থাই কৈ মাছ | ই-কৃষক

থাই কৈ মাছ

 

থাই কৈ মাছের চাষ ব্যবস্থাপনা

বর্তমানে বাংলাদেশে থাই কৈ মাছের চাষ বাণিজ্যিকভাবে যথেষ্ট লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত কৈ মাছের পোনা পরীক্ষামূলক চাষাবাদের মাধ্যমে আমাদের চাষিরা আশাব্যঞ্জক সাফল্য অর্জন করেছেন।

১. থাই কৈ চাষে সুবিধাদি-

বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাছ চাষের অনুকূল। দ্রুতবর্ধনশীল তাই ৪-৫ মাসেই ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ওজনে উন্নীত হয়ে থাকে।

থাই কৈ সম্পূরক খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত, তাই এ মাছের দৈহিক বৃদ্ধি ও ত্বরান্বিত হয়ে থাকে। বিদেশে রফতানির সুযোগ রয়েছে। চাষের জন্য সুস্থ ও সবল পোকা সর্বত্র পাওয়া যায়।

স্থানীয় প্রজাতির কৈ মাছের মতোই থাই কৈ এদেশের আপামর জনসাধারণের খাদ্য তালিকায় ইতোমধ্যেই রসনাতৃপ্তির মাছ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে থাই কৈ এর বিপুল চাহিদা থাকায় এ মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব।

২. চাষ পদ্ধতিঃ

পুকুরের চারপাশের ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করতে হবে। পুরানো পুকুর সেচে শুকিয়ে ফেলাই উত্তম। সম্ভব না হলে নির্ধারিত মাত্রায় রোটেনন পাউডার ৩ ভাগের ২ ভাগ পানিতে গুলে অবশিষ্ট ১ ভাগ কাই করে ছোট বল আকারে পুকুরের সব জায়গায় ছিটিয়ে দিতে হবে। রোটেনন প্রয়োগের আধা ঘণ্টা পর জাল টেনে রাক্ষুসে মাছসহ সমস্ত অবাঞ্ছিত মাছ ও প্রাণী ধরে ফেলতে হবে।

৩. চুন প্রয়োগঃ

রোটেনন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর পুকুরে ৩-৪ ফুট পানি থাকা অবস্থায় প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রযোগ করতে হবে।

৪. সার প্রয়োগঃ

চুন প্রয়োগের সপ্তাহ খানিক পর শতাংশ প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া ৫০-৭৫ গ্রাম টিএসপি, ৫-৭ কেজি গোবর কিংবা ২-৩ কেজি মুরগির বিষ্ঠা পুকুরের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের ৬-৭ দিন পর পানির রঙ সবুজ বা হালকা বাদামি সবুজ হলেই মাছের পোনা ছাড়তে হবে।

৫. পোনা ছাড়াঃ

একক চাষে প্রতি শতাংশে ২৫০-৩০০টি সুস্থ সবল একই বয়সি পোনা ছাড়া যেতে পারে। মজুদ পুকুরে ১ মাস বয়সি পোনা ছাড়াই উত্তম।

৬. পরিচর্যাঃ

পোনা মজুদের পর থেকে নিয়মিত অধিক আমিষ যুক্ত মানসম্মত খাবার সরবরাহ করা অপরিহার্য। এ মাছের খাবারে সাধারণত আমিষের পরিমাণ ৩৫% থাকা অত্যাবশ্যক। ছোট অবস্থায় দৈনিক ৫-৬ বার এবং বড় অবস্থায় কমপক্ষে ২ বার থাই কৈ এর পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। পোনা অবস্থায় পুকুরে পানির গভীরতা ৩-৪ ফুট ও বড় অবস্থায় ৫-৬ ফুট থাকা বাঞ্ছনীয়। শীত মৌসুমে থাই কৈ ক্ষত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ অবস্থায় শীত আসার পূর্বেই পুকুরে যথাসময়ে চুন প্রয়োগের পাশাপাশি পুকুরের পানি ও মাছের স্বাস্থ্য সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

৭. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ

পুষ্টিসম্মত খাবার ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে মাত্র ৪-৫ মাসে ১০০-১৫০ গ্রাম ওজন বিশিষ্ট থাই কৈ বাজারজাত করা সম্ভব।

৮. চাষী ভাইদের জন্য কিছু গুরুত্তপূর্ণ পরামর্শঃ

  •  লাভজনক মাছ চাষে সঠিকভাবে পুকুর নির্বাচন ও পুকুর প্রস্তুত করতে হবে।
  •  প্রতি মাসে একবার প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম জিওলাইট ব্যবহার করতে হবে।
  •  যে কোন রাক্ষুসে মাছ নিধন করতে হবে।
  •  মানসম্মত পোনা সংগ্রহ করতে হবে।
  •  নিয়মিত ফাইটো প্লাংকটনের ব্লুম হলে খাদ্য সরবরাহ কমিয়ে দিতে হবে।
  •  প্রতি ১০/১২ দিন পর পর মাছের গড় ওজন ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষন করতে হবে।
  • মাছকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবের দেয়া যাবেনা।
  • নিয়মিত পানির পি এইচ ও গ্যাস পরীক্ষা করতে হবে।

মাছের কোন সমস্যা বা রোগ দেখা দিলে মৎস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

৯. তথ্যের উৎসঃ  AIS (www.ais.gov.bd)

১০. কন্টেন্ট তৈরিঃ ২৭/০৬/২০১২

১১. সর্বশেষ সংযোজন :জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com

Leave a Reply