শ্রাবণ মাসে কৃষক ভাইদের করণীয় | ই-কৃষক

শ্রাবণ মাসে কৃষক ভাইদের করণীয়

আউশ ধান:
এ সময়ে আাউশ ধান পাকে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে পাকা আউশ ধান কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে শুকিয়ে নিতে হবে। পাকা আউশ ধান কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে শুকিয়ে নিন। এ কাজের জন্য আপনি থ্রেসার, উইনার, ড্রায়ার এসব যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। এতে বেশ সহজে এবং কম খরচে ধান মাড়াই-ঝাড়াই ও শুকানোর কাজটি করা যায়। বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

আমন ধান:
শ্রাবণ মাস আমন ধানের চারা রোপনের ভরা মৌসুম। রোপা আমনের আধুনিক এবং উন্নত জাতগুলো হলো বিআর৩, বিআর৮, বিআর৫, বিআর১০, বিআর২২, বিআর২৩, বিআর২৫, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৩১, ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৭, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৩৯, বিনাশাইল, নাইজারশাইল, বিনাধান৪। উপকূলীয় অঞ্চলে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে উপযোগী উফশী জাতের (ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৪৪, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬২) চাষ করতে পারেন।
খরা প্রকোপ এলাকায় নাবি রোপা আমনের পরিবর্তে যথাসম্ভব আগাম রোপা আমন (ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪) চাষ করতে পারেন। এই সময়ে উফশী জাতের রোপা আমন ধানের চারা মূল জমিতে রোপন করতে পারেন। সে সঙ্গে জমির এক কোণে গর্ত করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন। চারার বয়স ৩০ থেকে ৩৫ দিন হলে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। জমি তৈরি হওয়ার পর ২৫ সেমি দূরে দূরে লাইন করে ১৫ সেমি দূরে দূরে চারা রোপণ করুন। প্রতি গুছিতে ২/৩টি সুস্থ সবল চারা রোপণ করুন।
উফশী জাতের রোপা আমন জাতগুলো উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভাল ফলন পাওয়া যায়। সময় সুযোগ থাকলে আমনের চারা রোপণের আগে সবুজ সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারেন। এতে মাটির জন্যও ভালো, কম খরচে অধিক ফলনে সহায়ক হয়। বর্তমানে সুগন্ধি এবং চিকন চালের বেশ চাহিদা থাকায় কাটারিভোগ, কালিজিরার মতো দেশী উন্নত জাত চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
আমন ধানের ক্ষেতে সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা দরকার। এ জন্য জমির উর্বরতা অনুসারে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। তবে জমিতে সার দেওয়ার ব্যাপারে মাটি পরীক্ষা করে সার দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের ১২ থেকে ১৫ দিন পর প্রথমবার ইউরিয়া সার ক্ষেতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম উপরি প্রয়োগের ১৫ থেকে ২০ দিন পর দ্বিতীয়বার এবং তার ১৫ থেকে ২০ দিন পর তৃতীয়বার ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে চারা লাগানোর ১০ দিনের মধ্যে প্রতি চার গুছির জন্য ১৮ গ্রামের ১টি গুটি ব্যবহার করতে হবে। এজন্য চারা লাইনে রোপণ করতে হবে।
পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ধানের ক্ষেতে বাঁশের কঞ্চি বা ডাল পুঁতে দিতে পারেন যাতে পাখি বসতে পারে এবং এসব পাখি পোকা ধরে খেতে পারে। ধান ক্ষেতের আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে অনুমোদিত আগাছানাশক ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। আপনি বালাইনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক ঔষধ, সঠিক সময়, সঠিক মাত্রা ও সঠিক নিয়মে ব্যবহার করবেন।

পাট:
ক্ষেতের অর্ধেকের বেশি পাট গাছে ফুল আসলে পাট কাটতে হবে। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং ফলনও ভালো পাওয়া যায়। পাট পচানোর জন্য আঁটি বেঁধে পাতা ঝড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে তারপর জাগ দিতে হবে। ইতোমধ্যে পাট পঁচে গেলে তা আঁশ ছাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাটের আঁশ ছাড়িয়ে ভালো করে ধোয়ার পর ৪০ লিটার পানিতে এককেজি তেঁতুল গুলে তাতে আঁশ ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে, এতে উজ্জ্বল বর্ণের পাট পাওয়া যায়।
যেসব জায়গায় জাগ দেয়ার পানির অভাব সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পঁচাতে পারেন। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং পচন সময় কমে যায়। তবে মনে রাখতে হবে পাট কাটার সঙ্গে সঙ্গে ছালকরণ করতে হবে, তা না হলে পরবর্তীতে রৌদ্রে পাটগাছ শুকিয়ে গেলে ছালকরণে সমস্যা হবে। বন্যার কারণে অনেক সময় সরাসরি পাটগাছ থেকে বীজ উৎপাদন সম্ভব হয় না। তাই পাটের ডগা বা কান্ড কেটে উঁচু জায়গায় লাগিয়ে তা থেকে খুব সহজেই বীজ উৎপাদন করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

তুলা:
রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলে আগাম শীত আসে, সে জন্য এসব অঞ্চলে এ মাসের মধ্যে তুলার বীজ বপন করতে হবে।

শাকসবজি:
বর্ষাকালে শুকনো জায়গার অভাব হলে টব, মাটির চাড়ি, কাঠের বাক্স এমনকি পলিথিন ব্যাগে সবজির চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময়ে সবজি বাগানে করণীয় কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে মাদায় মাটি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার, গাছের গোড়ায় পানি জমতে না দেয়া, মরা বা হলুদ পাতা কেটে ফেলা, প্রয়োজনে সারের উপরিপ্রয়োগ করা।
লতানো সবজির দৈহিক বৃদ্ধি যত বেশি হবে তার ফুল ফল ধারণক্ষমতা তত কমে যায়। সেজন্য বেশি বৃদ্ধি সমৃদ্ধ লতা গাছের ১৫ থেকে ২০ শতাংশের পাতা লতা কেটে দিলে তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরবে। কুমড়াজাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোরবেলা হাত পরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে।
গত মাসে শিম ও লাউয়ের চারা রোপণের ব্যবস্থা না নিয়ে থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আগাম জাতের শিম এবং লাউয়ের জন্য প্রায় ৩ ফুট দূরে দূরে ১ ফুট চওড়া ও ১ ফুট গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে। বর্ষায় পানি যেন মাদার কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সম্ভব হলে মাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে।

গাছপালা:
এখন সারা দেশে গাছ রোপণের কাজ চলছে। ফলদ, বনজ এবং ঔষধি বৃক্ষজাতীয় গাছের চারা বা কলম রোপনের ব্যবস্থা নিতে হবে। উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে একহাত চওড়া এবং একহাত গভীর গর্ত করে অর্ধেক মাটি এবং অর্ধেক জৈবসারের সঙ্গে ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ১০০ গ্রাম এমওপি ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। সার ও মাটির এ মিশ্রণ গর্ত ভরাট করে রেখে দিতে হবে। দিন দশেক পরে গর্তে চারা বা কলম রোপণ করতে হবে। ভালো জাতের সুস্থ্য স্বাস্থ্যবান চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে এবং খুঁটির সাথে সোজা করে বেঁধে দিতে হবে। গরু ছাগলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রোপণ করা চারার চারপাশে বেড়া দিতে হবে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
কৃষিবিদ Muhaiminur Rashid Hanif ভাই।

Leave a Reply