অম্ল মাটি চাষের পক্ষে মোটেই ভাল নয়। অথচ, সরকারি হিসাব মতে পশ্চিমবঙ্গে অম্ল মাটির আয়তন কম-বেশি প্রায় ২০ লক্ষ হেক্টরের কাছাকাছি। এই মাটিতে কাঙ্খিত ফলন পেতে গেলে প্রাক বর্ষায় আমন ধান চাষের আগে অম্ল মাটির শোধন বিশেষ প্রয়োজন। এতে ধানের উৎপাদনশীলতা বাড়ার পাশাপাশি পরবর্তী রবি খন্দে গম, তৈলবীজ, ডালশস্য চাষের ফলন ভাল হবে।
মাটি কেন অম্ল হয়
• আর্দ্র অঞ্চলে বা হালকা মাটিতে সেচের জল বা নিকাশি জলের সাথে অথবা বৃষ্টির জলে মাটির ক্ষার বা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ধুয়ে, চুঁইয়ে বেরিয়ে যায়।
• ঠান্ডা আবহাওয়ায় মাটিতে মাত্রাতিরিক্ত জৈব পদার্থ থাকলে তা অসম্পূর্ণ ভাবে পচে অম্লত্ব বাড়ায়।
•মাটিতে জৈব সারের প্রয়োগ কম করলে ও মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে সারের দ্রবণীয় লবণগুলো মাটিকে অম্ল করে।
অম্লত্বের পরিমাপ
মাটির উর্বরতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মাটির অম্লত্ব-ক্ষারত্ব আঙ্গিক যার পরিমাপ পিএইচ স্কেলের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। পিএইচ-এর মান অনুযায়ী মাটির অম্লত্ব/ ক্ষারত্বের পরিমাপ এই রকম—
৫.৫ এর কম— অম্ল মাটি
৫.৫ – ৬.৫— মৃদু অম্ল মাটি
৬.৫ – ৭.৫— স্বাভাবিক মাটি
৭.৫ – ৮.৫— মৃদু ক্ষারীয়
৮.৫ এর বেশি— ক্ষারীয় মাটি
ফলন কেন কম হয়
• অম্লত্বের তীব্রতা বেশি হলে সংবেদনশীল মূল রোমের ঝিল্লিতে বিষক্রিয়া হয়। ফলে শিকড় স্থাপনা ও ফসলের বৃদ্ধি ব্যহত হয়।
• জৈব পদার্থের পচন অসম্পূর্ণ হওয়ায় মাটির উর্বরতা কমে।
• উপকারী জীবাণু তথা অণুজীব সমূহের সক্রিয়তা ব্যাহত হওয়ায় মাটিতে পুষ্টিমৌলের রূপান্তর, চলাচল ও ফসলে প্রাপ্যতা কমে। সারের ব্যবহারিক উৎকর্ষতা কমে।
• মাটির অম্লত্ব বৃদ্ধি পেলে অ্যালুমিনিয়ামের বিষক্রিয়া বাড়তে পারে। ফলে একদিকে ফসফেট ঘটিত সারের গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। শিকড়ের শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যাহত হওয়ায় জল ও কিছু পুষ্টিকণা টানার ক্ষমতা কমে যায়।
• মাটিতে অণুখাদ্যর ঘাটতি হয়।
• ডাল জাতীয় ফসলের বৃদ্ধি ও ফলন ব্যাহত হয়।
অম্ল মাটির পরিচর্যা
• ধানের জমিতে জল ধরে রাখলে তিন সপ্তাহের মধ্যে অম্লত্ব অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
• কাঠের ছাই বা তুষের টাটকা ছাই জমিতে দিলে অ্যালুমিনিয়াম জনিত বিষক্রিয়ার প্রভাব কমে।
• উন্নত মানের পর্যাপ্ত জৈব সার প্রয়োগ করে উপকার পাওয়া যায়।
• মাটির পিএইচ ৫.৫ এর কম হলে চুন জাতীয় পদার্থ সহযোগে মাটির শোধন একান্ত প্রয়োজন। এর উপযুক্ত সময় মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ।
চুন দিয়ে শোধন
• মাটি পরীক্ষার রিপোর্ট মোতাবেক চুন গুঁড়ো হলে (৮০ মেস সাইজ) এবং ২৫% এর বেশি ক্যালসিয়াম অক্সাইড থাকলে ভাল কাজ হয়।
• চুন জাতীয় দ্রব্য একেবারে না দিয়ে ধারাবাহিক ভাবে খেপে খেপে ২-৩ বছর ধরে প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
• ভারত সরকারের জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশনের সুপারিশ মোতাবেক মাটি পরীক্ষা করা না থাকলে ফসল বোনার ২৫-৩০ দিন আগে বিঘা প্রতি ৩০-৫০ কেজি চুন জাতীয় পদার্থ ছড়িয়ে দিতে হবে। তারপর মাটির সাথে সেই চুন ভাল ভাবে মিশিয়ে দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।
• চুন প্রয়োগের তিন সপ্তাহ পর জমিতে পর্যাপ্ত জৈব সার ও সাথে পরিমাণ মতো জীবাণু সার বিশেষ করে পিএসবি বা ফসফেটের দ্রবণীয়তা বৃদ্ধিকারী জীবাণু প্রয়োগ করে কাদা করলে মাটির অম্লত্ব কমার পাশাপাশি উর্বরতা ও বাস্ততন্ত্রর আধার সমৃদ্ধ হবে।
২৮ আষাঢ় ১৪২৩ বুধবার ১৩ জুলাই ২০১৬