পান | ই-কৃষক

পান

১. ফসলঃ পান
images

২. জাতঃ

দেশী জাতঃ সাধারনত বাংলা, মিঠা, সাচি, কর্পূরী, গ্যাচ, নাতিয়াবাসুত, উজানী, মাঘি, দেশী, বরিশাল ও ঝালি প্রভৃতি জাতের পান বরজে চাষ করা হয়

৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ পান চাষের জন্য দরকার উঁচু, বন্যামুক্ত, বেলে দোআঁশ বা এটেল দোআঁশযুক্ত জমি। (ছায়াযুক্ত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া পান চাষের জন্য ভাল)।

৪. বীজঃ

বীজের হারঃ কাটিং সামান্য কাৎ করে (৪৫ ডিগ্রী) অর্ধেক অংশ মাটির ভেতর এবং বাকি অংশ চোখ বা মুকুল মাটির ওপর রাখা হয়। দ্বিসারি পদ্ধতিতে ৩-৬ ইঞ্চি লম্বা কাটিং লাগে শতক প্রতি ৪০০-৫০০ টি।

৫. জমি তৈরীঃ

জমি চাষঃ জমিকে আগাছামুক্ত, সমতল ও উঁচু করে তৈরি করে প্রতি ৬০ সে.মি পর পর ২০ সে.মি চওড়া করে নালা তৈরি করে নিতে হয়। বরোজের বাইরে একটি বড় নিকাশ নালার সাথে ছোট নালাগুলোকে যুক্ত করে দিতে হয়।

৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ

বপন ও রোপন এর সময়ঃ সাধারণত বর্ষাকাল বা আষাঢ় মাস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়।

রোপনঃ বরোজের ভেতরে চারিদিকে ২৫ ইঞ্চি চওড়া রাস্তা রাখতে হয়। প্রতিটি বেড ৫০ ইঞ্চি চওড়া করে তৈরি করে নেয়া দরকার। প্রতিটি বেডে দুই লাইনে চারা রোপণ করতে হয়। একটি লাইন থেকে আরেকটি লাইনের দূরত্ব ১২-১৫ ইঞ্চি রাখতে হয়। আবার প্রতি দুই বেডের মাঝখানে ১২ ইঞ্চি নালা রাখা দরকার।

৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ

সারের নামঃ তিলের খৈল বা নিম তৈল, টিএসপি, এমওপি, ইউরিয়া ও এসএসপি।

সার প্রয়োগের সময়ঃ প্রাথমিক ভাবে জমি তৈরির সময় শেষ চাষের পর মাটিতে একর প্রতি ২০০ কেজি তিলের খৈল বা নিম তৈল, ৪০ কেজি টিএসপি ও ৬০ কেজি এমওপি সার মিশিয়ে দেয়া দরকার। পরবর্তিতে প্রতি শতক জমির জন্য খৈল ২০ কেজি, ২.৫ কেজি এসএসপি, ৬০০ গ্রাম এমওপি এবং ১.৮ কেজি ইউরিয়া সার সমান চার ভাগ করে বছরে ৪ বার জমিতে প্রয়োগ করতে হয়।

৮. আগাছা দমনঃ

সময়ঃ কাটিং এর গোড়ার আস পাশে আগছা হলে, আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

দমন পদ্ধতিঃ ছোট কোদাল/নীড়ানির সাহায্যে আগাছা পরিষ্কার করা যেতে পারে।

৯. সেচ ব্যবস্থাঃ

সেচের সময়ঃ পরিমিত পানি / সেচ দিতে হবে এবং চারা রোপণের পর ঝাঝরি দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।

নিষ্কাশনঃ বেশি পানি তাকলে তা বের করে দিতে হবে।

১০. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ
tocp58_3

রোগের নাম

লক্ষন

প্রতিকার

কীটনাশকের নাম

গোড়া পঁচা

এটি এক ধরণের ছত্রাকের আক্রমণের কারনে হয়ে থাকে। বোঁর্দে মিশ্রণ দিযে মাটি শোধন করলে রোগের আক্রমণ কম হয়। আক্রমণ বেশি হলে ডায়থেন এম-৪৫ বা রিডোমিল গোল্ড/ফলিও গোল্ড ছত্রাক নাশক ২.৫ গ্রাম/লি. পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয। রিডোমিল গোল্ড/ফলিও গোল্ড

পানের লিফ স্পট

প্রাউড ২৫ ইসি ১মিলি/লি. হারে স্প্রে করতে হবে। প্রাউড ২৫ ইসি
রিডোমিল গোল্ড এম জেড ৬৮ ডব্লিউ জি- ২.৫ গ্রাম / লি. পানি রিডোমিল গোল্ড এম জেড ৬৮ ডব্লিউ জি
টিলথ ২৫০ ইসি; ০.৫ এম এল / লি. পানি টিলথ ২৫০ ইসি

পানের পাতা পঁচা

নিউবেন ৭২ ডব্লিউ পি-২.৫ মিলি/লি হারে স্প্রে করতে হবে। নিউবেন ৭২ ডব্লিউ পি

 

১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ

রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা: কাটিং থেকে অনেক সময় অনেকগুলো চারা জন্মে, সেৰেত্রে অপ্রয়োজনীয় চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। লতা বাড়তে বাড়তে বরোজের ছাউনি বা ছাদে ঠেকে গেলে নীচের দিকের পাতা তুলে রতাটি নামিয়ে দিতে হয়। এতে পান পাতার আকার স্বাভাবিক থাকে এবং ফলনও বেশি পাওয়া যায়। বছরে ৩/৪ বার গোড়ার মাটি তুলে দেয়া দরকার।

বরোজ তৈরি
img.177255_t:
পান গাছকে ছায়া দেয়া ও প্রবল বাতাসের হাত থেকে রৰা করার জন্য উন্নতমানের বরোজ তৈরি করা একান্ত জর্বরি। বরোজ তৈরিতে পাকা বাঁশ/খুঁটি, বাঁশের চটা, ছন বা কাশ জাতীয় ঘাস, খড় এসবের দরকার হয়। বরোজ তৈরির জন্য প্রথমে ২.৫-৩.০ মিটার লম্বা পাকা বাঁশের খুঁটি তৈরি করে গোড়ায় আলকাতরার প্রলেপ দিতে হবে। এতে বরোজে উঁইয়ের আক্রমণ হবে না। খুঁটি চারিদিকে পোঁতার পর তাতে বাঁশের চটা, ছন/খড় দিয়ে ছাউনি ও শুকনা কলাপাতা, খেজুর পাতা, সুপাড়ি পাতা এসব দিয়ে বেষ্টনী বা বেড়া দেয়া হয়। ভেতরে চারা রোপনের পর প্রয়োজনমত কাঠি দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়।

লতা নামানো

পানের লতা বরজের (পান চাষের জন্য তৈরি ছাউনি বা ঘর) ছাউনি পর্যন্ত (২-২.৫ মিটার উচ্চতা) পৌঁছালে তা টেনে নিচে নামিয়ে পাতাছাড়া অংশকে পেঁচিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। একে বলে পানের লতা নামানো। বছরে সাধরাণত দু’বার (১৫ ফেব্রুয়ারি-১৫ এপ্রিল এবং ১৫ জুলাই-১৫ সেপ্টেম্বর) পানের লতা নামানো হয়। গাছের বৃদ্ধির উপর নির্ভর করে লতা নামাতে হবে। বৃদ্ধি বেশি হলে ঘনঘন নামাতে হবে। লতা নামানোর আগে সংগ্রহ করার যোগ্য সব পান তুলে ফেলতে হবে। লতার উপরের ১২-২০ ইঞ্চি অংশ মাটির উপরে রেখে নিচের অংশটুকু গোল করে অথবা বাংলা ৪ এর মতো করে পেঁচিয়ে মাটির নিচে পুঁতে দিতে হবে।

১২. ফসল কাটাঃ

সময়ঃ বর্ষাকালে চারা রোপণ করা হলে ৫-৬ মাস পর থেকেই পাতা তোলা শুরু করা যায়। নিচের দিকের পাতা আগে তুলতে হয়। এতটি পাতা সম্পূর্ণভাবে পরিণত হতে ৬-৮ সপ্তাহ সময় দরকার হয়।

পদ্ধতিঃ সাধারনত হাত দিয়ে পান পাতা তুলতে হয়। লতার নিচের দিকের পাতা আগে তুলতে হয়।

১৩. পরিবহণ ব্যবস্থাঃ

পরিবহণ পদ্ধতিঃ বাঁশ ও কলাপাতা দিয়ে মোড়কে বেধে পরিবহণ করা যেতে পারে।

পরিবহণের মাধ্যমঃ ভার / বাইঙ্কা / ভ্যান / ট্রাকের মাধ্যমে পরিবহন করতে হবে।

১৫. প্যাকেজিং:

প্যাকেজিং পদ্ধতিঃ ভালো পান পাতা বাছায়ের পর তা ভেজা কাপর বা কলা পাতা দিয়ে মোড়কে সাজাতে হবে। মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। একটি মোড়কে ১০ হাজার এর বেশি পান রাখা ঠিক নয়।

১৬. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

স্বল্প পরিসরেঃ পাতা বেশিক্ষণ সতেজ রাখার জন্য প্যাকিং করার সময় একটু পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।  মোড়োকে সাজানোর পর ২-৩ দিন সংরক্ষণ করা যায়।

১৭. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ
1305280111828

বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।

১৮. তথ্যের উৎসঃ  AIS, BARI, ekrishok.com, ruralinfobd.com

১৯. সর্বশেষ সংযোজনঃ জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com

 

Leave a Reply