তথ্য ভান্ডার | ই-কৃষক | Page 2

Category Archives: তথ্য ভান্ডার

txd-hybrid-coconut-plant-seeding-500x500

খাটো জাতের হাইব্রিড নারিকেল চাষ

এই লিংকে ক্লিক করুন>>খাটো জাতের হাইব্রিড নারিকেল চাষ

Source of content: AIS Website(http://www.ais.gov.bd/site/page/287a5e52-c038-4e38-bf3f-db23467507dc/খাটো-জাতের-নারিকেল-চাষ”)
Source of featured image: https://www.indiamart.com/proddetail/txd-hybrid-coconut-plant-seeding-6261552691.html

মলা, ঢেলা ও পুঁটি মাছ চাষ

মাছ চাষের বৈশিষ্ট্য
•    একক ও মিশ্র উভয় পদ্ধতিতে চাষ করা হয়।
•    প্রাকৃতিকভাবে বছরে ২-৩ বার প্রজনন করে থাকে।
•    সহজ ব্যবস্থাপনায় চাষ করা যায়।
•    যে কোন ছোট জলাশয়ে চাষ করা যায়।

পুকুর নির্বাচন
•    জলাশয়টি বন্যামুক্ত হতে হবে।
•    পানির গভীরতা ১-১.৫ মিটার হলে ভালো হয়।
•    জলাশয়ে আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

প্রস্তুতি, পোনা মজুদ, খাদ্য ও সার প্রয়োগ
•    পুকুরের পাড় মেরামত করে শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন ও ৪-৫ কেজি গোবর প্রয়োগ করতে হবে।
•    সার প্রয়োগের ৩-৪ দিন পর প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মালে ছোট মাছ ছাড়তে হবে।
•    একক চাষের ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি ৪০০-৫০০ টি মলা/ঢেলা/পুটির চাষ করা যায়।
•    মাছ ছাড়ার পর দিন হতে মাছের দেহ ওজনের শতকরা ৫-১০% ভাগ হিসাবে চালের কুড়া, গমের ভূষি ও সরিষার খৈল সম্পুরক খাবার হিসেবে দেয়া যেতে পারে।

•   প্রাকৃতিক খাবার তৈরীর জন্য ৭ দিন অন্তর অন্তর শতাংশ প্রতি ৫-৬ কেজি গোবর অথবা ২-৩ কেজি হাঁস- মুরগীর বিষ্টা দিলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

ছোট মাছ সংরক্ষণ কৌশল
পুকুরে ছোট মাছকে অবাঞ্ছিত মাছ হিসেবে গণ্য না করে সেগুলোকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ ও চাষের আওতায় আনতে হবে। জলজ পরিবেশের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ছোট মাছের বংশ বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি করে এর উৎপাদন বাড়াতে হবে।

•    স্থানীয়ভাবে প্রাপ্য দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ পুকুরে মজুদ ও সংরক্ষণ করা।
•    ছোট মাছের বংশ বৃদ্ধির জন্য পুকুরে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কিছু জলজ আগাছা রাখা।
•    জলাশয় বা পুকুর সম্পূর্ণ সেচে সকল মাছ আহরণ না করা ।
•    ছোট মাছের প্রজনন মৌসুম (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়) সম্পর্কে সংশিৱষ্ট জনগণকে সচেতন করা এবং সে সময় পুকুরে ছোট ফাঁসের জাল টানা থেকে বিরত থাকা।
•    ধানক্ষেতে ছোট প্রজাতির মাছ চাষের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

প্রাকৃতিক জলাশয়ে
•    বিল, হাওর ও বাওরে অভয়াশ্রম স্থাপন করা।
•    ছোট মাছের প্রধান প্রজনন মৌসুম বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস, এ সময় প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখা।
•    জলাশয়ের পানি সেচে মাছ না ধরা।
•    ছোট মাছের গুরুত্ব ও এর সংরক্ষণ সম্পর্কে জলাশয়ের আশেপাশের জনগণকে সচেতন করা এবং সংরক্ষণ কাজে সম্পৃক্ত করা।
•    মৌসুমী জলাভূমিগুলোর কিছু অংশ খনন করে প্রজননৰম মাছ সংরক্ষণ করা, যাতে তারা বর্ষা মৌসুমে ডিম পাড়তে পারে।

সূত্রঃ http://www.ais.gov.bd

মিশ্র মাছ চাষ

রুইজাতীয় মাছের সাথে মলা-পুঁটির মিশ্র চাষ

পুকুর/মৌসুমী জলাশয় নির্বাচন

দো-আঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটির পুকুর ভালো।
•    পুকুর/জলাশয় বন্যামুক্ত এবং মাঝারী আকারের হলে ভালো হয়।
•    পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে এমন পুকুর নির্বাচন করা উচিত।
•    পানির গভরীতা ১-১.৫ মিটার হলে ভালো হয়।

পুকুর প্রস্তুতি
•    পাড় মেরামত ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
•    রাক্ষুসে ও ক্ষতিকর প্রাণী অপসারণ করতে হবে।
•    শতাংশে ১ কেজি করে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
•    চুন প্রয়োগের ৭-৮ দিন পর শতাংশ প্রতি ৫-৭ কেজি গোবর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি সার দিতে হবে।

পোনা মজুদ, খাদ্য ও সার প্রয়োগ
•    শতাংশ প্রতি ১০-১৫ সে. মি. আকারের ৩০-৩২ টি র্বই জাতীয পোনা এবং ৫-৬ সে. মি. আকারের ৬০ টি মলা ও ৬০ টি পুটি
মাছ মজুদ করা যায়।
•    মাছের পোনা মজুদের পরদিন থেকে পোনার দেহের ওজনের শতকরা ৫-১০ ভাগ হারে সম্পুরক খাবার হিসেবে খৈল, কুড়া, ভূষি দেয়া যেতে পারে।
•    গ্রাস কার্পের জন্য কলাপাতা, বাধা কপির পাতা, নেপিয়ার বা অন্যান্য নরম ঘাস দেয়া যেতে পারে।
•    মলা-পুঁটি মাছের জন্য বাড়তি খাবার দরকার নাই।
•    প্রাকৃতিক খাবার জন্মানোর জন্য পোনা ছাড়ার ১০ দিন পর শতাংশ প্রতি ৪-৬ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।

মাছ আহরণ
•    পোনা মজুদের ২ মাস পর হতে ১৫ দিন পর পর বেড় জাল দিয়ে মলা-পুঁটি মাছ আংশিক আহরণ করতে হবে।
•    ৭৫০-৮০০ গ্রাম থেকে বেশী ওজনের কাতল ও সিলভার কার্প মাছ আহরণ করে সমসংখ্যক ১০-১২ সে. মি. আকারের পোনা পুনরায় মজুদ করতে হবে।

•    বছর শেষে চূড়ান্ত আহরণ করা যেতে পারে।

সুত্রঃ http://www.ais.gov.bd

স্টার আপেল: দেশে চাষযোগ্য বিদেশি ফল

star-apple

স্টার আপেল গ্রীস্মম-লীয় ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Chrysophyllum cainito L.। এটি মূলত সফেদা গোত্রের একটি সুস্বাদু ফল। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিদ্যমান দুর্লভ গাছসমূহের মধ্যে একটি হলো স্টার আপেল। এর কয়েকটি গাছ রয়েছে কৃষি অনুষদের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সামনে। গাছগুলো বেশ বড়। সবুজ আপেলের মতো ফল ধরে। ফলগুলো পাকলে হাল্কা বেগুনি রঙ ধারন করে। ফলের ভিতরে মাঝে সাদা এবং চারপাশে উজ্জ্বল বেগুনি রঙ বিদ্যমান। ফলের ভিতরে চারটি বিচি থাকে, দেখতে গাবের বিচির মতো, তবে আকারে অনেক ছোট। ফলটি মিষ্টি স্বাদযুক্ত এবং খেতে বেশ সুস্বাদু। ফলের স্বাদ সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কখনো গাব কিংবা সফেদার স্বাদের মতো মনে হয়।

নামকরণ
স্পেনে এটাকে কাইমিটা বা এস্টেরেলা, ওয়েস্ট ইন্ডিজে পোম সুরেট, বারবাডোজে স্টার পাম, কলম্বিয়াতে কাইমো, আর্জেন্টিনাতে আগুয়ে বা অলিভোয়া, চীন বা সিঙ্গাপুরে এটাকে চিকল ডুরিয়ান বলা হয়। তবে এর ভেতরের বীজগুলো ও পাল্প স্টার এর মতো থাকায় সাধারণভাবে এটাকে স্টার আপেল বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় এটি ভালোভাবেই অভিযোজিত।

উৎপত্তি ও বিস্তার
সাধারণভাবে স্টার আপেল সেন্ট্রাল আমেরিকার ফল বলা হলেও এ নিয়ে মতভেদ আছে। কারও মতে এর উৎপত্তি মেক্সিকো ও পানামা অথবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ। গুয়াতেমালা, উত্তর আর্জেন্টিনা, পেরু, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুজ, বারমুদা, হাইতি, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা ও হাওয়াই প্রভতি অঞ্চলে বর্তমানে স্টার আপেল চাষ হয়।

গাছের বৈশিষ্ট্য
স্টার আপেল গাছ বৃহৎ আকারের শোভাময়ী বৃক্ষ। উচ্চতা সাধারণত ৮-৩০ মিটার, কা- ১-৩ মিটার, বাদামি রোমশ এবং শাখা কাটলে সাদা কষ বের হয়। পাতা দোরঙা। অর্থাৎ ওপরের পিঠ গাড় সবুজ ও নিচের পিঠ মেরুন বাদামি। পাতা কিছুটা ডিম্বকার, বর্শার ফলার মতো। এই গাঢ় সবুজ চর্মবৎ পাতার নিচের দিক খয়েরী রঙের সুক্ষ রোমযুক্ত। পাতা ৫-১০ সেমি. লম্বা ও ৪-১০ সেমি. চওড়া হয়ে থাকে। পত্র কক্ষে ছোট গুচ্ছে সবুজাভ হলুদ বর্ণের ফুল উৎপন্ন হয় যাতে ৫টি দল থাকে।

ফল গোলাকার কখনো সামান্য লম্বাটে, ৫-১০ সেমি. লম্বা এবং ৫-১০ সেমি. ব্যাসযুক্ত সবুজ থেকে বেগুনি বর্ণের হয়ে থাকে। ফলের ভিতরে নরম জিলেটিনযুক্ত দুগ্ধবৎ সাদা মিষ্টি স্বাদযুক্ত পরস্পর সংযুক্ত ৬-১১টি কোষ থাকে যা কেন্দ্রীয় অক্ষের চতুর্দিকে ঘনসন্নিবিষ্ট থাকে। আড়াআড়ি কাটলে এটা এ স্টার বা তারার মতো দেখায় বলে সম্ভবত এ ফলটিতে স্টার আপেল বলা হয়।

আবহাওয়া ও মাটি
স্টার আপেল ট্রপিক্যাল বা সাব ট্রপিক্যাল অঞ্চলে এলাকায় ৪২০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত জন্মাতে দেখা যায়। গরম আবহাওয়ায় এটা ভালো জন্মে। তাপমাত্রা হিমাংকের বা তার নিচে নেমে গেলে এ গাছ মারা যায়। স্টার আপেল যে কোন ধরনের সুনিষ্কাশিত গভীরতা সম্পন্ন বেলে থেকে এঁটেল মাটিতে চাষ করা যেতে পারে।

জাত
স্টার আপেল এর ফলত্বকের রঙ অনুসারে দুই ধরনের জাত দেখা যায়। একটি সবুজ ও অন্যটি বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। ভালো ফল ধরে এমন গাছ থেকে অঙ্গজ উপায়ে তৈরিকৃত কলম লাগানো ভালো। শাখা কলমের চারা ২-৪ বছর পর অপরদিকে বীজ এর চারায় ৭-১০ বছর বয়সে ফল দেয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্টার আপেল বীজ থেকে উৎপন্ন চারা ব্যবহার করা হয়। এর বীজে বেশ কয়েক মাস অংকুরোদগম ক্ষমতা থাকে এবং রোপণের পর দ্রুত (৭-১০ দিন) চারা গজায়। গুটি কলমে ৪-৭ মাসে শিকড় আসে। একই জাতের গাছের বীজ থেকে উৎপাদিত চারার উপর বাডিং বা গ্রাফটিং এর মাধ্যমে ও বংশবিস্তার করা যায়। বাডিং বা গ্রাফটিং এর চারা লাগানোর ১-২ বছর পরই গাছে ফল ধরতে শুরু করে অপরদিকে বীজ চারা থেকে রোপিত গাছ ৫ থেকে ১০ বছর পর ফল ধরে।

চাষাবাদ
ভালো নিকাশযুক্ত যে কোন রকম মাটিতে স্টার আপেল গাছ ভালো জন্মায়। ৬-৮ মিটার দূরে দূরে বর্গাকারে বা ষড়ভূজী পদ্ধতিতে অন্যান্য ফল যেমন আম লিচু ইত্যাদির মতো করে গাছ লাগানো যায়। মাঝারি আকারের গাছ বিধায় চারা লাগানোর আগে চারার জায়গায় ৪৫ সেন্টিমিটার (১ হাত) ব্যাসের ৪৫ সেমি. গভীর গর্ত করে তাতে ১ ঝুড়ি পচা আবর্জনা বা পুকুরের তলার সার মাটি, আধা  কেজি টি.এস.পি বা ১ কেজি এস.এম.পি অথবা ৩ কেজি হাড়ের গুঁড়া, ২৫০ গ্রাম এম.পি অথবা ২ কেজি চুলার ছাই দিয়ে তা ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে এবং তার ৭-১০ দিন পর চারা লাগাতে হবে।

সদ্য লাগানো চারা গাছে প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত সাপ্তাহিকভাবে নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। পরবর্তীতে মাটিতে রস না থাকলে সেচ দিতে হয়। তবে গাছে ফুল আসার পর পানি সেচ দিলে ফল ধারন বৃদ্ধি পায়। স্টার আপেল গাছে তেমন সার প্রয়োগ করা হয় না তবে দুর্বল মাটিতে সার প্রয়োগে ফলের আকার ও ফলন বাড়ে।

ফল সংগ্রহ
শীতের শেষ থেকে গ্রীস্মের প্রথম পর্যন্ত স্টার আপেল এর পাকা ফল সংগ্রহ করা যায়। তবে আমাদের দেশে চৈত্র মাসে (মার্চ-এপ্রিল) সবচেয়ে বেশি পাকা স্টার আপেল পাওয়া যায়। গাছ থেকে পাকা ফল এর রঙ কিছুটা হালকা হয়ে এলে আর ফলত্বক স্পঞ্জ এর মতো বা রাবার বলের মতো নরম হলে ফল সংগ্রহ করা হয়। কাঁচা ফলে আঠা ও কষ্টাভাব থাকে ফলে খাওয়া যায় না। গাছ থেকে সাবধানে পাড়তে হয় কেননা মাটিতে পড়লে নরম ত্বকের এ ফল ফেটে যায় ও বাজারমূল্য কমে যায়।

ফলন
একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ফলন্ত গাছ থেকে গাছের আকারভেদে প্রতিটি ৫০-১০০ গ্রাম ওজনের ১৫০০-৩০০০টি ফল পাওয়া যেতে পারে যার ওজন ৬০ থেকে ২৫০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণভাবে পাকা ফল ২-৩ দিন রাখা গেলেও নিম্ন তাপমাত্রায় এক সপ্তাহ পর্যন্ত এ ফল সংরক্ষণ করা যায়। স্টার আপেল এর বীজ ও খোসা বাদে ভেতরের মাংসল অংশ খাওয়া যায়। পাকা ফলের মাঝ বরাবর ছুরি দিয়ে কেটে চামচ দিয়ে ভেতরের অংশ তুলে খেতে এটা খুবই সুস্বাদু। এর নরম শাঁস থেকে বীজ আলাদা করে ডেজার্ট হিসাবে ও সালাদের সাথে খাওয়া যায়। জ্যামাইকাতে এটাকে বিবাহ উৎসবে খাওয়া হয়। অনেকসময় স্ট্রবেরি ও ক্রীম সহযোগেও স্টার আপেল খাওয়া হয়।

ফলের পুষ্টিগুণ
এ ফলটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে প্রোটিন থাকে ০.৭২-২.৩৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১৪.৬৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭.৪-১৭.৩ মিলি গ্রাম, ফসফরাস ১৫.৯-২২.০ মিলিগ্রাম ও আয়রন ০.৩০-০.৬৮ মিলিগ্রাম।

নানাবিধ ব্যবহার
স্টার আপেল গাছের কাঠ থেকে বিভিন্ন ধরনের দামি আসবাবপত্র তৈরি করা যায়। রাবার তৈরিতে এ গাছের নির্যাস ব্যবহার করা হয়। এ গাছের ব্যাপক ওষুধিগুণও রয়েছে। স্টার আপেল এর পাকা ফল খেলে ফুসফুসের প্রদাহ ও নিউমোনিয়া রোগের উপশম হয়। এর ফল ডায়াবেটিস রোগে ব্যবহৃত হয়। ভেনিজুয়েলাতে পাকস্থলী ও অন্ত্রের গোলযোগে কম পাকা ফল খাওয়া হয়। তবে এরূপ কাচা ফল বেশি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। পানিতে ফুটানো ফলের খোসা, বাকল ও পাতার কষ পেক্টোরাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ট্যানিন সমৃদ্ধ বাকল উত্তেজক হিসেবে, ডায়রিয়া প্রতিরোধে, আমাশয়ে, রক্তপাত বন্ধে এবং গনোরিয়া রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। কিউবাতে এটা ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আজকাল প্রায়শই কিছু নার্সারির লোকেরা এ গাছকে আপেল গাছ বলে চালিয়ে দিচ্ছে। যে গাছটিকে আপেল গাছ বলা হচ্ছে, সেটি আপেল নয়, স্টার আপেল ফলের গাছ। এদেশে আপেল হবে না। কারণ আপেল জন্মাতে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় বরফ পড়তে হয়। স্টার আপেল দেখতেও অনেকটা সবুজ আপেলের মতো। তাই ওকে আপেলের ভাই বলা চলে। এ দেশে আপেল হয় না সত্য তবে স্টার আপেল হয়। গাজীপুরে বিএআরআইয়ের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রে স্টার আপেলের বয়সী গাছটাতে যেভাবে ডাল ভেঙে ফল ধরেছে, তাতে অবাক না হয়ে পারা যায় না। তা থেকে আশা করা যায় এ দেশে ও ভালো ফল ফলতে পারে।

পাহাড়ি অঞ্চলে স্টার আপেল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বসতবাড়িতেও শোভাময় এ গাছটি লাগানো যেতে পারে। সামনে আসছে বর্ষাকাল। দেশের বিভিন্ন নার্সারিতে এ গাছটির চারা পাওয়া যায়। আপনার বাগানবাড়ির শোভা বর্ধন ও বৈচিত্র্য আনার জন্য দু’ একটা স্টার আপেল গাছ বাড়ির আঙ্গিনায় লাগাতে পারেন।

সুত্রঃ AgriNews24.com

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, প্লাণ্ট প্যথলজি বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

ছাদে বাগান প্রযুক্তি

images23
ছাদে বাগান কাকে বলে
সাধারণত: পাকা বাড়ির খালি ছাদে অথবা বেলকনীতে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে ফুল, ফল, শাক-সবজির বাগান গড়ে তোলাকে ছাদে বাগান বলা হয়। ছাদে বাগান সৃজনের সময় খেয়াল রাখতে হবে বাগান সৃজনের জন্য ছাদের কোন প্রকার ক্ষতি যেন না হয়। এজন্য রোপনকৃত গাছের টব গুলো ছাদের বীম বা কলামে নিকটবর্তী স্থান বরাবর স্থাপন করতে হবে। ড্রাম অথবা টব স্থাপনের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এগুলো সরাসরি ছাদের উপরে বসানো না হয়। এতে ছাদ ড্যাম্প বা সেঁতসেঁতে হয়ে যেতে পারে। তাই রিং-এর উপর বা ইটের উপর এগুলো স্থাপন করলে নিচে দিয়ে আলো বাতাস চলাচল করবে এবং ছাদও ড্যাম্প হতে রক্ষা পাবে। নেট ফিনিসিং এর মাধ্যমেও ছাদকে ড্যাম্প প্রতিরোধ করা যায়।
ছাদে চাষ উপযোগী গাছ
ক) আম- বারি আম-৩ (আম্রপালি), বাউ আম-২ (সিন্দুরী);
খ) পেয়ারা- বারি পেয়ারা-২, ইপসা পেয়ারা-১;
গ) কুল- বাউ কুল-১, ইপসা কুল-১ (আপেল কুল) , থাই কুল-২;
ঘ) লেবু- বারি লেবু -২ ও ৩, বাউ কাগজি লেবু-১;
ঙ) আমড়া- বারি আমড়া-১, বাউ আমড়া-১;
চ) করমচা- থাই করমচা;
ছ) ডালিম- (দেশী উন্নত);
জ) কমলা ও মাল্টা – বারি কমলা-১, বারি মাল্টা – ১;
ঝ) জামরুল- বাউ জামরুল-১ (নাসপাতি জামরুল), বাউ জামরুল-২ (আপেল জামরুল) ইত্যাদি।
ঞ) সবজি- লাল শাক, পালং শাক, মুলা শাক, ডাটা শাক, কলমী শাক, পুইঁশাক, লেটুস, বেগুন, টমেটো, মরিচ ইত্যাদি।
ছাদে গাছ লাগানোর পদ্ধতি
ক) হাফ ড্রাম এর তলদেশে অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের জন্য ১ ইঞ্চি ব্যাসের ৫ / ৬ টি ছিদ্র রাখতে হবে।
খ) ছিদ্র গুলোর উপর মাটির টবের ভাঙ্গা টুকরো বসিয়ে দিতে হবে।
গ) ড্রামের তলদেশে ১ ইঞ্চি পরিমাণ ইটের খোয়া বিছিয়ে তার উপর বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
ঘ) সমপরিমাণ দোঁআশ মাটি ও পঁচা গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ড্রামটির দুই তৃতীয়াংশ ভরার পর হাফ ড্রাম অনুযায়ী ড্রাম প্রতি মিশ্র সার আনুমানিক ৫০-১০০ গ্রাম প্রয়োগ করে মাটির সাথে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এবং সম্পুর্ণ ড্রামটি মাটি দিযে ভর্তি করে নিতে হবে।
ঙ) ১৫ দিন পর ড্রামের ঠিক মাঝে মাটির বল পরিমাণ গর্ত করে কাংখিত গাছটি রোপন করতে হবে। এ সময় চারা গাছটির অতিরিক্ত শিকড়/ মরা শিকড় সমূহ কেটে ফেলতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে মাটির বলটি যেন  ভেঙ্গে না যায়।
চ) রোপিত গাছটিতে খুটি দিয়ে বেধে দিতে হবে।
ছ) রোপনের পর  গাছের গোড়া ভালভাবে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে।
জ) সময়ে সময়ে প্রয়োজন মত গাছে পানি সেচ ও উপরি সার প্রয়োগ, বালাই দমন ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঝ) রোপনের সময় হাফ ড্রাম প্রতি ২/৩ টি সিলভা মিক্সড ট্যাবলেট সার গাছের গোড়া হতে ৬ ইঞ্চি দুর দিয়ে মাটির ৪ ইঞ্চি গভীরে প্রয়োগ করতে হবে।
ঞ) গাছের বাড়-বাড়তি অনুযায়ী ২ বারে টব প্রতি ৫০/১০০ গ্রাম মিশ্র সার প্রয়োগ করে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
ট) গাছের রোগাক্রান্ত ও মরা ডালগুলো ছাটাই করতে হবে এবং কর্তিত স্থানে বোর্দ পেষ্ট লাগাতে হবে।
বালাই দমন
বালাই দমনে পরিবেশ বান্ধব আইপিএম বা আইসিএম পদ্ধতি অনুসরন করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজন ব্যতিরেকে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করে জৈব রাসায়নিক বালাই নাশক যেমন- নিমবিসিডিন, বাইকাও ব্যাবহার করা যেতে পারে।
মিলি বাগঃ পেয়ারা, কুল, লেবু, আম, করমচা, জলপাই, বেগুন প্রভৃতি গাছে এ পোকার আক্রমন দেখা যায়।
লক্ষনঃ পাতার নিচে সাদা তুলার মত দেখা যায়। পোকা উড়তে পারেনা। টিপ দিলে হলুদ পানির মত বের হয়ে আসে। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায়, পাতা ও ফল ঝরে পড়ে, ফলের আকার বিকৃত হয়ে যায় অনেক সময় পাতায় শুটি মোল্ড রোগের আক্রমন হয়।
দমনঃ হাত বাছাইয়ের মাধ্যমে পোকা দমন করতে হবে। প্রয়োজনে জৈব বালাই নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
সাদা মাছিঃ পেয়ারা, লেবু, জলপাই, বেগুন প্রভৃতি গাছে এ পোকার আক্রমন দেখা যায়।
লক্ষনঃ পাতার নিচে সাদা তুলার মত মাছি পোকা দেখা যায়। পোকা উড়তে পারে। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে, পাতা লাল হয়ে যায়, পাতা ঝরে পড়ে, পরবর্তী মৌসুমে ফলের উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পায়। পাতায় শুটি মোল্ড রোগের আক্রমন হয়।
দমনঃ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হুইল পাউডার মিশিয়ে পাতার নিচে সেপ্র করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
শুটি মোল্ডঃ ছত্রাক দ্বারা সংগঠিত হয়। পাতার ওপর কাল কাল পাউডার দেখা দেয়।  গাছের ফলন ব্যহত হয়। আক্রমর ব্যাপক হলে পাতা ও ফল ঝরে যায়।
দমনঃ টিল্ট-২৫০ ইসি, প্রতি লিটার পানিতে ০.৫০ মিঃলিঃ মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
সুত্রঃ www.krishibangla.com

বহুগুণে গুণান্বিত কাসাভা

kasava-cover-pic20170408164820

আফ্রিকা মহাদেশের বেশির ভাগ মানুষ কাসাভা খেয়ে জীবন ধারণ করে। তবে বাংলাদেশে এখনো এটি নিতান্তই অপরিচিত। গুল্মজাতীয় এ উদ্ভিদটি বাংলাদেশে চাষ না হলেও পাহাড়ে-জঙ্গলে দীর্ঘদিন থেকে এ গাছ জন্মায়। স্থানীয়ভাবে কাসাভার ব্যবহার আছে অনেক আগে থেকেই। গ্রামের মানুষ কাসাভার কন্দকে ‘শিমুল আলু’ বলে। গাছটির পাতা অনেকটা শিমুল গাছের মতো দেখতে বলেই হয়তো এরকম নামকরণ।

পুষ্টিগুণ

কাসাভা আটার পুষ্টিগুণ গমের আটার চেয়ে অনেক বেশি। এই আটা থেকে রুটি ছাড়াও অনেক প্রকার সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়। কাসাভা ভিটামিনের দিক দিয়েও শীর্ষে। কাসাভার খাদ্যমানের মধ্যে প্রোটিন আছে ১০ শতাংশেরও বেশি। অ্যামাইনো অ্যাসিড ও কার্বোহাইড্রেট আছে যথাক্রমে ১০ ও ৩০ শতাংশ। আরো আছে ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজ। খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম কাসাভা আলুতে রয়েছে ৩৭ গ্রাম শর্করা, ১.২ গ্রাম আমিষ, ০.৩ গ্রাম চর্বি, ৩৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৭ মিলিগ্রাম আয়রন, ০.০৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ, ৩৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং ১৪৬ ক্যালরি খাদ্যশক্তি।

রোগ প্রতিরোধ

সব পুষ্টিগুণ মিলে সেলুলোজের সঙ্গে পাওয়া যাবে মিনারেল ও ফাইবার গ্লুটামিন। এর আঠালো অংশ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ উপশমের ক্ষেত্রে কাজ করে। কাসাভা ফাইবার বাড়তি কোলেস্টরলের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করে। এমনকি এটি ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।

বাজারজাত

সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে কাসাভা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাসাভা থেকে আটা ও স্টার্চ তৈরি করে বাজারজাতকরণের উদ্যোগে নিয়েছে।

kasava-pic-in-(1)-sm20170408164355

প্রক্রিয়াজাত

কাসাভা আলুকে প্রক্রিয়াজাত করে তা থেকে আটা ও স্টার্চ পাওয়া যায়। এই আটা দিয়ে রুটি থেকে শুরু করে বিভিন্ন খাবার পাওয়া সম্ভব। প্রতি কেজি আলু থেকে আটা ও স্টার্চ মিলিয়ে প্রায় ৩৪০ গ্রাম পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব। এক হেক্টর জমি থেকে বছরে প্রায় ২৫.৫ মেট্রিক টন অর্থাৎ ৩ হাজার ৪০০ কেজি কাসাভা আটা ও স্টার্চ পাওয়া সম্ভব।

খাদ্যসামগ্রী
কাসাভার আটা দিয়ে রুটি ছাড়াও পাঁপর, চিপস, নুডলস, ক্র্যাকার্স, বিস্কুট, কেক, পাউরুটি ইত্যাদি তৈরি করা যায়। কাসাভা আলু যেমন সিদ্ধ করে খাওয়া যায়, তেমনই তরকারি করে মাছ-মাংসের সঙ্গে খাওয়া যায়।

kasava-pic-in-(2)20170408164734

সুত্রঃ www.jagonews24.com

০৮ এপ্রিল ২০১৭

মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা করবেন যেভাবে

পৃথিবীতে তিন ভাগ পানি আর এক ভাগ মাটি। সেই এক ভাগ মাটিতেই মানুষের বসবাস। তাই মাটিতেই নির্ভর করে মানুষের জীবিকা। ফলে মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা করা মানুষের প্রধান কাজ। ফসল ফলাতে মাটির গুরুত্ব অপরিসীম। মাটির গুরুত্ব বুঝেই এর আর্দ্রতা নির্ণয় করতে হয়।

Soil-in-(1)20170506161114

উত্তম মাটি ভালো ফসলের জন্য একান্ত জরুরি। কেননা বীজ বপন করা থেকে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত বিষয়টি নির্ভর করে জমি তৈরির উপর। জমির মাটি কীভাবে তৈরি করা হবে তা নির্ভর করে বীজের আকৃতির উপর এবং আর্দ্রতার উপর। অাসুন মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষার পদ্ধতিগুলো জেনে নেই।

পরীক্ষা পদ্ধতি

• প্রচলিত জ্ঞানের মাধ্যমে মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা করা যায়।
• মাটি হাতে মুঠি করে নিয়ে জোড়ে চাপ দিতে হবে।
• চাপ দেওয়ায় মাটি থেকে পানি বের হলে বুঝতে হবে মাটি এখনো ভেজা। ভেজা মাটি চাষের উপযোগী নয়।
• মাটি থেকে পানি বের না হলে তা চাকা বা বলের আকার ধারণ করে।
• মাটির চাকা কোমর সমান উচ্চতা থেকে ফেললে যদি ভেঙে না যায়; তখন বুঝতে হবে মাটি ভেজা।
• ভেজা মাটিতে লাঙ্গল চালাতে ২-৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে।
• মাটির বলটি যদি সম্পূর্ণ ভেঙে যায় তাহলে চাষ দেওয়া যাবে।
• মাটি যদি চাকা বা বল কোনোটির আকারই ধারণ না করে তাহলে বৃষ্টি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
• মাটির আর্দ্রতার জন্য সেচ দিয়ে জো বা রস আনতে হবে।

Soil-in-(2)20170506161109

উপকারিতা

• এ পরীক্ষার সাহায্যে কৃষক সঠিক সময়ে সুন্দর ও পরিপাটি করে জমি তৈরি করতে পারেন।
• যার ফলে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আয় বৃদ্ধি সম্ভব।

সুত্রঃ www.jagonews24.com

০৬ মে ২০১৭, শনিবার

মুগ সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা

আমাদের দেশের কৃষক ভাইদের মাঝে ফসল সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত যথোপযুক্ত জ্ঞান ও প্রয়োজনীয় উপকরণাদির অভাব থাকায় প্রতি বছর মোট উৎপাদিতফসলের ১০ শতাংশ ফসল বিনষ্ট  হয়। তাই একজন সচেতন কৃষি-ব্যবসায়ী এবং চাষির ফসল সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা স¤পর্কে সম্যক ধারণা রাখা খুবই জরুরী।

মুগকাটার উপযুক্ত সময়

  • মুগের ফল বা পড বাদামী/কালো রং ধারণ করলে বুঝতে হবে দানা পরিপক্ক (পাকা) হয়েছে।
  • জাত ভেদে পাকার পর ২-৩ বার মুগের ফল বা পড সংগ্রহকরতেহবে।
  •  অধিকাংশজাতে সব পড একই সাথে না পাকার কারণে ২-৩ বার সংগ্রহ করতে হয়।
  •  পাকা ফল বা পড সাধারণতঃ সকালে বা বিকালে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সংগ্রহ করা ভাল। শেষবার ফল বা পড গাছসহ কাচি দ্বারা কেটে ফসল সংগ্রহ করতে হবে।

মাড়াই

  • সংগ্রহকৃত ফসল (ফল বা পড) তাড়াতাড়ি মাড়াই করার স্থানে নিতে হবে যাতে দানা ঝরে না যায়।
  • ফল বা পডগুলো/গাছগুলো ১-২ দিন ছড়িয়ে দিয়ে রোদে শুকোতে হবে।
  • হাতের তালুতে ফসলের ফল/পড নিয়ে ঘষা দিলে মচমচ শব্দ হলেই বুঝতে হবে যে মাড়াই এর সময় হয়েছে।
  •  ভালভাবে শুকানোর পর কাঠ বা বাঁশের লাঠি দ্বারা পিটিয়ে বা গরু কিংবা ট্রাক্টর/পাওয়ার টিলার/মেশিন দিয়ে মাড়াই করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাড়াইয়ের সময় দানা ভেঙ্গে ডাল বের না হয়।
  •  মাড়াইকৃত মুগবীজ ঝেরে বা বাতাসে উড়িয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

মুগবীজ শুকানো, ঝাড়াই ও বাছাই

  •  মাড়াইকৃত বীজ সংরক্ষণের আগে কয়েকদিন ভালভাবে রোদে শুকাতে হবে।
  •  সংরক্ষণের পূর্বে কুলারসাহায্যে দানাবাতাসেউড়িয়েপরিষ্কার করতেহবে।
  •  প্রয়োজনে চালুনী দিয়ে চেলে পুষ্ট দানা বাছাই করতেহবে।
  •  ধাতব পাত্র ছাড়া অন্য যে কোন পাত্রে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে রোদে শুকানোর পর বীজ ঠান্ডা করতে হবে।
  •  বীজ দাঁতে চিবিয়ে নিশ্চিত হোন যে, বীজগুলো ভালোমত শুকানো হয়েছে।
  •  সংরক্ষণের সময় বীজের আর্দ্রতা শতকরা ৮-৯ ভাগ থাকা উত্তম।

মুগবীজ সংরক্ষণ পদ্ধতি

  •  পরিষ্কার বীজ ৩/৪টি রোদ দিয়ে শুকিয়ে গুদাম জাত করতে হবে।
  •  আর্দ্র ও পোকামাকড় মুক্ত পাত্রে শুকানো বীজ ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে।
  •  মাটির পাত্র যেমন মটকি/কলসি হলে বীজ সংরক্ষণের পূর্বে আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে নিতে হবে যাতে পাত্রের ভিতর বায়ু প্রবেশ করতে না পারে।
  • বীজসংরক্ষণের পর পাত্রের মুখ ভালভাবে বন্ধ করে দিতে হবে যাতে বায়ু প্রবেশ করতে না পারে।
  • বীজের পরিমান পাত্রের ধারন ক্ষমতার চেয়ে কম হলে বীজ এর উপর একটি মোটা পলিথিন বিছিয়ে উপরের ফাঁকা জায়গা শুকনো বালি, তুষ বা ছাই দিয়ে পাত্রটি ভর্তি করুন। পাত্রে বীজ রেখে পাত্রের মুখ ভালভাবে বন্ধ করতে হবে।
  • বীজ সংরক্ষণে পলিথিন ব্যাগ/ধাতব টিন বা ড্রাম ব্যবহার করা উত্তম।
  • যে পাত্রেই বীজ রাখা হোক না কেন তা মেঝে থেকে উপরে (চকি /মাচায়) রাখতে হবে।
  • সংরক্ষিত বীজ মাঝে মাঝে (বিশেষ করে বর্ষাকালে)রৌদ্রে শুকিয়ে স্ব স্ব পাত্রে পুনরায় রেখে দিতে হবে।

মুগ-এর বিপণন ও পরিবহন

মুগ দানা প্লাস্টিক/চটের বস্তায় ভরে গরুর গাড়ী, ভ্যান, নসিমন বা ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়ে থাকে। দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষ করে বৃহত্তর বরিশালে কৃষকগণ মুগের বস্তা বা ঝুড়ি মাথায় করে অথবা নৌকায় করে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে যায়। তবে পরিবহণের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন দানা কোন ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। দুরে পরিবহণের সময় বস্তা গুলি ত্রিপল দিয়ে ঢেঁকে নেওয়া ভাল যাতে বৃষ্টি কিংবা কুয়াশায় মুগদানার ক্ষতি না হয়।

Source: USAID Agricultutral Value Chains project

পুষ্টিগুণে এগিয়ে পাঙাশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা: একটি বিশেষ পুষ্টিগুণে পাঙাশ অন্য মাছের চেয়ে এগিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি গবেষকেরা দেখেছেন, পাঙাশ মাছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড (বা ইনডিসপেন্সেবল অ্যামাইনো অ্যাসিড) অনেক বেশি। এ কারণে পাঙাশে থাকা আমিষের মান উন্নত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা বলছেন, শস্যদানা, ফল বা সবজির চেয়ে উচ্চমানের আমিষ বেশি আছে মাছে। তাঁরা বলছেন, পাঙাশের মতো রুই ও তেলাপিয়াতেও উচ্চমানের আমিষ আছে।
পুষ্টিবিদেরা জানিয়েছেন, অ্যামাইনো অ্যাসিড আমিষ তৈরির মৌলিক উপাদান। অ্যামাইনো অ্যাসিড কোষের দেয়াল তৈরি, দেহের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। জন্ম থেকে ৬ মাস, ৬ মাস থেকে ৩ বছর এবং ৩ থেকে ১০ বছর—এই বয়সী শিশুর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অ্যামাইনো অ্যাসিডের ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা আছে। পুষ্টিনীতি নির্ধারণ ও পুষ্টি পরিকল্পনা প্রণয়নে এই গবেষণা বড় ভূমিকা রাখবে বলে পুষ্টিবিদেরা মন্তব্য করেছেন। গবেষকেরা চাল, গম, মসুর, রুই, তেলাপিয়া ও
34df62fdcb17518323cb1599412f8c31-5

পাঙাশের আমিষের পরিমাণ নির্ণয় করেছেন। গবেষণা ফলাফল বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ হিসেবে প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা এলসিভিয়ার, তাদের ফুড কেমিস্ট্রি সাময়িকীতে। প্রধান গবেষক ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক নাজমা শাহিন প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত এই ছয়টি খাদ্যে আমিষের পরিমাণ এবং কোন অ্যামাইনো অ্যাসিড কতটুকু আছে, তা চিহ্নিত করা ছিল এই গবেষণার লক্ষ্য। তাঁরা দাবি করেছেন, ডায়াস (ডাইজেস্টেবল ইনডিসপেন্সেবল অ্যামাইনো অ্যাসিড স্কোর) পদ্ধতি ব্যবহার করে পুষ্টিগুণ নির্ণয়ে এ ধরনের গবেষণা সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এটাই প্রথম।
নাজমা শাহিন বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহায়তায় ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা ন্যাশনাল ফুড কম্পোজিশন টেবিল তৈরি করেছেন। দেশে পাওয়া যায় এমন ৩৮১টি খাদ্যের পুষ্টিগুণের বর্ণনা তাতে আছে। সেই পুষ্টিতথ্যকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য এই ছয়টি খাদ্যের আমিষ ও অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপাত্ত তাঁরা পৃথকভাবে বের করেছেন।
গবেষকেরা বলছেন, দেশের মানুষের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় শস্য দানার মধ্যে চাল, গম, মসুর এবং মাছের মধ্যে রুই, তেলাপিয়া, পাঙাশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। দেশের ৩০টি এগ্রো-ইকোলজিক্যাল জোনের ১৭টি থেকে চালের ১৭টি, গমের ২৫টি, মসুরের ২৪টি নমুনা এবং দেশের প্রধান ১১টি মাছের বাজার থেকে রুই, তেলাপিয়া ও পাঙাশের ১১টি করে নমুনা সংগ্রহ করেন। এসব নমুনা বিশ্লেষণ করা হয় ভারতের হায়দরাবাদের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউট্রিশনে। গবেষকেরা প্রতিটি নমুনার আর্দ্রতা, শর্করা, আঁশ, লিপিড ও আমিষের পরিমাণ বের করেন। আমিষে ২০ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, এর মধ্যে কিছু অত্যাবশ্যকীয়। অধ্যাপক নাজমা শাহিন বলেন, কোন অ্যামাইনো অ্যাসিড কতটুকু আছে, তার ওপর নির্ভর করে আমিষের গুণমান। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মসুরে আমিষ বেশি, তবে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড কম। অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে পাঙাশের নমুনায়। এরপর তেলাপিয়া ও রুই মাছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সুপারিশে বলা হয়েছে, এক গ্রাম আমিষে ২৭৭ মিলিগ্রাম অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকা উচিত। পাঙাশের প্রতি গ্রামে আছে ৪৩০ মিলিগ্রাম।
জানার পর গবেষণার তথ্যকে নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন পুষ্টিবিদ অধ্যাপক এম কিউ কে তালুকদার। কিছুটা সতর্ক অবস্থানে থেকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঙাশ অ্যামাইনো অ্যাসিডের চাহিদা পূরণ করে, এটা ভালো কথা। এই তথ্য যেমন জানা দরকার, তেমনি পাঙাশে চর্বি বেশি, সেই সতর্কতাও থাকা দরকার।’ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের শুরুতে বলা হয়েছে, সমৃদ্ধ জৈব ও কৃষিবৈচিত্র্য থাকার পরও অপুষ্টি দেশের জন্য বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে আছে। প্রবন্ধের শেষ দিকে বলা হয়েছে, ডায়াস পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনটি মাছের আমিষের মান নিয়ে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা অজানা ছিল।

সূত্র: প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭