগের কেন্দ্র ধূসর ও কিনারা বাদামী রং বা ধূসর বাদামী হয়। দাগগুলো একত্রে বড় হয়ে সম্পূর্ন খোলেই ছড়াতে পারে। থোড়ের মুখ বা শীষ পচে যায় এবং গুড়া ছত্রাংশ খোলের ভিতর প্রচুর দেখা যায়। শীষ আংশিক বের হয় ও খুব কম সংখ্যক ধান পুষ্ট হয়। স্কোর ২৫০ ইসিঃ ২০০ এমএল/একর স্কোর ২৫০ ইসি সিনজেনটা
এমকোজিম ৫০ ডব্লিউ পি- প্রতি একরে ২০০-২০৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। এমকোজিম ৫০ ডব্লিউ পি এ সি আই
পাতার ফোস্কা পড়া সাধারনত ধান গাছের বয়স্ক পাতার আগায় এই রোগ দেখা যায়। মাঝে মাঝে পাতার মাঝখানে বা কিনারায় হতে পারে। দাগ অনেকটা আয়তাকার বা হীরক আকৃতির জলছাপের মত মনে হয়। দাগ বড় হয়ে ডিম্বাকৃতি বা আয়তাকার ও জলপাই রংয়ের হয়। দাগের ভিতর গাড় বাদামী চওড়া রেখা ও হালকা বাদামী রেখা পরপর বেস্টনী করে থাকে এবং কিছুটা ডোরাকাটা দাগ মনে হয়। বেশী আক্রান্ত পাতা শুকিয়ে খড়ের রং হয় ও দাগের কিনারা হালকা বাদামী এলাকার মত হয়। টিল্ট ২৫০ ইসিঃ ৪০০ এমএল/একর বা স্কোর ২৫০ ইসিঃ ২০০ এমএল/একর টিল্ট ২৫০ ইসি, স্কোর ২৫০ ইসি সিনজেনটা
কান্ড পচা ছত্রাক সাধারনতঃ জমির পানির উপরের তল বরাবর কোন ক্ষতের মাধ্যমে গাছের ভিতর ঢুকে রোগ সৃষ্টি করে। প্রথমে গাছের বাইরের খোলে কালচে গাড়, অনিয়মিত দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে বড় হয়। পরে ছত্রাক গাছের কান্ডের ভিতর ঢুকে কান্ডকে দুর্বল করে ও গাছ হেলে ভেঙ্গে পড়ে। টিল্ট ২৫০ ইসিঃ ৪০০ এমএল/একর বা স্কোর ২৫০ ইসিঃ ২০০ এমএল/একর টিল্ট ২৫০ ইসি, স্কোর ২৫০ ইসি সিনজেনটা
প্রাউড ২৫ ইসি-বিঘা প্রতি ১৩৫ এম এল প্রয়োগ করতে হবে। প্রাউড ২৫ ইসি এসিআই
পোকামাকড়ের নাম লক্ষণ প্রতিকার কীটনাসকের নাম উৎস
 

 

মাজরা পোকা( হলুদ মাজরা, কাল মাথা মাজরা, গোলাপী মাজরা)

হলুদ মাজরা পাতার উপরে ও নীচে ডিম পারে ও ডিমের গাদার উপর হালকা ধূসর রংয়ের আবরন পড়ে।  ডিম ফুটে কীড়া বের হয়ে আস্তে আস্তে কান্ডের ভিতর প্রবেশ করে ভিতরের নরম অংশ কুড়ে কুড়ে খায়। ক্রমে গাছের ডিগ ও পাতার গোড়া খেয়ে ফেলে ফলে ডিগ মারা যায়। শীষ আসার আগ পর্যন্ত এ ধরনের ক্ষতি হলে মরাডিগ দেখা যায় এবং ডিগ টান দিলে সহজেই উঠে আসে।  শীষ আসার পর মাজরা পোকা ক্ষতি করলে সম্পূর্ন শীষ শুকিয়ে যায়। একে সাদাশীষ বা মরাশীষ বলে। ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি -৭৫ গ্রাম/হেক্টর: ১০ লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম ভিরতাকো মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ভালভাবে স্প্রে করুন। ভিরতাকো শেষ প্রয়োগ ও ফসল তোলার মাঝে ২১ দিন ব্যবহার রাখা উচিত। রাইসন ৬০ ইসি–৬৮০ এমএল/একর : পোকার আক্রমন দেখা দিলে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৩৪ এমএল রাইসন মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ভালভাবে স্প্রে করুন। মিশ্রনের পরপরই কীটনাশক স্প্রে করুন। (জমিতে আড়আড়িভাবে হেঁটে ১০০ গোছায় কমপক্ষে ৫ টি পূর্নাঙ্গ মাজরা পোকা আছে তা নিশ্চিত হয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করুন) ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি, বাসুডিন ১০ জি, রাইসন ৬০ ইসি সিনজেনটা
ব্রিফার ৫ জি-১.৩৫ কেজি / বিঘাতে প্রয়োগ করতে হবে। ব্রিফার ৫ জি এসিআই
ফুরাডান ৫ জি-৪ কেজি/একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। ফুরাডান ৫ জি পদ্মাওয়েল কো.লি.
পাতা মোড়ানো পোকা পূর্ন বয়স্ক স্ত্রী পোকা পাতার মধ্য শিরার কাছে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে পাতার সবুজ অংশ খায় ও বড় হবার সাথে সাথে পাতা লম্বালম্বি ভাবে মুড়িয়ে একটা নলের মত তৈরী করে। মোড়ানো পাতার মধ্যেই কীড়া পুত্তলীতে পরিনত হয়। মোড়ানো পাতা ভিতরে সবুজ ও বাদামী রংয়ের গুড়া গুড়া মল দেখা যায়। থোড় আসার সময় এ পোকার আক্রমন হলে চিটা ধানের সংখ্যা বেশী হয়। ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি (৭৫ গ্রাম/হেক্টর) অথবা রাইসন ৬০ ইসি (৬৮০ এমএল/একর): পোকার আক্রমন দেখা দিলে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৩৪ এমএল রাইসন মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ভালভাবে স্প্রে করুন। মিশ্রনের পরপরই কীটনাশক স্প্রে করুন। আক্রমন বেশী হলে ৭-১৪ দিন  পরপর এক ই নিয়মে স্প্রে করুন। ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি, রাইসন ৬০ ইসি সিনজেনটা
সবুজ পাতা ফড়িং   পূন বয়স্ক বাচ্চা উভয় অবস্থায় পোকা ধানের পাতার রস চুষে খায়।  ফলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় ও গাছ খাট হয়ে যায়।  এই পোকা টুংরো রোগের ভাইরাস ছড়িয়ে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করে। ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি (৩০-৩১ গ্রাম/একর) ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি সিনজেনটা
বাদামী গাছ ফড়িং   বাচ্চা ও পূর্ন বয়স্ক পোকা একসঙ্গে ধান গাছের গোড়ায় বসে রস চুষে খায়। ফলে ধান গাছ দ্রুত শুকিয়ে খড়ের মত হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে সম্পূর্ন ধান খেত নষ্ট হয়ে যায়।  আক্রান্ত খেত “বাজ পোড়ার“ মত হয়ে যায়। একতারা ২৫ ডব্লিউজি – ২৫ গ্রাম/একর প্রতি গোছায় ২-৩ টি বাদামী গাছ ফড়িং দেখা দিলে একতারা স্প্রে করুন। ১০ লিটার পানিতে ১.২ গ্রাম একতারা মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে গাছের গোড়ায় ভালভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করুন। আক্রমনের তীব্রতানুযায়ী ৭-১৪ দিন পর পর একই নিয়মে স্প্রে করুন। ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি (৩০ গ্রাম/একর) ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি, একতারা ২৫ ডব্লিউজি সিনজেনটা
পামরী পোকা   পূর্ন বয়স্ক পামরী পোকা পাতার উপরের সবুজ অংশ এমনভাবে কুড়ে কুড়ে খায় যে শুধু পর্দাটাই বাকী থাকে।  কীড়াগুলো পাতার দুই পর্দার মধ্যে সুড়ঙ্গ করে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। অনেকগুলি কীড়া এভাবে খাওয়ার ফলে পাতা শুকিয়ে যায়। কীড়া ও পুত্তলী সুড়ঙ্গের মধ্যেই থাকে। সম্মিলিতভাবে একযোগে হাতজাল দিয়ে পূর্নবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলা। আক্রান্ত খেতের পাতা গোড়া থেকে ২ ইঞ্চে উপরে কেটে পাতাগুলে নষ্ট করা। ৩৫% ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্থ হলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করুন।
ব্রাভো ৫০ এস্পি (কারটাফ)-১৬ গ্রাম/১০লি. পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ব্রাভো ৫০ এস্পি (কারটাফ) স্কয়ার কো. লি.
গলমাছি  স্ত্রী গলমাছি পাতার নীচের পাশে ডিম পাড়ে।  ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ধান গাছের মাঝখানে বাড়ন্ত কুশীর গোড়ায় আক্রমন করে। ফলে মাঝখানে পাতাটা পেয়াজের পাতার মত নলাকার হয়ে যায়। এই অবস্থায় কুশীতে শীষ বের হয় না। ভিরতাকো সিনজেনটা
সিডিয়াল ৫ জি-৪ কেজি/একর প্রয়োগ করতে হবে। সিডিয়াল ৫ জি এসিআই
গান্ধী পোকা   পূর্ন বয়স্ক গান্ধী পোকা ধানের পাতা ও শীষের উপর সারি করে ডিম পাড়ে।  পূর্ন বয়স্ক পোকা বা বাচ্চা পোকা উভয়ই ধানের দানা আক্রমন করে। ধানের দানায় যখন দুধ সৃষ্টি হয় তখন আক্রমন করলে ধান চিটা হয়ে যায়।  সবুজ রংয়ের বাচ্চা এবং পূর্ন বয়স্ক গান্ধী পোকার গা থেকে বিশ্রি দুর্গন্ধ বের হয়।  ধানের মান খারাপ হয়, মাড়াইয়ের সময় চাল ভেঙ্গে যায়।   হাত জালের সাহায্যে গান্ধী পোকা সংগ্রহ করে মেরে ফেলা।  কেরোসিন ভিজানো দড়ি আক্রান্ত খেতে আড়আড়িভাবে টেনে পোকা দমন করা।  প্রতি গোছায় ২-৩ টি গান্ধী পোকা দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা। মিপসিন ৭৫ ডব্লিউ পি, ৪৫৩ গ্রাম / একর
লেদা পোকা লেদা পোকার কীড়া ধান গাছের পাতা পাশ থেকে এমনভাবে কাটে যে কেবল ধানগাছের কান্ডই অবশিষ্ট থাকে। সাধারনত শুকনা জমিতে এদের আক্রমন বেশী হয়। কোন কোন সময় চারা গাছের গোড়াও কাটে। ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি (৩০ গ্রাম/একর) ব্যবহার করা। ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউজি

 

১২. বিশেষ পরিচর্যাঃ

এলসিসি
lcc
এলসিসি বা লিফ কালার চার্ট হলো একটি সাধারণ এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের তৈরি একটি ছোট স্কেল যা ব্যবহার করে ধান ক্ষেতে সঠিক পরিমাণে বেশি কার্যকরভাবে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যায়। স্কেলটিতে হাল্কা হলুদাভ সবুজ থেকে ক্রমান্বয়ে গাঢ় সবুজ রঙের ৪টি স্ট্রিপ আছে যা দিয়ে ধানের পাতার সবুজ রঙের সামঞ্জস্য বিশ্লেষণ করে জমিতে ইউরিয়া সারের প্রয়োগমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

পানি পাইপ

  • ধান ক্ষেতে সেচের সময় নিরুপনের জন্য ১২ ইঞ্চি লম্বা ও ৩-৪ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট একটি পিভিসি পাইপ নিন ।
  •  উপরের ছিদ্রহীন ৪ ইঞ্চি মাটির উপর থাকবে ।
  •  নীচের ছিদ্রহীন ৮ ইঞ্চি মাটির নীচে থাকবে ।
  • ধান লাগানোর দিনই পানি পাইপ স্থাপন করুন ।
  •  একই সমান্তরাল জমির জন্য বিঘাপ্রতি ১ টি পানি পাইপ স্থাপন করুন ।
  •  পানি পাইপের ভিতর তেকে তলা পর্যন্ত কাদা মাটি সরিয়ে ফেলুন এবং সব সময় পরিষ্কার রাখুন ।

বিশেষ করনীয়

  • চারা রোপনের পর পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই ১-২ ইঞ্চি পরিমান পানি রাখুন ।
  • এরপর পানি পাইপের উপর থেকে পর্যবেক্ষন করতে থাকুন। দেখবেন পানি পাইপের ভিতরের পানি দিন দিন নীচের দিকে যাচ্ছে।
  • যে দিন উপরে থেকে পানি পাইপের তলদেশের মাটি দেখা যাবে,সে দিনই পরবর্তী সেচ দিন ।
  • ফুল আসার শুরু থেকে পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত অবশ্যই ১-২ ইঞ্চি পরিমান পানি রাখুন।
  • মৌসুম শেষে পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য পানি-পাইপ তুলে রাখুন।

১৩. ফসল কাটাঃ

সময়ঃ শীষের অগ্রভাগের ৮০% ধানের চাল শক্ত এবং নীচের ২০% ধানের চাল আংশিক শক্ত হলে বুঝতে হবে ধান ঠিকমত পেকেছে।

পদ্ধতিঃ কাস্তে / হাসুয়া ব্যাবহার করে।

১৪. পরিবহণ ব্যবস্থাঃ

পরিবহণ পদ্ধতিঃ মাঠ থেকে সাধারনত বাইঙ্কা/ গরুগাড়ি/ ভ্যান / ট্রাক্টরের সাহায্যে ধান মারাই করার জন্য উঠানে আনা হয়।

পরিবহণের মাধ্যমঃ বাইঙ্কা / গরুগাড়ি / ভ্যান / ট্রাক্টর ইত্যাদি।

১৫. ফসল মাড়াইঃ
pedal_thresher

মাড়াই পদ্ধতিঃ বর্তমানে ধান মাড়াইয়ের জন্যে ‘পেডেল থ্রেসার’ বেশ জনপ্রিয়। অবশ্য অনেকে পিড়িতে বা গরুর সাহায্যেও ধান মাড়াই করে থাকে।

১৬. প্যাকেজিং:

প্যাকেজিং পদ্ধতিঃ সাধারনত পাটের তৈরী চটের বস্তা দিয়ে প্যাকেজিং করা হয়।

১৭. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
rice-drying

স্বল্প পরিসরেঃ মাড়াই করার পর অন্তত: পক্ষে ৪ থেকে ৫ বার রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর পাটের তৈরী চটের বস্তা দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।

বৃহৎ পরিসরে (উৎস): মাড়াই করার পর অন্তত: পক্ষে ৪ থেকে ৫ বার রোদে শুকিয়ে (১৪% আদ্রতা) নিতে হবে। তারপর পাটের তৈরী চটের বস্তা দিয়ে গোডাউনে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

১৮. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ

বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শ্ববর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।

১৯. তথ্যের উৎসঃ  AIS, BRRI,IRRI,BARI, knowledgebank-brri.org, আধুনিক ধানের চাষ, কৃষি প্রযুক্তি হাত বই, krishitey.com

২০. সর্বশেষ সংযোজন : জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন-info@ekrishok.com

 

Leave a Reply