মৎস | ই-কৃষক

Category Archives: মৎস

মাছের রোগ

wound fish

মাছের রোগ বালাই নিরাময় ও প্রতিকার

রোগের নাম/আক্রান্ত মাছের প্রজাতি/রোগের লক্ষন ও কারণ/চিকিৎসা ও ঔষধ প্রয়োগ/প্রতিষেধক/প্রতিকার

) রোগের নামছত্রাক রোগ (সেপ্রোল্গেনিয়াসিস)
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি – রুই জাতীয় ও অন্যান্য চাষ যোগ্য মাছ।

রোগের লক্ষন কারণ
ক. আক্রান্ত মাছের ক্ষতস্থানে তুলার ন্যায় ছত্রাক দেখা দেয় এবং পানির স্রোত যখন স্থির হয়ে যায় কিংবা বদ্ধজলায় অথবা হ্যাচারী ট্যাংকে যেখানে অনিষিক্ত ডিমের ব্যাপক সমাগম ঘটে উহাতে ছত্রাক রোগ দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করে। এমনি ধরনের প্রাকৃতিক জলাশয়ে প্রায় শতকরা ৯৮ ভাগ মাছের ডিম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেপ্রোলেগনিয়া প্রজাতি এ রোগের কারণ।

চিকিৎসা ঔষধ প্রয়োগ
ক. হ্যাচারিতে লালনকৃত ডিমগুলোকে ২৫০ পিপিএম পরমালিন দিয়ে ধৌত করা।
খ. খাচা এবং পেনে চাষকৃত আক্রান্ত মাছগুলোকে শতকরা ৩-৫ ভাগ ফরমালিন দিয়ে ২-৩ মিনিট গোসল দেয়া।
গ. বিকল্প হিসাবে শতকরা ৫ ভাগ লবন পানিতে গোসল দেয়া যেতে পারে।

প্রতিষেধক/প্রতিকার
ক. হ্যাচারীর প্রতিটি যন্ত্রপাতি ও ট্যাংক সম্পূর্ণরুপে পরিষ্কার করার পর শতকরা ১০ ভাগ ফরমালিন পানি দিয়ে ধৌত করা।
খ. অনিষিক্ত ও মৃত ডিমগুলোকে অবিলম্বে হ্যাচারি ট্যাংক থেকে সরিয়ে নেয়া এবং অধিক খাদ্য প্রয়োগ না করা।

) রোগের নামমাছের ক্ষত রোগ (ইপিজুটিকআরসারেটিভসিনড্রোম )
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি – শোল, গজার, টাকি, পুঁটি, বাইম, কৈ, মেনি, মৃগেল, কার্পিও এবং তলায় বসবাসকারী অন্যান্য প্রজাতির মাছ।

রোগের লক্ষনকারণ
ক. এ রোগের মুল কারণ এ্যাফানোমাইসিস ইনভাডেনস্ নামক ছত্রাক দ্ধারা মূলতঃ মাছের মাংসপেশী আক্রান্ত হয়। এছাড়া কিছু ব্যবকটিরিয়া, প্রোটোজোয়া সংশ্লিষ্ট আছে বলে জানা যায়। রোগাক্রান্ত হওয়ার পূর্বে পানির গুনাগুনের অবনতি ঘটে, যেমন ঃ

i) হঠাৎ তাপমাত্রার কমতি (১৯° সেঃ এর কম)।
ii) পি, এইচ-এর কমতি (৪-৬)।
iii) এ্যালকালিনিটির কমতি (৪৫-৭৪ পিপিএম)।
iv) হার্ডনেস-এর কমতি (৫০-৮০ পিপিএম)।
v) ক্লোরাইড এর স্বল্পতা (৩-৬ পিপিএম)।

চিকিৎসাঔষধপ্রয়োগ
ক. নিরাময়ের জন্য ০.০১ পিপিএম চুন ও ০.০১ পিপিএম লবন অথবা ৭-৮ ফুট গভীরতায় প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন ও ১ কেজি হারে লবন প্রয়োগ করলে আক্রান্ত মাছগুলো ২ সপ্তাহের মধ্যে আরোগ্য লাভ করে।

প্রতিষেধক/প্রতিকার
ক. আগাম প্রতিকার হিসাবে আশ্বিন কার্তিক মাসে বর্ণিত হারে লবন ও চুনের প্রয়োগ করলে আসন্ন পরবর্তী শীত মৌসুমে মাছের ক্ষত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায়।

) রোগের নামক্ষত রোগ
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি – সিলভার কার্প

রোগের লক্ষন কারণ
ক. উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ চাষের পুকুর বন্যায়প্লাবিত হলে ক্লোরাইডের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির (৩০ পিপিএম এর অধিক) ফলে কেবল মাত্র সিলভার কার্প মাছে দ্রুত ক্ষত রোগ দেখা দেয়।

চিকিৎসাঔষধ প্রয়োগ
ক. আক্রান্ত পুকুরে তিন ভাগের দুই ভাগ পানি মিঠাপানির দ্ধারা পরিবর্তন করা।
খ. প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ৩/৪টি হারে চালতা ছেঁচে সারা পুকুরে ছড়িয়ে দিতে হবে।

প্রতিষেধক/প্রতিকার
ক. বর্ণিতহারে চালতা প্রয়েগের ফলে ক্ষতরোগ আক্রান্ত সিলভার কার্প দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।
খ. পুকুরকে বন্যামুক্ত রাখুন।

) রোগের নাম -পাখনা অথবা লেজ পঁচা রোগ
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি – রুই জাতীয় মাছ, শিং মাগুর ও পাঙ্গাস মাছ।

রোগের লক্ষন কারণ
ক. প্রাথমিক ভাবে পিঠের পাখনা এবং ক্রমান্বয়ে অন্যান্য পাখনা আক্রান্ত হয়। এ্যারোমোনাড্স ও মিক্সোব্যাকটার গ্রুপের ব্যাকটেরিযা দ্ধারা এ রোগের সৃষ্টি হয়।
খ. পানির পি-এইচ ও ক্ষরতার স্বল্পতা দেখা দিলে এ রোগ দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা ঔষধ প্রয়োগ
ক. ০৫ পিপিএম পটাশযুক্ত পানিতে আক্রান্ত মাছকে ৩-৫ মিনিট গোসল করাতে হবে।
খ. পুকুরে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।

প্রতিষেধক/প্রতিকার
ক. রোগজীবানু ধ্বংসের পর মজুদকৃত মাছের সংখ্যা কমাবেন।
খ. প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করুন।

) রোগেরনামপেটফোলারোগ
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি – রুই জাতীয় মাছ, শিং মাগুর ও পাঙ্গাস মাছ।

রোগের লক্ষন কারণ
ক. মাছের দেহের রং ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং পানি ও সঞ্চালনের মাধ্যমে পেট ফুলে যায়।
খ. মাছ ভারসাম্যহীনভাবে চলাচল করে এবং পানির ওপর ভেসে থাকে । অচিরেই আক্রান্ত মাছের মৃত্যু ঘটে।
গ.  এ্যারোমোনাড্স ব্যাকটেরিয়া এ রোগের কারণ।

চিকিৎসা ঔষধ প্রয়োগ
ক. খালী সিরিঞ্জ দিয়ে মাছের পেটের পানিগুলো বের করে নিতে হবে। প্রতি কেজি মাছের জন্য ২৫ মিঃ গ্রাঃ হারে ক্লোরেমফেনিকল ইনজেকশন দিতে হবে। অথবা,
খ. প্রতি কেজি খাবারের সাথে ২০০ মিঃ গ্রাঃ ক্লোরেমফেনিকল পাউডার মিশিয়ে সরবরাহ করা।

প্রতিষেধক/প্রতিকার
ক. পট্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করুন।
খ. মাছের খাবারের সাথে ফিশমিল ব্যবহার করুন।
গ. মাছকে সুষম খাদ্য সরবরাহ করবেন।
ঘ. প্রাকৃতিক খাবার হিসেবে প্লাংকটনের স্বাভাবিক উৎপাদন নিশ্চিত করুন।

) রোগের নামসাদা দাগ রোগ
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি – মৃগেল ও রুই মাছের পোনা।

রোগেরলক্ষনকারণ
ক. পোনা মাছের আঁইশ, পাখনাসহ সারা দেহে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা দাগ দেখা দেয়
খ. প্রায় ২ সপ্তাহকালীন সময় অব্যাহত থাকে।
গ. এ রোগ ব্যাকটেরিয়া জনিত।

চিকিৎসাঔষধপ্রয়োগ
ক. মাছের সংখ্যা কমিয়ে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি করা। জীবানু মুক্ত পানিতে দুই সপ্তাহের মধ্যে মাছ স্বাভাবিকভাবেই আরোগ্য লাভ করে। বিশেষ কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।

প্রতিষেধক/প্রতিকার
ক. চুন প্রয়োগের মাধ্যমে পোনা মাছের লালন পুকুর প্রস্তুত করলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব এড়ানো যায়।

) রোগের নামমিক্সো-বোলিয়াসিস
আক্রান্ত মাছের প্রজাতি – রুই জাতীয় মাছ

রোগেরলক্ষনকারণ
ক. মিক্সো-বোলাস প্রজাতির এককোষী প্রাণী রুই জাতীয় মাছের বিশেষ করে কাতলা মাছের ফুলকার উপরে সাদা কিংবা হালকা বাদামী গোলাকার গুটি তৈরী করে বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে। ক্রমান্বয়ে ঐ গুটির প্রভাবে ফুলকায় ঘা দেখা যায় এবং ফুলকা খসে পড়ে। শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যাঘাত সৃষ্টিতে মাছ অস্থিরভাবে ঘোরাফেরা করে এবং খাবি খায়। শেষ রাতের দিকে ব্যাপক মড়ক দেখা যায়।

চিকিৎসাঔষধপ্রয়োগ
ক. অদ্যাবধি এই রোগের সরাসরি কোন চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয় নাই।
খ. তথাপিও প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করলে পানির গুনাগুন বৃদ্ধি পেয়ে অম্লত্ব দূর হয়। পরজীবিগুলো ক্রমান্বয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং মাছ নিষ্কিৃতি লাভ করে।

প্রতিষেধক/প্রতিকার
ক. পুকুর প্রস্তুতকালীন প্রতি শতাংশ জলাশয়ে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করে মাটি শোধন করা হলে আসন্ন মৌসুমে এ রোগের প্রকোপ থাকে না।

Source: http://www.ais.gov.bd/site/ekrishi/afad0c56-3abe-4ad5-a9c2-e5537bbb3fa2

 

থাই কৈ মাছ

 

থাই কৈ মাছের চাষ ব্যবস্থাপনা

বর্তমানে বাংলাদেশে থাই কৈ মাছের চাষ বাণিজ্যিকভাবে যথেষ্ট লাভজনক প্রমাণিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত কৈ মাছের পোনা পরীক্ষামূলক চাষাবাদের মাধ্যমে আমাদের চাষিরা আশাব্যঞ্জক সাফল্য অর্জন করেছেন।

১. থাই কৈ চাষে সুবিধাদি-

বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাছ চাষের অনুকূল। দ্রুতবর্ধনশীল তাই ৪-৫ মাসেই ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ওজনে উন্নীত হয়ে থাকে।

থাই কৈ সম্পূরক খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত, তাই এ মাছের দৈহিক বৃদ্ধি ও ত্বরান্বিত হয়ে থাকে। বিদেশে রফতানির সুযোগ রয়েছে। চাষের জন্য সুস্থ ও সবল পোকা সর্বত্র পাওয়া যায়।

স্থানীয় প্রজাতির কৈ মাছের মতোই থাই কৈ এদেশের আপামর জনসাধারণের খাদ্য তালিকায় ইতোমধ্যেই রসনাতৃপ্তির মাছ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজারে থাই কৈ এর বিপুল চাহিদা থাকায় এ মাছের উৎপাদন বাড়িয়ে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব।

২. চাষ পদ্ধতিঃ

পুকুরের চারপাশের ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করতে হবে। পুরানো পুকুর সেচে শুকিয়ে ফেলাই উত্তম। সম্ভব না হলে নির্ধারিত মাত্রায় রোটেনন পাউডার ৩ ভাগের ২ ভাগ পানিতে গুলে অবশিষ্ট ১ ভাগ কাই করে ছোট বল আকারে পুকুরের সব জায়গায় ছিটিয়ে দিতে হবে। রোটেনন প্রয়োগের আধা ঘণ্টা পর জাল টেনে রাক্ষুসে মাছসহ সমস্ত অবাঞ্ছিত মাছ ও প্রাণী ধরে ফেলতে হবে।

৩. চুন প্রয়োগঃ

রোটেনন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর পুকুরে ৩-৪ ফুট পানি থাকা অবস্থায় প্রতি শতাংশে ১ কেজি হারে চুন প্রযোগ করতে হবে।

৪. সার প্রয়োগঃ

চুন প্রয়োগের সপ্তাহ খানিক পর শতাংশ প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া ৫০-৭৫ গ্রাম টিএসপি, ৫-৭ কেজি গোবর কিংবা ২-৩ কেজি মুরগির বিষ্ঠা পুকুরের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের ৬-৭ দিন পর পানির রঙ সবুজ বা হালকা বাদামি সবুজ হলেই মাছের পোনা ছাড়তে হবে।

৫. পোনা ছাড়াঃ

একক চাষে প্রতি শতাংশে ২৫০-৩০০টি সুস্থ সবল একই বয়সি পোনা ছাড়া যেতে পারে। মজুদ পুকুরে ১ মাস বয়সি পোনা ছাড়াই উত্তম।

৬. পরিচর্যাঃ

পোনা মজুদের পর থেকে নিয়মিত অধিক আমিষ যুক্ত মানসম্মত খাবার সরবরাহ করা অপরিহার্য। এ মাছের খাবারে সাধারণত আমিষের পরিমাণ ৩৫% থাকা অত্যাবশ্যক। ছোট অবস্থায় দৈনিক ৫-৬ বার এবং বড় অবস্থায় কমপক্ষে ২ বার থাই কৈ এর পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। পোনা অবস্থায় পুকুরে পানির গভীরতা ৩-৪ ফুট ও বড় অবস্থায় ৫-৬ ফুট থাকা বাঞ্ছনীয়। শীত মৌসুমে থাই কৈ ক্ষত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এ অবস্থায় শীত আসার পূর্বেই পুকুরে যথাসময়ে চুন প্রয়োগের পাশাপাশি পুকুরের পানি ও মাছের স্বাস্থ্য সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

৭. বাজারজাত ব্যবস্থাঃ

পুষ্টিসম্মত খাবার ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে মাত্র ৪-৫ মাসে ১০০-১৫০ গ্রাম ওজন বিশিষ্ট থাই কৈ বাজারজাত করা সম্ভব।

৮. চাষী ভাইদের জন্য কিছু গুরুত্তপূর্ণ পরামর্শঃ

  •  লাভজনক মাছ চাষে সঠিকভাবে পুকুর নির্বাচন ও পুকুর প্রস্তুত করতে হবে।
  •  প্রতি মাসে একবার প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম জিওলাইট ব্যবহার করতে হবে।
  •  যে কোন রাক্ষুসে মাছ নিধন করতে হবে।
  •  মানসম্মত পোনা সংগ্রহ করতে হবে।
  •  নিয়মিত ফাইটো প্লাংকটনের ব্লুম হলে খাদ্য সরবরাহ কমিয়ে দিতে হবে।
  •  প্রতি ১০/১২ দিন পর পর মাছের গড় ওজন ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষন করতে হবে।
  • মাছকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবের দেয়া যাবেনা।
  • নিয়মিত পানির পি এইচ ও গ্যাস পরীক্ষা করতে হবে।

মাছের কোন সমস্যা বা রোগ দেখা দিলে মৎস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

৯. তথ্যের উৎসঃ  AIS (www.ais.gov.bd)

১০. কন্টেন্ট তৈরিঃ ২৭/০৬/২০১২

১১. সর্বশেষ সংযোজন :জুলাই,২০১৪

আরো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন- info@ekrishok.com