ধান ফসলের জমিতে ডাল পোতা/পার্চিং | ই-কৃষক

ধান ফসলের জমিতে ডাল পোতা/পার্চিং

Image may contain: 1 person , grass, outdoor and nature

আর্থিক ক্ষতি কমানো, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন এখন সময়ের দাবি। তাছাড়া, আধুনিক কৃষির জন্য চ্যালেঞ্জও বটে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রমে নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণবিদগণ এসব প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে দ্রুতই ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে সুফল ভোগ করছেন কৃষকরা। রক্ষা পাচ্ছে নির্মল পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য।

পার্চিং
ইংরেজি শব্দ পার্চ মানে হলো উঁচু স্থানে বসা। জমিতে উঁচু স্থানে পাখি বসার সুযোগ তৈরি করাই পার্চিং। উঁচু স্থান তৈরি করার ক্ষেত্রে বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডালপালা, ধৈঞ্চা গাছ এসব ব্যবহার করা যায়। পার্চিং পোকা দমনের একটি যান্ত্রিক পদ্ধতি। আইপিএম কৌশলের অন্যতম সবুজ প্রযুক্তি পার্চিং খুবই সহজ, কম খরচ ও পরিবেশবান্ধক পোকা মাকড় দমনের প্রযুক্তি।

পার্চিংয়ের উদ্দেশ্য:
পোকা ধরে খাওয়ার জন্য পাখিকে বসার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করাই মূল উদ্দেশ্য। ফলে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়। ফসলের উৎপাদন খরচ কমে। বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখা যায়। তাছাড়া পার্চিংয়ের মাধ্যমে পোকার বংশবিস্তার কমানো যায়। সহজেই পোকার বসতি ধ্বংস করা যায়। এমনকি পোকার বসতি তৈরি করার সুযোগ নষ্ট করা যায়।
এছাড়াও পাখির বিষ্টা জমিতে জৈব পদার্থ যোগ করে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।

পার্চিংয়ের প্রকারভেদ:
দুই ধরনের পার্চিং পদ্ধতি রয়েছে। যথা:
1. মৃত পার্চিং: বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডালপালা ইত্যাদি।

2. জীবন্ত পার্চিং: ধৈঞ্চা গাছ। জীবন্ত পার্চিংয়ের ক্ষেত্রে আফ্রিকান ধৈঞ্চা খুবই উপকারি। বাংলাদেশে বহুলভাবে চাষকৃত আফ্রিকান ধৈঞ্চা পার্চিং হিসেবে পোকা দমন করে। ধৈঞ্চা গাছে বসে পাখি দুল খেতে পছন্দ করে। ধৈঞ্চা গাছের পাতা, নডিউল জমিতে বাড়তি জৈব সার যোগাতে সহযোগিতা করে। একমাস বয়সী ধৈঞ্চা গাছ ফসলের মূল জমিতে লাগানো উচিত। ফসলের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে কমপক্ষে একফুট উচ্চতায় পার্চিং করা উচিত।

পার্চিংয়ের সংখ্যা:
সাধারণত বন্ধু পোকা মাকড়গুলো খাবার সংগ্রহের জন্য বেশি বেশি নড়াচড়া ও চলাফেরা করে। অন্যদিকে ক্ষতিকর পোকা মাকড় চুপচাপ বসে রস চুষে খায় বা ফসল কেটে কেটে বা কুড়ে কুড়ে খায়। এসব চুপচাপ ক্ষতিকর পোকা ধরে খাওয়ার জন্যই একটু ঘনঘন পার্চিং দেয়া হয়। পাখি যেন সহজেই ক্ষতিকর পোকা মাকড়দের দেখতে পায় এবং ধরতে পারে। ধান ফসলে প্রতি ০৫ শতকে ০১ টি করে পার্চিং ব্যবহার করতে হয়। যা বিঘায় প্রায় ০৬ টি। এভাবে একর প্রতি প্রায় ১৮ টি থেকে ২০ টি পার্চিং ব্যবহার করতে হয়।

পার্চিং স্থাপনের সময়:
ফসল রোপনের পরপরই পার্চিং স্থাপন করতে হবে। যে সব এলাকায় বাবুই পাখি, চড়ই পাখি, টিয়া পাখি আছে, সেসব এলাকায় চাষকৃত ধানের পাকা স্তরে পার্চিং তুলে নিতে হবে। অন্যথায় পার্চিং তুলে ফেলার দরকার নেই।

পার্চিংয়ে বসে দোল খেতে খেতে পাখিরা আরামে পোকা ধরে খায়। সব পাখিরাই কিন্তু পার্চিয়ে বসে না। মূলত ফিঙ্গে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়রা এসব পাখিরা পার্চিং এ বসে পোকা ধরে খায়। এক গবেষণায় জানা যায়, একটি ফিঙে পাখি সারা দিনে কমপক্ষে ৩০ টি করে মাজরা পোকার মথ, ডিম, কীড়া ও পুত্তলী খেয়ে থাকে। একটি পাখির দ্বারা প্রতি মাসে কমপক্ষে ২ লাখ ৭০ হাজার পোকা ধ্বংস করা সম্ভব হয়।

পার্চিংয়ে যে সব পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ হয়:
পাখিরা মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি পোকা, ধানের স্কিপার পোকার মথ ধরে ধরে খায়। লার্ভা বা কীড়াগুলোর মধ্যে শিষ কাটা লেদা পোকা, সবুজ শুড় লেদা পোকার কীড়া খায়। খাটো শুড় ঘাস ফড়িং, লম্বা শুড় ঘাস ফড়িং, উড়চুঙ্গা এসব ফড়িং গুলোও খায়। তাছাড়া পাখিরা বন্ধু পোকাগুলোর মধ্যে লেডি বার্ড বিটল, ক্যারাবিড বিটল এসব পোকাও খায়।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: Muhaiminur Rashid Hanif ভাই।

Leave a Reply