পরিবেশবান্ধব পেস্টিসাইডে বাড়ছে কৃষি বিজ্ঞানীদের মনোযোগ | ই-কৃষক

পরিবেশবান্ধব পেস্টিসাইডে বাড়ছে কৃষি বিজ্ঞানীদের মনোযোগ

natural-pesticides

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন কৃষি ও কৃষি বাস্তুতন্ত্র। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর খাদ্য জোগান দিতে হলে ২০২০ সনের মধ্যে খাদ্য উৎপাদন ৫৮০ মিলিয়ন টন হতে বৃদ্ধি করে ৮৬০ মিলিয়ন টন করতে হবে অর্থাৎ অতিরিক্ত ২৮০ মিলিয়ন টন খাদ্য দ্রুত উৎপাদন করতে হবে। প্রতিবছর সারা বিশ্বে গড়ে ৩০ ভাগ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয় রোগজীবাণু ও পোকামাকড়ের আক্রমণে। যদিও উন্নত বিশ্বের তুলনায় উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোয় এ হার অনেক বেশি। আর খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি মোকাবেলায় ফসলের ফলন বৃদ্ধির বিকল্প নেই। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক নানা অনুষংগ কৃষিতে বয়ে আনছে নানা বিপর্যয়। কৃষকরা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অতিমাত্রায় রাসায়নিকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এতে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ বাড়ছে অন্যদিকে বাস্তুতন্ত্রের নানা উপাদানের মধ্যে সুস্পষ্ট বিশৃংখলা দৃশ্যমান হচ্ছে।

অতিমাত্রায় রাসায়নিকের ব্যবহার পরিবেশের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যকে ঠেলে দিচ্ছে নানা ঝুঁকির মুখে। তাই বর্তমান বিশ্বে ফসল উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে প্রতিনিয়তই। এতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমছে বহুগুণ। এসব পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে ইদানিং অণুজীবের ব্যবহার হচ্ছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়। অনুজীবজগৎ হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অজানা জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডার। পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বর্তমান সিনথেটিক রাসায়নিক নির্ভর কৃষির অন্যতম বিকল্প হিসেবে প্রকৃতিতে বিদ্যমান উপকারি অনুজীবকে বিবেচনা করা হচ্ছে। উপকারি অনুজীবসমূহ ফসলের জন্য ক্ষতিকর অনুজীবকে দমন করে কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন নিশ্চিত করে।

১৯৫৬ সনে ৩৫০ কেজি কীটনাশক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের কৃষিতে কীটনাশকের ব্যবহার প্রথম শুরু হয়। বর্তমান হিসেব অনুযায়ী ১৫ হাজার মেট্রিক টন কীটনাশক ব্যবহার হয়েছে এদেশের মাটিতে। এছাড়া চোরাই পথে আসা শত শত মেট্রিক টন কীটনাশক আসছে বিভিন্ন দেশ থেকে। যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এছাড়াও কৃষকদের ক্রমাগত নির্বিচারে রাসায়নিক ইনসেক্টিসাইড ব্যবহারের ফলে পোকামাকড়গুলো ধীরে ধীরে কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে পড়ে। আবার রাসায়নিক ছত্রাকনাশক ব্যবহারের ফলে জীবাণুগুলো নতুন রেস তৈরি করছে। ফলে এসব রাসায়নিক পেস্টিসাইড পোকমাকড় ও রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে আর কার্যকর থাকছে না। তাই বিশ্বের সচেতন মানুষেরা এখন জৈব কৃষির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন, যেখানে  কোনো প্রকার রাসায়নিক পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হয়না। কৃষি বিজ্ঞানীদের সর্বোচ্চ মনোযোগ এখন পরিবেশবান্ধব পেস্টিসাইড উদ্ভাবনের দিকে।

লেখক: মো. জিয়াউর রহমান ভূঁঞা (পিন্টু), সহকারী অধ্যাপক, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা-১২০৭

সূত্রঃ AgriNews24.com

Leave a Reply