ব্রিধান২৮ জাতে ব্লাস্ট রোগের ব্যাপক আক্রমণ | ই-কৃষক

ব্রিধান২৮ জাতে ব্লাস্ট রোগের ব্যাপক আক্রমণ

18318832_10209337205206737_503835835_o

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ বিডিটাইমস৩৬৫ কে জানান, চলতি বোরো মৌসুমে সারাদেশে ধানের ব্লাস্ট রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি জানান, ব্লাস্ট রোগের নমুনা সংগ্রহ ও মাঠের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) একটি যৌথ প্রতিনিধি দল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধানের ব্লাস্ট আক্রান্ত জমি পরিদর্শণ করে। এসকল অঞ্চলে ব্লাস্ট রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হয়েছে ব্রিধান২৮ জাত। এছাড়াও ব্রিধান২৯, ব্রিধান৫০, ব্রিধান ৬১, ব্রিধান ৬৩ জাতেও আক্রমন পরিলক্ষিত হয়েছে। সাম্প্রতিক ধানের ব্লাস্ট রোগের মহামারির কারনে ১০-১৫ শতাংশ ফলন বিপর্যয়ের আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, ব্লাস্ট বাংলাদেশে ধানের প্রধান রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতিবছরই এ রোগ অল্পবিস্তর দেখা দেয়। তবে এবছর সারাদেশে আক্রমনের মাত্রা ব্যপক। বিশেষকরে উত্তরাঞ্চলে আগে এ রোগ খুব একট দেখা যেতনা। পাতা ব্লাস্ট, গীট ব্লাস্ট এবং শীষ ব্লাস্ট – এই তিন ধরনের ব্লাস্ট রোগের মধ্যে নেক বা শীষ ব্লাস্ট সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর। পাইরিকুলারিয়া ওরাইজি নামক ছত্রাকের আক্রমনে এই রোগ হয়ে থাকে। এ বছরে ধানের ব্লাস্ট রোগের মহামাররি জন্য ঐ ছত্রাকের অনুকূল আবহাওয়াকে দায়ী করেন তিনি। আগাম বৃষ্টিপাত, ঝড়ো আবহাওয়া, দিনে অধিক তাপমাত্রা, রাতের নিন্ম তাপমাত্রা, সকালের কুয়াশা ও শিশির এবং অধিক আদ্রতার কারনে ঐ ছত্রাকের প্রকোপ বেড়েছে বলেও জানান তিনি। আক্রমণের তীব্রতার কারনে একই গাছে পাতা ব্লাস্ট, গীট ব্লাস্ট এবং শীষ ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে। পূর্বে পাতা ব্লাস্টের প্রকোপ বেশী পরিলক্ষিত হলেও এবছর শীষ ব্লাস্টের আক্রমণ ছিল সর্বাধিক। সাধারনত লিফ ব্লাস্টের আক্রমণে পাতায় খাদ্য তৈরি ব্যহত হয়, নোড ব্লাস্টের আক্রমণে উদ্ভিদ মাটি থেকে কোন খাদ্য উপাদান ও পানি শোষণ করতে পারে না এবং নেক ব্লাস্টের আক্রমনে ধানের শীষের গোড়া পঁচে যায়। এ কারনে এবছর ধানের ফলনের ব্যপক ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার এক কৃষক জানান, “গরম ও ঝড়ো হাওয়া আসার পর থেকে এ রোগ দেখা দিয়েছে এবং কয়েকদিনের মধ্যে সারা ক্ষেতে ছড়িয়ে গেছে। ২৮ ধানেই এ রোগ বেশী হয়েছে।”
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবায়ের মাসরুর বলেন, আগামীতে এ রোগ প্রতিরোধে কৃষকদেরকে ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ব্রিধান২৮ ব্লাস্ট রোগের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ায় আগামীতে এ জাতটি চাষ না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও রোগটি প্রতিরোধে ধান কাটার পর নাড়া-খড়কুটো জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা, আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ না করা, শোধিত বীজ ব্যবহার করা, অতিরিক্ত পরিমান ইউরিয়া ব্যবহার না করা, পটাশ সার পরিমান মতো ব্যবহার করা, জমিতে সবসময় পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা। এছাড়াও কুশি অবস্থায় রোগটি দেখা দিলে বিঘা প্রতি প্রায় ৫ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করে সেঁচ দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ধানের থোড় আসার পর একবার এবং ফুল আসার পর আবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে রোগ নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। রোগ প্রতিরোধে (টেবুকোনাজল ৫০% + ট্রাইফ্লুক্সিট্রোবিন ২৫%) জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমনঃ নাটিভো ৭৫ ডব্লিউপি ১০ লিটার পানিতে ৭.৫ গ্রাম মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করা, অথবা প্রতি লিটার পানিতে ট্রাইসাইকাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমনঃ ট্রপার ৭৫ ডব্লিউপি বা জিল ৭৫ ডব্লিউপি ০.৮১ গ্রাম বা এ রোগের জন্য অনুমোদিত অন্যান্য ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
এছাড়াও আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ আগামী বছর ব্রিধান২৮ এর পরিবর্তে ব্রিধান৫৮, ব্রিধান ৬৭, ব্রিধান ৬৯ সহ অন্যান্য ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাতের ধান চাষের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন আমরা উন্নত গবেষণার জন্য এ রোগের জীবানু সংগ্রহ করেছি। ব্লাস্ট প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবনে উন্নততর গবেষণা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

সুত্রঃ বিডিটাইমস৩৬৫, ৬মে, ২০১৭ 

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ বিডিটাইমস৩৬৫ কে জানান, চলতি বোরো মৌসুমে সারাদেশে ধানের ব্লাস্ট রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি জানান, ব্লাস্ট রোগের নমুনা সংগ্রহ ও মাঠের বাস্তব অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) একটি যৌথ প্রতিনিধি দল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধানের ব্লাস্ট আক্রান্ত জমি পরিদর্শণ করে। এসকল অঞ্চলে ব্লাস্ট রোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হয়েছে ব্রিধান২৮ জাত। এছাড়াও ব্রিধান২৯, ব্রিধান৫০, ব্রিধান ৬১, ব্রিধান ৬৩ জাতেও আক্রমন পরিলক্ষিত হয়েছে। সাম্প্রতিক ধানের ব্লাস্ট রোগের মহামারির কারনে ১০-১৫ শতাংশ ফলন বিপর্যয়ের আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।  
আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, ব্লাস্ট বাংলাদেশে ধানের প্রধান রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতিবছরই এ রোগ অল্পবিস্তর দেখা দেয়। তবে এবছর সারাদেশে আক্রমনের মাত্রা ব্যপক। বিশেষকরে উত্তরাঞ্চলে আগে এ রোগ খুব একট দেখা যেতনা। পাতা ব্লাস্ট, গীট ব্লাস্ট এবং শীষ ব্লাস্ট – এই তিন ধরনের ব্লাস্ট রোগের মধ্যে নেক বা শীষ ব্লাস্ট সবচেয়ে বেশী ক্ষতিকর। পাইরিকুলারিয়া ওরাইজি নামক ছত্রাকের আক্রমনে এই রোগ হয়ে থাকে। এ বছরে ধানের ব্লাস্ট রোগের মহামাররি জন্য ঐ ছত্রাকের অনুকূল আবহাওয়াকে দায়ী করেন তিনি। আগাম বৃষ্টিপাত, ঝড়ো আবহাওয়া, দিনে অধিক তাপমাত্রা, রাতের নিন্ম তাপমাত্রা, সকালের কুয়াশা ও শিশির এবং অধিক আদ্রতার কারনে ঐ ছত্রাকের প্রকোপ বেড়েছে বলেও জানান তিনি। আক্রমণের তীব্রতার কারনে একই গাছে পাতা ব্লাস্ট, গীট ব্লাস্ট এবং শীষ ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে। পূর্বে পাতা ব্লাস্টের প্রকোপ বেশী পরিলক্ষিত হলেও এবছর শীষ ব্লাস্টের আক্রমণ ছিল সর্বাধিক। সাধারনত লিফ ব্লাস্টের আক্রমণে পাতায় খাদ্য তৈরি ব্যহত হয়, নোড ব্লাস্টের আক্রমণে উদ্ভিদ মাটি থেকে কোন খাদ্য উপাদান ও পানি শোষণ করতে পারে না এবং নেক ব্লাস্টের আক্রমনে ধানের শীষের গোড়া পঁচে যায়। এ কারনে এবছর ধানের ফলনের ব্যপক ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। 
চুয়াডাঙ্গা জেলার এক কৃষক জানান, “গরম ও ঝড়ো হাওয়া আসার পর থেকে এ রোগ দেখা দিয়েছে এবং কয়েকদিনের মধ্যে সারা ক্ষেতে ছড়িয়ে গেছে। ২৮ ধানেই এ রোগ বেশী হয়েছে।”
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবায়ের মাসরুর বলেন, আগামীতে এ রোগ প্রতিরোধে কৃষকদেরকে ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ব্রিধান২৮ ব্লাস্ট রোগের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ায় আগামীতে এ জাতটি চাষ না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও রোগটি প্রতিরোধে ধান কাটার পর নাড়া-খড়কুটো জমিতেই পুড়িয়ে ফেলা, আক্রান্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ না করা, শোধিত বীজ ব্যবহার করা, অতিরিক্ত পরিমান ইউরিয়া ব্যবহার না করা, পটাশ সার পরিমান মতো ব্যবহার করা, জমিতে সবসময় পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবিদরা। এছাড়াও কুশি অবস্থায় রোগটি দেখা দিলে বিঘা প্রতি প্রায় ৫ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করে সেঁচ দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ধানের থোড় আসার পর একবার এবং ফুল আসার পর আবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে রোগ নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। রোগ প্রতিরোধে (টেবুকোনাজল ৫০% + ট্রাইফ্লুক্সিট্রোবিন ২৫%) জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমনঃ নাটিভো ৭৫ ডব্লিউপি ১০ লিটার পানিতে ৭.৫ গ্রাম মিশিয়ে বিকেলে স্প্রে করা, অথবা প্রতি লিটার পানিতে ট্রাইসাইকাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমনঃ ট্রপার ৭৫ ডব্লিউপি বা জিল ৭৫ ডব্লিউপি ০.৮১ গ্রাম বা এ রোগের জন্য অনুমোদিত অন্যান্য ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
এছাড়াও আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ আগামী বছর ব্রিধান২৮ এর পরিবর্তে ব্রিধান৫৮, ব্রিধান ৬৭, ব্রিধান ৬৯ সহ অন্যান্য ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাতের ধান চাষের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন আমরা উন্নত গবেষণার জন্য এ রোগের জীবানু সংগ্রহ করেছি। ব্লাস্ট প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবনে উন্নততর গবেষণা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

Leave a Reply