৫৪ গুণ বেশি ফলন দেবে যে ধান | ই-কৃষক

৫৪ গুণ বেশি ফলন দেবে যে ধান

৫৪ গুণ বেশি ফলন দেবে যে ধানপ্রখ্যাত জীন বিজ্ঞানী টনি মিলার নতুন ধরনের প্রোটিন সমৃদ্ধ ধানের জাত আবিষ্কার করেছেন যেটি সাধারণ জাতের চেয়ে কমপক্ষে ৫৪ ভাগ বেশি ফলন দেবে।

মুলার বলছেন, তার এই প্রোটিন সমৃদ্ধ ধান নিজেই নিজের পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ফলে এই জাতটি মাটি থেকে উচ্চতর মাত্রার নাইট্রোজেন, আয়রন এবং ফসফরাস গ্রহণ করতে পারে। বিজ্ঞানভিত্তিক পত্রিকা সায়েন্স ডেইলির এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ধান বিশ্বের অন্যতম একটি প্রধান খাদ্য শস্য। বিশ্বের প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ এই খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া অন্য দানাদার শস্যগুলোও মোট উৎপাদন ব্যয়ের তালিকায় নাইট্রোজেন অন্যতম। এই নাইট্রোজেনের অতিরিক্ত ব্যবহার একদিকে যেমন অর্থের অপচয় করছে তেমনি ক্ষতি করছে পরিবেশেরও।

নাইট্রোজেন হচ্ছে উদ্ভিদের শারীরিক বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান যা মাটিতে নাইট্রেট এবং অ্যামোনিয়াম আয়ন হিসেবে থাকে। উদ্ভিদ এগুলো শিকড়ের মাধ্যমে গ্রহণ করে। পরিমাণ মতো নাইট্রেট এবং অ্যামোনিয়াম গ্রহণ উদ্ভিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা অতিরিক্ত অ্যামোনিয়ামে উদ্ভিদ কোষ ক্ষারীয় এবং বেশি নিইট্রেটের উপস্থিতিতে সেগুলো অম্লীয় হয়। কাজেই পিএইচ মাত্রা সঠিক না হলে উদ্ভিদের এনজাইম সঠিক ভাবে কাজ করে না। ফলে উদ্ভিদ স্বাস্থ্য এবং ফলনে ব্যাপক প্রভাব পড়ে।

কীভাবে ধান গাছ পরিবর্তনশীল আবহাওয়ায় পিএইচ মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তার একটি ছক আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী মিলার তার নানজিং গবেষকরা।

বিজ্ঞানী মিলার হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান জন ইনেস সেন্টরের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী যিনি মুলক মলিকুলার বায়োলজি নিয়ে কাজ করেন।

মুলারের দাবি, ধানে একটি বিশেষ ধরনের জীন আছে। যেটিকে বলা হচ্ছে OsNRT2.3। এটিই মুলত প্রোটিন তৈরি এবং নাইট্রেট পরিবহন করে। প্রোটিন পার্থক্যের কারণে এই জীনের আবার দুটি রুপ হয়েছে। OsNRT2.3a ও OsNRT2.3b। বিজ্ঞানী মিলার আবিষ্কার করেন যে, ধানের অভ্যন্তরীণ পিএইচ এর ওপর নির্ভর করে OsNRT2.3b জীনটি নাইট্রেট এর চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে।

যখন b প্রোটিন ধানের গাছে প্রকট আকারে প্রকাশ পায়, তখন ধানগাছ পরিবর্তিত পরিবেশের পিএইচ এ বেশি কার্যকরী হয়। ফলে গাছ বেশি পরিমাণে নাইট্রোজেন, আয়রন এবং ফসফরাস গ্রহণ করতে পারে।

গবেষণা বলছে, এঅবস্থায় ধানের ফলন কমপক্ষে ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং নাইট্রোজেনের ব্যবহার ৪০ শতাংশ বাড়ে।

মিলার বলেন, ‘আমরা জানি কোন নির্দিষ্ট জীনের কারণে ধানের নাইট্রোজেন ব্যবহার এবং ফলন অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়ে। কাজেই আমরা এখন চাইলেই উচ্চ ফলনশীল নতুন ধানের জাত তৈরি করতে পারব। এমনি অন্য ফসলও। এটি আমাদের এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছে যে, পরিবেশের কোনো ক্ষতি ছাড়াই বিশ্বের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারব।

এরইমধ্যে এই প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে ৬টি ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবনের পদক্ষে নিয়েছে ৩টি বহুজাতিক কোম্পানি। যেখানে চাইনিজ সরকারের মুখ্য ভূমিকা রয়েছে।

এসপি/একে

সূত্র: সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তন ডেস্ক / ৯:০১ অপরাহ্ন, জুন ০৯,২০১৬

Leave a Reply