কৃষি | ই-কৃষক | Page 2

Category Archives: কৃষি

পেপেঁ চাষ পদ্ধতি

পেপেঁ

papaya2d
চারা তৈরি: বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। পলিথিন ব্যাগে চার তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
চারা রোপণ: দেড় থেকে দুই মাস বয়সের চারা রোপণ করা হয়। ২ মিটার দূরে দূরে চারিদিকে ২ ফুট পরিমান গর্ত তৈরি করে রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মিশাতে হবে। পানি নিকাশের জন্য দুই সারির মাঝখানে  ৫০ সে.মি নালা রাখা দরকার। বানিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষের জন্য বর্গাকার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। প্রতি গর্তে  ৩ টি করে চার রোপণ করতে হয়। ফুল আসলে ১ টি স্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলা দরকার। পরাগায়ণের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখা দরকার।
সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গাছে ১৫ কেজি জৈব সার, ৫৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ৫৫০ গ্রাম টিএসপি সার, ৫৫০ গ্রাম এমওপি সার, ২৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২৫ গ্রাম বোরাক্স সার এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার একত্রে ভালভাবে প্রয়োগ করতে হয়।  ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া সব সার গর্ত তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর পর গাছে নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস পর পর প্রয়োগ করতে হয়। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করা হয়।
অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা:  ফুল হতে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে। গাছ যাতে ঝড়ে না ভেঙ্গে যায় তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হয়।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা রোপণ এবং সার প্রয়োগের পর প্রয়োজনমতো পানি দিতে হবে। খরা মৌসুমে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে।
রোগ ব্যবস্থাপনা:
রোগের নাম: পেঁপের ড্যাম্পিং অফ রোগ দমন।
  • ভূমিকা: মাটিতে যে ছত্রাক থাকে তার দ্বারা এ রোগ হতে পারে। এ রোগটি সাধারণত: চারা অবস্থায় অথবা বীজ গজানোর সময় হয়ে থাকে। বীজের অংকুর গজানোর সময় এ রোগের জীবাণু অতি সহজেই বীজ অথবা অংকুরকে আক্রমণ করে।
  • ক্ষতির নমুনা: এ অবস্থায় বীজ পচে যায় এবং চারা মাটির উপর বের হয়ে আসতে পারেনা। এভাবে অংকুর গজানোর আগেই পচন হতে পারে। চারা গজানোর পরেও জীবাণুর আক্রমণ ঘটে। এ পর্যায়ে চারার গোড়া বা শিকড় পচে গিয়ে আক্রান্ত চারা মাটিতে পড়ে যায় এবং মারা যায়। চারার বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগের প্রকোপ কমে যায়।
  • অনুকূল পরিবেশ: বর্সা মৌসুমে ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ খুব বেশি।
  • বিস্তার: বৃষ্টির পানিতে অথবা সেচের পানিতে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়।

ব্যবস্থাপনা: গাছের গোড়ার পানি নিকাশের ভাল ব্যবস্থা রাখা দরকার। রোগাক্রান্ত চারা গাছ মাটি থেকে উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রমন বেশি হলে রিডোমিল এমজেড-৭২ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর গাছের গোড়ার চারিদিকের মাটিতে প্রয়োগ করা দরকার। জিংকের ঘাটতির জন্য মোজাইক লক্ষণ দেখা দিলে গাছের গোড়ায় গাছপ্রতি ৫-১০ গ্রাম জিংক প্রয়োগ করলে এবং ০.২% জিংক গাছের পাতায় স্প্রে করলে এ সমস্যা কমে যায়।

ফসল তোলা: সবজি হিসেবে কচি ফল সংগ্রহ করা হয়। পাকানোর জন্য ফলের ত্বক হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে সংগ্রহ করতে হয়।

সুত্রঃ কৃষি তথ্য সার্ভিস (এ আই এস)
Mungbean

মুগ ডাল

মুগ(Mungbean)

মুগ ডালে প্রচুর পরিমানে খাদ্য শক্তি ও প্রোটিন আছে। ডাল হিসেবে প্রধানত খাওয়া হয়। বেলে দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটি, মাঝারি উঁচু এবং সুনিষ্কাশিত জমি মুগ আবাদের জন্য উপযোগী।

জাত পরিচিতি:
বারি মুগ-২ (কানি-): বারি মুগের কানি- জাত দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ এবং রবি মৌসুমের শেষ দিকেও চাষ করা যায়। রান্নার সময়কাল ১৫-১৮ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২০-২৪%। জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ০.৯-১.১ টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক রোগ সহনশীল।

বারি মুগ-৩ (প্রগতি): বীজ মসৃণ ও রং বাদামি সবুজ। রান্না হওয়ার সময়কাল ১৪-১৭ মিনিট। দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ এবং রবি মৌসুমে বিলম্বে আবাদ করা যায়। আমিষের পরিমাণ ১৯-২১%। জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.০-১.১ টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

বারি মুগ-৪ (রুপসা): বীজ মসৃণ ও রং সবুজ। এ জাত দিবস নিরপেক্ষ হওয়ায় খরিফ-১, খরিফ-২ এবং রবি মৌসুমে বিলম্বে বপন করা যায়। জাতটি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। ডাল রান্নার সময়কাল ১৫-২০ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২১-২৪%। জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.২-১.৪ টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

বারি মুগ-৫ (তাইওয়ানী): গাছের পাতা, ফল ও বীজ আকারে বেশ বড়। বীজের রং গাঢ় সবুজ। হাজার বীজের ওজন ৪০-৪২ গ্রাম। জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো যে ফল এক সাথে পাকে। ডাল রান্নার সময়কাল ১৭-২০ মিনিট। আমিষের পরিমাণ ২০-২২%। জাতটির জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। ফলন হেক্টরপ্রতি ১.২-১.৫টন। জাতটি সারকোস্পোরা দাগ ও হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ সহনশীল।

বারি মুগ-৬ (রুপসা): একই সময়ে প্রায় সব শুটি পরিপক্ক হয়। পাতা ও বীজের রং গাঢ় সবুজ এবং পাতা চওড়া। ফুল আসার পরে দৈহিক বৃদ্ধি কম। দানার আকার বড়। প্রতি ১০০ বীজের ওজন ৫.১-৫.২ গ্রাম। গম কাটার পর এপ্রিলের ১ম সপ্তাহ পর্যন- বপন করা যায়। এ ছাড়া খরিফ-২ ও রবি মৌসুমের শেষেও বপন করা যায়। হলুদ মোজাইক ভাইরাস এবং পাতার দাগ রোগ সহনশীল। জীবনকাল ৫৫-৫৮ দিন। হেক্টরপ্রতি ফলন ১৫০০ কেজি।

বীজ বপন: ছিটিয়ে এবং সারি উভয় পদ্ধতিতেই বপন করা যায়। সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি রাখতে হবে।

বারি মুগ-২, বারি মুগ-৩ ও বারি মুগ-৪ এর জন্য হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ কেজি। বারি মুগ-৫ এর জন্য ৪০-৪৫ কেজি বীজের প্রয়োজন। ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ সামান্য বেশি দিতে হবে।

এলাকাভেদে মুগের বপন সময়ের তারতম্য দেখা যায়। খরিফ-১ মৌসুমে ফাল্গুন মাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন- (ফেব্রুয়ারির শেষ ভাগ হতে মার্চের মধ্য ভাগ)। খরিফ-২ মৌসুমে শ্রাবণ-ভাদ্র মাস (আগস্টের প্রথম হতে সেপ্টেম্বরের শেষ ভাগ)। রবি মৌসুমে বরিশাল এলাকার জন্য বপনের উত্তম সময় পৌষ-মাঘ মাস (জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্য ভাগ)।

সার ব্যবস্থাপনা: অনুর্বর জমিতে হেক্টরপ্রতি নিম্নরূপ সার ব্যবহার করতে হবে।

সারের নাম সারের পরিমাণ কেজি/হেক্টর
ইউরিয়া ৪০-৫০
টিএসপি ৮০-৮৫
এমওপি ৩০-৩৫
অণুজীব সার ৪-৫

শেষ চাষের সময় সমুদয় সার প্রয়োগ করতে হবে। অপ্রচলিত এলাকায় আবাদের জন্য সুনির্দিষ্ট অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৮০ গ্রাম অণুজীব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। সাধারণতঃ সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় না।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করা প্রয়োজন। অতিবৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে না পারে সেজন্য অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এছাড়া খরিফ-১ মৌসুমে বৃষ্টি না হলে সঠিক সময়ে বপনের জন্য বপনের আগে বা পরে একটি সেচ প্রয়োজন। সেচ দিলে চারা গজানোর পর মালচিং করে দিতে হবে।

রোগ ব্যবস্থাপনা
রোগের নাম: মুগের পাতার দাগ রোগ

ক্ষতির নমুনা: পাতায় ছোট ছোট লালচে বাদামি বর্ণের গোলাকৃতি হতে ডিম্বাকৃতির দাগ পড়ে। আক্রান- পাতার উপর ছিদ্র হয়ে যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে সম্পূর্ণ পাতা ঝলসে যায়। পরিত্যক্ত ফসলের অংশ, বায়ু ও বৃষ্টির মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।
অনুকুল পরিবেশ: বেশি আর্দ্রতা (৮০%) এবং উচ্চ তাপে (২৮ ডিগ্রী সে.) এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
ব্যবস্থাপনা: বাভিস্টিন (০.২%) নামক ছত্রাকনাশক ১২-১৫ দিন পরপর ২-৩ বার সেপ্র করতে হবে। রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার (বারি মুগ-২, ৩, ৪ এবং ৫) করতে হবে।

রোগের নাম: মুগের পাউডারি মিলডিউ

ক্ষতির নমুনা: এ রোগে পাতায় পাউডারের মত আবরণ পড়ে। সাধারণত: শুষ্ক মৌসুমে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। বীজ, পরিত্যক্ত গাছের অংশ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে।

ব্যবস্থাপনা: বিকল্প পোষক ও গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলতে হবে। টিল্ট-২৫০ বা থিওভিট (০.২%) ১০-১২ দিন পরপর ২-৩ বার সেপ্র করতে হবে।

রোগের নাম: মুগের হলদে মোজাইক ভাইরাস রোগ

ক্ষতির নমুনা: মোজাইক ভাইরাস দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত পাতার উপর হলদে সবুজ দাগ পড়ে। সাধারণত: কচি পাতা প্রথমে আক্রান্ত হয়। আক্রান- বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। সাদা মাছি নামক পোকা এ রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে।
অনুকুল পরিবেশ: বিকল্প পোষক ও সাদা মাছির আধিক্য এ রোগ দ্রুত বিস্তারে সহায়ক।

ব্যবস্থাপনা: রোগ মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। সাদা মাছি দমনের জন্য অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়ে ফেলতে হবে।

গুদামজাত ডালের পোকা ব্যবস্থাপনা

ভূমিকা: পূর্ণবয়স্ক পোকা ও কীড়া উভয়ই গুদামজাত ডালের ক্ষতি করে থাকে।

ক্ষতির নমুনা: এ পোকা ডালের খোসা ছিদ্র করে ভিতরে ঢুকে শাঁস খেতে থাকে। ফলে দানা হাল্কা হয়ে যায়। এর ফলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।

ব্যবস্থাপনা: গুদামজাত করার আগে দানা ভালভাবে পরিষ্কার করতে হয়। ডালের দানা শুকিয়ে পানির পরিমান ১২% এর নিচে আনতে হবে। বীজের জন্য টন প্রতি ৩০০ গ্রাম ম্যালাথিয়ন বা সেভিন ১০% গুড়া মিশিয়ে পোকার আক্রমণ প্রতিরোদ করা যায়। ফসটক্সিন ট্যাবলেট ২টি বড়ি প্রতি ১০০ কেজি গুদামজাত ডালে ব্যবহার করতে হয়। এ বড়ি আবদ্ধ পরিবেশে ব্রবহার করতে হয়।

ফসল তোলা
মধ্য-কার্তিক থেকে শেষ ভাগ (অক্টোবর শেষ থেকে নভেম্বর প্রথম)। বরিশাল পটুয়াখালী অঞ্চলে মার্চ এর শেষ পর্যন্ত।

Source: AIS.GOV.BD

কুমড়া গাছের ফলন বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম পরাগায়ন

Image may contain: one or more people, outdoor and nature

লাউ আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। ভাল ভাবে লাউ ধরাতে হলে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন করতেই হবে। লাউ গাছের ফুল একলিঙ্গ এবং গাছটি ভিন্নবাসী উদ্ভিদ । অর্থাৎ এসব গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পৃথক পৃথক হয়। একই বয়সের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল কাছাকাছি থাকলে এবং বাতাসের বেগ প্রবল হলে কিছু পরাগায়নের সম্ভাবনা থাকে তবে তা একেবারেই নগন্য। তাই পোকা-মাকড় বা মৌমাছি বেশি না থাকলে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পরাগায়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরাগায়ন সমভব হয় না।লাউয়ের ফুল সাদা বলে মৌমাছি বা পোকামাকড় থাকলেও লাউ ফুলে পরিভ্রমণ কম করে। এ জন্য লাউ ধরে না। লাউয়ের পুরুষ ও স্ত্রী ফুল পৃথক হওয়ায় কৃত্রিমভাবে পুরুষ ফুল এনে স্ত্রী ফুলের পরাগায়ন ঘটাতে হয়। এ জন্য পুরুষ ও স্ত্রী ফুল চেনা প্রয়োজন। পুরুষ ফুল ফুলের বোঁটার অগ্রভাগে ফুটে। পাপড়ির গোড়ায় গর্ভাশয় থাকে না। পাপড়ির মাঝখান দিয়ে বেড়ে যাওয়া পুংদণ্ডে পাউডারের গুঁড়ার মত পুংরেণু থাকে। পুংদণ্ডের শীর্ষভাগে গর্ভমুণ্ড থাকে না। শুধু বোঁটার অগ্রভাগে ফুটে থাকা ফুলগুলো পুরুষ ফুল। আর ক্ষুদ্রাকৃতি লাউয়ের মত গর্ভাশয়ধারী ফুলগুলো স্ত্রী ফুল। গর্ভাশয়ের ওপর থেকে পাপড়ি থাকবে। পুংদণ্ড থাকবে না। গর্ভদণ্ড ছোট ও মোটা। গর্ভদণ্ডে আঠালো পদার্থ থাকবে। পুংরেণু এখানে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আঠায় আটকে যায়। অনেকেরই ধারণা, শুধু স্ত্রী ফুলের এই গর্ভাশয় থাকলেই লাউ ধরবে। এ ধারনাটা ভুল। গর্ভমুণ্ডে পুরুষ ফুলের পুংরেণু না লাগা পর্যন্ত লাউ ধরবে না। পুরুষ ফুল থেকে ফল হয় না ফল হয় স্ত্রী ফুল থেকে , তাই মনে রাখবেন পুরুষ ফুল ছিড়ে এনে স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করতে হবে। স্ত্রী ফুল ছেড়া যাবেনা। তাহলেত ফলই হবে না।

কুমড়া জাতীয় ফুলের মধ্যে একমাত্র লাউয়ের ফুলই হলো সাদা , অন্য সব ফুল হলুদ রঙের। মোটামুটি সব সাদা ফুল সন্ধার আগে ফুটে। আগের দিনের সন্ধা হওয়ার ১ ঘন্টা পূর্ব থেকে পরের দিনের সকাল ৮টা পর্যন্ত লাউ ফুলের পরাগ রেনু জীবিত থাকে। এই সময়ের ভিতরে আপনাকে পরাগায়ন করতে হবে। আবহাওয়া ও তাপের বিভিন্নতার কারণে ফুলের পরাগ রেনুর জীবন কালের সময়ে কম বেশি হতে পারে। মনে রাখা দরকার যে পরাগায়নের জন্য একই দিনে ফোটা পুরুষ ও স্ত্রী ফুল নির্বাচন করতে হবে।প্রতিদিন উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সদ্যফোটা পুরুষ ফুল রেণুসমৃদ্ধ পুংকেশর রেখে পাপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলতে হয়। এরপর সদ্যফোটা স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে পুরুষ ফুলের পুংরেণু হালকাভাবে সামান্য একটু ঘষে দিতে হয়। এতে স্ত্রী ফুল নিষিক্ত হয়ে ফল ধরবে । একটি পুরুষ ফুলের পুংকেশর দিয়ে ৬ থেকে ৭টি স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে পরাগায়ন করা যায়। আপনি একটি পুরুষ ফুল দিয়ে একটি স্ত্রী ফুল নিষিক্ত করুন। এতে শতকরা ৯৯টি স্ত্রী ফুলে ফল ধরবে।

source: Modern Agriculture Facebook Page

পেঁপে চাষাবাদ

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

পুষ্টি মূল্য:
পাকা পেঁপে ভিটামিন এ সমৃদ্ধ একটি ফল। কাঁচা পেঁপেতে প্রচুর পরিমানে পেপেইন নামক হজমকারী দ্রব্য থাকে।

ভেষজ গুণ:
অজীর্ণ,কৃমি সংক্রমণ, আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনি ও পাকস্থলীর ক্যান্সার নিরাময়ে কাজ করে।

ব্যবহার:
পাকা পেঁপে ফল হিসেবে এবং কাঁচা পেপে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।

ঔষধি গুণাগুণ:

১। রক্ত আমাশয়:
প্রত্যেহ সকালে কাঁচা পেঁপের আঠা ৫/৭ ফোঁটা ৫/৬ টি বাতাসার সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। ২/৩ দিন খাওয়ার পর রক্তপড়া কমতে থাকবে।

২। ক্রিমি:
যে কোনো প্রকারের ক্রিমি হলে, পেঁপের আঠা ১৫ ফোঁটা ও মধু ১চা চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। এরপর আধা ঘন্টা পরে উঞ্চ পানি আধ কাপ খেয়ে তারপরে ১ চামচ বাখারি (শসা-ক্ষীরার মতো এর স্বাদ) চুনের পানি খেতে হয়। এভাবে ২ দিন খেলে ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে।

৩। আমাশয়:
আমাশয় ও পেটে যন্ত্রনা থাকলে কাঁচা পেঁপের আঠা ৩০ ফোঁটা ও ১ চামচ চুনের পানি মিশিয়ে তাতে একটু দুধ দিয়ে খেতে হবে। একবার খেলেই পেটের যন্ত্রনা কমে যাবে এবং আমাশয় কমে যাবে

৪। যকৃত বৃদ্ধিতে:
এই অবস্থা হলে ৩০ ফোঁটা পেঁপের আঠাতে এক চামচ চিনি মিশিয়ে এক কাপ পানিতে ভালো করে নেড়ে মিশ্রণটি সারাদিনে ৩ বার খেতে হবে। ৪/৫ দিনের পর থেকে যকৃতের বৃদ্ধিটা কমতে থাকবে, তবে ৫/৬ দিন খাওয়ার পর সপ্তাহে ২ দিন খাওয়াই ভালো। এভাবে ১ মাস খেলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।

৫। ক্ষুধা ও হজম শক্তিতে:
প্রত্যেক দিন সকালে ২/৩ ফোঁটা পেঁপের আঠা পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা ক্ষুধাও বেড়ে যাবে এবং হজমও ঠিকভাবে হবে।

৬। পেট ফাঁপায়:
কয়েক টুকরো পাকা পেঁপের শাঁষ, আর সামান্য লবন এবং একটু গোলমরিচের গুড়ো একসংগে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা পেট ফাঁপার উপশম হয।

৭। প্রবল জ্বরে:
দেড় চামচ পেঁপে পাতার রস এক কাপ পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে। এর দ্বারা জ্বরের বেগ, বমি, মাথার যন্ত্রনা, শরীরে দাহ কমে যাবে। জ্বর কমে গেলে আর খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

৮। মাসিক ঋতু বন্ধে:
যাদের মাসিক ঋতু বন্ধ হওয়ার সময় হয়নি অথচ বন্ধ হয়ে গিয়েছে অথবা যেটুকু হয় তা না হওয়ারই মত, সেক্ষেত্রে ৫/৬ টি পাকা পেঁপের বিচি গুড়া করে রোজ সকালে ও বিকালে দু’বার পানিসহ খেতে হবে। এর ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই মাসিক স্রাব ঠিক হয়ে যাবে, তবে অন্য কোন কারনে এটা বন্ধ হয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

৯। দাদে:
সে যে কোনো প্রকারের হোক না কেন, কাঁচা পেঁপের/গাছের আঠা ঐ দাদে লাগিয়ে দিতে হবে, একদিন লাগিয়ে পরের দিন লাগাতে হবে না, এরপরের দিন আবার লাগাতে হবে, এইভাবে ৩/৪ দিন লাগালে দাদ মিলিয়ে যাবে।

১০। একজিমায়:
যে একজিমা শুকনা অথবা রস গড়ায় না, সেখানে ১ দিন অথবা ২ দিন অন্তর পেঁপের আঠা লাগালে ওটার চামড়া উঠতে উঠতে পাতলা হয়ে যায়।

১১। উকুন হলে:
১ চামচ পেঁপের আঠা, তার সঙ্গে ৭/৮ চামচ পানি মিশিয়ে ফেটিয়ে নিতে হয়। তারপর ওই পানি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর মাথা ধুয়ে ফেলতে হয়। এইভাবে একদিন অন্তর আর একদিন বা ২ দিন লাগালে উকুন মরে যায়।

উপযুক্ত জমি ও মাটি:
উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি ভাল।

জাত পরিচিতি:
বারি পেঁপে-১ (শাহী পেঁপে):
স্ত্রী ও পুরুষ ফুল আলাদা গাছে ধরে। চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর ফুল আসে। কান্ডের খুব নিচ থেকেই ফল ধরা শুরু হয়। প্রতিটি ফলের ওজন ৮৫০-৯৫০ গ্রাম। চারা লাগানোর ৩-৪ মাস পর ফুল আসে, ফুল আসার ৩-৪ মাস পর পাকা পেঁপে সংগ্রহ করা যায়। এ জাতটি প্রায় সার বছরই ফল দিয়ে থাকে।

চারা তৈরি:
বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। পলিথিন ব্যাগে চার তৈরি করলে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

চারা রোপণ:
দেড় থেকে দুই মাস বয়সের চারা রোপণ করা হয়। ২ মিটার দূরে দূরে চারিদিকে ২ ফুট পরিমান গর্ত তৈরি করে রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মিশাতে হবে। পানি নিকাশের জন্য দুই সারির মাঝখানে ৫০ সে.মি নালা রাখা দরকার। বানিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষের জন্য বর্গাকার পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। প্রতি গর্তে ৩ টি করে চার রোপণ করতে হয়। ফুল আসলে ১ টি স্ত্রী গাছ রেখে বাকি গাছ তুলে ফেলা দরকার। পরাগায়ণের সুবিধার জন্য বাগানে ১০% পুরুষ গাছ রাখা দরকার।

সার ব্যবস্থাপনা:
প্রতি গাছে ১৫ কেজি জৈব সার, ৫৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার, ৫৫০ গ্রাম টিএসপি সার, ৫৫০ গ্রাম এমওপি সার, ২৫০ গ্রাম জিপসাম সার, ২৫ গ্রাম বোরাক্স সার এবং ২০ গ্রাম জিংক সালফেট সার একত্রে ভালভাবে প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়া ও এমওপি সার ছাড়া সব সার গর্ত তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর পর গাচে নতুন পাতা আসলে ইউরিয়া ও এমওপি সার ৫০ গ্রাম করে প্রতি ১ মাস পর পর প্রয়োগ করতে হয়। গাছে ফুল আসলে এ মাত্রা দ্বিগুণ করা হয়।

অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা:
ফুল হতে ফল ধরা নিশ্চিত মনে হলে একটি বোঁটায় একটি ফল রেখে বাকিগুলো ছিড়ে ফেলতে হবে। গাছ যাতে ঝড়ে না ভেঙ্গে যায় তার জন্য বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হয়।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা:
চারা রোপণ এবং সার প্রয়োগের পর প্রয়োজনমতো পানি দিতে হবে। খরা মৌসুমে ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর হালকা সেচ দিতে হবে।

রোগ ব্যবস্থাপনা:

রোগের নাম:
পেঁপের ড্যাম্পিং অফ রোগ দমন।
ভূমিকা: মাটিতে যে ছত্রাক থাকে তার দ্বারা এ রোগ হতে পারে। এ রোগটি সাধারণত: চারা অবস্থায় অথবা বীজ গজানোর সময় হয়ে থাকে। বীজের অংকুর গজানোর সময় এ রোগের জীবাণু অতি সহজেই বীজ অথবা অংকুরকে আক্রমণ করে।

ক্ষতির নমুনা:
এ অবস্থায় বীজ পচে যায় এবং চারা মাটির উপর বের হয়ে আসতে পারেনা। এভাবে অংকুর গজানোর আগেই পচন হতে পারে। চারা গজানোর পরেও জীবাণুর আক্রমণ ঘটে। এ পর্যায়ে চারার গোড়া বা শিকড় পচে গিয়ে আক্রান্ত চারা মাটিতে পড়ে যায় এবং মারা যায়। চারার বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগের প্রকোপ কমে যায়।

অনুকূল পরিবেশ:
বর্সা মৌসুমে ঢলে পড়া রোগের প্রকোপ খুব বেশি।
বিস্তার: বৃষ্টির পানিতে অথবা সেচের পানিতে এ রোগের জীবাণু ছড়ায়।

ব্যবস্থাপনা:
গাছের গোড়ার পানি নিকাশের ভাল ব্যবস্থা রাখা দরকার। রোগাক্রান্ত চারা গাছ মাটি থেকে উঠিয়ে পুড়ে ফেলতে হবে। আক্রমন বেশি হলে রিডোমিল এমজেড-৭২ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর গাছের গোড়ার চারিদিকের মাটিতে প্রয়োগ করা দরকার। জিংকের ঘাটতির জন্য মোজাইক লক্ষণ দেখা দিলে গাছের গোড়ায় গাছপ্রতি ৫-১০ গ্রাম জিংক প্রয়োগ করলে এবং ০.২% জিংক গাছের পাতায় স্প্রে করলে এ সমস্যা কমে যায়।

ফসল তোলা:
সবজি হিসেবে কচি ফল সংগ্রহ করা হয়। পাকানোর জন্য ফলের ত্বক হালকা হলুদ বর্ণ ধারণ করলে সংগ্রহ করতে হয়।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

সেক্স ফেরোমন ফাঁদ

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করার জন্য স্ত্রী পোকা কর্তৃক নিঃসৃত এক ধরনের
রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে যা সেক্স ফেরোমন নামে পরিচিত। সেক্স ফেরোমন গন্ধে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে স্ত্রী পোকার সাথে মিলিত হয়। কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা ফেরোমনটির নাম কিউলিউর। কিউলিউর নামক সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করে পুরুষ মাছি পোকা আকৃষ্ট করা সম্ভব। অন্যদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীরা দেশে সহজলভ্য দ্রব্যাদি দিয়ে অত্যন্ত সুস্থ ও পোকা ধরার কাজে অত্যন্ত কার্যকরী এক ধরনের ফেরোমন ফাঁদ তৈরি করেছেন, যা পানি ফাঁদ নামে পরিচিত। উক্ত ফাঁদ যে কেউ ঘরে বসে তৈরি করতে সস্খম। ফাঁদ পাতা অবস্থায় সব সময় পাত্রের তলা থেকে ৩-৪ সেমি. উচ্চতা পর্যন্ত সাবান মিশ্রিত পানি রাখতে হবে। পানি ফাঁদের মাধ্যমে উক্ত ফেরোমন ব্যবহার করে আকৃষ্ট পুরুষ মাছিগুলো মেরে ফেলা যায়। ফাঁদ প্রতি ১ মিলি বা ১৫-২০ ফোঁটা সেক্স ফেরোমন এক খন্ড তুলার টুকরা ভিজিয়ে পানি ফাঁদ প্লাস্টিক পাত্রের মুখ থেকে ৩-৪ সেমি. নিচে একটি সরু তার দিয়ে স্থাপন করতে হবে। ফেরোমন গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ মাছি পোকা প্লাস্টিক পাত্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ও সাবান পানিতে আটকা পড়ে মারা যায়। খেয়াল রাখতে হবে পাত্রের তলায় রক্ষিত পানি যেন শুকিয়ে না যায়। যত্নের সাথে ব্যবহার করলে এ ধরনের প্লাস্টিক পাত্রের ফাঁদ ৩-৪ মৌসুম পর্যন্ত অনায়াসেই ব্যবহার করা যায়।

কুমড়াজাতীয় ফসলে এ পদ্ধতির চমকপ্রদ কার্যকারিতার জন্য কৃষকদের মধ্যে এটি জাদুর ফাঁদ নামে পরিচিত। সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই যে, সর্বোচ্চ ফল লাভের জন্য সব চাষিকে একসাথে ওই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। বিভিন্ন পোকার স্ত্রী পোকা কর্তৃক নিঃসৃত সেক্স ফেরোমন আবিষ্কৃত হয়েছে। কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা সম্ভব এবং বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবেও সহজলভ্য। কুমড়াজাতীয় সবজির মাছি পোকার সেক্স ফেরোমন টোপ বিভিন্ন কুমড়াজাতীয় ফসল যেমন- মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, শসা, ৰিরা, ঝিঙা, করলা, কাঁকরোল, চিচিঙা, উচ্ছে, ধুন্দল, তরমুজ, পটোল, বাঙ্গি ইত্যাদি ফসলের মাছি পোকা দমনের জন্য উক্ত ফেরোমন টোপ অত্যন্ত কার্যকরী। উচ্চ ফাঁদ তৈরির জন্য একটি টোপ, একটি বারি ফাঁদ, তার, গুঁড়া সাবান, পানি, বাঁশের খুঁটি ইত্যাদি উপকরণ প্রয়োজন। ফেরোমন ফাঁদ তৈরি ও স্থাপন পদ্ধতি তিন লিটার পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ও ২২ সেমি. লম্বা চার কোণাকৃতি বা গোলাকার একটি প্লাস্টিক পাত্র দিয়ে এই ফাঁদ তৈরি করা হয়। পাত্রটি উভয় পার্শ্বে ১০-১২ সেমি. উচ্চতা সম্পন্ন এবং নিচের দিকে ১০-১২ সেমি. পরিমাণ অংশ ত্রিভুজাকারে কেটে ফেলতে হবে। পাত্রের তলা হতে কাটা অংশের নিচের দিক কমপৰে ৪-৫ সেমি. উঁচু হওয়া বাঞ্ছনীয়। ফাঁদ পাতা অবস্থায় সব সময় পাত্রের তলা হতে উপরের দিকে কমপৰে ৩-৪ সেমি. পর্যন্ত সাবান মিশ্রিত পানি ভরে রাখতে হবে। প্লাস্টিক পাত্রের মুখ থেকে সেক্স ফেরোমন টোপটি একটি সরু তার দিয়ে এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হবে যেন সেটি পানি থেকে মাত্র ২-৩ সেমি. ওপরে থাকে। সেই সেক্স ফেরোমনের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ মাছি পোকা প্লাস্টিক পাত্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ও সাবান পানিতে পড়ে আটকে যায় এবং পরে মারা পড়ে। কুমড়াজাতীয় সবজির ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারবিধি জমিতে প্রতি ১২-১৫ মিটার দূরে দূরে বর্গাকারে ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। প্রতি ৩ শতাংশ জমির জন্য ১টি ফাঁদ ব্যবহার করা উচিত। একটি টোপ এক মৌসুমের জন্য খেয়াল রাখতে হবে। যে পাত্রের তলায় রক্ষিত সাবান পানি যেন মিশ্রিত পানির কারণে শুকিয়ে না যায়। প্রতি ৪-৫ দিন অন্তর অন্তর ফাঁদের সাবান মিশ্রিত পানি পোকাসহ পরিষ্কার ও পরিবর্তন করতে হবে। ফেরোমন টোপগওলো অ্যালমুনিয়াম প্যাকেটের মধ্যে রক্ষিত থাকে এবং এ অবস্থায় ১-২ বছর সংরক্ষণ করা যায়। তবে অ্যালমুনিয়াম প্যাকেট থেকে টোপগুলো বের করার সাথে সাথে মাঠে প্রয়োগ করতে হবে।

বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার ফেরোমন টোপ
বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণে বেগুনের উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। বর্তমানে সেক্স ফেরোমনভিত্তিক আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহার করে এ পোকার আক্রমণ রোধ করা সম্ভবপর হচ্ছে। ফেরোমন ফাঁদ তৈরি ও স্থাপন পদ্ধতি কোণাকৃতি বা গোলাকার একটি প্লাস্টিক পাত্র দিয়ে এই ফাঁদ তৈরি করা হয়। পাত্রের উভয়দিকে ত্রিভুজাকারে কেটে ফেলতে হবে। পাত্রের তলা হতে কাটা অংশের নিচের দিক কমপৰে ৪-৫ সেমি. উঁচু হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্লাস্টিক পাত্রের মুখ থেকে সেক্স ফেরোমন টোপটি (একটি স্বচ্ছ প্লাস্টিক টিউব) একটি সরু তার দিয়ে এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখতে হবে যেন টিউবটি পানি থেকে মাত্র ২-৩ সেমি. উপরে থাকে। সেক্স ফেরোমনে গন্ধে আক্রষ্ট হয়ে পুরুষ মথ ফাঁদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ও সাবান পানিতে পড়ে আটকে যায় এবং পরবর্তীতে মারা পড়ে। সেক্স ফেরোমনে ভরা প্লাস্টিক টিউবটির মুখ সব সময়ই বন্ধ রাখতে হবে।

ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহারের সময়
কুমড়াজাতীয় সবজির ৰেত্রে যখন ফুল আসে তখন এবং বেগুনের জমিতে ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য চারা লাগানোর ১০-১৫ দিন থেকে ফেরোমোন ফাঁদ স্থাপন কতে হবে।

স্থাপন করার পদ্ধতি
জমির আইল থেকে ৫ মিটার ভেতরে প্রতি ১০ মিটার দূরে দূরে বর্গাকারে ফেরোমন ফাঁদ থাপন করতে হবে। সাধারণত ২টি খুঁটি দৃঢ়ভাবে স্থাপন করে তার মাঝে টোপ বা লিউরসহ ফাঁদটি বসিয়ে রশি বা গুনা দিয়ে খুটির সাথে শক্ত করে বেঁধে দিতে হবে। প্রতি ২.৫-৩ শতাংশ জমির জন্য ১টি ফাঁদ ব্যবহার করা উচিত। একটি টোপ ৪৫-৫০ দিনের জন্য প্রযোজ্য অর্থাৎ পুরো মৌসুমের জন্য ২টি টোপ ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে পাত্রের তলায় রক্ষিত সাবান পানি যেন কোন কারণে শুকিয়ে না যায়। প্রতি ৪-৫ দিন অন্তর অন্তর ফাঁদের সাবান মিশ্রিত পানি পোকাসহ পরিষ্কার ও পরিবর্তন করতে হবে। ফেরোমন টোপগুলো অ্যালমুনিয়াম প্যাকেটের মধ্যে রৰিত থাকে এবং এ অবস্থায় ১-২ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। তবে অ্যালমুনিয়াম প্যাকেট থেকে টোপগুলো বের করার সাথে সাথে মাঠে প্রয়োগ করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই ফ্রিজ সংরক্ষণ করতে হবে।

ফাঁদ স্থাপনের পরে করণীয়
প্রতি ২-৩ দিন পর পর ফাঁদ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। ফাঁদের মধ্যে মারা যাওয়া পোকা সরিয়ে ফেলতে হবে। ফাঁদের পানি শুকিয়ে গেলে পুনরায় সাবান/কাপড় কাচার পাউডার মিশ্রিত পানি দিতে হবে। গাছের উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে ফাঁদটিকে উপরের দিকে তুলে দিতে হবে। বেগুনের ক্ষেত্রে প্রতি দেড় থেকে দুই মাস পরপর এবং কুমড়াজাতীয় সবজি ফলের মাছি পোকার ক্ষেত্রে প্রতি ৩ মাস পর টোপ বা/লিউর পরিবর্তন করে নতুন টোপ/লিউর ফাঁদ পুনঃ স্থাপন করতে হবে।

সেক্স ফেরোমন ব্যবহারের সুবিধা
১. বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব।
২. কম খরচে অধিক উৎপাদন করা সম্ভব।
৩. সবজি উৎপাদনে কম শ্রম লাগবে।
৪. পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত সবজি উৎপাদন
করা সম্ভব।

যেসব ফসলের জন্য সেক্স ফেরোমন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে
১. বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার সেক্স ফেরোমন।
২. কুমড়াজাতীয় সবজির ফলের মাছি পোকার সেক্স ফেরোমন।
৩. আম, লিচু, পেয়ারা, ও কমলার মাছি পোকার সেক্স ফেরোমন।

Source: Modern Agriculture Facebook Page