গাঁদা ফুলের রোগ ও তার প্রতিকার | ই-কৃষক

গাঁদা ফুলের রোগ ও তার প্রতিকার

ফুল সৌন্দর্য্যরে প্রতীক। পৃথিবীর সব দেশেই বিভিন্ন জাতের, বিভিন্ন রংয়ের ফুলের চাষ হয়ে থাকে। আমাদের দেশেও তেমনি প্রায় সব ঋতুতেই ফুল পাওয়া যায়, তবে শীত মৌসুমেই সব চেয়ে বেশী ফুল পাওয়া যায়। অন্য ফসলের মত ফুলও যথেষ্ট অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। এদেশের মানুষ আজকাল ফুলের নানাবিধ ব্যবহার শিখেছে, তাই ফুল এদেশের বিভিন্ন জেলায় চাষ শুরু হয়েছে এবং এরই সাথে ফুলের বিভিন্ন সমস্যাও দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সমস্যা গুলোর মধ্যে ফুলের রোগ বালাই একটি অন্যতম। নিন্মে গাঁদা ফুলের প্রধান প্রধান রোগ এবং উহার প্রতিকারের ব্যবস্থা বর্ননা করা হলো।

নেতিয়ে পড়া  (Damping off) রোগ

রোগের কারনঃ পিথিয়াম এ্যাফানিডারমেটাম (Pythium aphanidermatum) নামক ছত্রাক দ্বারা এরোগ হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তারঃ

জীবানু মাটিতে বেঁচে থাকতে পারে। আক্রান্ত কাটিং, মাটি, পানি ও ব্যবহৃত কৃষি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে রোগের বিস্তার ঘটে।

রোগের লক্ষণঃ

  • এ রোগ যে কোন বয়সের গাছে হতে পারে।
  • তবে চারা গাছে অথবা বীজ তলায় এ রোগ বেশী হয়।
  • আক্রান্ত গাছের পাতা হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
  • গাছের গোড়া বাদামী বর্ণের হয় ও ফেটে যায়।
  • রোগাক্রান্ত গাছের গোড়া পঁচে গাছ মাটিতে শুয়ে পরে।

রোগের প্রতিকারঃ

  • বীজতলা শোধন করতে হবে।
  • অর্ধকাঁচা মুরগীর বিষ্ঠা (৪-৫ টন/হেঃ) আদা রোপনের ২১ দিন পূর্বে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
  • মেটালেক্সিল + মেনকোজেব (যেমন-রিডোমিল গোল্ড) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে জমিতে বপন করতে হবে।
  • মেটালেক্সিল + মেনকোজেব (যেমন-রিডোমিল গোল্ড) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় মাটিতে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

 

গোড়া পঁচা (Foot and root rot) রোগ

রোগের কারনঃ  স্ক্লেরোশিয়াম রফসি (Sclerotium rolfsii) নামক ছত্রাক দ্বারা এরোগ হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তারঃ

মরা গাছের ডাঁটা ও মাটিতে গুটি অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে। বেশী পরিমান নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করলে রোগটির প্রকোপ বাড়ে। সেচের পানির সাথে স্ক্লেরোশিয়া ভেসে যেয়ে অন্য গাছ বা মাঠে ছড়ায়।

রোগের লক্ষণঃ

  • এ রোগে আক্রান্ত হলে গাছ ঢলে পড়ে।
  • গাছের গোড়া পঁচে যায়।
  • পাতার রং বাদামী বা খড়ের মত হয়।
  • পঁচা স্থানে সাদা তুলার মত মাইসেলিয়া এবং সরিষার দানার মত স্কেøরোশিয়া লেগে থাকতে দেখা যায়।
  • সমস্ত গাছটা শেষে শুকিয়ে মারা যায়।

রোগের প্রতিকারঃ

  • রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করতে হবে।
  • আক্রান্ত গাছের গোড়ায় পানি প্রয়োগ করা যাবে না ।
  • গাছের অঙ্গ ছাটাই করতে হবে, যাতে গোড়ায় সুর্যালোক প্রবেশ করে।
  • কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি লিটার পানিতে  ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়া কিছুক্ষন ভিজিয়ে রেখে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে জমিতে রোপন করতে হবে।
  • জমিতে রোগ দেখা দিলে কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) অথবা কার্বোক্সিন + থিরাম (যেমন-প্রোভ্যাক্স ২০০ ডব্লিউপি) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় মাটিতে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

 

পাতার দাগ (Leaf spot) রোগ

রোগের কারনঃ সারকোস্পোরা এসপি. (Cercospora sp.) নামক ছত্রাক দ্বারা রোগ হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তারঃ গাছের পরিত্যক্ত অংশে জীবানু বেঁচে থাকে।

রোগের লক্ষণঃ

  • যে কোন বয়সের গাছে এ রোগ হতে পারে।
  • সাধারনত: ফুল ও কলি অবস্থায় এর প্রকোপ বেশী হয়।
  • পাতার উপর হালকা সবুজ ধরণের দাগ পড়ে যা পরবর্তীতে ধূসর রং ধারণ করে।
  • পরবর্তীতে একাধিক দাগ একত্রিত হয়ে পাতা ঝলসে যায়।
  • ফুলের কলির ডাটা আক্রান্ত হলে কলি ভেঙ্গে যায়।
  • গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে।
  • বেশী আক্রান্ত গাছের পাতা ঝরে পড়ে।

রোগের প্রতিকারঃ

  • গাছ অনুমোদিত রোপন দুরত্ব ব্যবহার করতে হবে।
  • সুষম সার ব্যবহার করতে হবে যাতে করে গাছের ডালপালা বেশী না হয়।
  • গাছে রোগ দেখা দিলে কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে অথবা প্রোপিকোনাজোল (যেমন-টিল্ট ২৫০ ইসি) ১ লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

 

বট্রাইটিস ব্লাইট (Botrytis blight) রোগ

রোগের কারনঃ বট্রাইটিস সিনেরিয়া (Botrytis cinerea) নামক ছত্রাক দ্বারা এরোগ হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তারঃ ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়া রোগ বিস্তারের অনুকুল আবহাওয়া।

রোগের লক্ষণঃ

  • ফুলের উপর ধূসর বর্ণের অসম দাগ পড়ে।
  • তারপর ফুলগুলো পচে যায় ও কালো হয়ে যায়।
  • ফুলের ও কান্ডের পচা অংশের উপর ধূসর বর্ণে ছত্রাকের স্পোর দেখা যায়।
  • ১-২ সপ্তাহের মধ্যেই গাছ মারা যায়।

রোগের প্রতিকারঃ

  • গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলতে হবে।
  • রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
  • আক্রান্ত গাছ বা অংশবিশেষ দ্রুত কেটে সরিয়ে ফেলতে হবে।
  • জমিতে রোগ দেখা দিলে কার্বেন্ডাজিম (যেমন-অটোস্টিন) প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে গাছে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

 

Source:
বিজ্ঞানী ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান
উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব)
মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই
শিবগঞ্জ, বগুড়া।

Leave a Reply