আলু | ই-কৃষক
potato

আলু

১. ফসলঃ আলু

২. জাতঃ

উচ্চ ফলনশীল জাতঃ বারি আলু-১ (হীরা), বারি আলু-৪ (আইলসা),বারি আলু -৪ (ডায়মন্ট),  বারি আলু-৮ (কার্ডিনাল), বারি আলু-১১(চমক), বারি আলু-১২(ধীরা), বারি আলু-১৩ (গ্রানোলা), বারি আলু-১৫ (বিনেলা), বারি টিপিএস-১, বারি টিপিএস-২, বারি আলু-১৬ (আরিন্দা), বারি আলু-১৭ (রাজা), বারি আলু-১৮ (বারাকা), বারি আলু-১৯ (বিন্টজে), বারি আলু-২০ (জারলা)

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ  আলু চাষের জন্য বেলে দোআশ ও দোআঁশ ধরনের মাটি সবচেয়ে উপযোগী।
৪. বীজঃ
true-potato-seeds

seed-potato
বীজের হারঃ  প্রতি একরে বীজের হার প্রায় ৬০০ কেজি।

বীজ শোধনঃ ১৩৬ লিটার (৩০ গ্যালন)  পানিতে ১২৪ গ্রাম (৪ আউন্স)  মারকিউরিক ক্লোরাইড দ্রবণ তৈরী করে তাতে বীজ আলু ১২ঘন্টা চুবিয়ে রাখতে হয়। ঠান্ডা পানিতে মারকিউরিক ক্লোরাইড দ্রবীভূত হয় না বলে পানি গরম করে দ্রবণ বানিয়ে ঠান্ডা করে বীজ শোধন করতে হয়। কাটা ও অংকুরিত বীজ শোধন করলে ক্ষতি হতে পারে।

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ জমি লাঙ্গল ও মই দিয়ে ৫-৬ টি আড়া আড়ি চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুড়া করতে হবে।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ উত্তরাঞ্চলে মধ্য কার্তিক (নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ), দক্ষিণাঞ্চলে অগ্রহায়ণ ১ম সপ্তাহ থেকে ২য় সপ্তাহ (নভেম্বরের মাসের মধ্য থেকে শেষ সপ্তাহ)।

লাইনে বপনঃ
planting_potatoes ridge-furrow

সারি থেকে সারির দুরত্ব : দেড় হাত (২৪-২৫ ইঞ্চি)। বীজ থেকে বীজের দুরত্ব : ১ বিঘাত (১০-১২ ইঞ্চি)

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম সারের পরিমাণ (গ্রাম/শতক)
ইউরিয়া ১০০০
টিএসপি ৫৩০
এমওপি ৯৫০
জিপসাম ৪৫০
জিংক সালফেট ৩৫
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট (অমৱীয় বেলে মাটির জন্য) ৩৫০
বোরণ (বেলে মাটির জন্য) ৩৫
পঁচা গোবর ৪০ কেজি

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ গোবর, অর্ধেক ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, ও জিংক সালফেট, (প্রয়োজনবোধে) রোপণের সময় জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া দ্বিতীয় বার অর্থাৎ রোপনের ৩০-৩৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। অম্লীয় বেলে মাটির জন্য ৩৫০ গ্রাম/শতক ম্যাগনেশিয়াম সালফেট এবং বেলে মাটির জন্য বোরণ প্রতি শতকে ৩৫ গ্রাম প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ অন্তবর্তী‌‍ পরিচর্যার সময় উপড়ে ফেলুন।

দমন পদ্ধতিঃ সরকার অনুমোদিত আগাছা নাশাক ব্যবহার করুন।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ প্রথম সেচঃ আলু বীজ বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে (ষ্টোলেন বের হবার সময়) দুই সারির মাঝখানে সেচ দিতে হবে। সেচের ব্যবস্থা না থাকলে কচুরীপানা দিয়ে মাটি ঢেকে রাখলে সুফল পাওয়া যায়। দ্বিতীয় সেচঃ আলু বীজ বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে সেচ দিতে হবে। তৃতীয় সেচঃ আলু বীজ বপনের ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে (শুটির বৃদ্ধি পায়) সেচ দিতে হবে।

নিষ্কাশনঃ সুনিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ

রোগের নাম লক্ষণ প্রতিকার কীটনাসকের নাম উৎস
 

 

লেট ব্লাইট / নাব্বী ধসা / মড়ক / পঁচন

প্রথামিক অবস্থায় পাতার কিনার বা উপরের অংশে বাদামী রংয়ের ভেজা দাগ পড়ে। আস্তে আস্তে এ সব দাগ কালচে রং ধারন করে এবং কান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। সকালে আক্রান্ত পাতার নীচের দিকে সাদা পাউডারের মত রোগ জীবানু দেখা যায়। অনুকূল আবহাওয়ায় ২-৪ দিনের মধ্যেই সম্পূর্ণ আলু ক্ষেত পচে নষ্ট হয়ে যায়। রিডোমিল গোল্ড এমজেড ৬৮ ডব্লিউজি/ফলিও গোল্ড ৪৪০ এসসি-প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম মিশেয়ে পাতার উপর নীচ সহ সমস্ত গাছ ভালভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। রিডোমিল গোল্ড এমজেড ৬৮ ডব্লিউজি/ফলিও গোল্ড ৪৪০ এসসি সিনজেন্টা
রাজল্যান্ড ৮০ ডব্লিউ পি-১ কেজি / একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। রাজল্যান্ড ৮০ ডব্লিউ পি এ সি আই
এগ্রিজেব ৮০ ডব্লিউ পি(ম্যানকোজেব)-৪ গ্রাম/১ লি. পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এগ্রিজেব ৮০ ডব্লিউ পি(ম্যানকোজেব) স্কয়ার ফা.লি.
 

 

আর্লি বাইট

পাতার উপর বিক্ষিপ্তভাবে ছোট ছোট বাদামী দাগ দেখা দেয়। সাধারণত নীচের পাতায় এই দাগ দেখা দেয়। দাগগুলো ক্রমেই বড় হয় এবং বিত্তাকার রেখার সৃষ্টি করে ও আক্রান্ত স্থান শুকিয়ে যায়। ফলিও গোল্ড ৪৪০ এসসি, মাত্রাঃ প্রতি লিটার পানিতে ৫ এমএল-ফলিও গোল্ড মিশিয়ে পাতার উপর নীচ সহ সমস্ত গাছ ভালভাবে ভিজিয়ে সেপ্র করতে হবে। ফলিও গোল্ড ৪৪০ এসসি সিনজেন্টা
রাজল্যান্ড ৮০ ডব্লিউ পি-১ কেজি / একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। রাজল্যান্ড ৮০ ডব্লিউ পি এ সি আই
এগ্রিজেব ৮০ ডব্লিউ পি(ম্যানকোজেব)-৪ গ্রাম/১ লি. পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এগ্রিজেব ৮০ ডব্লিউ পি(ম্যানকোজেব) স্কয়ার ফা.লি.
স্টেম ক্যাংকার আলু গজানো অংকুরের মাথায় দাগ দেখা যায়। বড় গাছের গোড়ার দিকে লম্বা লালচে দাগ বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়।  কান্ডের সাথে ছোট ছোট টিউবার দেখা যায়। শষ্য আবর্তন (Crop Rotation) নিয়ম মানা।বীজ আলু মাটির বেশী গভীরে রোপন এড়াতে হবে।
আলুর দাদ  হালকা দাদ হলে টিউবারের উপর উঁচু এবং ভাসা বিভিন্ন আকারের বাদামী দাগ পড়ে।  প্রকোপ বেশী হলে দাদে দোলাকার গর্ত বা ডাবা দাগ পড়ে।  রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করা।বেশী মাত্রয় ইউরিয়া সার দেয়া এড়াতে হবে।
পাতা মোড়ানো রোগ আক্রান্ত গাছের পাতা খসখসে, খাড়া ও উপরের দিক মুড়ে যায়। আগার পাতার রং হালকা সবুজ এবং গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।  কখনো আক্রান্ত পাতার কিনারা লালচে বেগুনী রং হয়, গাছ খাটো হয় এবং সোজা হয়ে উপরের দিকে দাড়িয়ে থাকে।  রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করা।আক্রান্ত গাছ টিউবারসহ তুলে ফেলা।সরকার অনুমোদিত কটিনাশক ব্যবহার করুন।
পোকামাকড়ের নাম লক্ষণ প্রতিকার কীটনাসকের নাম উৎস
কাটুই পোকা মাটিতে বসবাসকারী কাটুই পোকা প্রথমে আলুর গাছ কাটে এবং পরবর্তিতে আলু ছিদ্র করে মারাত্মক ক্ষতি করে। ক্যারাটে, মাত্রাঃ একর প্রতি ৩০০ এমএল,প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ এমএল ক্যারাটে মিশিয়ে সারির উপর দিয়ে গাছের গোড়া বরাবর ভালভাবে মাটি ভিজিয়ে দিন। সেপ্র শেষে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিন। ক্যারাটে সিনজেন্টা
ফুরাডান ৫ জি, ৮ কেজি / একর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। ফুরাডান ৫ জি পদ্মাওয়েল কো. লই.
পাইক্লোরেক্স ২০ ইসি(ক্লোরপাইরিফস)- ৩.৫ এমএল/লি. পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। পাইক্লোরেক্স ২০ ইসি(ক্লোরপাইরিফস) স্কয়ার ফা.লি.
এফিড পাতার রস চুষে খায় এবং পাতা কুকড়িয়ে যায়। ভাইরাস রোগের বাহন এবং পাতায় ক্লোরোফিল কমিয়ে দেয়। একতারা ২৫ ডব্লিউজি: মাত্রাঃ প্রতি লিটার পানিতে ০.২৫ গ্রাম বা প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম একতারা  মিশেয়ে পাতার উপর নীচ সহ সমস্ত গাছ ভালভাবে ভিজিয়ে সেপ্র করুন। কতারা ২৫ ডব্লিউজি সিনজেন্টা
সুতলী পোকা কীড়া আলুর মধ্যে লম্বা সুড়ঙ্গ করে আলুর ক্ষতি করে। বসতবাড়ির সংরক্ষিত আলু এ পোকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বাড়িতে সংরক্ষিত আলু শুকনা বালি, ছাই, তুষ বা কাঠের গুড়ার পাতলা স্তর (আলুর উপর ০.৫ সে. মি.) দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সংরক্ষণের আগে সুতলী পোকা আক্রান্ত আলু বেছে ফেলে দিতে হবে। ভলিয়াম ফ্লেক্সি ৩০০ এসসি (প্রতি লিটার পানিতে ৫ এমএল হাবে) ভলিয়াম ফ্লেক্সি ৩০০ এসসি সিনজেন্টা

১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ আলু লাগানোর ৩০-৩৫ দিন পর গোঁড়ার মাটি দেয়া প্রয়োজন।potato-growth potato-field

১২. ফসল কাটাঃ
potato-harvesting potato-harvesting2

সময়ঃ গাছ পরিপক্ক হলে নীচের পাতা হলুদ হয়ে যায়। বীজ বপনের ১০০ থেকে  ১২০ দিনের  মাথায় আলু উত্তোলন করা যায়।তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে গাছ কাটা বা উপড়ানোর সময় আঘাতে আলু কেটে না যায়।

পদ্ধতিঃ প্রখর রোদে আলু না তুলে সকালে এবং বিকালে তুলতে হবে। বীজতলা থেকে আলু তুলে সাথে সাথে ছায়াযুক্ত স্হানে নিয়ে ৫-৬ ইঞ্চি  উঁচু করে ছড়িয়ে, ঐ অবস্হায় ৮ দিন রেখে বাছাই করা হয়।

১৩. প্যাকেজিং:

প্যাকেজিং পদ্ধতিঃ আলু রাখার জন্য চটের পাতলা এবং নতুন বস্তা ব্যবহার করতে হবে।

১৪. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

স্বল্প পরিসরেঃ সকালে এবং বিকালে তুলতে হবে। বীজতলা থেকে আলু তুলে সাথে সাথে ছায়াযুক্ত স্হানে নিয়ে ১০-১৫ সেমি উচু করে মেঝেতে বিছিয়ে রাখা দরকার।, ঐ অবস্হায় ৮-১০ দিন রেখে বাছাই করা হয়।১৫ দিন পর পর গ্রেডিং করে হিমাগারে সংরক্ষণ করতে হয়।

১৫. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ

বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।

১৬. তথ্যের উৎসঃ  AIS, BARI, কৃষি প্রযুক্তি হাত বই, ekrishok.com

১৭. সর্বশেষ সংযোজন :জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com

 

Leave a Reply