উচ্চ ফলনশীল জাতঃ উচ্চ ফলনশীল জাত গুলো হলো-
জাত |
কোম্পানী |
বীজ বপনের সময় |
বারি চালকুমড়া-১ |
BARI |
ফেব্রুয়ারী-মে |
হাইব্রীড চালকুমড়া সুফলা-১ |
ব্র্যাক সীড |
- |
হাইব্রীড চালকুমড়া বাসন্তী, নিরালা |
মল্লিকা সীড কো. (MSC) |
মাঘ মাস থেকে আশ্বিন মাস |
হাইব্রীড চালকুমড়া বিজয়, (উফশী-বিজয়) |
গেটকো এগ্রো ভিশন লি: |
– |
হাইব্রীড চালকুমড়া সোনালী এফ-১ |
পাশাপাশি সীড কো: |
সারা বছরই চাষ করা হয় |
হাইব্রীড চালকুমড়া মাধবী |
ইউনাইটেড সীড ষ্টোর (USS) |
– |
হাইব্রীড চালকুমড়া ইউনিক |
এনার্জি প্যাক এগ্রো লি: |
বপনের সময় ফেব্রুয়ারী-আগষ্ট |
হাইব্রীড চালকুমড়া সুপারস্টার |
এসিআই সীড (ACI) |
সারা বছর চাষ করা হয় তবে ফাল্গুন থেকে আশ্বিন মাস উপযুক্ত সময় |
৩. উপযোগী জমি ও মাটিঃ বন্যামুক্ত এবং নিস্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন দো-আঁশ, এটেল দো-আঁশ ও বেলে-দো-আঁশ মাটিতে এর চাষ ভাল হয়।
৪. বীজঃ
ভালো বীজ নির্বাচনঃ ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য গুলো নিম্নোরুপ-
- রোগমুক্ত, পরিষ্কার, পরিপুষ্ট হতে হবে।
- সকল বীজের আকার আকৃতি একই ধরনের হবে।
বীজের হারঃ চালকুমড়া চাষের জন্যে একর প্রতি ৪০৫-৪১০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে।
বীজ শোধনঃ ভিটাভেক্স ২০০ / টিলথ অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করে বীজ় শোধন করা যেতে পারে।
৫. জমি তৈরীঃ
জমি চাষঃ ঘরের চালে তুলে দিলে মাদা তৈরি করে নিতে হয়। আর জমিতে চাষ করলে কয়েকটি চাষ ও মই দিতে হয়।
বীজ তলা তৈরীঃ নার্সারিতে চারা উৎপাদন করে নিতে হবে। এ কাজে ৫×৭ ইঞ্চি আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। প্রথমে অর্ধেক মাটি অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে।
মাটিতে বীজ গজানোর জন্য “জো” নিশ্চিত করে তা পলিব্যাগে ভরতে হবে।
অত:পর প্রতি ব্যাগে ২টি করে বীজ বপন করতে হবে। নার্সারিতে চারা প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। বেশি শীতে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজ গজানোর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি রাতে প্লাস্টিক দিয়ে পলিব্যাগ ঢেকে রাখতে হবে এবং দিনে খোলা রাখতে হবে। চারার বয়স ১৬ থেকে ২০ দিন হলে মাঠে প্রস্তুত গর্তে পলিব্যাগ কেটে মাটিসহ চারা রোপণ করতে হবে। গর্তে চারা লাগানোর পরপরই গাছের গোড়ায় কিছু পরিমান পানি দিতে হবে।
৬. বপন ও রোপন এর পদ্ধতিঃ
বপন ও রোপন এর সময়ঃ সারা বছর কুমড়ার চাষ করা যায়। তবে চৈত্র থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। প্রতি মাদায় ৪-৫টি বীজ বুনতে হয়। প্রতি মাদায় দুটি সবল চারা রাখতে হবে। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্ষেত্রে বীজের প্যাকেটের গায়ে লেখা নির্দেশিকা অনুসরন করতে হবে।
মাদা তৈরীঃ ৫-৭ ফুট দূরে দূরে ২.৫ ফুট চওড়া ও ২ ফুট গভীর গর্ত / মাদা তৈরি করে বীজ / চারা বুনতে হবে।
৭. সার ব্যবস্থাপনাঃ
সারের নাম |
জমি তৈরির সময় (শতাংশ প্রতি) |
প্রতি মাদায় |
||||
চারা রোপণের ৭ থেকে ১০ দিন আগে |
চারা রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন পর |
চারা রোপণের ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর |
চারা রোপণের ৫০ থেকে ৫৫ দিন পর |
চারা রোপণের ৭০ থেকে ৭৫ দিন পর |
||
পচা গোবর |
২০ কেজি |
১০ কেজি |
- |
- |
- |
- |
টিএসপি |
৩৫০ গ্রাম |
৬০ গ্রাম |
- |
- |
- |
- |
ইউরিয়া |
- |
- |
৩০ গ্রাম |
৩০ গ্রাম |
৩০ গ্রাম |
৩০ গ্রাম |
এমপি |
২০০ গ্রাম |
৫০ গ্রাম |
২৫ গ্রাম |
- |
- |
- |
জিপসাম |
৪০০ গ্রাম |
- |
- |
- |
- |
- |
দস্তা |
৫০ গ্রাম |
- |
- |
- |
- |
- |
বোরাক্স |
৪০ গ্রাম |
- |
- |
- |
- |
- |
ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড |
- |
৮ গ্রাম |
- |
- |
- |
- |
৮. আগাছা দমনঃ
সময়ঃ মাদাতে অথবা এর চার পাশে আগাছা হলে তা দমন করতে হবে।
দমন পদ্ধতিঃ হাত / নিড়ানীর সাহয্যে আগাছা দমন করতে হবে।
৯. সেচ ব্যবস্থাঃ
সেচের সময়ঃ মাদার ও মাদার চার পাশের মাটি শুকায়ে গেলে।
সেচের পরিমাণঃ কোদাল দিয়ে মাটি আলগা করে হাল্কা সেচ দিতে হবে।
নিষ্কাশনঃ কোন অবস্তাতেই গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকতে দেয়া যাবেনা।
রোগের নাম |
লক্ষণ |
প্রতিকার |
কীটনাশকের নাম |
পাউডারী মিল্ডিউ | পাতার উভয় পাশে প্রথমে সাদা সাদা পাউডারের মত দাগ দেখা যায়।ধীরে ধীরে দাগগুলো বড় ও বাদামী হয়ে শুকিয়ে যায়।আক্রান্ত লতা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়, ফল ঝরে পড়ে এমনকি সম্পূর্ন গাছ মরে যায়।
|
১. জমির আশে পাশে কুমড়া জাতীয় অন্য যে কোন রকমের সবজি চাষ থেকে বিরত থাকা। ২. আক্রান্ত পাতা ও গাছ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা। ৩. থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি- প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম থিয়োভিট মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ১৫ দিন পর পর সেপ্র করুন। | থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি |
এমকোজিম ৫০ ডবলিউপি ৭০-৭৫ এম.এল / বিঘতে(৩৩ শতাংশ) ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। | এমকোজিম ৫০ ডবলিউপি | ||
হেকোনাজল ৫ ই সি ২০০ মি লি প্রতি একরে (১ মিলি/ ১ লিটার পানিতে) স্প্রে করতে হবে। | হেকোনাজল ৫ ই সি | ||
ডাউনি মিল্ডিউ | এর জন্য গাছের পাতা ধূসর হয়ে যায়। পাতায় সাদা পাউডার দেখা যায় | ১. থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি- প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫০ গ্রাম থিয়োভিট মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ১৫ দিন পর পর সেপ্র করুন। | থিয়োভিট ৮০ ডব্লিউজি |
পোকামাকড়ের নাম |
লক্ষণ |
প্রতিকার |
কীটনাশকের নাম |
মাছি পোকা |
১. স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে। ২. ডিম ফুটে কীড়াগুলো বরে হয়ে ফলের শাস খায় এবং ফল পচে যায় ও অকালে ঝরে পড়ে। | ১. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। ২. সবিক্রন ৪২৫ ইসি- প্রতি লিটার পানিতে ২ এমএল হারে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন। | প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি,সবিক্রন ৪২৫ ইসি |
পামকিন বিটল |
র্পূণাঙ্গ পোকা চারা গাছের পাতা ছিদ্র করে খায়। কীড়া গাছের গোড়ায় মাটিতে বাস করে এবং গাছের শিকড়ের ক্ষতি করে। | ১. আক্রান্ত গাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ পোকা হাতে ধরে মেরে ফেলা। ২০-২৫ দিন চারা মশারির জাল দিয়ে ঢেকে রাখা। ২. কীড়া দমনের জন্য প্রতি গাছের গোড়ায় ২.৫ গ্রাম বাসুডিন-১০ জি মিশিয়ে দিয়ে তারপর সেচ দিতে হবে। ৩. সবিক্রন ৪২৫ ইসি- প্রতি লিটার পানিতে ২ এমএল হারে মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন। | সবিক্রন ৪২৫ ইসি, বাসুডিন-১০ জি |
টিডো ২০ এস.এল-৫০-৫৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। | টিডো ২০ এস.এল | ||
জাব পোকা |
পূণবয়স্ক ও নিম্ফ উভয়েই পাতা, কচি কান্ড, ফুল ও ফলের কুঁড়ি, বোঁটা এবং ফলের কচি অংশের রস চুষে খায়। ফলে গাছ প্রথমে দুর্বল ও পরে হলুদ হয়ে যায়। গাছে ফুল ও ফল অবস্থায় আক্রমণ হলে ফুলের কুঁড়ি ও কচি ফল ঝরে পড়ে। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে কচি ডগা মরে যায়। | ১. আক্রান্ত পাতা, ডগা, ফুল পোকাসহ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা। ২. একতারা ২৫ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে ২.৫ গ্রাম একতারা প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ভালভাব গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। ৩. প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি- আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম হারে প্লেনাম মিশিয়ে ভালভাবে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। | একতারা ২৫ ডব্লিউজি, প্লেনাম ৫০ ডব্লিউজি |
টিডো ২০ এস.এল-১০০-১০৫ এম এল / একর জমিতে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। | টিডো ২০ এস.এল | ||
কাঁটালে পোকা বা এপিল্যাকনা বিটল
|
এই পোকা পাতার শিরাগুরোর মাঝের অংশ খেয়ে ফেলে। মধ্য শিরা বাদে পাতার সমস্ত অংশ খেয়ে ঝাঝরা করে ফেলতে পারে। ফলের উপরি ভাগের কিছু অংশ খেয়ে ফেলতে পারে অথবা ছোট ছিদ্র করতে পারে | ১. পোকা সহ আক্রান্ত পাতা হাত বাছাই করে মেরে ফেলতে হবে। ৩. এক কেজি আধা ভাঙ্গা নিম বীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি স্প্রে করতে হবে |
ভাঙ্গা নিম বীজ |
১১. বিশেষ পরিচর্যাঃ বাউনি বা মাচায় চাষ দিতে হবে। বাউনী বাঁশ অথবা জি আই তার বা নাইলন সুতা দিয়ে তৈরি করা যায়। জি আই তার দিয়ে একবার বাউনী তৈরি করতে পারলে তা ২০ থেকে ২৫ বছর অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে।
পরাগায়ন ও ফল ধারণ
চালকুমড়ার ফুল ফোটা, পরাগরেনুর বিদারণ এবং ফল ধারণ পরিবেশগত অবস্থা দ্বারা প্রভাবিত হয়। চালকুমড়ার ফুল খুব ভোরে ফোটে।চালকুমড়ার কৃত্রিম পরাগায়ন সকাল ১০ ঘটিকার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
১২. ফসল কাটাঃ
সময়ঃ বীজ বপনের দুই মাস পর থেকে ফল ধরা শুরু হয়। প্রায় আড়াই মাসব্যাপী এর ফল পাওয়া যায়। সবজি হিসেবে ব্যবহারের জন্য পরাগায়নের ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে (ফলের ওজন প্রায় ৬০০ গ্রাম) ফল সংগ্রহ করতে হবে।
পদ্ধতিঃ সাধারনত হাত দিয়ে ধারালো ছুরি দারা চালকুমড়া ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে হয়।
১৩. পরিবহণ ব্যবস্থাঃ
পরিবহনের সময়ঃ ফসল সংগ্রহের পর প্রথমে ঝুড়িতে / ডালিতে কলা পাতা বিছিয়ে তার উপর চিচিঙ্গা সাজায়ে রাখতে হবে যাতে কোনো দাগ না পরে।
পরিবহণের মাধ্যমঃ সাধারনত ঝুড়িতে / ডালিতে করে পরিবহন করা হয় তবে বেশি আকারে হলে ট্রাকের মাধ্যমেও পরিবহন করে হয়।
১৪. প্যাকেজিং:
প্যাকেজিংপদ্ধতিঃ প্যাকেজিং এর জন্য ফুড রেপিং পেপার, পেরফোরেটেড পেপার, ঝুড়ি, খাঁচা, প্লাস্টিক কেস, ব্যবহার করা জেতে পারে।
১৫. সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ
স্বল্প পরিসরেঃ ১০-১২ দিন সংরক্ষণ করা যায়।
বাজার ব্যবস্থাঃ পার্শবর্তী কোনো হাট-বাজারে বিক্রয় করতে পারেন। অথবা কোনো আড়তদারের বা পাইকারের কাছে বেশি দামে বিক্রয় করতে পারেন।
১৭. তথ্যের উৎসঃ AIS, BARI, কৃষি প্রযুক্তি হাত বই, ekrishok.com, krishitey.com
১৮. সর্বশেষ সংযোজন : জুলাই,২০১৪
আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com