গম | ই-কৃষক

গম

১. ফসলঃ গম
boss

২. জাতঃ

উচ্চ ফলনশীল জাতঃ বর্তমানে এদেশে অধিক আবাদকৃত গম জাতের মধ্যে কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী ও প্রতিভা রয়েছে। সৌরভ (বারি গম-১৯ )এবং গৌরব (বারি গম -২০)উন্নত জাত।

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ উঁচু ও মাঝারি দোআশ মাটি গম চাষের জন্য বেশী উপযোগী। লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়।

৪. বীজঃ

ভালো বীজ নির্বাচনঃ সাধারনত নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো ভালো বীজ নির্বাচনে সহায়ক

রোগমুক্ত,পরিষ্কার,পরিপুষ্ট ও চিটামুক্ত হতে হবে।

সকল বীজের আকার আকৃতি একই ধরনের হবে।

বীজের হারঃ সাধারণ ভাবে একর প্রতি ৪৮ ৫০ কেজি বীজ দরকার হয়ে থাকে।

বীজ শোধনঃ ভিটাভেক্স-২০০ নামক ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ  লাঙ্গল ও মই দিয়ে প্রায় ৫-৬ বার আড়াআড়ি চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে সমতল করুন।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ গমের উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহের বপনের উপযুক্ত সময় হল কার্তিক মাসের শেষ থেকে অগ্রহায়ণর তৃতীয় সপ্তাহ (নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত)। যে সব এলাকায় ধান কাটতে ও জমি তৈরী করতে বিলম্ব হয় সে ক্ষেত্রে কাঞ্চন,আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা ও গৌরব বপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

ছিটিয়ে বা লাইনে বপনঃ সারিতে বা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপনের জন্য জমি তৈরীর পর লাঙ্গল দিয়ে সরু নালা তৈরী করে ৮ ইঞ্চি দূরত্বের সারিতে ১.৫- ২.০ ইঞ্চি গভীরে বীজ বুনতে হয়।

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নাম

সারের পরিমান/শতকে

সেচসহ সেচছাড়া

ইউরিয়া

৭২৯-৮৯১ গ্রাম ৫৬৭-৭২৯ গ্রাম

টিএসপি

৫৬৭-৭২৯ গ্রাম ৫৬৭-৭২৯ গ্রাম

এমপি

১৬২-২০২ গ্রাম ১২১-১৬২ গ্রাম

জিপসাম

৪৪৫-৪৮৬ গ্রাম ২৮৩-৩৬৪ গ্রাম

গোবর/কম্পোষ্ট

২৮-৪০ কেজি ২৮-৪০ কেজি

 

সার প্রয়োগের সময়ঃ সেচসহ চাষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং সম্পূর্ণ টিএসপি,এমওপি ও জিপসাম শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া প্রথম সেচের সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সেচছাড়া চাষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সার অর্থাৎ ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ জমিতে আগাছা দেখা দিলে সাথে সাথে আগাছা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ মাটির প্রকার ভেদে সাধারণত ২-৩টি সেচের প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময় (বপনের ১৭-২১ দিন পরে), দ্বিতীয় সেচ গমের শীষ বের হওয়ার সময়। (বপনের ৫৫-৬০ দিন পর) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের সময় (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) দিতে হবে।

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ
disease

রোগের নাম

লক্ষণ

প্রতিকার

কীটনাসকের নাম

গম বীজের কালো দাগ

ডেক্সলেরা প্রজাতির ও অলটারনারিয়া প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা গমের এ রোগ হয়। এ রোগের ফলে গমের খোসায় বিভিন্ন আকারের বাদামি অথবা কালো দাগ পড়ে। বীজের ভ্রুণে দাগ পড়ে এবং পরবর্তীতে দাগ সম্পূর্ণ বীজে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের জীবাণু বীজের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে। বপন করার পূর্বে ভিটাভেক্স ২০০/টিলথ অনুমদিত মাত্রায় বীজ শোধন করতে  হবে। টিলথ

গমের পাতার দাগ রোগ

বাইপোলারিস সরোকিনিয়ানা নামক ছত্রাক এ রোগ ঘটায়। গাছ মাটির উপর আসলে প্রথমে নীচের পাতাতে ছোট ছোট বাদামি ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে দাগ সমূহ আকারে বাড়তে থাকে এবং গমের পাতা ঝলস দেয়। রোগের জীবাণু বীজে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। বাতাসের অধিক আদ্রতা এবং উচ্চ তাপমাত্রা (২৫ ডিগ্রী সে.) এ রোগ বিস্তারের জন্য সহায়ক। ১. রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।২. গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

৩. প্রতি কেজি গম বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

৪. টিল্ট-২৫০ ইসি (০.০৪%) এক মিলি প্রতি আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

 

টিল্ট-২৫০ ইসি

গমের আলগা ঝুল রোগ

আসটিলেগো ট্রিটিসি নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। গমের শীষ বের হওয়ার সময় এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। উক্ত ছত্রাকের আক্রমণের ফলে গমের শীষ প্রথম দিকে পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। পরে তা ফেটে যায় এবং দেখতে কালো ঝুলের মত দেখায়। ছত্রাকের বীজকণা সহজেয় বাতাসের মাধ্যমে অন্যান্য গাছে এবং অন্য জমির গম গাছে সংক্রমিত হয়। রোগের জীবাণু বীজের ভ্রুণে জীবিত থাকে। পরবর্তী বছর আক্রান্ত বীজ জমিতে বুনলে বীজের অংকুরোদগমের সময় জীবাণুও সক্রিয় হয়ে উঠে। ১. রোগ প্রতিরোধী কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরব জাতের চাষ করতে হবে। ২. রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।৩. ভিটাভেক্স-২০০ ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

 

ভিটাভেক্স-২০০

গমের গোড়া পচা রোগ

স্কেলেরোশিয়াম রলফসি নামক ছত্রাক দ্বারা গমের এ রোগ হয়। এই রোগের ফলে মাটির সমতলে গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়। পরে তা গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং আক্রান্ত স্থানের চারিদিক ঘিরে ফেলে। পরবর্তীতে পাতা শুকিয়ে গাছ মারা যায়। রোগের জীবাণু মাটিতে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে। সাধারণত বৃষ্টির পানি, সেচের পানি দ্বারা এক জমি হতে অন্য জমিতে বিস্তার লাভ করে। ১. রোগ প্রতিরোধী কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরব জাতের চাষ করতে হবে। ২. মাটিতে সব সময় পরিমিত আর্দ্রতা থাকা প্রয়োজন। ৩. ভিটাভেক্স-২০০ নামক ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।  ভিটাভেক্স-২০০

গমের পাতার মরিচা রোগ

পাক্‌সিনিয়া রিকন্ডিটা নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রথমে পাতার উপর ছোট গোলাকার হলুদাভ দাগ পড়ে। শেষ পর্যায়ে এই দাগ মরিচার মত বাদামি বা কালচে রংয়ে পরিনত হয়। হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা ঘষা দিলে লালচে মরিচার মত গুড়া হাতে লাগে। এ রোগের লক্ষণ প্রথমে নিচের পাতায়, তারপর সব পাতায় ও কান্ডে দেখা যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলে এ রোগ বেশী হয়ে থাকে। ১. রোগ প্রতিরোধী গমের জাত কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরবের চাষ করতে হবে।২. সুষম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

৩. টিল্ট ২৫০ ইসি ছত্রাক নাশক (০.০৪%) ১ মিলি আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

গমের পাতার দাগ রোগ দমনঃ বাইপোরারিস সরোকিনিয়ানা নামক ছত্রাক এ রোগ ঘটায়। গাছ মাটির উপর আসলে প্রথমে নীচের পাতাতে ছোট ছোট বাদামি ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে দাগ সমূহ আকারে বাড়তে থাকে এবং গমের পাতা ঝলস দেয়। রোগের জীবাণু বীজে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। বাতাসের অধিক আদ্রতা এবং উচ্চ তাপমাত্রা (২৫ ডিগ্রী সে.) এ রোগ বিস্তারের জন্য সহায়ক।

. টিল্ট ২৫০  ছত্রাক নাশক

 

গমের ইঁদুর দমনে বিষ টোপের ব্যবহার

ইঁদুর গমের একটি প্রধান শত্রু। গম ক্ষেতে বিশেষ করে শীষ আসার পর ইঁদুরের উপদ্রব বেশি দেখা যায়।গম পাকার সময় ইঁদুর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে।বিএআরআই উদ্ভাবিত ২% জিংক সালফাইড বিষটোপ ইঁদুর দমনে ভাল ফলাফল দিয়েছে।

১১. ফসল কাটাঃ
whaet

সময়ঃ চৈত্র মাসের প্রথম থেকে মধ্য-চৈত্র (মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম) পর্যন্ত কেটে গম সংগ্রহ করতে হয়।

১২. পরিবহণ ব্যবস্থাঃ

পরিবহণ পদ্ধতিঃ মাঠ থেকে সাধারনত বাইঙ্কা/ গরুগাড়ি/ ভ্যান / ট্রাক্টরের সাহায্যে গম মারাই করার জন্য উঠানে আনা হয়।

পরিবহণের মাধ্যমঃ বাইঙ্কা / গরুগাড়ি / ভ্যান / ট্রাক্টর ইত্যাদি।

১৩. ফসল মারাইঃ

মারাই পদ্ধতিঃ ভালোভাবে শুকানোর পর পেডেল থ্রেসারের মাধম্যে গম মারাই করা হয়।

১৪. প্যাকেজিং:

প্যাকেজিং পদ্ধতিঃ সাধারনত পাটের তৈরী চটের বস্তা দিয়ে প্যাকেজিং করা হয়।

১৫. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

স্বল্প পরিসরেঃ মাড়াই করার পর অন্তত: পক্ষে ২-৩ বার রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর পাটের তৈরী চটের বস্তা দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।

বৃহৎ পরিসরে (উৎস):মাড়াই করার পর অন্তত: পক্ষে ২-৩ বার রোদে শুকিয়ে (১৪% আদ্র্তা) নিতে হবে। তারপর পাটের তৈরী চটের বস্তা দিয়ে গোডাউনে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

১৬. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ

বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।

১৭. তথ্যের উৎসঃ  AIS, BARI, কৃষি প্রযুক্তি হাত বই।

১৮. সর্বশেষ সংযোজন : জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@amaderkrishi.com

 

 

Leave a Reply