কৃষি সম্প্রসারন সংক্রান্ত ফ্যাক্টসীট | ই-কৃষক | Page 2

Category Archives: কৃষি সম্প্রসারন সংক্রান্ত ফ্যাক্টসীট

রংপুরেের গম চাষী ভাইদের জন্য জরুরী বার্তা :

রংপুরেের গম চাষী ভাইদের জন্য জরুরী বার্তা :

গমের ব্লাস্ট একটি ভয়ানক রোগ। একবার গমে আক্রমন করলে শতভাগ ফসল হানী হতে পারে। তাই এই রোগ প্রতিরোধে ফুল আসার আগ দিয়ে “নাটিভো ৭৫ ডব্লিউ জি” বা “নভিটা ৭৫ ডব্লিউ জি” প্রতি ১০ লিটার পরিষ্কার পানিতে ৬ গ্রাম ভালভাবে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করুন। তার ১২ থেকে ১৫ দিন পর আবার স্প্রে করুন। দানা বাঁধা অবস্থায় যদি বৃষ্টি বা ঘন কুয়াশা হয় সে ক্ষেত্রে আরো একবার স্প্রে করতে হবে।
স্প্রে করার সময় ক্ষেতের আইলের উপরও স্প্রে করতে হবে।
রংপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তাগনকে এব্যাপারে জরুরীভাবে কাজ করার জন্য ও কৃষকদের অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।

সূত্র: স. ম. আশরাফ আলী
উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারন, রংপুর।

কার্যকরী ছত্রাকনাশক ও প্রয়োগমাত্রা/লিটার পানিতে

1. বোর্দ্দো মিক্সচার:
চুন+তুতে+পানি= ১০গ্রাম+১০গ্রাম+১লিটার
2 বোর্দ্দো পেষ্ট:
চুন+তুতে+পানি= ১০০গ্রাম+১০০গ্রাম+১লিটার
3. মেনকোজেব (ইনডোফিল/জাজ/ ডাইথেন এম/হেমেনকোজেব/নেমিসফোর/এগ্রিজেব/ মিডিয়া/ম্যাকজিডান/এডকোজেব/কাফা/ সিনমাজেব)–৩ গ্রাম
4. মেনকোজেব+কার্বেন্ডাজিম (কম্প্যানিয়ন/ কারজেব)–২ গ্রাম
5. মেনকোজেব+মেটালক্সিল (ম্যাটকো/ রিডোমিল গোল্ড/পদ্মামিল/নিউবেন/ ম্যানকোসিল/পপুলার/সানক্সসিল/ জিমেটালক্সিল/নাজা/মেটারিল)–২ গ্রাম
6. কার্বেন্ডাজিম ৫০ডব্লিউপি (ব্যাভিস্টিন/এমিস্টার টপ/জিমগার্ড/এমকোজম/গোল্ডাজিম/সিনডাজিম/ নোইন/সিডাজিম/আরবা/ গিলজিম/জেনুইন)–২গ্রাম/২মিলি
7. মেটালক্সিল ২৫ডব্লিউপি (মেটাটাফ/রিভাস/ এক্সট্রামিল)–২ গ্রাম/২মিলি
8. হেক্সকোনাজল ৫ ইসি (কনটাফ/ফলিকুর/ হেকোনাজল/কনজা/এনভিল/ক্রিজল/ সাবাব)–১ মিলি
9. ট্রাইসাইক্লাজোল ৭৫ডব্লিউপি (ট্রুপার/ ফিলিয়া/নাটিভো/টপসিন এম)–অনুমোদিত মাত্রায়
10. কপার অক্সিক্লোরাইড ৫০ডব্লিউপি (ব্লাইটক্স/ কুপ্রাভিট/সালটক্স/সলুকক্স/সানভিট/ব্লুকাপ/ অক্সিভিট–২-৪ গ্রাম
11. কপার হাইড্রোঅক্সসাইড (চ্যাম্পিয়ন/ডলফিন)–২ গ্রাম
12. মেনকোজেব+ফেনামিডন (সিকিউর)–১গ্রাম
13. প্রোপিনিবি+ইপ্রোভ্যালিকার্ব (মেলেডিডু)–২ গ্রাম
14. প্রোপিনিব ৭০ডব্লিউপি (এন্ট্রাকল)–৪ গ্রাম
15. প্রোপিকোনাজল ২৫০ইসি (প্রটাফ/টিল্ট/প্রাউড/পোটেন্ট/ইউনার/একোনাজল/প্রপীজল/সাদিদ/এভেন্স)–০.৫-১মিঃলিঃ
16. আইপ্রোডিন ৫০জি (রোভরাল/রোভানন/রোটান্ট)–২ গ্রাম
17. এডিফেনফস ৫০ ইসি (হিনোসান/এডিফেন)–১.৫মিঃলিঃ
18. মেনকোজেব+ডাইমেথোমর্ফ (ফোরাম/এক্রোবেট এমজেট)–২ গ্রাম
19. থায়োপিনেট মিথাইল (হোমাই/সিলিকা/টপসিন এম)–২ গ্রাম
20. ডাইকোনাজল ২৫০ইসি (ক্যাবরিওটপ/ স্কোর)–০.৫মিঃলিঃ
21. জাইনেব( ইন্ডোফিল)–২ গ্রাম
22. কার্বক্সিন+থিরাম২০০জি (ভিটাভেক্স)–২ গ্রাম

সূত্র: modern agriculture facebook page

 

ধান ফসলের জমিতে ডাল পোতা/পার্চিং

Image may contain: 1 person , grass, outdoor and nature

আর্থিক ক্ষতি কমানো, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন এখন সময়ের দাবি। তাছাড়া, আধুনিক কৃষির জন্য চ্যালেঞ্জও বটে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রমে নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণবিদগণ এসব প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে দ্রুতই ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে সুফল ভোগ করছেন কৃষকরা। রক্ষা পাচ্ছে নির্মল পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য।

পার্চিং
ইংরেজি শব্দ পার্চ মানে হলো উঁচু স্থানে বসা। জমিতে উঁচু স্থানে পাখি বসার সুযোগ তৈরি করাই পার্চিং। উঁচু স্থান তৈরি করার ক্ষেত্রে বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডালপালা, ধৈঞ্চা গাছ এসব ব্যবহার করা যায়। পার্চিং পোকা দমনের একটি যান্ত্রিক পদ্ধতি। আইপিএম কৌশলের অন্যতম সবুজ প্রযুক্তি পার্চিং খুবই সহজ, কম খরচ ও পরিবেশবান্ধক পোকা মাকড় দমনের প্রযুক্তি।

পার্চিংয়ের উদ্দেশ্য:
পোকা ধরে খাওয়ার জন্য পাখিকে বসার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করাই মূল উদ্দেশ্য। ফলে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়। ফসলের উৎপাদন খরচ কমে। বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখা যায়। তাছাড়া পার্চিংয়ের মাধ্যমে পোকার বংশবিস্তার কমানো যায়। সহজেই পোকার বসতি ধ্বংস করা যায়। এমনকি পোকার বসতি তৈরি করার সুযোগ নষ্ট করা যায়।
এছাড়াও পাখির বিষ্টা জমিতে জৈব পদার্থ যোগ করে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।

পার্চিংয়ের প্রকারভেদ:
দুই ধরনের পার্চিং পদ্ধতি রয়েছে। যথা:
1. মৃত পার্চিং: বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডালপালা ইত্যাদি।

2. জীবন্ত পার্চিং: ধৈঞ্চা গাছ। জীবন্ত পার্চিংয়ের ক্ষেত্রে আফ্রিকান ধৈঞ্চা খুবই উপকারি। বাংলাদেশে বহুলভাবে চাষকৃত আফ্রিকান ধৈঞ্চা পার্চিং হিসেবে পোকা দমন করে। ধৈঞ্চা গাছে বসে পাখি দুল খেতে পছন্দ করে। ধৈঞ্চা গাছের পাতা, নডিউল জমিতে বাড়তি জৈব সার যোগাতে সহযোগিতা করে। একমাস বয়সী ধৈঞ্চা গাছ ফসলের মূল জমিতে লাগানো উচিত। ফসলের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে কমপক্ষে একফুট উচ্চতায় পার্চিং করা উচিত।

পার্চিংয়ের সংখ্যা:
সাধারণত বন্ধু পোকা মাকড়গুলো খাবার সংগ্রহের জন্য বেশি বেশি নড়াচড়া ও চলাফেরা করে। অন্যদিকে ক্ষতিকর পোকা মাকড় চুপচাপ বসে রস চুষে খায় বা ফসল কেটে কেটে বা কুড়ে কুড়ে খায়। এসব চুপচাপ ক্ষতিকর পোকা ধরে খাওয়ার জন্যই একটু ঘনঘন পার্চিং দেয়া হয়। পাখি যেন সহজেই ক্ষতিকর পোকা মাকড়দের দেখতে পায় এবং ধরতে পারে। ধান ফসলে প্রতি ০৫ শতকে ০১ টি করে পার্চিং ব্যবহার করতে হয়। যা বিঘায় প্রায় ০৬ টি। এভাবে একর প্রতি প্রায় ১৮ টি থেকে ২০ টি পার্চিং ব্যবহার করতে হয়।

পার্চিং স্থাপনের সময়:
ফসল রোপনের পরপরই পার্চিং স্থাপন করতে হবে। যে সব এলাকায় বাবুই পাখি, চড়ই পাখি, টিয়া পাখি আছে, সেসব এলাকায় চাষকৃত ধানের পাকা স্তরে পার্চিং তুলে নিতে হবে। অন্যথায় পার্চিং তুলে ফেলার দরকার নেই।

পার্চিংয়ে বসে দোল খেতে খেতে পাখিরা আরামে পোকা ধরে খায়। সব পাখিরাই কিন্তু পার্চিয়ে বসে না। মূলত ফিঙ্গে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়রা এসব পাখিরা পার্চিং এ বসে পোকা ধরে খায়। এক গবেষণায় জানা যায়, একটি ফিঙে পাখি সারা দিনে কমপক্ষে ৩০ টি করে মাজরা পোকার মথ, ডিম, কীড়া ও পুত্তলী খেয়ে থাকে। একটি পাখির দ্বারা প্রতি মাসে কমপক্ষে ২ লাখ ৭০ হাজার পোকা ধ্বংস করা সম্ভব হয়।

পার্চিংয়ে যে সব পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ হয়:
পাখিরা মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি পোকা, ধানের স্কিপার পোকার মথ ধরে ধরে খায়। লার্ভা বা কীড়াগুলোর মধ্যে শিষ কাটা লেদা পোকা, সবুজ শুড় লেদা পোকার কীড়া খায়। খাটো শুড় ঘাস ফড়িং, লম্বা শুড় ঘাস ফড়িং, উড়চুঙ্গা এসব ফড়িং গুলোও খায়। তাছাড়া পাখিরা বন্ধু পোকাগুলোর মধ্যে লেডি বার্ড বিটল, ক্যারাবিড বিটল এসব পোকাও খায়।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: Muhaiminur Rashid Hanif ভাই।

ভেজাল সার চেনার উপায়

অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের চাষ বৃদ্ধির ফলে প্রচুর পরিমানে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি, পটাশ, জিংক, সালফেট, বোরাক্স ও জিপসাম সার দিতে হচ্ছে। এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে বছরে ২৫ লাখ মে. টন ইউরিয়া, ৬.৫ লাখ মে. টন টিএসপি, ৩ লাখ মে. টন ডিএপি, ২ লাখ মে. টন এমওপি এবং ১ লাখ মে. টন জিপসাম ব্যবহৃত হয়। ইদানীং পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে বাজারে প্রচুর পরিমানে নকল সার বিক্রি হচ্ছে। এখানে কয়েকটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে আসল বা ভেজাল সার শনাক্ত করার উপায় উল্লেখ করা হলো।

Image may contain: food

ইউরিয়া সার চেনার উপায়:
আসল ইউরিয়া সারের দানাগুলো সমান হয়। তাই কেনার সময় প্রথমেই দেখে নিতে হবে যে সারের দানাগুলো সমান কিনা। ইউরিয়া সারে কাঁচের গুড়া অথবা লবণ ভেজাল হিসাবে যোগ করা হয়। অথবা চা চামচে অল্প পরিমান ইউরিয়া সার নিয়ে তাপ দিলে এক মিনিটের মধ্যে অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ হয়ে গলে যাবে। যদি ঝাঁঝালো গন্ধ সহ গলে না যায়, তবে বুঝতে হবে সারটি ভেজাল।

টিএসপি সার চেনার উপায়:
টিএসপি সার পানিতে মিশালে সাথে সাথে গলবে না। কিন্তু ভেজাল সার পানির সাথে মিশালে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই গলে যাবে বা পানির সাথে মিশে যাবে। কিন্তু টিএসপি সার ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পানির সাথে মিশবে।

ডিএপি সার চেনার উপায়:
ডিএপি সার চেনার জন্য চামচে অল্প পরিমান ডিএপি সার দিয়ে গরম করলে এক মিনিটের মধ্যে অ্যামোনিয়া ঝাঁঝালো গন্ধ হয়ে তা গলে যাবে। যদি না গলে তবে বুঝতে হবে সারটি সম্পূর্ণরুপে ভেজাল। আর যদি আংশিকভাবে গলে যায় তবে বুঝতে হবে সারটি আংশিক পরিমান ভেজাল আছে। অথবা কিছু পরিমান ডিএপি সার হাতের মুঠোয় নিয়ে চুন যোগ করে ডলা দিলে অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ বের হলে সারটি আসল। যদি অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ বের না হয় তাহলে বুঝতে হবে সারটি ভেজাল।

এমওপি বা পটাশ সার চেনার উপায়:
পটাশ সারের সাথে ইটের গুড়া ভেজাল হিসাবে মিশিয়ে দেয়া হয়। গ্লাসে পানি নিয়ে তাতে এমওপি বা পটাশ সার মিশালে সার গলে যাবে। তবে ইট বা অন্য কিছু ভেজাল হিসাবে মিশানো থাকলে তা পানিতে গলে না গিয়ে গ্লাসের তলায় পড়ে থাকবে। তলানি দেখে সহজেই বুঝা যাবে সারটি আসল নাকি ভেজাল।

জিংক সালফেট সার চেনার উপায়:
জিংক সালফেট সারে ভেজাল হিসাবে পটাশিয়াম সালফেট মেশানো হয়। জিংক সালফেট সার চেনার জন্য এক চিলতে জিংক সালফেট হাতের তালুতে নিয়ে তার সাথে সমপরিমান পটাশিয়াম সালফেট নিয়ে ঘষলে ঠান্ডা মনে হবে এবং দইয়ের মতো গলে যাবে।

সূত্র: Modern Agriculture Facebook Page

 

নারিকেল গাছে মাকড়ের আক্রমণ ও তার দমন ব্যবস্থাপনা

মাইটের আক্রমণে নারিকেল গাছের ক্ষতি সম্বন্ধে আগে অজানা ছিল। এ মাইটের উপস্থিতি প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৬৫ সালে মেস্কিকোতে। এরপরই এ মাইটের উপস্থিতি ব্রাজিলে ও আইভোরীকোস্টে দেখা যায়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে ভারতের কেরালাতে এ মাইটের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় ভারতে এ মাইটকে নারিকেলের জন্য অপ্রধান ক্ষতিকারক পেস্ট হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পরে ভারতে ১৯৯৯ সালে ডিসেম্বর মাসের শেষ ভাগে কেরালায় এ মাইট মনিটরিং এর জন্য বিস্তারিত সার্ভের আয়োজন করা হয়। তাদের এ সার্ভের ফলাফলে দেখা যায়, তদাঞ্চলে প্রায় ৫৮৯ লক্ষ ফলন্ত নারিকেল গাছ এ মাইট দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এ আক্রমণের প্রতিকূল প্রভাবে এসব নারিকেলের ফলন প্রায় ৪২% কম হতে দেখা যায়। তখন থেকেই ভারতে এ নারিকেল মাইটকে প্রধান ক্ষতিকারক পেস্ট হিসাবে চিহ্নিত করে সরকারিভাবে তা দমন ব্যবস্থায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। একই গুরুত্ব বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ মাইট সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণার ব্যবস্থা নিয়ে এ দেশে এ মাইটের উপস্থিতি ও তার দমন ব্যবস্থা সর্ম্পকিত বিস্তারিত সুপারিশমালা নারিকেল চাষীদের বৃহত্তর স্বার্থে প্রণয়ন করে ।

নারিকেলের মাইট চিহ্নিতকরণ:
নারিকেল মাইট ‘ইরিওফিড’ নামে পরিচিত, যা অন্য মাইট থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এ মাইটের আকারে খুবই ছোট। খালি চোখে তা দেখা সম্ভব নয়। প্রায় ১০-১৫ গুণ পাওয়ার বিশিষ্ট ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে তা দেখা সহজ হয়। একটা নারিকেল মাইট লম্বায় প্রায় ২০০-২৫০ মাইক্রোন এবং চওড়ায় প্রায় ২০-৩০ মাইক্রোন হয়। সাধারণ মাইটের ৪ জোড়া বা ৮ টা পা থাকে। অথচ নারিকেলের ক্ষতিকারক এ মাইটের পায়ের সংখ্যা মাত্র ৪ টা। পুরুষ মাইটের তুলনায় স্ত্রী মাইট আকারে কিছুটা বড়। মাইটের জীবনচক্র শেষ হতে সময় লাগে মাত্র ১০-১২ দিন। শীত মৌসুমে এ চক্র শেষ হতে কিছু বেশী সময় লাগে, এ সময় চক্র শেষ হয় প্রায় ১৫-২১ দিনে। ডিম ফুটে ৩-৪ দিন পর ‘লার্ভা’ বের হয় পরে তা রূপান্তরিত হয়ে ‘নিম্ফ’ আকার ধারণ করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই তা পুর্ণাঙ্গ মাইট রূপ ধারণ করে।

নারিকেল মাইটের তৎপরতা ও ক্ষতি:
ফুল ফল ধরার জন্য নারিকেলের যে কাঁদি বের হয় এবং তাতে ক্ষুদ্র কচি নারিকেল গাঁথা/ধরার সংগে সংগে মাইট তার বোটার অংশের উপরিভাগে যে ক্যাপ বা খোলস থাকে তার নিচের অতি নরম অংশে অবস্থান অংশের টিস্যু খুব নরম থাকে। তাই অবাধে এ অংশ ক্ষত করে মাইট ভিতরের রস চুষে খায়। কচি ফল ধরার পর থেকে তা নারিকেল হতে সময় লাগে প্রায় বার মাস। কচি ফল গাঁথা থেকে শুরু করে প্রথম ৬ মাস তখনও ফল বা ডাব কচি ও ছোট অবস্থায় থাকে, যার নরম টিস্যুর রস আহার করা ও বংশ বিস্তার করা মাইটসের জন্য অতি সহজ হয়।

14117878_1145460902187987_2903596153303031495_n

ডাব ও নারিকেলে মাইটের উপস্থিতির লক্ষণ ও ধরণ:
নারিকেলে বা ডাবের গায়ে গাঢ় বাদামী ছোবড়া ছোবড়া দাগ দেখা গেলে বুঝতে হবে তা মাইটের আক্রমণের লক্ষণ। আক্রমণের মাত্রা অত্যাধিক হলে কচি অবস্থায় মাটিতে অপূর্ণ ডাব ঝরে পড়ে। যেগুলো টিকে যায় সেগুলোও আকারে ছোট ও অনাকাঙ্খিত আকার ধারণ করে। মাইটের আক্রমণে ডাব ও নারিকেলের স্বাভাবিক রং থাকে না, বেশী গাঢ় হয়ে বির্বণ হয়ে যায়। ভিতরের শাঁস (কার্নেল) গঠন খুব কম হয় (৩০% ক্ষতি), নারিকেলের ছোবড়ার গুণাগুণ নষ্ট হয়ে তা শিল্পকারখানায় ব্যবহার অনুপোযোগী হয়।

মাইটের বিস্তার :
একই গাছের বা পার্শ্ববর্তী গাছ থেকে মাইট বাতাসের মাধ্যমে বা মৌমাছি বোলতা বা মধু আহোরণকারী পাখির মাধ্যমে অন্য গাছে বা অপর বাগানে ছড়াতে পারে।
এছাড়াও প্রবল বাতাসের মাধ্যমে অথবা নারিকেল/ডাব বা নারিকেল চারার মাধ্যমে এক দেশে থেকে অন্য দেশে এ মাইট ছড়িয়ে পড়ে।

নিয়ন্ত্রণ/দমন ব্যবস্থা:
যেহেতু মাইট বোঁটার অংশে খোলের নীচে অবস্থান করে এবং নরম টিস্যুর রস খেয়ে বংশ বিস্তার করে তাই এ নিরাপদ স্থানে অবস্থানরত মাইট দমন খুব সহজ নয়। তবে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাইটের আক্রমণ প্রতিহত করা সহজ। এগুলোর বিবরণি নিম্নরূপ:

১। বাগান স্বাস্থ্য সম্মত রাখা:
নারিকেল বাগান বা গাছ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার। এ লক্ষ্য অর্জনে গাছের নীচে মাইট দ্বারা আক্রান্ত ঝরে পড়ে থাকা অপুষ্ট ডাবগুলো কুড়িয়ে পুড়িয়ে ফেলা উচিত।

২। গাছে সময় মত, পরিমিত প্রয়োজনীয় খাদ্য/সার প্রয়োগ করা হলে ও প্রয়োজনীয় সেচ নিকাশ ব্যবস্থায় নারিকেল গাছের ও ফলের বৃদ্ধি বেশি হয়। তাতে মাইটের আক্রমণ হলেও ক্ষতির মাত্রা খুব কম হয়।

৩। প্রাকৃতিক (বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল) ভাবে দমন:

(ক) প্রিডেসিয়াম নামক এক ধরণের রাক্ষুসে বা পরজীব ভোজী মাইট নারিকেল মাইট খেতে পছন্দ করে। নারিকেল মাইট কলোনিতে এ পরভোজী মাইটের উপস্থিতিতে নারিকেল মাইটের বিস্তার রোধে অন্যতম ভূমিকা রাখবে।

(খ) এক প্রকার প্যানোজেনিক ছত্রাক যা নারিকেল মাইট ধবংসের অন্যতম ছত্রাক। নারিকেল মাইট কলোনীতে এ ছত্রাকের উপস্থিতি নারিকেল মাইটের বংশ বিস্তার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

(গ) এছাড়াও এক প্রকারের লেডিবাড বিটল এ ক্ষতিকর নারিকেল মাইট ধবংস করতে সক্ষম। তাই এ জাতের লেডিবাড বিটল চিহ্নিত করে তা বাগানে ছেড়ে দেয়ার বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। মাইট আক্রান্ত নারিকেল গাছে/ বাগানে এ সব প্রকৃতিক শত্রুুর উপস্থিতিতে এ নারিকেল মাইটের বংশ বিস্তার ও তা দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা বিনষ্ট হবে।
একই কারণে পশ্চিমা দেশেগুলো পরিবেশের দিক বিবেচনায় এনে মাকড় নাশক ব্যবহারে তারা খুব একটা উৎসাহিত নয়, নারিকেল মাইট দমনে এ সব পরভোজী ছত্রাক ও পোকা-মাকড় দ্বারা বায়োলোজিক্যাল কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার উপর তারা বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারত একই ব্যবস্থায় এ মাইট দমনের লক্ষে গবেষণা শুরু করেছে।

৪। বায়োপেস্টিসাইড বব্যহার:
পরিবেশ ও পরভোজী উপকারী প্রাণী সংরক্ষণ করার দিক বিবেচনায় এনে ভারতে নারিকেল মাইট দমনে বায়ো পেষ্টিসাইড ব্যবহারের উপর বেশী গুরুত্ব আরোপ করছে। এগুলো নিম্নরূপ :

(ক) নিম তেল দিয়ে তৈরী মাকড়নাশক ব্যবহার:
আক্রান্ত নারিকেল গাছ ২% নিম তেল, রসুন এবং সাবানের মিক্চার দিয়ে স্প্রে করে সফলভাবে মাইট দমন করা বর্তমানে সহজ হচ্ছে। এ মিক্চার তৈরী করার জন্য ২০ মিলি নিম তেল, ২০ গ্রাম পরিষ্কার রসুন বাটা ও ৫ গ্রাম কাপড় ধোয়ার সাবান একত্রে মেশাতে হয়। এ স্প্রে মিশ্রণ তৈরীর জন্য ৫ গ্রাম কাপড় ধোয়া সাবান ৫০০ মিলি পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে ২০ মিলি নিম তেল মেশাতে হয়। এরপর ২০ গ্রাম পরিষ্কার রসুনকে ভালোভাবে গুঁড়া করে বা বেটে নিয়ে তাতে সাবানগুলা পানি ও নিম তেল মিশিয়ে সমস্ত মিক্সার পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিয়ে তা দিয়ে স্প্রে করতে হয়। এ মিক্চার তৈরীর পর পরই স্প্রে করার কাজ সমাধা করতে হবে, তৈরীকৃত মিক্চার রেখে দিয়ে পরের দিন ব্যবহার বা বাসী করে ব্যবহার করা উচিত হবে না।

(খ) বায়ো মাকড়নাশক ব্যবহার:
বর্তমানে এ্যাজাডাইর‌্যাথিন (অুধফরৎধপযঃরহ) নামক নিম থেকে তৈরী এক ধরনের মাকড় নাশক বাজারে পাওয়া যাচ্ছে যা নারিকেল মাইট দমনে কার্যকরি। এ মাকড় নাশক দু ধরণের ফরমুলেশনে পাওয়া যাচ্ছে। তা হতে পারে ১% অথবা ৫% ফরমুলেশনে তৈরী। এ মাকড় নাশক ব্যবহার ক্ষেত্রে ১% ফরমুলেশনের ব্যবহার করা হলে প্রতি লিটার পানিতে ৪ মিলি এবং ৫% ফরমুলেশনে তৈরী মাকড় নাশক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রতি লিটার পানিতে ৩ মিলি এ মাকড় নাশক মিশিয়ে এ মিশ্রণ দিয়ে নারিকেল গাছের আক্রান্ত অংশ ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

গ) স্প্রে করার সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যেন কেবল মাত্র নারিকেল ফুল ফল ধরার প্রত্যেকটা নারিকেল কাঁদিতে স্প্রে করা হয় এবং স্প্রের ক্ষুদ্র ফোটা দিয়ে যেন নারিকেলের আক্রান্ত অংশগুলো ভালোভাবে ভেজানো হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্যবহৃত স্প্রে যন্ত্রটি খুব ফাইন ফোটা বের হতে সক্ষম হয়। একটা নারিকেল গাছ স্প্রে করতে ১-১৫ লিটার স্প্রে মিশ্রণ যথেষ্ট।

ঘ) স্প্রে করার কাজ বছরে অন্তত ৩ (তিন) বার করতে হবে। প্রথম বার ডিসেম্বর-ফের্রুয়ারি মাসে, দ্বিতীয় বার এপ্রিল-জুন মাসে এবং তৃতীয় বার সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে স্প্রে করার কাজ শেষ করতে হবে।

* খেয়াল রাখতে হবে যেন এ স্প্রের তরল পদার্থ কচি নারিকেলের বোঁটার অংশসহ সমস্ত জায়গায় ভালভাবে ভেজানো যায়।

* নারিকেলের কাঁদি ছাড়া অন্য অংশে (পাতা ও কান্ড) স্প্রে করার প্রয়োজন নেই। কেন না, বাকী অংশে নারিকেলের মাইট থাকে না। নারিকেলের স্ত্রী ফুল যা ফল ধরা আরম্ভ হয়নি, সে অংশেও স্প্রে করা যাবে না।

* স্প্রে করার আগে অবশ্যই সংগ্রহযোগ্য ডাব ও নারিকেল পেড়ে নিতে হবে।

নারিকেল গাছের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা গ্রহণ:
ক) নারিকেলের বিভিন্ন অংশের উপাদান দিয়ে তৈরী ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরী করে তা নারিকেল বাগানে বছর ব্যাপী ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে তাতে লিগনীল জাতীয় ছত্রাক ব্যবহার করতে হবে।

খ) বাগানে বা গাছের গোড়ায় সবুজ সার (বরবটি, ধৈঞ্চা) তৈরী ও ব্যবহার উদ্যোগ নিতে হবে। এগুলো গ্রীষ্মকালে মালচিং এর কাজ করবে এবং পরবর্তীতে বর্ষায় তা পঁচে জৈব সারের কাজ করবে।

গ) বছরে বর্ষার আগে ও পরে কম পক্ষে ২ বার অনুমোদিত ডোজে জৈব ও অজৈব সার নারিকেল গাছে ব্যবহার করতে হবে

ঘ) শুকনা মৌসুমে বাগানের মাটিতে রসের পরিস্থিতি বুঝে প্রতি গাছে সপ্তাহে একবার ২০০-৪০০ লিটার পানি সেচ দিতে হবে।

ঙ) গাছের গোড়ার চারদিকে মাটিতে রস সংরক্ষণের জন্য মালচিং ব্যবস্থা নিতে হবে। এগুলো হতে পারে :

–গোড়া থেকে প্রায় ২ মিটার (রেডিয়াস) ব্যাপী স্থান নারিকেল ছোবড়া দিয়ে মালচিং ব্যবস্থা নেয়া।

–একইভাবে নারিকেল পাতা/সবুজ সার/ গ্রীন লতা পাতা দিয়ে তৈরী কম্পোস্ট দিয়ে রস সংরক্ষণ করা।

–কোকো ডাস্ট দিযে মালচিং করার ব্যবস্থা নেয়া।
(সংগৃহিত)

সূত্র: Modern Agriculture  ফেইজবুক পেইজ

 

(ধান)এডব্লিউডি (AWD)/পর্যায়ক্রমে ভেজানো ও শুকানো পদ্ধতি

এক কেজি ধান ফলাতে প্রায় 2500-4000 লিটার পানি দরকার হয়! সেচে পানির অপচয় রোধে এডব্লিউডি একটি পরীক্ষিত ও কার্যকরী কৃষি প্রযুক্তি।
এডব্লিউডি (AWD) পদ্ধতির মূল বিষয় হলো ধান চাষের ক্ষেত্রে জমিতে সার্বক্ষণিকভাবে পানি না রেখে পর্যায়ক্রমে জমি ভেজা ও শুষ্ক পদ্ধতি অনুসরণ করা। জমির পর্যায়ক্রমে ভেজা ও শুষ্ক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতে হয়। ধান চাষে একবার সেচ দিয়ে পরবর্তী সেচের সঠিক সময় নির্ধারণের জন্য জমিতে ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপ (পর্যবেক্ষণ নল) বসাতে হয়। এ পাইপে পরবর্তী নির্দিষ্ট লেভেলে পানি নেমে গেলে সেচ দিতে হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে জমিতে সেচ প্রদান করতে হয়।

14095899_1146994308701313_8473849359667696933_n

নলের আকার, নির্মাণ স্থাপন:
পিভিসি পাইপ অথবা বাঁশের চোঙ্গা দ্বারা ছিদ্রযুক্ত পর্যবেক্ষণ নল তৈরি করা যেতে পারে। নলের ব্যাস ৭-১০ সে.মি. এবং নলটি ৩০ সেমি লম্বা হবে । নলের নিচের দিকের ২০ সেমি. ছিদ্রযুক্ত এবং উপরের দিকের ১০ সে.মি. ছিদ্র বিহীন থাকবে। নলের গায়ে ১০মি.মি. দূরে ৫ মি.মি. ব্যাসের ছিদ্র থাকবে। এক সারি ছিদ্র থেকে আর এক সারি ছিদ্রের দূরত্ব হবে ১০ মি.মি.।
জমিতে নলটি এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যেন ছিদ্রযুক্ত ২০ সে.মি. অংশ মাটিতে এবং ছিদ্র বিহীন ১০.সে.মি. অংশ মাটির উপরে থাকে। নলটি আইলের পাশে এমন সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করতে হবে যেন স্থানটি সমস্ত প্লটের প্রতিনিধিত্বমূলক হয় এবং সহজে এর ভিতর পানির মাত্রা মাপা যায়। জমিতে ছিদ্রযুক্ত নলটির স্থাপনের পর এর ভিতরের মাটি ভালভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রদর্শনীভূক্ত একটি প্লটে এরূপ ৩টি ছিদ্রযুক্ত নল স্থাপন করতে হবে।

সেচের সময় ও পদ্ধতি:
১) জমিতে সেচ আরম্ভ করার পর যখন জমির উপর ৫ সেমি. দাঁড়ানো পানি জমবে তখন সেচ প্রদানূ বন্ধ করতে হবে। জমির পানি শুকানোর পর নলের ভিতর পানির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে মাপতে হবে। পর্যবেক্ষণ নলের ভিতর পানির স্তর জমির লেভেল থেকে ১৫ সে.মি পর্যন্ত নিচে নেমে গেলে জমিতে সেচ দিতে হবে।

২) আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য চারা রোপণের পর থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত জমিতে ২-৪ সেমি. দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে। তবে এ পদ্ধতিতে অতিরিক্ত একবার আগাছা পরিস্কার করার প্রয়োজন হতে পারে।

৩) গাছ ফুল আসা থেকে দুধ স্তর পর্যন্ত ২ সপ্তাহ জমিতে অবশ্যই ৫ (পাঁচ) সে.মি. দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে।

সূত্র:  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

কলম করার পদ্ধতি

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

জোড় কলম
সাধারণ ভাবে একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছের জন্ম হওয়ার পদ্ধতিকে গাছের বংশ বিস্তার বলে। অন্য কথায়, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছ যৌন কোষ বা তার অংগজ কোষ থেকে নুতন স্বতন্ত্র গাছ সৃষ্টি করে তাকে বংশ বিস্তার বলে। বংশ বিস্তার দুই প্রকার যথা:
১। যৌন বংশ বিস্তার ও ২। অযৌন বংশ বিস্তার।
ফল গাছ রোপনের মূল উদ্দেশ্য হলো ভাল, উন্নতমান ও মাতৃগুন সম্পন্ন ফল পাওয়া। এ কারণে, ফল গাছ রোপনের ক্ষেত্রে যৌন পদ্ধতির তুলনায় অযৌন পদ্ধতির চারা/ কলম গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত চারা/কলম রোপন করলে মাতৃ গুণাগুণ সম্পন্ন ফল পাওয়া যায়, গাছে তাড়াতাড়ি ফল ধরে এবং গাছ ছোট হয় বিধায় অল্প পরিসরে অনেক গাছ রোপন করা যায়। অযৌন বংশ বিস্তার পদ্ধতি গুলোর মধ্যে ক্লেফ্ট গ্রাফটিং বা ফাটল জোড় কলম একটি অন্যতম পদ্ধতি।এ পদ্ধতিতে একাধিক ফল গাছে কলম করা যায়। অন্যান্য জোড় কলম গুলোর তুলনায় ফাটল জোড় কলম একটি অন্যতম পদ্ধতি কারণ এ পদ্ধতিতে কর্তিত স্থানের দুই পাশ দিয়ে জোড়া লাগে বিধায় জোড়াটি সবল হয় এবং সহজে জোড়া স্থানটি ভাংগার সম্বাবনা থাকে না। তুলনামুলক ভাবে এ পদ্ধতি অন্যান্য জোড় কলম পদ্ধতি গুলোর তুলনায় সহজ, সফলতার হার বেশী এবং খরচও কম পড়ে।

উপকরণ
এ কলম করতে গ্রাফটিং চাকু, ব্লেড, সিকেচার, পলিথিন ক্যাপ, পলিথিন ফিতা, সুতলী, পরিবেশ সহনশীল একটি ষ্টক গাছের চারা, কাংখিত গাছের ডগা বা সায়ন এবং দক্ষ মালি ইত্যাদি।

কলম করার উপযুক্ত সময়
মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত কলম করার উপযুক্ত সময়। কারন এ সময় বাতাসে আদ্রতা ও গাছের কোষের কার্যকারিতা বেশী থাকে। ফলে তাড়াতাড়ি জোড়া লাগে এবং সফলতার হারও বেশী পাওয়া যায়।

স্টক তৈরী
অনাকাংখিত কিন্তু পরিবেশ উপযোগী গাছের বা স্থানীয় জাতের বীজ হতে চারা তৈরী করতে হবে যাতে কাংখিত জোড়া লাগানো সম্ভব হয়।

স্টক চারা তৈরীর ধাপ সমুহঃ
১) পরিনত গাছ হতে সুস্থ ও সবল বীজ সংগ্রহকরা।
২) স্টক চারাটি সরাসরি মাটি বা পলিব্যাগে তৈরী করা।
৩) যদি চারাটি মাটিতে তৈরী করা হয় তবে মাটি ভাল ভাবে কুপিয়ে ঝুরঝুরা করে আগাছা পরিস্কার করে প্রয়োজনীয় জৈব সার মিশিয়ে বেড আকারে করতে হবে। বেডটির প্রস্থ্য যেন ১ মিটার এর বেশী না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এর পর বেডে ২৫ সেমিঃ পর পর লাইন করে প্রতি লাইনে ২০ সেমিঃ পর পর চারা/ বীজ রোপন করতে হবে এবং কলম করার পূর্ব পর্যন্ত স্টক চারা গুলোর সকল প্রকার পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে।
৪) চারা পলিব্যাগে তৈরী করলে ২০ সেমিঃ x ১২ সেমিঃ পলিব্যাগ নিতে হবে। দোঁয়াশ মাটির সাথে অর্ধেক পচা গোবর ও কম্পোস্ট মিশিয়ে পলিব্যাগ ভরতে হবে।
৫) প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বা চারা রোপন করতে হবে। চারা গজানোর পর পলিব্যাগ গুলো যেন কাত হয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে অন্যথায় চারার গোড়া বাঁকা হয়ে যাবে।
৬) এবার ব্যাগটি বেডে ২৫ x ২০ সেমিঃ দুরত্বে রোপন করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে পলিব্যাগটি যেন মাটির সমান্তরালে থাকে। এতে খরা মৌসুমে পানি সেচ কম লাগে এবং চারাটি সুস্থ ও সবল হয়।
৭) সুস্থ, সবল এবং নিরোগ চারা পাওয়ার জন্য আগাছা, রোগ ও পোকা-মারড় দমন করতে হবে। প্রয়োজনে গাছে সার ও সেচ দিতে হবে।

স্টক চারার বয়স ও সায়ন নির্বাচন
১) আমঃ
ক) স্টক চারাটির বয়স ৯-১২ মাস হবে।
খ) উৎকৃষ্ট ও কাংখিত মাতৃগাছ থেকে সুস্থ ও সবল সায়ন নিতে হবে।
গ) সায়নটি লম্বায় ১৫-১৮ সেমিঃ হবে।
ঘ) সায়নটির ডগায় একটি সুপ্ত কুড়ি থাকতে হবে।
ঙ) সায়নটির রং গাঢ় সবুজ থেকে কালচে সবুজ হবে এবং
চ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে সায়নটির সতেজতা অক্ষুন্ন থাকে।
ছ) আমের সায়ন মাতৃগাছে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় পাতা কেটে ফেলাকে ডিফলিয়েশন বলে। ১০ দিন পূর্বের ডিফলিয়েশন করা সায়ন দিয়ে কলম করলে তাড়াতাড়ি জোড়া লাগে এবং সফলতার হারও বেশী হয়।

২) কাঠালঃ
ক) স্টক চারাটির বয়স ২-৩ সপ্তাহ হতে হবে।
খ) সমব্যাস সম্পন্ন ১-২ মাস বয়সের কাংখিত গাছের ডগা সায়ন হিসেবে নিতে হবে।
গ) সায়নটির শীর্ষ কুঁড়ি কয়েক দিনের মধ্যে বিকশিত হবে এমনটি হতে হবে। যার রং গাঢ় সবুজ কিন্ত টিপ দিলে শক্ত মনে হবে।
ঘ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে সায়নটির সতেজতা অক্ষুন্ন থাকে।
ঙ) সায়নটি দৈঘ্যে প্রায় ১০ সেমিঃ হবে।

৩) জলপাইঃ
ক) স্টক চারাটির বয়স ৬-৮ মাস হতে হবে।
খ) পরিপূর্ন ও বিকশিত এবং কাংখিত গাছের ডগার শীর্ষ থেকে কচি ১০-১৫ সেমিঃ অংশ কেটে ফেলে দিয়ে নিচের ১৫-১৮ সেমিঃ ডগাটি সায়ন হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
গ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে সায়নটির সতেজতা অক্ষুন্ন থাকে।

৪) পেয়ারাঃ
ক) স্টক চারাটির বয়স ৯-১২ মাস হতে হবে। স্টক হিসেবে পলি পেয়ারার চারা ব্যবহার করলে উইল্ট প্রতিরোধী গাছ তৈরী করা সম্ভব।
খ) পেয়ারা ডালের ডগার কচি অংশে ৪টি ধার/খাজ থাকে। এই ধার বা খাজের ঠিক নিচের গোলাকার অংশটিকে সায়ন হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
গ) সায়নটি লম্বায় ১৫-১৮ সেমিঃ হওয়া ভাল।
ঘ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে সায়নটির সতেজতা অক্ষুন্ন থাকে।

৫) কামরাংগাঃ
ক) স্টক চারাটির বয়স ৬-৮ মাস হতে হবে।
খ) সায়নের ব্যাস স্টক চারার সম আকারের হলে ভাল হবে।
গ) পরিপূর্ন ও বিকশিত এবং কাংখিত গাছের ডগার শীর্ষ থেকে ১০-১৫ সেমিঃ কচি অংশ কেটে ফেলে দিয়ে নিচের ১৫-১৮ সেমিঃ ডগাটি সায়ন হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
ঘ) একটি ডগা হতে একাধিক সায়ন সংগ্রহ করা যেতে পারে।
ঙ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে সায়নটির সতেজতা অক্ষুন্ন থাকে।

৬) আমলকিঃ
ক) স্টক চারাটির বয়স ৬-৮ মাস হতে হবে।
খ) সায়নের ব্যাস স্টক চারার সম আকারের হলে ভাল হবে ।
গ) পরিপূর্ন ও বিকশিত এবং কাংখিত গাছের ডগার শীর্ষ থেকে ১০-১৫ সেমিঃ কচি অংশ কেটে ফেলে দিয়ে নিচের ১৫-১৮ সেমিঃ ডগাটি সায়ন হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
ঘ) একটি ডগা হতে একাধিক সায়ন সংগ্রহ করা যেতে পারে।
ঙ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে সায়নটির সতেজতা অক্ষুন্ন থাকে।

৭) লেবুঃ
ক) স্টক চারার বয়স ৬-৮ মাস হতে হবে।
খ) সায়নের ব্যাসার্ধ্য স্টক চারার সম আকারের হলে ভাল হবে।
গ) লেবু ডালের ডগার কচি অংশে ৪টি ধার/খাজ থাকে। এই ধার বা খাজের ঠিক নিচের গোলাকার অংশটিকে সায়ন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ঘ) সায়নটি লম্বায় ১৫-১৮ সেমিঃ হওয়া ভাল।
ঙ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে সায়নটির সতেজতা অক্ষুন্ন থাকে।

৮) কুল বা বরইঃ
ক) স্টক চারাটির বয়স ১.৫-২.০ মাস হতে হবে।
খ) সায়নের ব্যাস স্টক চারার সম আকারের হলে ভাল হবে ।
গ) সায়নের রং সবুজ বা সবুজাব হবে। ডগাটির আগাথেকে ১০-১৫ সেমিঃ কচি অংশ বাদ দিয়ে নিচের ১৫-১৮ সেমিঃ অংশ সায়ন হিসেবে নিতে হবে।
ঘ) সায়নটি সংগ্রহের পর পরই সমস্ত পাতা অপসারন করে ভিজা ন্যাকড়া ও পলিথিন দিয়ে পেচিয়ে রাখলে সায়নটির সতেজতা অক্ষুন্ন থাকে।

পদ্ধতি
ক) সাধারনত স্টক গাছের গোড়া হতে ১৫-২০ সেমিঃ উপরে গ্রাফ্টিং করা হয়।
খ) খেয়াল রাখতে হবে যেন জোড়া স্থানটির নিচে অবশ্যই যেন কিচু পাতা থাকে।
গ) এবার সিকেচার দিয়ে নিদ্দিষ্ট উচ্চতায় স্টক গাছের মাথাটি সমভাবে কেটে অপসারন করতে হবে।
ঘ) এবার চাকু দিয়ে স্টক গাছের মাথাটি ২-৩ সেমিঃ লম্বালম্বি ভাবে চিরে দিতে হবে এবং সায়নের গোড়ার উভয় পাশ একই ভাবে ২-৩ সেমিঃ তেরছা কাট দিতে যেন গোঁজ বা তিলকের মত হয়।
ঙ) এবার স্টক গাছের কর্তিত অংশে সায়নের কর্তিত অংশ সমান ভাবে প্রবিস্ট করাতে হবে।
চ) অতপর জোড়া লাগানোর যায়গাটি পলিথিন ফিতা দিয়ে পেচিয়ে শক্ত ভাবে বেধে দিতে হবে।
ছ) এবার একটি পলিথিন ক্যাপ বা টুপি দিয়ে সায়নের মাথা হতে জোড়ার নিচ পর্যন্ত ঢেকে বেধে দিতে হবে।

ব্যতিক্রমঃ যেহেতু কাঠলের ২-৩ সপ্তাহের স্টক চারায় গ্রাফটিং করা হয় তাই স্টক চারায় কোন পাতা থাকেনা এবং কলমটি চাকুর পরিবর্তে ব্লেড দিয়ে করতে হয়।

পরবর্তী পরিচর্যা
ক) কলম করার সময় অতিরিক্ত রোদ থাকলে উপরে হালকা ছায়ার ব্যবস্থা করলে সফলতার হার বেড়ে যায়।
খ) স্টক গাছে অনাকাংথিত কুশি বের হওয়ার পর পরই ভেংগে দিতে হবে।
গ) কলমের বেড/ব্যাগে প্রয়োজনীয় রসের ব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
ঘ) সায়নের মাথায় কুঁড়ি গজানোর সাথে সাথেই পলিথিনের ক্যাপটি খুলে দিতে হবে।
ঙ) জোড়াটি স্থায়ী হয়ে গেলে অথাৎ কলম করার প্রায় তিন মাস পর পলিথিনের ফিতাটি খুলে দিতে হবে।
চ) বেডের/ ব্যাগের আগাছা, রোগ ও পোকা-মাকড় দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
ছ) চারার বাড়-বাড়তি কম হলে উপরি সার প্রয়োগ করতে হবে অথবা ফলিয়ার স্প্রে করতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে ইউরিয়া মিশিয়ে পাতায় স্প্রে করতে হবে।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

শ্রাবণ মাসে কৃষক ভাইদের করণীয়

আউশ ধান:
এ সময়ে আাউশ ধান পাকে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে পাকা আউশ ধান কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে শুকিয়ে নিতে হবে। পাকা আউশ ধান কেটে মাড়াই-ঝাড়াই করে শুকিয়ে নিন। এ কাজের জন্য আপনি থ্রেসার, উইনার, ড্রায়ার এসব যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। এতে বেশ সহজে এবং কম খরচে ধান মাড়াই-ঝাড়াই ও শুকানোর কাজটি করা যায়। বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

আমন ধান:
শ্রাবণ মাস আমন ধানের চারা রোপনের ভরা মৌসুম। রোপা আমনের আধুনিক এবং উন্নত জাতগুলো হলো বিআর৩, বিআর৮, বিআর৫, বিআর১০, বিআর২২, বিআর২৩, বিআর২৫, ব্রি ধান৩০, ব্রি ধান৩১, ব্রি ধান৩২, ব্রি ধান৩৩, ব্রি ধান৩৪, ব্রি ধান৩৭, ব্রি ধান৩৮, ব্রি ধান৩৯, বিনাশাইল, নাইজারশাইল, বিনাধান৪। উপকূলীয় অঞ্চলে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে উপযোগী উফশী জাতের (ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৪৪, ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬২) চাষ করতে পারেন।
খরা প্রকোপ এলাকায় নাবি রোপা আমনের পরিবর্তে যথাসম্ভব আগাম রোপা আমন (ব্রি ধান৫৩, ব্রি ধান৫৪) চাষ করতে পারেন। এই সময়ে উফশী জাতের রোপা আমন ধানের চারা মূল জমিতে রোপন করতে পারেন। সে সঙ্গে জমির এক কোণে গর্ত করে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন। চারার বয়স ৩০ থেকে ৩৫ দিন হলে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। জমি তৈরি হওয়ার পর ২৫ সেমি দূরে দূরে লাইন করে ১৫ সেমি দূরে দূরে চারা রোপণ করুন। প্রতি গুছিতে ২/৩টি সুস্থ সবল চারা রোপণ করুন।
উফশী জাতের রোপা আমন জাতগুলো উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভাল ফলন পাওয়া যায়। সময় সুযোগ থাকলে আমনের চারা রোপণের আগে সবুজ সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারেন। এতে মাটির জন্যও ভালো, কম খরচে অধিক ফলনে সহায়ক হয়। বর্তমানে সুগন্ধি এবং চিকন চালের বেশ চাহিদা থাকায় কাটারিভোগ, কালিজিরার মতো দেশী উন্নত জাত চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়।
আমন ধানের ক্ষেতে সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করা দরকার। এ জন্য জমির উর্বরতা অনুসারে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। তবে জমিতে সার দেওয়ার ব্যাপারে মাটি পরীক্ষা করে সার দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা রোপণের ১২ থেকে ১৫ দিন পর প্রথমবার ইউরিয়া সার ক্ষেতে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম উপরি প্রয়োগের ১৫ থেকে ২০ দিন পর দ্বিতীয়বার এবং তার ১৫ থেকে ২০ দিন পর তৃতীয়বার ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করলে চারা লাগানোর ১০ দিনের মধ্যে প্রতি চার গুছির জন্য ১৮ গ্রামের ১টি গুটি ব্যবহার করতে হবে। এজন্য চারা লাইনে রোপণ করতে হবে।
পোকা নিয়ন্ত্রণের জন্য ধানের ক্ষেতে বাঁশের কঞ্চি বা ডাল পুঁতে দিতে পারেন যাতে পাখি বসতে পারে এবং এসব পাখি পোকা ধরে খেতে পারে। ধান ক্ষেতের আগাছা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে অনুমোদিত আগাছানাশক ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। আপনি বালাইনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক ঔষধ, সঠিক সময়, সঠিক মাত্রা ও সঠিক নিয়মে ব্যবহার করবেন।

পাট:
ক্ষেতের অর্ধেকের বেশি পাট গাছে ফুল আসলে পাট কাটতে হবে। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং ফলনও ভালো পাওয়া যায়। পাট পচানোর জন্য আঁটি বেঁধে পাতা ঝড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে তারপর জাগ দিতে হবে। ইতোমধ্যে পাট পঁচে গেলে তা আঁশ ছাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাটের আঁশ ছাড়িয়ে ভালো করে ধোয়ার পর ৪০ লিটার পানিতে এককেজি তেঁতুল গুলে তাতে আঁশ ৫-১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হবে, এতে উজ্জ্বল বর্ণের পাট পাওয়া যায়।
যেসব জায়গায় জাগ দেয়ার পানির অভাব সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট পঁচাতে পারেন। এতে আঁশের মান ভালো হয় এবং পচন সময় কমে যায়। তবে মনে রাখতে হবে পাট কাটার সঙ্গে সঙ্গে ছালকরণ করতে হবে, তা না হলে পরবর্তীতে রৌদ্রে পাটগাছ শুকিয়ে গেলে ছালকরণে সমস্যা হবে। বন্যার কারণে অনেক সময় সরাসরি পাটগাছ থেকে বীজ উৎপাদন সম্ভব হয় না। তাই পাটের ডগা বা কান্ড কেটে উঁচু জায়গায় লাগিয়ে তা থেকে খুব সহজেই বীজ উৎপাদন করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

তুলা:
রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলে আগাম শীত আসে, সে জন্য এসব অঞ্চলে এ মাসের মধ্যে তুলার বীজ বপন করতে হবে।

শাকসবজি:
বর্ষাকালে শুকনো জায়গার অভাব হলে টব, মাটির চাড়ি, কাঠের বাক্স এমনকি পলিথিন ব্যাগে সবজির চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময়ে সবজি বাগানে করণীয় কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে মাদায় মাটি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার, গাছের গোড়ায় পানি জমতে না দেয়া, মরা বা হলুদ পাতা কেটে ফেলা, প্রয়োজনে সারের উপরিপ্রয়োগ করা।
লতানো সবজির দৈহিক বৃদ্ধি যত বেশি হবে তার ফুল ফল ধারণক্ষমতা তত কমে যায়। সেজন্য বেশি বৃদ্ধি সমৃদ্ধ লতা গাছের ১৫ থেকে ২০ শতাংশের পাতা লতা কেটে দিলে তাড়াতাড়ি ফুল ও ফল ধরবে। কুমড়াজাতীয় সব সবজিতে হাত পরাগায়ন বা কৃত্রিম পরাগায়ন অধিক ফলনে দারুণভাবে সহায়তা করবে। গাছে ফুল ধরা শুরু হলে প্রতিদিন ভোরবেলা হাত পরাগায়ন নিশ্চিত করলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে।
গত মাসে শিম ও লাউয়ের চারা রোপণের ব্যবস্থা না নিয়ে থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আগাম জাতের শিম এবং লাউয়ের জন্য প্রায় ৩ ফুট দূরে দূরে ১ ফুট চওড়া ও ১ ফুট গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে। বর্ষায় পানি যেন মাদার কোনো ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সম্ভব হলে মাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে।

গাছপালা:
এখন সারা দেশে গাছ রোপণের কাজ চলছে। ফলদ, বনজ এবং ঔষধি বৃক্ষজাতীয় গাছের চারা বা কলম রোপনের ব্যবস্থা নিতে হবে। উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে একহাত চওড়া এবং একহাত গভীর গর্ত করে অর্ধেক মাটি এবং অর্ধেক জৈবসারের সঙ্গে ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ১০০ গ্রাম এমওপি ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। সার ও মাটির এ মিশ্রণ গর্ত ভরাট করে রেখে দিতে হবে। দিন দশেক পরে গর্তে চারা বা কলম রোপণ করতে হবে। ভালো জাতের সুস্থ্য স্বাস্থ্যবান চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের পর গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে এবং খুঁটির সাথে সোজা করে বেঁধে দিতে হবে। গরু ছাগলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য রোপণ করা চারার চারপাশে বেড়া দিতে হবে।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
কৃষিবিদ Muhaiminur Rashid Hanif ভাই।