আগাম বন্যা বা ঢলের সামনে পড়ে কৃষক কোন মিনতি করেন?
প্রকৃতির কাছে মিনতি করেন আরও কয়েকটা দিন সময়, যাতে ধান বা পাট কাটার উপযুক্ত হয়।
আগাম বন্যার আগাম প্রতিরক্ষা তাঁরা পেতেন যদি আগাম ফসলের বীজ সরকার তাঁদের দিত।
গত বছরের জুলাই-আগস্টের বন্যার সময় ফরিদপুরে পদ্মার চরের কৃষকের আহাজারি শুনেছি, ‘আর কয়টা দিন যদি পাইতাম!’
সে সময় থেকেই আগাম ধানের বীজ নিয়ে একজন কাজ শুরু করে দেন। বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী। তিনি অযৌন বীজ উৎপাদন (এফআইএস) সংক্রান্ত তিনটি নতুন জিন আবিষ্কার করে এপোমিক্সিসের সূচনা করেন। শিক্ষকতা ও গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট হেলথ, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং ফ্রান্সের ইকোল নরমাল সুপিরিয়রের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থায় একটি গবেষক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়া জন্মস্থান সিলেটের কুলাউড়ার নিজস্ব খামার ও গবেষণাগারে জিন গবেষণা চালু রেখেছন। এখানেই তাঁর নেতৃত্বে একদল গবেষক ৩০০ জাতের ধানের প্রকরণ উদ্ভাবন করেছেন এবং অনেক বিলুপ্ত জাতের ধানের বীজ ফিরিয়ে এনেছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সঙ্গে বৈঠক করে শনিবার দুপুরে নিজের খামার এলাকা সিলেটের কানিহাটিতে ফিরছিলেন। তখন ফোনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
আবেদ চোধুরী বলছিলেন, ‘বর্তমান বোরো ফসল পানির দেশের জন্য অনুপযোগী। এই ধান হয় ১৩০ থেকে ১৬০ দিনে। হাওরের প্লাবন হয় এপ্রিল মাসে। আমাদের এমন এক জাতের ধান লাগবে, যা ১ এপ্রিলের আগেই কেটে ফেলা যায়। সুপার আর্লি বন্যার মোকাবিলায় চাই সুপার আর্লি ধানের জাত। বন্যার সঙ্গে মানানসই তেমন জাতই হলো আউশ। আউশ কথাটা এসেছে আশু থেকে; ভাষার অপনিহিতি নিয়মে লোকমুখে আশু হয়ে গেছে আউশ। এটা সুপার আশু ধান। অথচ এই শস্যের ইতিহাস আমরা ভুলে গেছি। হাজার বছর ধরে এটার বিকাশ হয়েছে। এর বিভিন্ন জাতের চাষ হতো হাওর ও জলাভূমি এলাকায়। দুই মাসে ফুল আসত বলে দুমাই বা দুমাহি কিংবা ষাট্টাও বলে। কোনো এলাকায় বলে কাছালট, চেংরি ও বাওরস। যে ধান আউশে হয় ৭৫ দিনে, সেটা বোরোতে হবে নব্বই দিনে। নব্বই দিনের জাতের ধান আমরা মাঠেও পরীক্ষা করেছি। আগামী বছর এটা হাওরে লাগালে ঢল আসার আগেই ফসল কেটে ঘরে তোলা যাবে। অথচ এমন সব দারুণ জাতকে আমরা নির্বাসিত করেছি।’
সুত্রঃ প্রথম আলো, ০৬ মে, ২০১৭