Author Archives: asma parvin

ধান ফসলের জমিতে ডাল পোতা/পার্চিং

Image may contain: 1 person , grass, outdoor and nature

আর্থিক ক্ষতি কমানো, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন এখন সময়ের দাবি। তাছাড়া, আধুনিক কৃষির জন্য চ্যালেঞ্জও বটে। এ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার লক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রমে নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণবিদগণ এসব প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে দ্রুতই ছড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে সুফল ভোগ করছেন কৃষকরা। রক্ষা পাচ্ছে নির্মল পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য।

পার্চিং
ইংরেজি শব্দ পার্চ মানে হলো উঁচু স্থানে বসা। জমিতে উঁচু স্থানে পাখি বসার সুযোগ তৈরি করাই পার্চিং। উঁচু স্থান তৈরি করার ক্ষেত্রে বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডালপালা, ধৈঞ্চা গাছ এসব ব্যবহার করা যায়। পার্চিং পোকা দমনের একটি যান্ত্রিক পদ্ধতি। আইপিএম কৌশলের অন্যতম সবুজ প্রযুক্তি পার্চিং খুবই সহজ, কম খরচ ও পরিবেশবান্ধক পোকা মাকড় দমনের প্রযুক্তি।

পার্চিংয়ের উদ্দেশ্য:
পোকা ধরে খাওয়ার জন্য পাখিকে বসার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করাই মূল উদ্দেশ্য। ফলে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়। ফসলের উৎপাদন খরচ কমে। বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণ মুক্ত রাখা যায়। তাছাড়া পার্চিংয়ের মাধ্যমে পোকার বংশবিস্তার কমানো যায়। সহজেই পোকার বসতি ধ্বংস করা যায়। এমনকি পোকার বসতি তৈরি করার সুযোগ নষ্ট করা যায়।
এছাড়াও পাখির বিষ্টা জমিতে জৈব পদার্থ যোগ করে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে।

পার্চিংয়ের প্রকারভেদ:
দুই ধরনের পার্চিং পদ্ধতি রয়েছে। যথা:
1. মৃত পার্চিং: বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডালপালা ইত্যাদি।

2. জীবন্ত পার্চিং: ধৈঞ্চা গাছ। জীবন্ত পার্চিংয়ের ক্ষেত্রে আফ্রিকান ধৈঞ্চা খুবই উপকারি। বাংলাদেশে বহুলভাবে চাষকৃত আফ্রিকান ধৈঞ্চা পার্চিং হিসেবে পোকা দমন করে। ধৈঞ্চা গাছে বসে পাখি দুল খেতে পছন্দ করে। ধৈঞ্চা গাছের পাতা, নডিউল জমিতে বাড়তি জৈব সার যোগাতে সহযোগিতা করে। একমাস বয়সী ধৈঞ্চা গাছ ফসলের মূল জমিতে লাগানো উচিত। ফসলের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে কমপক্ষে একফুট উচ্চতায় পার্চিং করা উচিত।

পার্চিংয়ের সংখ্যা:
সাধারণত বন্ধু পোকা মাকড়গুলো খাবার সংগ্রহের জন্য বেশি বেশি নড়াচড়া ও চলাফেরা করে। অন্যদিকে ক্ষতিকর পোকা মাকড় চুপচাপ বসে রস চুষে খায় বা ফসল কেটে কেটে বা কুড়ে কুড়ে খায়। এসব চুপচাপ ক্ষতিকর পোকা ধরে খাওয়ার জন্যই একটু ঘনঘন পার্চিং দেয়া হয়। পাখি যেন সহজেই ক্ষতিকর পোকা মাকড়দের দেখতে পায় এবং ধরতে পারে। ধান ফসলে প্রতি ০৫ শতকে ০১ টি করে পার্চিং ব্যবহার করতে হয়। যা বিঘায় প্রায় ০৬ টি। এভাবে একর প্রতি প্রায় ১৮ টি থেকে ২০ টি পার্চিং ব্যবহার করতে হয়।

পার্চিং স্থাপনের সময়:
ফসল রোপনের পরপরই পার্চিং স্থাপন করতে হবে। যে সব এলাকায় বাবুই পাখি, চড়ই পাখি, টিয়া পাখি আছে, সেসব এলাকায় চাষকৃত ধানের পাকা স্তরে পার্চিং তুলে নিতে হবে। অন্যথায় পার্চিং তুলে ফেলার দরকার নেই।

পার্চিংয়ে বসে দোল খেতে খেতে পাখিরা আরামে পোকা ধরে খায়। সব পাখিরাই কিন্তু পার্চিয়ে বসে না। মূলত ফিঙ্গে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়রা এসব পাখিরা পার্চিং এ বসে পোকা ধরে খায়। এক গবেষণায় জানা যায়, একটি ফিঙে পাখি সারা দিনে কমপক্ষে ৩০ টি করে মাজরা পোকার মথ, ডিম, কীড়া ও পুত্তলী খেয়ে থাকে। একটি পাখির দ্বারা প্রতি মাসে কমপক্ষে ২ লাখ ৭০ হাজার পোকা ধ্বংস করা সম্ভব হয়।

পার্চিংয়ে যে সব পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ হয়:
পাখিরা মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি পোকা, ধানের স্কিপার পোকার মথ ধরে ধরে খায়। লার্ভা বা কীড়াগুলোর মধ্যে শিষ কাটা লেদা পোকা, সবুজ শুড় লেদা পোকার কীড়া খায়। খাটো শুড় ঘাস ফড়িং, লম্বা শুড় ঘাস ফড়িং, উড়চুঙ্গা এসব ফড়িং গুলোও খায়। তাছাড়া পাখিরা বন্ধু পোকাগুলোর মধ্যে লেডি বার্ড বিটল, ক্যারাবিড বিটল এসব পোকাও খায়।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার: Muhaiminur Rashid Hanif ভাই।

ভেজাল সার চেনার উপায়

অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের চাষ বৃদ্ধির ফলে প্রচুর পরিমানে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি, পটাশ, জিংক, সালফেট, বোরাক্স ও জিপসাম সার দিতে হচ্ছে। এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে বছরে ২৫ লাখ মে. টন ইউরিয়া, ৬.৫ লাখ মে. টন টিএসপি, ৩ লাখ মে. টন ডিএপি, ২ লাখ মে. টন এমওপি এবং ১ লাখ মে. টন জিপসাম ব্যবহৃত হয়। ইদানীং পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে বাজারে প্রচুর পরিমানে নকল সার বিক্রি হচ্ছে। এখানে কয়েকটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে আসল বা ভেজাল সার শনাক্ত করার উপায় উল্লেখ করা হলো।

Image may contain: food

ইউরিয়া সার চেনার উপায়:
আসল ইউরিয়া সারের দানাগুলো সমান হয়। তাই কেনার সময় প্রথমেই দেখে নিতে হবে যে সারের দানাগুলো সমান কিনা। ইউরিয়া সারে কাঁচের গুড়া অথবা লবণ ভেজাল হিসাবে যোগ করা হয়। অথবা চা চামচে অল্প পরিমান ইউরিয়া সার নিয়ে তাপ দিলে এক মিনিটের মধ্যে অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ হয়ে গলে যাবে। যদি ঝাঁঝালো গন্ধ সহ গলে না যায়, তবে বুঝতে হবে সারটি ভেজাল।

টিএসপি সার চেনার উপায়:
টিএসপি সার পানিতে মিশালে সাথে সাথে গলবে না। কিন্তু ভেজাল সার পানির সাথে মিশালে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই গলে যাবে বা পানির সাথে মিশে যাবে। কিন্তু টিএসপি সার ৪ থেকে ৫ ঘন্টা পানির সাথে মিশবে।

ডিএপি সার চেনার উপায়:
ডিএপি সার চেনার জন্য চামচে অল্প পরিমান ডিএপি সার দিয়ে গরম করলে এক মিনিটের মধ্যে অ্যামোনিয়া ঝাঁঝালো গন্ধ হয়ে তা গলে যাবে। যদি না গলে তবে বুঝতে হবে সারটি সম্পূর্ণরুপে ভেজাল। আর যদি আংশিকভাবে গলে যায় তবে বুঝতে হবে সারটি আংশিক পরিমান ভেজাল আছে। অথবা কিছু পরিমান ডিএপি সার হাতের মুঠোয় নিয়ে চুন যোগ করে ডলা দিলে অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ বের হলে সারটি আসল। যদি অ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ বের না হয় তাহলে বুঝতে হবে সারটি ভেজাল।

এমওপি বা পটাশ সার চেনার উপায়:
পটাশ সারের সাথে ইটের গুড়া ভেজাল হিসাবে মিশিয়ে দেয়া হয়। গ্লাসে পানি নিয়ে তাতে এমওপি বা পটাশ সার মিশালে সার গলে যাবে। তবে ইট বা অন্য কিছু ভেজাল হিসাবে মিশানো থাকলে তা পানিতে গলে না গিয়ে গ্লাসের তলায় পড়ে থাকবে। তলানি দেখে সহজেই বুঝা যাবে সারটি আসল নাকি ভেজাল।

জিংক সালফেট সার চেনার উপায়:
জিংক সালফেট সারে ভেজাল হিসাবে পটাশিয়াম সালফেট মেশানো হয়। জিংক সালফেট সার চেনার জন্য এক চিলতে জিংক সালফেট হাতের তালুতে নিয়ে তার সাথে সমপরিমান পটাশিয়াম সালফেট নিয়ে ঘষলে ঠান্ডা মনে হবে এবং দইয়ের মতো গলে যাবে।

সূত্র: Modern Agriculture Facebook Page

 

৫০ কেজি ইউরিয়ার কাজ করবে এক কেজি জীবাণু সার

কৃষিপণ্যের ঊর্ধ্বমূল্যের বাজারে আশার আলো দেখাবে জীবাণু সার। ডাল জাতীয় শস্যের জমিতে এ সার ব্যবহার করলে ইউরিয়ার দরকার হবে না। পাশাপাশি ধানের জমিতে জীবাণু সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সারের সাশ্রয় হবে শতকরা ২৫ ভাগ। প্রায় ৫০ কেজি ইউরিয়া সারের কাজ করে দেয় মাত্র এক কেজি জীবাণু সার, যার উৎপাদন খরচ হয় মাত্র ৭৫ টাকা। বাংলাদেশের ধান ও ডাল জাতীয় শস্যের জমিতে জীবাণু সার প্রয়োগ করলে দেশের ইউরিয়া সারের আমদানিতে সাশ্রয় হবে কোটি কোটি টাকা। সার নিয়মিত তৈরি করতে সক্ষম মসুর ডালের শিকড়ে গুটি বা নডিউল সৃষ্টিকারী নতুন তিনটি ব্যাকটেরিয়ার শনাক্তকরণ ও নামকরণ করে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিনা) তথা বাংলাদেশকে নতুনভাবে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করলেন বিজ্ঞানী ড. হারুন অর রশীদ। প্রায় ছয় বছর গবেষণার পর আবিষ্কৃত এ তিনটি ব্যাকটেরিয়ার নাম আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করেছেন বিনার এ সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। আশার কথা হল ওই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা তৈরি হবে জীবাণু সার। ফলে সাশ্রয় হবে ইউরিয়া সার। বৈজ্ঞানিক নামকরণের স্বীকৃতি প্রদানকারী আন্তর্জাতিক জার্নাল ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সিস্টেমিক অ্যান্ড ইভল্যুশনারি মাইক্রোবায়োলজিতে Rhizobium bangladeshense (R), Rhizobium binae (R) Ges Rhizobium lentis (R) হিসেবে এ তিনটি ব্যাকটেরিয়ার নাম প্রকাশিত হয়েছে। নামকরণের ব্যাপারে তিনি নিজের নামের পরিবর্তে দেশ ও বিনার নামকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন।

সূত্র: যুগান্তর ; এসএম আশিফুল ইসলাম, বাকৃবি থেকে | প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০১৫

নারিকেল গাছে মাকড়ের আক্রমণ ও তার দমন ব্যবস্থাপনা

মাইটের আক্রমণে নারিকেল গাছের ক্ষতি সম্বন্ধে আগে অজানা ছিল। এ মাইটের উপস্থিতি প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৬৫ সালে মেস্কিকোতে। এরপরই এ মাইটের উপস্থিতি ব্রাজিলে ও আইভোরীকোস্টে দেখা যায়। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে ভারতের কেরালাতে এ মাইটের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় ভারতে এ মাইটকে নারিকেলের জন্য অপ্রধান ক্ষতিকারক পেস্ট হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পরে ভারতে ১৯৯৯ সালে ডিসেম্বর মাসের শেষ ভাগে কেরালায় এ মাইট মনিটরিং এর জন্য বিস্তারিত সার্ভের আয়োজন করা হয়। তাদের এ সার্ভের ফলাফলে দেখা যায়, তদাঞ্চলে প্রায় ৫৮৯ লক্ষ ফলন্ত নারিকেল গাছ এ মাইট দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এ আক্রমণের প্রতিকূল প্রভাবে এসব নারিকেলের ফলন প্রায় ৪২% কম হতে দেখা যায়। তখন থেকেই ভারতে এ নারিকেল মাইটকে প্রধান ক্ষতিকারক পেস্ট হিসাবে চিহ্নিত করে সরকারিভাবে তা দমন ব্যবস্থায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। একই গুরুত্ব বিবেচনায় এনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ মাইট সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণার ব্যবস্থা নিয়ে এ দেশে এ মাইটের উপস্থিতি ও তার দমন ব্যবস্থা সর্ম্পকিত বিস্তারিত সুপারিশমালা নারিকেল চাষীদের বৃহত্তর স্বার্থে প্রণয়ন করে ।

নারিকেলের মাইট চিহ্নিতকরণ:
নারিকেল মাইট ‘ইরিওফিড’ নামে পরিচিত, যা অন্য মাইট থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এ মাইটের আকারে খুবই ছোট। খালি চোখে তা দেখা সম্ভব নয়। প্রায় ১০-১৫ গুণ পাওয়ার বিশিষ্ট ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে তা দেখা সহজ হয়। একটা নারিকেল মাইট লম্বায় প্রায় ২০০-২৫০ মাইক্রোন এবং চওড়ায় প্রায় ২০-৩০ মাইক্রোন হয়। সাধারণ মাইটের ৪ জোড়া বা ৮ টা পা থাকে। অথচ নারিকেলের ক্ষতিকারক এ মাইটের পায়ের সংখ্যা মাত্র ৪ টা। পুরুষ মাইটের তুলনায় স্ত্রী মাইট আকারে কিছুটা বড়। মাইটের জীবনচক্র শেষ হতে সময় লাগে মাত্র ১০-১২ দিন। শীত মৌসুমে এ চক্র শেষ হতে কিছু বেশী সময় লাগে, এ সময় চক্র শেষ হয় প্রায় ১৫-২১ দিনে। ডিম ফুটে ৩-৪ দিন পর ‘লার্ভা’ বের হয় পরে তা রূপান্তরিত হয়ে ‘নিম্ফ’ আকার ধারণ করে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই তা পুর্ণাঙ্গ মাইট রূপ ধারণ করে।

নারিকেল মাইটের তৎপরতা ও ক্ষতি:
ফুল ফল ধরার জন্য নারিকেলের যে কাঁদি বের হয় এবং তাতে ক্ষুদ্র কচি নারিকেল গাঁথা/ধরার সংগে সংগে মাইট তার বোটার অংশের উপরিভাগে যে ক্যাপ বা খোলস থাকে তার নিচের অতি নরম অংশে অবস্থান অংশের টিস্যু খুব নরম থাকে। তাই অবাধে এ অংশ ক্ষত করে মাইট ভিতরের রস চুষে খায়। কচি ফল ধরার পর থেকে তা নারিকেল হতে সময় লাগে প্রায় বার মাস। কচি ফল গাঁথা থেকে শুরু করে প্রথম ৬ মাস তখনও ফল বা ডাব কচি ও ছোট অবস্থায় থাকে, যার নরম টিস্যুর রস আহার করা ও বংশ বিস্তার করা মাইটসের জন্য অতি সহজ হয়।

14117878_1145460902187987_2903596153303031495_n

ডাব ও নারিকেলে মাইটের উপস্থিতির লক্ষণ ও ধরণ:
নারিকেলে বা ডাবের গায়ে গাঢ় বাদামী ছোবড়া ছোবড়া দাগ দেখা গেলে বুঝতে হবে তা মাইটের আক্রমণের লক্ষণ। আক্রমণের মাত্রা অত্যাধিক হলে কচি অবস্থায় মাটিতে অপূর্ণ ডাব ঝরে পড়ে। যেগুলো টিকে যায় সেগুলোও আকারে ছোট ও অনাকাঙ্খিত আকার ধারণ করে। মাইটের আক্রমণে ডাব ও নারিকেলের স্বাভাবিক রং থাকে না, বেশী গাঢ় হয়ে বির্বণ হয়ে যায়। ভিতরের শাঁস (কার্নেল) গঠন খুব কম হয় (৩০% ক্ষতি), নারিকেলের ছোবড়ার গুণাগুণ নষ্ট হয়ে তা শিল্পকারখানায় ব্যবহার অনুপোযোগী হয়।

মাইটের বিস্তার :
একই গাছের বা পার্শ্ববর্তী গাছ থেকে মাইট বাতাসের মাধ্যমে বা মৌমাছি বোলতা বা মধু আহোরণকারী পাখির মাধ্যমে অন্য গাছে বা অপর বাগানে ছড়াতে পারে।
এছাড়াও প্রবল বাতাসের মাধ্যমে অথবা নারিকেল/ডাব বা নারিকেল চারার মাধ্যমে এক দেশে থেকে অন্য দেশে এ মাইট ছড়িয়ে পড়ে।

নিয়ন্ত্রণ/দমন ব্যবস্থা:
যেহেতু মাইট বোঁটার অংশে খোলের নীচে অবস্থান করে এবং নরম টিস্যুর রস খেয়ে বংশ বিস্তার করে তাই এ নিরাপদ স্থানে অবস্থানরত মাইট দমন খুব সহজ নয়। তবে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাইটের আক্রমণ প্রতিহত করা সহজ। এগুলোর বিবরণি নিম্নরূপ:

১। বাগান স্বাস্থ্য সম্মত রাখা:
নারিকেল বাগান বা গাছ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার। এ লক্ষ্য অর্জনে গাছের নীচে মাইট দ্বারা আক্রান্ত ঝরে পড়ে থাকা অপুষ্ট ডাবগুলো কুড়িয়ে পুড়িয়ে ফেলা উচিত।

২। গাছে সময় মত, পরিমিত প্রয়োজনীয় খাদ্য/সার প্রয়োগ করা হলে ও প্রয়োজনীয় সেচ নিকাশ ব্যবস্থায় নারিকেল গাছের ও ফলের বৃদ্ধি বেশি হয়। তাতে মাইটের আক্রমণ হলেও ক্ষতির মাত্রা খুব কম হয়।

৩। প্রাকৃতিক (বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল) ভাবে দমন:

(ক) প্রিডেসিয়াম নামক এক ধরণের রাক্ষুসে বা পরজীব ভোজী মাইট নারিকেল মাইট খেতে পছন্দ করে। নারিকেল মাইট কলোনিতে এ পরভোজী মাইটের উপস্থিতিতে নারিকেল মাইটের বিস্তার রোধে অন্যতম ভূমিকা রাখবে।

(খ) এক প্রকার প্যানোজেনিক ছত্রাক যা নারিকেল মাইট ধবংসের অন্যতম ছত্রাক। নারিকেল মাইট কলোনীতে এ ছত্রাকের উপস্থিতি নারিকেল মাইটের বংশ বিস্তার নিয়ন্ত্রণে থাকে।

(গ) এছাড়াও এক প্রকারের লেডিবাড বিটল এ ক্ষতিকর নারিকেল মাইট ধবংস করতে সক্ষম। তাই এ জাতের লেডিবাড বিটল চিহ্নিত করে তা বাগানে ছেড়ে দেয়ার বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। মাইট আক্রান্ত নারিকেল গাছে/ বাগানে এ সব প্রকৃতিক শত্রুুর উপস্থিতিতে এ নারিকেল মাইটের বংশ বিস্তার ও তা দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা বিনষ্ট হবে।
একই কারণে পশ্চিমা দেশেগুলো পরিবেশের দিক বিবেচনায় এনে মাকড় নাশক ব্যবহারে তারা খুব একটা উৎসাহিত নয়, নারিকেল মাইট দমনে এ সব পরভোজী ছত্রাক ও পোকা-মাকড় দ্বারা বায়োলোজিক্যাল কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার উপর তারা বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারত একই ব্যবস্থায় এ মাইট দমনের লক্ষে গবেষণা শুরু করেছে।

৪। বায়োপেস্টিসাইড বব্যহার:
পরিবেশ ও পরভোজী উপকারী প্রাণী সংরক্ষণ করার দিক বিবেচনায় এনে ভারতে নারিকেল মাইট দমনে বায়ো পেষ্টিসাইড ব্যবহারের উপর বেশী গুরুত্ব আরোপ করছে। এগুলো নিম্নরূপ :

(ক) নিম তেল দিয়ে তৈরী মাকড়নাশক ব্যবহার:
আক্রান্ত নারিকেল গাছ ২% নিম তেল, রসুন এবং সাবানের মিক্চার দিয়ে স্প্রে করে সফলভাবে মাইট দমন করা বর্তমানে সহজ হচ্ছে। এ মিক্চার তৈরী করার জন্য ২০ মিলি নিম তেল, ২০ গ্রাম পরিষ্কার রসুন বাটা ও ৫ গ্রাম কাপড় ধোয়ার সাবান একত্রে মেশাতে হয়। এ স্প্রে মিশ্রণ তৈরীর জন্য ৫ গ্রাম কাপড় ধোয়া সাবান ৫০০ মিলি পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে তাতে ২০ মিলি নিম তেল মেশাতে হয়। এরপর ২০ গ্রাম পরিষ্কার রসুনকে ভালোভাবে গুঁড়া করে বা বেটে নিয়ে তাতে সাবানগুলা পানি ও নিম তেল মিশিয়ে সমস্ত মিক্সার পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিয়ে তা দিয়ে স্প্রে করতে হয়। এ মিক্চার তৈরীর পর পরই স্প্রে করার কাজ সমাধা করতে হবে, তৈরীকৃত মিক্চার রেখে দিয়ে পরের দিন ব্যবহার বা বাসী করে ব্যবহার করা উচিত হবে না।

(খ) বায়ো মাকড়নাশক ব্যবহার:
বর্তমানে এ্যাজাডাইর‌্যাথিন (অুধফরৎধপযঃরহ) নামক নিম থেকে তৈরী এক ধরনের মাকড় নাশক বাজারে পাওয়া যাচ্ছে যা নারিকেল মাইট দমনে কার্যকরি। এ মাকড় নাশক দু ধরণের ফরমুলেশনে পাওয়া যাচ্ছে। তা হতে পারে ১% অথবা ৫% ফরমুলেশনে তৈরী। এ মাকড় নাশক ব্যবহার ক্ষেত্রে ১% ফরমুলেশনের ব্যবহার করা হলে প্রতি লিটার পানিতে ৪ মিলি এবং ৫% ফরমুলেশনে তৈরী মাকড় নাশক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রতি লিটার পানিতে ৩ মিলি এ মাকড় নাশক মিশিয়ে এ মিশ্রণ দিয়ে নারিকেল গাছের আক্রান্ত অংশ ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

গ) স্প্রে করার সময় খেয়াল রাখতে হবে তা যেন কেবল মাত্র নারিকেল ফুল ফল ধরার প্রত্যেকটা নারিকেল কাঁদিতে স্প্রে করা হয় এবং স্প্রের ক্ষুদ্র ফোটা দিয়ে যেন নারিকেলের আক্রান্ত অংশগুলো ভালোভাবে ভেজানো হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্যবহৃত স্প্রে যন্ত্রটি খুব ফাইন ফোটা বের হতে সক্ষম হয়। একটা নারিকেল গাছ স্প্রে করতে ১-১৫ লিটার স্প্রে মিশ্রণ যথেষ্ট।

ঘ) স্প্রে করার কাজ বছরে অন্তত ৩ (তিন) বার করতে হবে। প্রথম বার ডিসেম্বর-ফের্রুয়ারি মাসে, দ্বিতীয় বার এপ্রিল-জুন মাসে এবং তৃতীয় বার সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে স্প্রে করার কাজ শেষ করতে হবে।

* খেয়াল রাখতে হবে যেন এ স্প্রের তরল পদার্থ কচি নারিকেলের বোঁটার অংশসহ সমস্ত জায়গায় ভালভাবে ভেজানো যায়।

* নারিকেলের কাঁদি ছাড়া অন্য অংশে (পাতা ও কান্ড) স্প্রে করার প্রয়োজন নেই। কেন না, বাকী অংশে নারিকেলের মাইট থাকে না। নারিকেলের স্ত্রী ফুল যা ফল ধরা আরম্ভ হয়নি, সে অংশেও স্প্রে করা যাবে না।

* স্প্রে করার আগে অবশ্যই সংগ্রহযোগ্য ডাব ও নারিকেল পেড়ে নিতে হবে।

নারিকেল গাছের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা গ্রহণ:
ক) নারিকেলের বিভিন্ন অংশের উপাদান দিয়ে তৈরী ভার্মি কম্পোষ্ট তৈরী করে তা নারিকেল বাগানে বছর ব্যাপী ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে তাতে লিগনীল জাতীয় ছত্রাক ব্যবহার করতে হবে।

খ) বাগানে বা গাছের গোড়ায় সবুজ সার (বরবটি, ধৈঞ্চা) তৈরী ও ব্যবহার উদ্যোগ নিতে হবে। এগুলো গ্রীষ্মকালে মালচিং এর কাজ করবে এবং পরবর্তীতে বর্ষায় তা পঁচে জৈব সারের কাজ করবে।

গ) বছরে বর্ষার আগে ও পরে কম পক্ষে ২ বার অনুমোদিত ডোজে জৈব ও অজৈব সার নারিকেল গাছে ব্যবহার করতে হবে

ঘ) শুকনা মৌসুমে বাগানের মাটিতে রসের পরিস্থিতি বুঝে প্রতি গাছে সপ্তাহে একবার ২০০-৪০০ লিটার পানি সেচ দিতে হবে।

ঙ) গাছের গোড়ার চারদিকে মাটিতে রস সংরক্ষণের জন্য মালচিং ব্যবস্থা নিতে হবে। এগুলো হতে পারে :

–গোড়া থেকে প্রায় ২ মিটার (রেডিয়াস) ব্যাপী স্থান নারিকেল ছোবড়া দিয়ে মালচিং ব্যবস্থা নেয়া।

–একইভাবে নারিকেল পাতা/সবুজ সার/ গ্রীন লতা পাতা দিয়ে তৈরী কম্পোস্ট দিয়ে রস সংরক্ষণ করা।

–কোকো ডাস্ট দিযে মালচিং করার ব্যবস্থা নেয়া।
(সংগৃহিত)

সূত্র: Modern Agriculture  ফেইজবুক পেইজ

 

(ধান)এডব্লিউডি (AWD)/পর্যায়ক্রমে ভেজানো ও শুকানো পদ্ধতি

এক কেজি ধান ফলাতে প্রায় 2500-4000 লিটার পানি দরকার হয়! সেচে পানির অপচয় রোধে এডব্লিউডি একটি পরীক্ষিত ও কার্যকরী কৃষি প্রযুক্তি।
এডব্লিউডি (AWD) পদ্ধতির মূল বিষয় হলো ধান চাষের ক্ষেত্রে জমিতে সার্বক্ষণিকভাবে পানি না রেখে পর্যায়ক্রমে জমি ভেজা ও শুষ্ক পদ্ধতি অনুসরণ করা। জমির পর্যায়ক্রমে ভেজা ও শুষ্ক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতে হয়। ধান চাষে একবার সেচ দিয়ে পরবর্তী সেচের সঠিক সময় নির্ধারণের জন্য জমিতে ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপ (পর্যবেক্ষণ নল) বসাতে হয়। এ পাইপে পরবর্তী নির্দিষ্ট লেভেলে পানি নেমে গেলে সেচ দিতে হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে জমিতে সেচ প্রদান করতে হয়।

14095899_1146994308701313_8473849359667696933_n

নলের আকার, নির্মাণ স্থাপন:
পিভিসি পাইপ অথবা বাঁশের চোঙ্গা দ্বারা ছিদ্রযুক্ত পর্যবেক্ষণ নল তৈরি করা যেতে পারে। নলের ব্যাস ৭-১০ সে.মি. এবং নলটি ৩০ সেমি লম্বা হবে । নলের নিচের দিকের ২০ সেমি. ছিদ্রযুক্ত এবং উপরের দিকের ১০ সে.মি. ছিদ্র বিহীন থাকবে। নলের গায়ে ১০মি.মি. দূরে ৫ মি.মি. ব্যাসের ছিদ্র থাকবে। এক সারি ছিদ্র থেকে আর এক সারি ছিদ্রের দূরত্ব হবে ১০ মি.মি.।
জমিতে নলটি এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যেন ছিদ্রযুক্ত ২০ সে.মি. অংশ মাটিতে এবং ছিদ্র বিহীন ১০.সে.মি. অংশ মাটির উপরে থাকে। নলটি আইলের পাশে এমন সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করতে হবে যেন স্থানটি সমস্ত প্লটের প্রতিনিধিত্বমূলক হয় এবং সহজে এর ভিতর পানির মাত্রা মাপা যায়। জমিতে ছিদ্রযুক্ত নলটির স্থাপনের পর এর ভিতরের মাটি ভালভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রদর্শনীভূক্ত একটি প্লটে এরূপ ৩টি ছিদ্রযুক্ত নল স্থাপন করতে হবে।

সেচের সময় ও পদ্ধতি:
১) জমিতে সেচ আরম্ভ করার পর যখন জমির উপর ৫ সেমি. দাঁড়ানো পানি জমবে তখন সেচ প্রদানূ বন্ধ করতে হবে। জমির পানি শুকানোর পর নলের ভিতর পানির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে মাপতে হবে। পর্যবেক্ষণ নলের ভিতর পানির স্তর জমির লেভেল থেকে ১৫ সে.মি পর্যন্ত নিচে নেমে গেলে জমিতে সেচ দিতে হবে।

২) আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য চারা রোপণের পর থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত জমিতে ২-৪ সেমি. দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে। তবে এ পদ্ধতিতে অতিরিক্ত একবার আগাছা পরিস্কার করার প্রয়োজন হতে পারে।

৩) গাছ ফুল আসা থেকে দুধ স্তর পর্যন্ত ২ সপ্তাহ জমিতে অবশ্যই ৫ (পাঁচ) সে.মি. দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে।

সূত্র:  কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর

লেবুর উপকারিতা ও ব্যবহার

লেবু, সকলেই কম বেশি খেয়ে থাকি। খিচুরি অথবা যেকোন খাবারের সাথে এটি অনেকের অনেক প্রিয়। আবার আচার তৈরী করেও অনেকে খেয়ে থাকে। ছোট একটা ফল কিন্তু এর উপকারিতা প্রচুর আর পুষ্টিগুণেও ভরপুর। এতে রয়েছে ৬ ভাগ সাইট্রিক অ্যাসিড, প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৫, বি৩, বি১, বি২, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, কার্বহাইড্রেট ফ্যাট এবং প্রোটিন।

স্বাস্থ্যগত ব্যবহার
লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি ঠাণ্ডা কাশি প্রতিরোধে খুব কাজ দেয়।

লেবুতে রয়েছে ফ্ল্যাবোনয়েড যা শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধ করে এবং শরীরকে ফিট রাখে।

শরীরের পিএইচ ঠিক রাখে।

লেবুর রস ও গরম পানি একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করলে অন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখে এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ফেলে।

এর ভিটামিন সি শরীরের রিঙ্কেল কমাতে সাহায্য করবে।

এটি রুটিন অনুযায়ী খেলে চোখের অসুখের দূর হয়।

লেবুতে ২২ প্রকার ক্যান্সার বিরোধী যৌগ আছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

এটি অন্ত্রের কৃমি ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

এটি রক্তনালীসমূহকে শক্তিশালী করে।

এটি স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে।

ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে।

ত্বকের যত্নে লেবুঃ
এটি ত্বকের সংকোচন সৃষ্টিকারী পদার্থকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

স্কিনের অতিরিক্ত তেল অপসারন করে।

লেবুর রস রস একটি প্রাকৃতিক অ্যানটিসেপ্টিক, যদি এটি মুখে মাস্ক হিসেবে নেয়া হয় তবে এটি স্কিনের অতিরিক্ত তেল ময়লা দূর করবে এবং ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ হতে দূরে রাখবে।

যাদের মুখে ব্রণ আছে তারা একটি ছোট তুলার বলে লেবুর রস নিয়ে স্কিন পরিষ্কার করলে ব্রণ কমে যায়। এটি রাতে মুখ ধোয়ার পর ব্রণের দাগে লাগিয়ে রাখলে দাগ তাড়াতাড়ি সেরে যায়।

এটি ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
বয়সের কারণে মুখে দাগ পড়লে তাতে লেবুর রস ব্যবহার করলে দাগ হালকা হয়ে যায়।

শক্ত ও স্বাস্থ্যবান নখ পেতে একটি বাটিতে লেবুর রস নিয়ে তাতে ১০ মিনিট নখ ভিজিয়ে রাখুন, এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।

চুলের যত্নে লেবুঃ
শুষ্ক চুলের কন্ডিশনারঃ
লেবুর রস, ৩/৪ কাপ অলিভ অয়েল, ১/২ কাপ মধু, দিয়ে একটি প্যাক তৈরী করে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পরে শ্যাম্পু করুন। এটি চুলকে ড্যামেজ ফ্রি করবে।

চুল পড়া বন্ধেঃ
৩-৪ টেবিল চামচ নারিকেল তেল নিয়ে তাতে অর্ধেক পরিমাণ লেবুর রস মিক্স করে সপ্তাহে একদিন চুলে লাগান। ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল দেখুন।

নতুন চুল গজাতেঃ
কয়েক ফোঁটা লেবুর রস এবং আমলকীর রস মিক্স করে প্রতিদিন রাতে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন এবং সকালে ধুয়ে ফেলুন।

অন্যান্য ব্যবহারঃ
মাইক্রোওভেন পরিষ্কার করতে লেবুর খোসা ব্যবহার করা হয়।

রান্নাঘর, খাবার টেবিল, ষ্টোভ, এর তেলের দাগ পরিষ্কার করতে অর্ধেক পরিমাণ লেবু এবং লবণ নিয়ে তৈলাক্ত স্থানে কিছুক্ষণ ঘষে নিন এরপর পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে ফেলুন।

চপিং বোর্ড পরিষ্কার করতে লেবু ব্যবহার করতে পারেন।

ঘরে যদি চিনি কাঁকুড়ে হয়ে যায় তবে লেবুর খোসা ব্যবহার করে দেখুন।

৪/১ লেবুর রস, কিছু লবণ এবং লেবুর রসের অর্ধেক পরিমাণ বেকিং সোডা নিয়ে দাঁতে ঘষুন। এটি আপনার দাঁত আরও সাদা করবে।

সূত্র:  Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

থানকুনি পাতার ভেষজ গুণ

10409012_975818102485602_4725127234041565807_n

১. পেটের রোগ নির্মূল করতে থানকুনির বিকল্প নেই। নিয়মিত খেলে যে কোনও পেটের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। একই সঙ্গে পেট নিয়ে কোনও দিনও সমস্যায় ভুগতে হয় না।

২. শুধু পেটই নয়, আলসার, এগজিমা, হাঁপানি-সহ নানা চর্মরোগ সেরে যায় থানকুনি পাতা খেলে। ত্বকেও জেল্লা বাড়ে।

৩. থানকুনি পাতায় থাকে Bacoside A ও B। Bacoside B মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য করে ও রক্ত চলাচল বাড়ায়। থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

৪. থানকুনি স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।

৫. মৃতকোষের ফলে চামড়ায় অনেক সময়ই শুষ্ক ছাল ওঠে। রুক্ষ হয়ে যায়। থানকুনি পাতার রস মৃতকোষগুলিকে পুনর্গঠন করে ত্বক মসৃণ করে দেয়।

৬. পুরনো ক্ষত কোনও ওষুধেই না সারলে, থানকুনি পাতা সিদ্ধ করে তার জল লাগালে সেরে যায়। সদ্য ক্ষতে থানকুনি পাতা বেটে লাগালে, ক্ষত নিরাময় হয়ে যায়।

৭. থানকুনি পাতা চুল পড়া আটকে দেয়। এমনকি নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে।

৮. বয়স বাড়লেও, যৌবন ধরে রেখে দেয় থানকুনি পাতার রস। প্রতিদিন একগ্লাস দুধে ৫-৬ চা চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে, চেহারায় লাবণ্য চলে আসে।
আত্মবিশ্বাসও বেড়ে যায়।

৯. দাঁতের রোগ সারাতেও থানকুনির জুড়ি মেলা ভার। মাড়ি থেকে রক্ত পড়লে বা দাঁতে ব্যথা করলে একটা বড় বাটিতে থানকুনি পাতা সিদ্ধ করে, তারপর ছেঁকে নিয়ে সেই জল দিয়ে কুলকুচি করলে উপকার পাওয়া যায় চটজলদি।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

পুদিনা পাতার অসাধারণ গুণাবলি

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে পুদিনা। ঔষধের পাশাপাশি খাদ্য ও রূপচর্চার উপাদান হিসাবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে পুদিনা পাতা। আর যত দিন যাচ্ছে তত গবেষণা হচ্ছে পুদিনা ও পুদিনার মতো ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে, আর ততই মানুষ জানছে এর গুণাগুণ সম্পর্কে।

*রোদে পোড়া ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে পুদিনা পাতার রস ও অ্যালোভেরার রস একসঙ্গে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। পনেরো মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

*আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে পুদিনা পাতা ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। পুদিনা পাতার পেরিলেল অ্যালকোহল যা ফাইটোনিউরিয়েন্টসের একটি উপাদান দেহে ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধিতে বাঁধা প্রদান করে।

*ব্রণ দূর করতে ও ত্বকের তৈলাক্তভাব কমাতে তাজা পুদিনাপাতা বেটে ত্বকে লাগান। দশ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণের দাগ দূর করতে প্রতিদিন রাতে পুদিনা পাতার রস আক্রান্ত স্থানে লাগান। সম্ভব হলে সারারাত রাখুন। নতুন কমপক্ষে ২/৩ ঘণ্টা। তারপর ধুয়ে ফেলুন। মাস খানেকের মাঝেই দাগ দূর হবে।

*পুদিনার শেকড়ের রস উকুননাশক হিসেবে খুবই কার্যকরী, এমনকি পাতাও। পুদিনার পাতা বা শেকড়ের রস চুলের গোড়ায় লাগান। এরপর একটি পাতলা কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে রাখুন। এক ঘণ্টা পর চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দু বার এটা করুন। এক মাসের মধ্য চুল হবে উকুনমুক্ত।

*পুদিনা পাতার রস শ্বাস-প্রশ্বাসের নালী খুলে দেওয়ার কাজে সহায়তা করে। ফলে যারা অ্যাজমা এবং কাশির সমস্যায় পড়েন তাদের সমস্যা তাৎক্ষণিক উপশমে পুদিনা পাতা বেশ কার্যকরী। খুব বেশি নিঃশ্বাসের এবং কাশির সমস্যায় পড়লে পুদিনা পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে সেই পানির ভাপ নিন এবং তা দিয়ে গার্গল করার অভ্যাস তৈরি করুন।

*গোলাপ, পুদিনা, আমলা, বাঁধাকপি ও শশার নির্যাস একসঙ্গে মিশিয়ে টোনার তৈরি করে মুখে লাগালে তা ত্বককে মসৃণ করে তোলে।

*পুদিনা পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসের চমৎকারী গুনাগুণ যা পেটের যে কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে খুব দ্রুত। যারা হজমের সমস্যা এবং পেটের ব্যথা কিংবা পেটের অন্যান্য সমস্যায় ভুগে থাকেন তারা খাবার পর এককাপ পুদিনা পাতার চা খাওয়ার অভ্যাস করুন। ৬/৭টি তাজা পুদিনা পাতা গরম পানিতে ফুটিয়ে মধু মিশিয়ে খুব সহজে পুদিনা পাতার চা তৈরি করতে পারেন ঘরে।

*শরীর ঠাণ্ডা রাখার একটি বিশেষ গুণ পুদিনার মধ্যে আছে। গোসলের কিছুক্ষণ আগে পানির মধ্যে কিছু পুদিনা পাতা ফেলে রাখুন। সেই পানিতে গোসল করলে শরীর ও মন চাঙ্গা থাকে। এ ছাড়া কয়েক ফোটা পুদিনার তেল পানির মধ্যে মিশিয়েও গোসল করতে পারেন।

*পুদিনা ত্বকের যে কোনো সংক্রমণকে ঠেকাতে অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। শুকনো পুদিনা পাতা ফুটিয়ে পুদিনার পানি তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিন। এক বালতি পানিতে দশ থেকে পনেরো চামচ পুদিনার পানি মিশিয়ে গোসল করুন। এর ফলে গরমকালে শরীরে ব্যাকটেরিয়া জনিত বিশ্রী দুর্গন্ধের হাত থেকে রেহাই পাবেন, কেননা পুদিনার অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট গুণ অতুলনীয়। ঘামাচি, অ্যালার্জিও হবে না।

*পুদিনা পাতার রস তাৎক্ষণিক ব্যথানাশক উপাদান হিসেবে কাজ করে। পুদিনা পাতার রস চামড়ার ভেতর দিয়ে নার্ভে পৌঁছে নার্ভ শান্ত করতে সহায়তা করে। তাই মাথা ব্যথা বা জয়েন্টে ব্যথা উপশমে পুদিনা পাতা ব্যবহার করা যায়। মাথা ব্যথা হলে পুদিনা পাতার চা পান করতে পারেন। অথবা তাজা কিছু পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। জয়েন্টে ব্যথায় পুদিনা পাতা বেটে প্রলেপ দিতে পারেন।

পুদিনা পাতাকে সাধারণত আমরা শুধুমাত্র রান্নার স্বাদ বাড়ানোর কাজেই ব্যবহার করে থাকি, অন্য কোনো কাজে আমরা পুদিনা পাতা ব্যবহার করি না। কিন্তু এই পুদিনা পাতা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত ভালো একটি উপাদান।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

আদার চাষ পদ্ধতি

আদা একটি মূল্যবান মশলা জাতীয় ফসল। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমি থেকে মাত্র ৩৮ হাজার ৫০০ টন আদা উৎপাদন হয়। এ উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই চাহিদা পূরণের জন্য প্রতি বছর বিদেশ থেকে প্রচুর আদা আমদানি করতে হয়। উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আদার ফলন এবং উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আদা রফতানি করা সম্ভব।

পুষ্টিগুণ:
আদায় শতকরা ৮০ ভাগ জলীয় অংশ, ২ ভাগ এলবুমিনয়েড, ১২.৩ ভাগ কার্বোহাইড্রেট, ১.০ ভাগ ফ্যাট, ২৪ ভাগ অাঁশজাতীয় পদার্থ এবং ১.২ ভাগ খনিজ পদার্থ রয়েছে।

ভেষজ গুণ:
আদা জ্বর, ঠা-া লাগা ও ব্যথায় বেশ উপকারী। কুচি আদা চিবিয়ে খেলে গা গোলানো ও বমিভাব থেকে রেহাই পওয়া যায়। অ্যান্টি অঙ্েিডন্টে ভরপুর আদা ক্যানসার ও হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। আদা দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। আদার রস খেলে আহারের রুচি আসে এবং ক্ষুধা বাড়ে। আদার রস মধু মিশিয়ে খেলে কাশি দূর হয়। আদার রস পেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আদা মল পরিষ্কার করে এবং পাকস্থলী ও লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। আদা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। আদার রস রক্তশূন্যতা দূর করে ও শরীর শীতল রাখে। আদা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কার্যকরভাবে কমাতে সাহায্য করে। আদা রক্তনালির ভেতরের রক্ত জমাটে বাঁধতে বাধা দেয় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

উৎপাদন এলাকা:
নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং যশোর জেলায় প্রচুর আদা উৎপাদন হয়।

আদার জাত:
বাংলাদেশে চাষকৃত আদার জাতের মধ্যে বারি আদা-১ জাতটি ২০০৮ সালে সারা দেশে চাষের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। এটি একটি উচ্চফলনশীল জাত। এর জীবনকাল ২৭০ থেকে ৩০০ দিন। এ জাতের গাছের গড় উচ্চতা ৭৯ থেকে ৮২ সেন্টিমিটার। প্রতি গাছে কুশির সংখ্যা ৩০ থেকে ৩২টি ও পাতার সংখ্যা ২১০ থেকে ২১২টি। প্রতি গাছে প্রাথমিক কন্দের সংখ্যা ৫৪ থেকে ৫৭টি এবং মাধ্যমিক কন্দের সংখ্যা ৩৯০ থেকে ৩৯৫টি। জাতটি রোগ প্রতিরোধ ও সংরক্ষণ ক্ষমতাসম্পন্ন।

জলবায়ু:
আদার জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া দরকার। অল্প ছায়াযুক্ত স্থানে আদা ভালো হয়।

মাটি:
উঁচু বেলে দোঅাঁশ, বেলে ও এঁটেল দোঅাঁশ মাটিতে আদা ভালো জন্মে। আদার জন্য জমিতে পানি নিকাশের সুব্যবস্থা থাকা উচিত। কারণ জমিতে পানি জমে থাকলে আদা পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

জমি তৈরি:
আদা চাষের জন্য জমি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হয়। ৬ থেকে ৮ বার চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্তুত করতে হয়।

বীজ বোনার সময়:
মধ্য চৈত্র থেকে মধ্য বৈশাখ হলো স্থানীয় উন্নত জাতের বীজ আদা লাগানোর উপযুক্ত সময়। সেচের সুবিধা থাকলে বৈশাখ মাসে আদা লাগানো যায়। সেচের সুবিধা না থাকলে জ্যৈষ্ঠ মাসে আদা লাগানো উচিত।

বীজ শোধন:
পচন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বীজ আদা শোধন করা উচিত। এজন্য ৮ লিটার পানিতে ১৬ গ্রাম রিডোমিল গোল্ড বা এক্রোবেট এম জেড মিশিয়ে তাতে ১০ কেজি আদা বীজ ৩০ মিনিট শোধন করে ছায়াযুক্ত স্থানে শুকিয়ে নেয়ার পর রোপণ করতে হবে। আদা লাগানের আগে একটি ঝুড়িতে কিছু খড় বিছিয়ে ছোট ছোট আদা তার ওপর বিছিয়ে খড় বা শুকনা পাতা দিয়ে সেগুলো ঢেকে রাখলে আদার কল বের হবে এবং এ রকম আদা লাগালে তাড়াতাড়ি গাছ বের হবে।

বীজের পরিমাণ:
আদা রোপণের জন্য হেক্টরপ্রতি প্রায় ২.০ থেকে ২.৫ টনের মতো বীজের প্রয়োজন হয়।

রোপণ পদ্ধতি:
ছোট লাঙল বা কোদাল দিয়ে ৫০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে নালা কেটে তাতে ১৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে ৮ সেন্টিমিটার গভীরতায় দু-তিনটি চোখসহ আদার টুকরা লাগাতে হবে। বীজ আদার ওজন ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম হওয়া উচিত। সারিতে আদা লাগানোর পর সারির ওপর দিয়ে ৫ সেন্টিমিটার পুরু করে খড় বা শুকনা পাতার আচ্ছাদন দিলে তাড়াতাড়ি বীজ থেকে গাছ গজায়। যে অঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হয় এবং মাটি এঁটেল অথবা সেচ দিয়ে আদা চাষ করা হয়, সেখানে ওই একই দূরত্বে কোদাল দিয়ে ভেলি তৈরি করে তাতে আদা লাগাতে হবে।

সার প্রয়োগ:
ভালো ফলনের জন্য আদার জমিতে হেক্টরপ্রতি ১০ টন পচা গোবর, ৩০০ থেকে ৩২০ কেজি ইউরিয়া, ২৬০ থেকে ২৮০ কেজি টিএসপি, ২৯০ থেকে ৩১০ কেজি এমওপি, ১০০ থেকে ১২০ কেজি জিপসাম, প্রয়োজনে ১.৮ থেকে ২.২ কেজি বরিক এসিড এবং ৩.৫ থেকে ৪.০ কেজি জিংক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ বপনের ৭ দিন আগে শেষ চাষের সময় জমিতে সম্পূর্ণ গোবর, টিএসটি, জিপসাম, বরিক এসিড, জিংক সালফেট ও অর্ধেক এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বীজ বপনের ৫০ দিন পর অর্ধেক ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমপি সার সমান দুই ভাগে ভাগ করে বপনের ৮০ দিন পর একবার এবং ১১০ দিন পর আর একবার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

রোগ দমন:
আদার জমিতে তেমন কোনো রোগবালাইয়ের উপদ্রব দেখা যায় না। তবে কখনও কন্দ পচা রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে।

প্রতিকার:
রোগমুক্ত বীজ আদা রোপণ করা, একই জমিতে বারবার আদা চাষ না করা। জমিতে পানি নিকাশের ব্যবস্থা করা। প্রতি লিটার পানিতে তিন গ্রাম রিডোমিল গোল্ড মিশিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। রোগাক্রান্ত জমিতে ০.৩ শতাংশ রিডোমিল গোল্ড দ্বারা বর্ষার আগে ও পরে আদা গাছের গোড়া ভিজিয়ে দিতে হবে।

পোকা দমন:
আদা গাছে কান্ড ছিদ্রকারী ও পাতাখেকো পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। কা- ছিদ্রকারী পোকা দমনের জন্য সেভিন ডাস্ট ২ শতাংশ হারে ৭ থেকে ১০ দিন পর পর দুই থেকে তিনবার স্প্রে করতে হবে। অনেক সময় পাতাখেকো পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। এ পোকা দমনের জন্য বিকালবেলা ১ শতাংশ ডেসিস ২ শতাংশ রাইসন স্প্রে করতে হবে।

পরিচর্যাঃ- আদা লাগানোর ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে গাছ বের হয়। দু-তিনবার নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। গাছ কিছুটা বড় হলে গোড়ায় মাটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে।

পানি সেচ:
ভালো ফলনের জন্য আদার জমিতে সেচ দেয়া দরকার। সেজন্য সময়মতো বৃষ্টি না হলে বা খরার সময় ৮ থেকে ১০ দিন পর পর সেচ দিতে হবে।

আদা তোলা:
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে লাগানো আদা পৌষ মাসে শুকাতে শুরু করলে আদা তুলতে হবে। কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে আদা তোলা উচিত। আদা তুলে মাটি পরিষ্কার করে সংরক্ষণ করতে হবে।

বীজ আদা সংগ্রহ ও সংরক্ষণ:
নির্বাচিত গাছ সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে যাওয়ার ১৫ থেকে ২০ দিন পর বীজ আদা সংগ্রহ করতে হবে। সংরক্ষণের আগে শতকরা ৩ ভাগ ডাইথেন এম-৪৫ দ্বারা বীজ শোধন করলে পচন থেকে আদা রক্ষা করা যায়।

গর্ত খনন করে আদা সংরক্ষণ:
উঁচু জমিতে ৪৫০ সেন্টিমিটার লম্বা, ৩০০ সেন্টিমিটার চওড়া এবং ১৮০ সেন্টিমিটার গভীর গর্ত করে শুকিয়ে গর্তের চারপাশ খড় বিছিয়ে থলিতে ভরে একে একে সাজিয়ে মাটির আবরণ দিয়ে ঢেকে আদা সংরক্ষণ করা যায়।

শুকনা বালুতে সংরক্ষণ: এ পদ্ধতিতে শুকনা বালি স্তরের ওপর বীজ আদা ১০ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পুরু স্তর করে রেখে প্রথমে শুকনা পাতা ও পরে ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার বালির আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। বীজের পরিমাণ বেশি হলে এ পদ্ধতিতে আদা সংরক্ষণ করে স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখতে হবে।

ফলন: উন্নত পদ্ধতিতে আদার চাষ করে হেক্টরপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ

কলার উৎপাদন বৃদ্ধির কলাকৌশল

অধিকারী চ. মিঠু's photo.

কলা বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ফল। অন্য সব ফলের তুলনায় এটি সস্তা এবং সারাবছরই পাওয়া যায়। কলার উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞানসম্মত কিছু কলাকৌশল আছে যা উল্লেখ করা হলো।

জাত নির্বাচন
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৪০-৫০টি জাতের কলার চাষ হয়ে থাকে। এসব জাতের মধ্যে অমৃতসাগর, সবরি, কবরি, চাঁপা, সিঙ্গাপুরি বা কাবুলী, মেহেরসাগর, এঁটে বা বিচি কলা, কাঁচকলা বা আনাজি কলা এবং জাহাজি কলা উলেৱখযোগ্য। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে বারিকলা-১, বারিকলা-২ ও বারিকলা-৩ নামে কলার তিনটি উন্নতজাত অবমুক্ত করা হয়েছে।

চারা নির্বাচন
কলার চারা বা সাকার দুই রকমের। অসি চারা ও পানি চারা। অসি চারার পাতা চিকন, গোড়ার দিকে মোটা ও গোলাকার। পানির চারার পাতা চওড়া, কাণ্ড চিকন ও দুর্বল। তবে চাষের জন্য অসি চারা লাগানো উত্তম।

মাটি ও জলবায়ু
পর্যাপ্ত রস আছে এমন মাটিতে কলা চাষ করা যায়। তবে সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ এবং বেলে দো-আঁশ মাটি কলা চাষের জন্য ভালো। এছাড়া জমি পর্যাপ্ত আলো বাতাসপূর্ণ হওয়া দরকার। অপরদিকে শীতকালে এবং প্রচুর আর্দ্রতাযুক্ত জলবায়ুতে কলা গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।

চারা রোপণ
ভাদ্র মাস ছাড়া যে কোনো মাসেই চারা রোপণ করা যায়। তবে চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হলো মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ এবং মধ্য মাঘ থেকে মধ্য চৈত্র। তিন মাস বয়সী সুস্থ সবল অসি চারা লাগানো উত্তম। চারা রোপণের আগে ৫০ সেমি. দৈর্ঘ্য ৫০ সেমি. প্রস্ত এবং ৫০ সেমি. গভীর করে মাদা তৈরি করতে হবে। এক মাদা থেকে অপর মাদা বা এক চারা থেকে অপর চারার দূরত্ব রাখতে হবে ২ মিটার। এ হিসাবে বিঘাপ্রতি ৩৫০-৪০০টি চারা রোপণ করা যায়।

সার ব্যবস্থাপনা
কলা চাষের জন্য জমি তৈরির শেষ সময় বিঘাপ্রতি ৩.৫-৪.০ টন পচা গোবর বা আবর্জনা পচা সার প্রয়োগ করতে হবে। এরপর পূর্ববর্তী পৃষ্ঠায় উল্লেখিত তালিকা অনুযায়ী সার ও সার জাতীয় খাদ্য উপাদান প্রয়োগ করতে হবে।
জেনে রাখা দরকার যে, লিবরেল দস্তা, লিবরেল বোরণ ও আলগা-গোল্ড কলাগাছের পাতায় ও ফলে সেপ্র করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। এসব খাদ্য উপাদান অন্যান্য সার বা বালাইনাশকের সাথে মিশিয়েও সেপ্র করা যাবে।

অতিরিক্ত চারা কর্তন
কলা গাছের গোড়া থেকে নতুন সাকার বা চারা বের হয়ে থাকে। কলার ছড়া বের হওয়ার আগ পর্যন্ত কলা গাছে নতুন চারা কোনো অবস্থাতেই রাখা উচিত নয়। সাধারণত দু-এক মাস পরপর এসব চারা মাটি সমান করে কাটা দরকার।

সেচ প্রদান ও পানি নিষ্কাশন
কলা গাছে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু গাছ অতিরিক্ত পানি সহ্য করতে পারে না। তাই পানি যাতে না দাঁড়ায় সেজন্য নিষ্কাশন নালা এবং শুকনো মৌসুমে সেচ নালা তৈরি করে তা দিয়ে দু-একবার সেচ দিতে হবে।

অন্তর্বর্তী ফসল
কলাবাগানে অন্তর্বর্তী হিসেবে মুলা, পালংশাক, মরিচ, ছোলা, মসুর, বরবটি, বাঁধাকপি, লালশাক, ডাঁটাশাক এসব ফসলের চাষ করা যেতে পারে। তবে এসব ফসলের জন্য অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করতে হবে।

পোকামাকড় ও দমন
কলা চাষের অন্যতম শত্র্ব হলো এর বিটল পোকা, উইভিল ও থ্রিপস বা জাবপোকা। বিটল পোকা ফল ও পাতায় আক্রমণ করে। আক্রান্ত ফল ও পাতায় কালো বর্ণের গোল ও লম্বা দাগ দেখা যায়। ফল ছোট হয় এবং বাজারমূল্য কমে যায়। উইভিল পোকা কলার কন্দ ছিদ্র করে ভেতরে প্রবেশ করে ও নরম অংশ খেয়ে ফেলে। থ্রিপস বা জাবপোকা সাধারণত কলার খোসায় আক্রমণ করে এবং খোসার ওপর ছোট ছোট বাদামি লম্বা দাগ দেখা যায়। কলার উইভিল পোকা দমনের জন্য চারা রোপণের সাড়ে তিন থেকে চার মাস পর বিঘাপ্রতি ৩ কেজি হারে নিউফুরান-৫ জি অন্যান্য সারের সাথে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া ফল ও পাতার বিটল পোকা দমনের জন্য আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০ মিলি মর্টার-৪৮ ইসি প্রতি ১০-১৫ দিন পর পর সেপ্র করতে হবে।

রোগ ও প্রতিকার
কলার রোগের মধ্যে পানামা, সিগাটোকা ও গুচ্ছমাথা রোগ অন্যতম। পানামা রোগের আক্রমণে গাছের পাতা হলুদ হয়, পাতা বোঁটার কাছে ভেঙে ঝুলে যায় এবং কাণ্ড অনেক সময় ফেটে যায়। আক্রান্ত গাছ আস্তে আস্তে মরে যায় অথবা ফুল ও ফল ধরে না।
সিগাটোকা রোগের আক্রমণে পাতার ওপর গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির গাঢ় বাদামি রঙের দাগ পড়ে। ফল ছোট আকারের হয় এবং গাছের ফলন বহুলাংশে কমে যায়।
গুচ্ছ মাথা রোগে আক্রান্ত গাছের পাতা সর্ব এবং ফ্যাকাশে রঙের হয়। জাব পোকা ও জ্যাসিডের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়।
পানামা ও সিগাটোকা রোগ থেকে প্রতিকারের জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ মিলি. এন্টিসিকা ও ১০ গ্রাম বেনডাজিম অথবা ২০ গ্রাম হেমেঙিল এমজেড-৭২ ডব্লিউপি একত্রে মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে।
গুচ্ছ মাথা রোগ এক ধরনের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়।
জাবপোকা জ্যাসিড এই ভাইরাস বিভিন্ন গাছে ছড়ায়। জাবপোকা দমনের জন্য প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ মিলি. স্টার্টার ৪০ ইসি সেপ্র করতে হবে। এছাড়া রোগমুক্ত এবং রোগ সহনশীল জাতের সাকার চাষ করেও এসব রোগের হাত থেকে রৰা পাওয়া যায়।

উপরোল্লিখিত নিয়ম মেনে কলার চাষ করলে বিঘাপ্রতি ১২-১৫ টন ফলন পাওয়া যাবে যার বাজারমূল্য প্রায় ৪০-৪৫ হাজার টাকা।

সূত্র: Modern Agriculture ফেইজবুক পেইজ